ধোঁয়াবিহীন তামাক অসংক্রামক রোগের ঝুকি বাড়ায়


তামাক একটি বিষাক্ত গাছ। এর মধ্যে আছে নিকোটিন। সাত হাজারের অধিক বিষাক্ত যৌগিক পদার্থ। যার সত্তরটি কেবল মাত্র ক্যান্সারের কারণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। তামাক হিরোইন এর চাইতে শক্ত নেশা দ্রব্য।

তামাক ব্যবহারের সাথে যুক্ত রোগের তালিকা দিনে দিনে দির্ঘায়িত হচ্ছে। নতুন ভাবে যুক্ত হয়েছে এবডমিনাল এ্যায়োরটিক এনিউরিজম, মায়ালসিক লিউকোমিয়া ও কাটারাক্ট। সারভাইকাল ক্যান্সার, কিডনি ক্যান্সার। প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সার, লিউকোমিয়া, পরিওডেনটাইটিস এবং পাকস্থলির ক্যান্সার। এর সাথে রয়েছে কার্ডিওডাসকুলার ডিজিজ, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, এজমা, অষ্টিওপোরোসিস; ব্লাডার, স্বরযন্ত্র, ফুসফুস, মুখ, গলার ক্যান্সার; শিশুর জন্মগত ক্রটি, শিশুর অস্বাভাবিক মৃত্যু ইত্যাদি। এক কথায় তৃতীয় সহস্রাদ্বের উষা লগ্নে অসংক্রামক ব্যাধি নিরব ঘাতকের মত পৃথিবীকে গ্রাস করছে। এর মূলে রয়েছে নিকোটিন, তামাক।

সম্প্রতিক কালে বিশ্বব্যাপি ধুম পানের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ ভাবে ধারণা করা হয় যে, ধোয়াবিহীন তামাকের ক্ষতি ধোঁয়াযুক্ত তামাক যেমন সিগারেট, চুরুট, বিড়ি ইত্যাদির চেয়ে কম। এ ধারণা থেকে উন্নত বিশ্ব যেমন ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার বাড়ছে।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপি ৭০টি দেশে ৩০ কোটি মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্য সেবন করেন। এদের ৮৫% বাস করে ভারত, মায়ানমার, নেপাল এবং বাংলাদেশে। বাংলাদেশের নাগরিকদের ২৭% যাদের বয়স ১৫ বছরের উপরে তারা ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করেন। বাংলাদেশে ২ কোটি ৮০ লক্ষ লোক ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করেন। এক্ষত্রে ভারতের পরেই বাংলাদেশের স্থান।

বাংলাদেশে ব্যবহৃত ধোঁয়াবিহীন তামাকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: (১) জর্দা, (২) গুল ও (৩) সাদাপাতা। এসব দ্রব্য তুলনামূলকভাবে সস্তা। সে জন্য নিম্ন আয়ের মানুষরাই বেশী ব্যবহার করেন।

ধোঁয়াবিহীন তামাক নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে: (১) নিকোটিনের নেশা। নিকোটিনের নেশা হিরোইনের চেয়ে শক্ত নেশা, (২) মুখ ও গলার ক্যান্সার, (৩) হৃদ রোগ, (৪) মেটাবলিক সিনড্রম (ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্ত চাপ, অবিসিটি), (৫) মাতৃত্বকালিন জটিলতা (রক্তসল্পতা, মৃত শিশুর জন্ম, সময়ের আগে প্রসব, খর্বকায় শিশুর জন্ম, ইত্যাদি), (৬) মাঢ়ী এবং গালে ক্যান্সার, (৭) পেপটিক আলসার, (৮) লিউকোপ্লাকিয়া (মুখে ঘাঁ), (৯) হৃদরোগ এবং (১০) ষ্ট্রোক।

ধোঁয়াবিহীন তামাক তথা তামাক ব্যবহারের চিত্র আমাদের এক ভয়াবহ ভবিষ্যতের ইঙ্গিত বহন করছে। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশে যে মানুষ মৃত্যু বরন করেন তাদের ৬২% বয়স্ক ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ অসংক্রামক ব্যাধি যেমন উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, এজমা, কিডনি রোগ, অষ্টিওপোরোসিস, ইত্যাদি। এ সব রোগের সঙ্গে তামাক সেবনের  প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে। ধুমপান বিরোধী আন্দোলনের ফলে ধোঁয়াযুক্ত তামাকের ব্যবহার কমছে। অন্য দিকে ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার বাড়ছে। এটা মোটেও শুভ লক্ষণ নয়। ধোঁয়াবিহীন তামাকের আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে। ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার বন্ধ করতে নিম্ন বর্নিত বিষয় গুলি বিবেচনা করা যেতে পারে; (১) ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবনের কুফল সম্পর্কে ব্যাপক জন সচেতনতা সৃষ্টি করা যেতে পারে, (২) তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চ হারে কর প্রয়োগ করতে হবে। (৩) প্রকাশ্যে ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্য সেবন বন্ধ করতে হবে। (৪) শীক্ষার্থীদের মাঝে ধোঁয়াবিহীন তামাকের মারাত্মক প্রভাব সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা দিতে হবে। (৫) বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ধোঁয়াবিহীন তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে প্রচার চালাতে হবে। (৬) সব রকম টিকেট, বিল, ভাউচার, ইত্যাদিতে ধোঁয়াবিহীন তামাকের ক্ষতির প্রভাব সম্পর্কে ছবি ও বক্তব্য প্রচার করতে হবে। (৭) আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদেরকে ধুমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন ২০১৩ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে এবং আইন প্রয়োগে উৎসাহীত করা প্রয়োজন। (৮) কৃষকদের তামাক চাষ বন্ধ করে খাদ্য শস্য উৎপাদনে সহায়তা দেয়া যেতে পারে।

কনসালট্যান্ট, উবিনীগ


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।