জর্দা, গুলসহ সকল তামাক পণ্যের মোড়কে সচিত্র সতর্কবাণী মূদ্রণ নিশ্চিত করতে হবে


তাবিনাজ (তামাক বিরোধী নারী জোট) তামাক ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করা এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের সহায়তার উদ্দেশ্যে ৬৪টি জেলায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাবিনাজ মূলত: ধোঁয়াবিহীন তামাক অর্থাৎ জর্দা, গুল, সাদাপাতাসহ সকল ধরনের তামাক পণ্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এর জন্য কাজ করছে।

তাবিনাজের অধিকাংশ সদস্য গ্রামে উপজেলা এবং জেলায় রয়েছেন এবং তামাক ব্যবহারের কারণে ক্ষতির দিক তুলে ধরে ব্যাপক সচেতনতার কাজ করে যাচ্ছে তাবিনাজ। তামাক নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ রয়েছে, তাবিনাজ এই উদ্যোগগুলোর সহায়ক ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে প্রথম চুক্তি Convention on Tobacco Control (FCTC) কে বাংলাদেশ সর্বপ্রথম স্বাক্ষর করে ২০০৩ সালে। তার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৫ সালে ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০০৫ প্রণয়ন করা হয়। এই আইনের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং পরিবহনের ধূমপান মুক্ত করা। এ আইনে বিজ্ঞাপন ও পৃষ্ঠপোষকতা নিষিদ্ধ এবং ৩০% অংশ জুড়ে সিগারেট এর গায়ে সতর্কবাণী প্রদানের নির্দেশনা রয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে সিগারেটের দাম বৃদ্ধি হয় এবং ৩০% সতর্কবাণী সিগারেটের পেকেটের মধ্যে লাগানো হয়। যা ২০১৩ সংশোধনীতে ৫০% সতর্কবাণী দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

২০১১ সালে তাবিনাজ থেকে ধোঁয়াবিহীন তামাক নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ সম্পৃক্ত করার জন্য আইন সংশোধনীর জন্য দাবী করা শুরু করলো। এই সংশোধনীতে আইনের কিছু ফাঁক সংশোধনের জন্য তাবিনাজ এবং তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো কাজ করে। ২০১৩ সালে আইন সংশোধনীতে ধোঁয়াবিহীন তামাক যেমন জর্দা, গুল, সাদাপাতা খৈনী সংজ্ঞাতে অন্তরভুক্ত করা হয়। আইনের এই সংশোধনী সংজ্ঞাকে কেন্দ্র করে আইন বাস্তবায়নের জন্য যে সকল ধারায় কাজ করা যায়, তাবিনাজ তা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে জর্দা, গুল বাজারজাতকরনের জন্য বিজ্ঞাপন প্রচারণা, পৃষ্ঠপোষকতা নিষিদ্ধ, শিশুদের দিয়ে তামাক পণ্য বেচাকেনা না করানো আইনের বিধান রয়েছে। আগামী ১৯ মার্চ ২০১৬ প্যাকেট বা কৌটার গায়ে ছবিসহ সতর্কবাণীর থাকতে হবে। তাবিনাজ এই তিনটি ধারা নিয়ে বিভিন্ন জেলায় কাজ করছে।

তাবিনাজের ২৯ জন সদস্য জেলা টাস্কফোর্স ও উপজেলা টাস্কফোর্স এর সদস্য। টাস্কফোর্স এর সভায় তাবিনাজের সদস্য টাস্কফোর্স সভায় নিয়মিত উপস্থিত থাকেন এবং সভায় ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের বিষয়টি এজেন্ডা হিসাবে নিয়ে আসেন। শিশুদের দিয়ে ধোঁয়াবিহীন তামাক বিক্রি করছে এমন সব দোকানে মোবাইল কোট পরিচালনায় সহায়তা করে আসছে। তাবিনাজ নিয়মিত কর বৃদ্ধি এবং আইন বাস্তবায়নের জন্য সরকারের কাছে নিয়মিত দাবী জানিয়ে আসছে।

