জীবন রক্ষাকারী প্যারাসিটামলে জীবন হরণ


সম্প্রতি বিষাক্ত প্যারাসিটামল নিয়ে যে খবর পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে তা দীর্ঘ দিন ধরে (২৩ বছর) প্যারাসিটামলের বিরুদ্ধে যে মামলা চলছিল তার রায় কবে হবে, কি হবে এই নিয়ে জনগণের মনে উৎকণ্ঠা এবং উদ্বেগ বিরাজ করছিল। গত ১৭ আগস্ট, ২০১৫ মামলাটির রায় ঘোষণা হয়েছে। এতে মানুষ আশ্বস্ত হলেও বিপদ কিন্তু এখনো কাটেনি। এ বিষয় নিয়েই আমার এ লেখা।

ভেজাল প্যারাসিটামল ওষুধ সেবনের কারণে দেশে প্রায় ২ হাজার ৭ শত শিশুর মৃত্যু ঘটেছে ১৯৮৩ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত। ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ উৎপাদন ও বাজারজাত করণের অভিযোগে ১৯৯২ সালে পাঁচ টি মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে একটি মামলার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসামিরা অব্যহতি পান। বাকি চারটি মামলার মধ্যে ১৭ আগস্ট, ২০১৫ দুটিসহ এ পর্যন্ত তিনটি মামলার রায় হয়েছে। একটি মামলার বিচার কাজ চলছে।

২৩ বছর আগে জীবন রক্ষাকরী প্যারাসিটামলে জীবন হরণ করে ৭৬ টি শিশুর। ভেজাল প্যারাসিটামল পান করে শিশুমৃত্যুর কারণ শনাক্ত করে ভেজাল ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বিসিআই বাংলাদেশ ফার্মার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। বিসিআই বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক শাহজাহান সরকার তার প্রতিষ্ঠানের প্যারাসিটামল সিরাপে বিষাক্ত রাসায়নিক ডাই-ইথাইলিন গ্লাইকোল মিশাতেন, যা প্রধানত টেক্সটাইল মিলে কাপড় তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয় ও ট্যানারীতে ব্যবহৃত। এই বিষাক্ত রাসায়নিক ডাই-ইথাইলিন গ্লাইকোল শিশুদের কিডনী বিকল করে দেয়, ফলে তাদের মৃত্যু হয়। জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট এই মামলাটির নিষ্পত্তি হতে সময় লেগেছে দীর্ঘ ২৩ বছর।

১৭ আগস্ট,২০১৫ এসে ঢাকার ড্রাগ আদালতের বিশেষ বিচারক এম আতোয়ার রহমান মামলার রায় দেন। মামলার রায়ে প্রত্যেক আসামিকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। চার লাখ টাকা করে অর্থদন্ডে দন্ডিত করেন। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে আরও এক বছর করে কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। ভেজাল প্যারাসিটামল তৈরির দায়ে ছয় জনের বিরুদ্ধে ভিন্ন ভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানার আদেশ দিয়েছেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন বিসিআই বাংলাদেশ ফার্মার নির্বাহী পরিচালক এ এস এম বদরুদ্দোজা, পরিচালক শাহজাহান সরকার, নুরুন্নাহার বেগম, শামসুল হক, ব্যবস্থাপক (মাননিয়ন্ত্রণক) আয়েশা খাতুন ও ব্যবস্থাপক (উৎপাদন) এম তাজুল হক। শাহজাহান সরকার এত দিন জামিনে মুক্ত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর জামিন বাতিল করে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আসামিদের মধ্যে শাহজাহান সরকার ছাড়া বাকিরা মামলার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন। একই অভিযোগে গত বছর ২২ জুলাই আরেকটি ওষুধ কোম্পানি অ্যাডফ্লেম ফার্মাসিউটিক্যালসের পরিচালক ডা. হেলেন পাশাসহ তিনজনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।

