কেন্দ্রভুত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা জনগণের সেবা দিতে পারে না


“স্বাস্থ্য সেবা মানেই চিকিৎসা সেবা। আমাদের দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কেন্দ্রভুত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা। একটা সুন্দর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা করার বিকল্প দিক সরকারকে দেখতে হবে। জনবলের ক্ষেত্রে সরকারের তেমন কোন নীতি নাই। স্বাস্থ্য সেবার মূল জায়গা সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, এটাকে সচল রাখতে হবে” বলেন অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই- মাহবুব, সভাপতি, স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটি, ঢাকা।

২৯ অক্টোবর, ২০১৬ বিকেল ৩টায় ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভি.আই.পি লাউঞ্জে স্বাস্থ্য আন্দোলন এবং উবিনীগ আয়োজিত “স্বাস্থ্য সূচকে পিছিয়ে থাকা অঞ্চল: পর্যালোচনা ও করণীয় নির্ধারণ” শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়|

এই মতবিনিময় সভায় সভা প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন ফরিদা আখতার, নির্বাহী পরিচালক, উবিনীগ, যুগ্ম আহ্বায়ক, স্বাস্থ্য আন্দোলন। প্রধান অতিথি ছিলেন ডা. মো: ফারুক আহম্মেদ ভূঁইয়া, লাইন ডাইরেক্টর, নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কনট্রোল (এনসিডি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

বিশেষ অতিথি ছিলেন, অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই- মাহবুব, সভাপতি, স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটি, ঢাকা। ডা. জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী, ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, সাভার, ঢাকা।

বক্তাদের মধ্যে ছিলেন, কাউছার পারভীন, পরিচালক, বরিশাল মহিলা কল্যাণ সংস্থা, বরিশাল। ফারুক আহাম্মেদ, ষ্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক মতবাদ, বরিশাল। আমিনুর রসুল, মেম্বার সেক্রেটারি, উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট, সদস্য, স্বাস্থ্য আন্দোলন। ইবনুল সাঈদ রানা, নির্বাহী পরিচালক, নিরাপদ ডেভেলাপমেন্ড ফাউন্ডেশন।

মতবিনিময় সভায় সূচনা বক্তব্য " স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে জেলা-উপজেলা: ভুগছে সাধারণ মানুষ" পাঠ করেন পলাশ বড়াল, পরিচালক, উবিনীগ, সদস্য, স্বাস্থ্য আন্দোলন। সভা সঞ্চালনায় ছিল সীমা দাস সীমু। 

গ্রাম পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হচ্ছে। এর জন্যে অবকাঠামো তৈরি, জনবল, অর্থ বরাদ্দ, যন্ত্রপাতি, ওষুধ সরবরাহ কোনটা ছাড়া স্বাস্থ্য সেবা সঠিকভাবে দেয়া যায় না। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সম্পূর্ণভাবে জনবল, ওষুধ, যন্ত্রপাতি, অর্থ – একটা ছাড়া অন্যটা করা যায় না। বর্তমানে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান মারাত্মকভাবে এই সব ঘাটতিতে ভুগছে। এই ঘাটতি দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা হাসপাতালে।

জনবল, ওষুধ, যন্ত্রপাতি ইত্যাদির প্রেক্ষিতে চারটি বিভাগ বেশী সংকটে রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম ও বরিশাল। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের সকল প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহের ক্ষেত্রে বিশেষ ভৌগলিক অঞ্চল বা জেলা বঞ্চিত হচ্ছে। এলাকা ভেদে প্রয়োজনের ভিন্নতা আছে, যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামে ম্যালেরিয়ার প্রতিরোধ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকা একান্ত জরুরী। তেমনি উত্তরবঙ্গে আর্সেনিক দুষণের প্রতিরোধ ও চিকিৎসা জরুরি। স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থায় এই বিশেষ দিকগুলো লক্ষ্য রেখে বরাদ্দ বা জনবল ও উপকরণ সরবরাহ করা হয় না।

স্বাস্থ্য জনবলের মধ্যে শুধু চিকিৎসক সংকট নয়, নার্স, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অবেদনবিদ না থাকাও বড় সমস্যা। অস্ত্রোপচারের আগে এনেসথেশিয়া দেয়ার চিকিৎসকের সংকট। এ্যাম্বুলেন্স পড়ে আছে, কিন্তু চালক নেই। অথবা এ্যাম্বুলেন্স নষ্ট হয়ে আছে। সিটি স্ক্যান, এম আর আই ইত্যাদি যন্ত্রপাতিরও অভাব দেখা যায়।

সরকারি হাসপাতালে মাতৃ স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার বিষয়টি এমডিজি আলোকে মাতৃ মৃত্যু কমাবার লক্ষ্যে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ঘোষণা দেয়া হয়েছে সকল প্রসব প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীদের হাতে হতে হবে। এবং প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব সেবা নিতে হবে। তাই প্রসবপূর্ব সেবা নিতে গর্ভবতী মায়েরা হাসপাতালে এলেও বাচ্চা জন্মদানের সময় তারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না। যার ফলে প্রসবকালীন ও প্রসবোত্তর জটিলতা বাড়ছে। এতে সরকারের নারী স্বাস্থ্য সেবার অর্জনের যে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য তা ব্যহত হচ্ছে। বক্তাগণ তাদের আলোচনায় এ কথাই তুলে ধরেন।

নির্ধারিত আলোচকদের বক্তব্য শেষে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেয় কে.এম. রফিকুল ইসলাম,ফকরুল ইসলাম, জাহাংহীর হোসাইন ও ড. এ.এম. সোবহান।

সরকারের কাছে স্বাস্থ্য আন্দোলনের প্রস্তাব:

১। দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রয়োজনের ভিত্তিতে স্বাস্থ্য জনবল, ওষুধ, যন্ত্রপাতি দেয়ার ব্যবস্থা করা।
২। চিকিৎসকদের শাস্তিমূলক পোস্টিংয়ের জন্যে পার্বত্য চট্টগ্রামকে নির্ধারণ করা যাবে না। তাহলে দুর্নীতিবাজ, কাজে অবহেলাকারী কিংবা স্বাস্থ্য দেয়ার ক্ষেত্রে অনুপযোগী মানুষকে এমন জায়গায় দেয়া হচ্ছে যেখানে মানুষের ভাল চিকিৎসকের প্রয়োজন। পার্বত্য চট্টগ্রামের মতো দূর্গম অঞ্চলে তাদের প্রয়োজন অনুসারে ভাল চিকিৎসক ওষুধ, যন্ত্রপাতি দিতে হবে।
৩। স্বাস্থ্য জনবল নির্দিষ্ট জেলায় দিতে হলে সেখানকার প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিতে হবে। চিকিৎসকের সাথে সহযোগী ও সহকারী জনবল থাকার নিশ্চয়তা দিতে হবে। এর জন্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বসে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
৪। মাতৃ স্বাস্থ্য সেবার জন্যে সরকার নিয়ম করেছে সন্তান প্রসব হাসপাতালে হতে হবে। সেই পরিবেশের নিশ্চয়তা সরকারকে দিতে হবে। মাতৃ মৃত্যু কমাতে হলে প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
৫। মাতৃ স্বাস্থ্য উন্নত করতে হলে গ্রাম পর্যায়ে যারা কাজ করছেন তাদেরকে সহযোগিতা দিতে হবে।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।