মাতৃ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থার সমন্বয় জরুরি


নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য গর্ভবতী নারীদের সরকারী হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিন্তু সরকারী হাসপাতালে রোগী রেফার করলেও সঠিক সময়ে তারা সেবা পাচ্ছে না। হাসপাতালে ডাক্তার স্বল্পতা, এনেসথেশিয়ান নাই। এই সব বিভিন্ন কারনে গ্রামের মানুষ দাইমাদের উপরেই নির্ভর করে। নরমাল ডেলিভারী তারা ভালভাবেই করে। বাংলাদেশে গ্রামের মানুষের জন্য সরকারী স্বাস্থ্য সেবা দেবার মাধ্যম উপজেলা পর্যায়ে ‘উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রকেই ধরা হয়। ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও সেখানে স্বাস্থ্য সেবা পূর্ণাঙ্গ নয়। ইউনিয়ন পর্যায়ে সেবা মূলত পরিবার পরিকল্পনার জন্য। তাই এখানে সব ধরণের স্বাস্থ্য সেবা দেবার ব্যবস্থা নাই।

পহেলা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ স্বাস্থ্য আন্দোলন ও উবিনীগ আয়োজিত ‘স্বাস্থ্য সেবার আলোকে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা’ বিষয়ক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় ছেঁউরিয়া, কুষ্টিয়াতে। এই আলোচনা সভায় সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন নাসিমা ইয়সমিন, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সদর, কুষ্টিয়া। আরও উপস্থিত ছিলেন ফরিদা আখতার, যুগ্ম আহবায়ক, স্বাস্থ্য আন্দোলন ও উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক, ঢাকা। রীতা পারভীন, সহকারী শিক্ষিকা নন্দলালপুর, সাহানাজ আরা, প্রোগ্রাম অফিসার, হরিশংকরপুর মহিলা উন্নয়ন সংস্থা, শেখ মুসরাত জাহান, পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, জিয়ারখী, কুষ্টিয়া, মর্জিনা আক্তার, নির্বাহী পরিচালক, রোশনি মহিলা উন্নয়ন সংস্থা, সালমা সুলতানা, নিকুসিমাজ, কুষ্টিয়া। দাইমা জরিনা বেগম, চর গোপালপুর, দাইমা মোনোয়ারা বেগম, গোপালপুর, কুষ্টিয়া।

বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালেরও আগে সরকারীভাবে প্রতিটা ইউনিয়নে ৩০ জন করে দাইমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। গ্রামে এই দাইমায়েরা যাতে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা ভালভাবে পরিচালনা করতে পারে। বর্তমানে এই দাইমাদের সাথে সাংগঠনিক কোন যোগাযোগ নাই। পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকার কাজ গ্রামের গর্ভবতী নারীদের ডেলিভারী করানো। গর্ভবতী নারীদের তালিকা তৈরী করা। তাদের ১৮ মাসের প্রশিক্ষণ আছে। বর্তমানে সরকার সেই প্রশিক্ষণ পাওয়া পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকাদের আরও ৬ মাসের ‘মিডওয়াইফার’ বিশেষ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। যাতে গ্রামীণ নারীদের ডেলিভারির কাজ সহজ হয়। শুধু এই প্রশিক্ষণ পেলেই হবে না। গর্ভবতী নারীদের পুষ্টি নিশ্চিত করার দিকেও নজর রাখতে হবে। পুষ্টি ঠিক থাকলে গর্ভবতী নারীদের ঝুঁকি কম হওয়ার নিশ্চয়তা বেড়ে যায়। গ্রামে নিরাপদ খাদ্য খাওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশে এখনো দাইমাদের সহযোগিতায় সন্তান জন্মদান করেন বেশীর ভাগ নারী। তাই তাদের বাদ দিয়ে নয়, এই দাইমাদের সংগঠিত করে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। গর্ভবতী নারীদের প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে এবং ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী নারীদের যাতে সরকারী হাসপাতালে নিয়ে সেবা দিতে পারে সে দিকে লক্ষ্য রাখা অতি জরুরী। ‘স্বাস্থ্য সেবার আলোকে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা’ বিষয়ক আলোচনা সভায় এ কথাই উঠে আসে।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।