আগস্ট ২০০৯ সালে রীড ফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক মো: শফিকুল ইসলাম। রীড ফার্মা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ঢাকা ড্রাগ আদালতের বিচারক মো: গোলাম মর্তুজার এ পরোয়ানা জারি করেন। আসামীরা হলেন রীড ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান, পরিচালক শিউলী রহমান, আব্দুল গনি,ফার্মাসিস্ট মাহবুবুল ইসলাম ও এনামুল হক। মামলা নিষ্পত্তির দীর্ঘসূত্রকার কারণে সাম্প্রতিক সময়েও দেখা যাচ্ছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধে ভেজাল দেয়ার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে।


প্যারাসিটামল ১৯ আগষ্ট ২০০৯


যুগান্তর প্রত্রিকায় ১৬ আগস্ট প্রতিবেদন থেকে জানা যায় বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর আবারও এইচ সফট, নাপা সফটসহ বিভিন্ন কোম্পানির উৎপাদিত প্যারাসিটামলে ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহারের কারণে ৫১ টি ওষুধের নিবন্ধন বাতিল করেছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সূত্র অনুযায়ী, ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কমিটির ২৪৪তম সভায় এব ওষুধের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়। সংশ্লিষ্ট কোম্পানীগুলোকে নিজ উদ্যোগে বাজার থেকে ওষুধগুলো প্রত্যাহার করে তার পরিমাণসহ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আমাদের কথা হচ্ছে বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর কেন ওষুধ কোম্পানিকে এই দায়িত্ব দেবে? আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশ ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের এই অবহেলার কারণেই আমাদের শিশুরা অকালে প্রাণ হারায়। এর জন্য কারো কিছু এসে যায় না। জীবন রক্ষাকারী ওষুধে ভেজাল দেয়ার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা রেখে নতুন ওষুধনীতি আইন হওয়া প্রয়োজন।

২০০৯ সালে যখন রীড ফার্মা লিমিটেডের প্যারাসিটামল খেয়ে শিশুরা মারা গেছে তখনও কসবা উপজেলার হারাগাছা বাজার, কুমিল্লা ব্রাহ্মণ পাড়া, নরসিংদী জেলার মনোহরদীসহ গ্রামেগঞ্জে এই বিষাক্ত প্যারাসিটামল বিক্রি হতে দেখা গেছে।

প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে গত কয়েক সপ্তাহে ২৩৩ শিশু মারা গেছে। ১৫ নভেম্বর, ২০১২ ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও বিসিএস-এর যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত “জটিল কিডনি রোগ: পরিস্থিতি বিশ্লেষণ শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। ঢাকা শিশু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হানিফ, রেপিস্ট্রার ডা. দিলরুবা রহমান ও ট্রেইনী ডা. রিয়াজ মুবারক যৌথভাবে জটিল কিডনি রোগে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে এক জরিপ চালান । ডা. হানিফ বলেন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাগারে গবেষণা করে দেখা গেছে একধরণের প্যারাসিটামল সিরাপে দ্র্ােবক হিসাবে প্রোপাইলিন গ্লাইকোল ব্যবহার না করেডাই ইথাইলিন গ্লাইকোল ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে হাজার হাজার নিরীহ পিতামাতা বাজারে সহজলভ্য প্রচলিত প্যারাসিটামল সিরাপ খাইয়ে শিশুদের চিকিৎসা করাচ্ছেন। শিশু হাসপাতালে জটিল কিডনি রোগে (এ আর এফ) আক্রান্ত ৩০৯ টি শিশুর ওপর জরিপ চালানো হয়। তাদের মধ্যে ২৩৩ টি শিশু মারা যায়। এই সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডা. মকবুল হোসেন চৌধুরী,ডা. সেলিমুল হক, অধ্যাপক এম, আর খান, কর্নেল জিয়া উদ্দিন, মেজর সামিনা, অধ্যাপক এম.এস. আকবর, (প্রয়াত) ডা. আতিকুর আকবর, ডা. আতিকুর রহমান প্রমুখ।

অধ্যাপক এম.এস. আকবর, (প্রয়াত) বলেন, ক্ষতিকর ডাই ইথাইলিন গ্লাইকোল অন্যান্য ওষুধে তরল উপাদান হিসেবে আছে কিনা এটা নিশ্চিত হবার জন্য অবিলম্বে পরীক্ষা করে দেখা দরকার। অংশগ্রহণকারী অন্যান্য সদস্যরা বলেন সব ধরণের প্যারাসিটামল সিরাপই পরীক্ষা করে দেখা দরকার এবং এ উপাদান ব্যবহারের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।

১৯৯২ সালে ক্ষতিকর প্যারাসিটামল সিরাপে পরীক্ষায় ট্যানারীতে ব্যবহৃত বিষাক্ত কেমিক্যাল ইথালিন ও ডাই- ইথাইলিন গ্লাইকোল থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু কিডনী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হানিফ শিশুদের ব্যবহৃত প্যারাসিটামল সিরাপ নিজের উদ্যোগে পরীক্ষা করেন। তিনি এসব সিরাপে বিষাক্ত ডাই-ইথাইলিন গ্লাইকোল ও ইথালিন থাকার প্রমাণ পান। প্রাথমিক ভাবে তিনি নিশ্চিত হয়ে বিষয়টি হাসপাতাল কর্তপক্ষকে জানান। ১৯৯২ সালে প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ৩৩৯ জন শিশুর মৃত্যর ঘটনার তথ্য শিশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. হানিফের নিকট রয়েছে।

হাসপাতাল পরিচালক অধ্যাপক ডা.এ আর খান একটি তদন্ত কমিটি করে বিষয়টি সম্পর্কে প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত হন। এবং বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানান। ২২ জুলাই রীড ফার্মা সীল গালা করা হয়। পরবর্তীতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা.আ.ফ.ম রুহুল হকের নির্দেশে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ডা. আব্দুল জলিল। ২২ জুলাই থেকে বিষাক্ত প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত শুরু করে তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে। এ পর্যন্ত ২৫ টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বিষাক্ত প্যারাসিটামল খেয়ে। ২৯ জুলাই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে তাদের তদন্তের রিপোর্ট পেশ করেন। ৩০ জুলাই সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান তদন্ত কমিটি নিশ্চিত হয়েছেন রীড ফার্মসিউটিক্যালের ওষুধ খেয়ে শিশুরা মারা গেছে।

পাক্ষিক চিন্তার পক্ষ থেকে ২ রা ডিসেম্বর, ১৯৯২ সালে ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু কিডনী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হানিফের একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। সেখান থেকে একটি প্রশ্ন তুলে ধরছি:

প্রশ্ন: প্যারাসিটামল সিরাপে ডাই ইথাইলিন গ্লাইকোর টেস্ট করার জন্য জাপানে ও আমেরিকায় স্যাম্পল পাঠিয়েছিলেন কেন?

উত্তর: বাংলাদেশে এই টেস্ট কারার কোন রূপ ব্যবস্থা নেই, কারণ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নেই। তাই বাংলাদেশে পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। আমি বাংলাদেশের কয়েকটি জায়গায় চেষ্ট করেছি, যেমন পাবলিক হেলথ্ ,ফুডন্ড ড্রাগ ও ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্যাসক্রোমেটোগ্রাফী নামে একটি বিশেষ মেমিন আছে যেটাতে এটা পরীক্ষা করা যায় কিন্তু সেই মেশিনের এক্সপার্ট নেই, ফলে জাপানের এক নার্স ইউসি নওজী তাকে দিয়ে জাপানে পাঠিয়েছিলাম। আমেরিকান ডাক্তার ম্যাইকেল ভ্যানিস তিনি ট্যাপি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। তিনি নমুনা আমেরিকার প্রখ্যাত টেলভ্যালি ল্যাবরেটরীতে পরীক্ষা করে ছিলেন।

জুলাই, ২০০৯ সালের ২৩ তারিখে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্যারাসিটামল খেয়ে শিশু মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন বের হয়। এই ধরনের ভয়াবহ তথ্য দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন স্বাস্থ্য সচেতন প্রতিষ্ঠানগুলো। স্বাস্থ্য আন্দোলন নেটওয়ার্ক ও স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটি নামে দুটি সংগঠন যৌথভাবে প্রতিবাদ জানাবার জন্য ১৯ আগস্ট, ২০০৯ সালে সকাল ১১ টায় মতিঝিলে অবস্থিত ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তর (১০৫-১০৬ নং মতিঝিল, ঢাকা) এর সামনে এক প্রতিবাদী মানববন্ধনের আয়োজন করে। সঞ্চালক ছিলেন সীমা দাস সীমু, ব্যবস্থাপনা পরিচালক উবিনীগ। মানববন্ধনে স্বাস্থ্য আন্দোলন ও স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির সদস্যরা ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন যেমন নারী সংগঠন, শ্রমিক সংগঠন, সামাজিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন, গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজের ছাত্র/ছাত্রী এবং সাধারণ মানুষ এই মানব বন্ধনে যোগ দেয়।


প্যারাসিটামল ১৯ আগষ্ট ২০০৯


স্বাস্থ্য আন্দোলনের পক্ষ থেকে দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি দল (শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ ও স্বাস্থ্য আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক ফরিদা আখতার) ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তর এ গিয়ে পরিচালক ব্রেগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল হোসেনকে স্বারক লিপি দেন। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ (গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল) স্বাস্থ্য আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক ফরিদা আখতার, সৈয়দ মাহবুবুল আলম (প্রোগাম ম্যানেজার, ডাব্লিউবিবিট্রাষ্ট), রোকেয়া বেগম স্বাস্থ্য গবেষক উবিনীগ, জাহানারা শেখ (মুক্ত শিশু নারী শ্রমিক ফেডারেশন), ফিরোজা বেগম (বাঁচতে শিখো নারী) এবং স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন শশাংক বরণ রায়। এছাড়াও সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী লতা বলে আমাদের বিষাক্ত প্যারাসিটামল খাইয়ে মারবেন না। আমরা শিশুরা বাঁচতে চাই। বক্তারা বলেন, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এ পর্যন্ত ২৫ টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে বিষাক্ত প্যারাসিটামল খেয়ে। সর্বশেষ ঢাকা শিশু হাসপাতাল থেকে তথ্য নিয়ে জানা গেছে মোট ভর্তিকৃত ২৮ জন শিশুর মধ্যে ২১ জনই মারা গেছে, ২ জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে রয়েছে। রীড ফার্মাসিউটিক্যালের এসব সিরাপে বিষাক্ত ডাই-ইথালিন গ্লাইকোল থাকার প্রমান পাওয়া গেছে। ওষুধ প্রশাসনের দায়িত্বহীনতার কারনে এই ভয়াবহ মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে এবং অকারনে এই শিশুদের জীবন দিতে হয়েছে। প্যারাসিটমলে বিষ কেন? এর জবাব ওষুধ প্রশাসনকে দিতে হবে।


প্যারাসিটামল ১৯ আগষ্ট ২০০৯


মানববন্ধনে উত্থাপিত দাবি:

১. রীড ফার্মাসহ যেসব ওষুধ কোম্পানী এখনো প্যারাসিটামল তৈরি করছে এবং বাজার জাত করছে তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

২. স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে রেডিও, টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ও প্রজ্ঞাপন দিয়ে এই ক্ষতিকর প্যারাসিটামল ওষুধ সম্পর্কে জনগণকে জানাবার দাবি করছি।

৩. যেসব শিশু মারা গেছে তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৪. যেসব শিশু এখন বেঁচে আছে তাদের চিকিৎসার পুরো দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।

তথ্যসুত্র: স্বাস্থ্য অধিকার বার্ষিক প্রতিবেদন-বছর ১, পাক্ষিক চিন্তা বছর ২-সংখ্যা ১১

যুগান্তর, নয়াদিগন্ত।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।