তাবিনাজের সামনের কাজের পরিকল্পনা হলো আইনের ১০ নং ধারা অর্থাৎ সচিত্র সতর্কবাণী প্রদান প্রসঙ্গে। এই ধারায় বলা হয়েছে সব ধরনের তামাক পণ্য জর্দা, গুল, সিগারেট এবং বিড়ি’র কৌটা বা প্যাকেটে সচিত্র বাণী থাকতে হবে। ১৯ মার্চ, ২০১৬ থেকে যাতে আইনটি কার্যকর হয় তার জন্য তাবিনাজ সক্রিয় থাকবে। ইতিপূর্বে তাবিনাজের একটি অনুসন্ধান হয়েছে। সেই অনুসন্ধানে ৩৭টি জেলায় ১২৭টি জর্দা এবং ২৩টি গুল কারখানার তথ্য রয়েছে। জর্দা, গুল কারখানা ২ ভাবে পরিচালিত হয়। কিছু কারখানা সরাসরি কারখানার রূপ নিয়ে- যেমন সাইন বোর্ড। ভ্যাট, ট্যাক্স দিয়ে এবং কারখানা পরিচালনার নিয়ম মেনে কাজ করছে। কিন্তু তাবিনাজের সংগৃহীত বেশীর ভাগ কারখানা একেবারে ঘরোয়া পরিবেশে পণ্য উৎপাদন করছে। এই সব কারখানা খুবই দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে। কারখানাগুলো যে জায়গায় অবস্থান করছে সেখানে কোন সাইন বোর্ড ব্যবহার করেন না। এদের মধ্যে কেউ কোন ভ্যাট, ট্যাক্স দেয় আবার কারো কারো এধরনের কোন প্রকার কাজের সাথে সম্পৃক্ত নাই। তাই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে সরকার কিভাবে তাদেরকে ভ্যাট বা ট্যাক্সের আওতায় আছে কিনা বুঝতে পারবে?

তামাক পণ্যের উপর সচিত্র সতর্কবাণী আসা খুবই জরুরী। জর্দা, গুল, সাদাপাতা ব্যবহারকারী মহিলার সংখ্যা বেশী এ তথ্য এখন আর কারো অজানা নয়। তাবিনাজের সদস্যরা যখন গ্রামে বা শহরে যে সকল ব্যক্তি জর্দা, গুল খেয়ে থাকেন তাদের সচেতন করেন তখন তাদের কথার গুরুত্ব তেমন পায় না। বড়, ছোট সব বয়সীরা একত্রে বসে আয়োজন করে তামাক পণ্য (জর্দা, গুল, সাদাপাতা) ব্যবহার করছে। যেটা ধূমপানের ক্ষেত্রে নাই। কাজেই জর্দা, গুল ব্যবহারকারীদের এই সকল পণ্যের ক্ষতির দিক বুঝানো খুবই কঠিন হয়ে পরে।

আমরা কিছু ব্যবহারকারীকে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি যারা অসুস্থ অবস্থায় আছেন। তাদেরকে যে সকল ব্যক্তি চিকিৎসা করে থাকেন তাদের সাথেও কথা বলে দেখেছি তাদের অবস্থার পরিবর্তন আনা খুবই কঠিন কাজ। যারা বেশী অসুস্থ তারা জর্দা,সাদাপাতা ও গুলের ব্যবহার ছেড়ে দেন নিরূপায় হয়ে কিন্তু দুঃখের বিষয় যারা গুরুত্বর অসুস্থ হওয়ার পথে তারা এখনো বুঝতে পারছেন না।

আমরা কিছু কারখানা পরিদর্শন করে দেখেছি। কারখানার মালিকদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম এ বিষয় তারা অবগত নয়।

এ অবস্থায় যা করা অত্যান্ত জরুরী তা হলো সরকারকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা যাতে সরকার পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।

১. যে সকল কারখানা লাইসেন্স, ভ্যাট রেজিষ্ট্রেশান, ট্যাক্স এর আওতায় রয়েছে তাদের অবিলম্বে এই সকল মাধ্যমে ব্যবহার করে সচিত্র সতর্কবাণী সম্পর্কে অবগত করা।

২. জেলা এবং উপজেলা পর্যায় কারখানা অস্থিত্ব খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা।

সর্বপরি সকল ধরনের তামাক পণ্যে ব্যহারের ক্ষতিকর ছবির দিক তুলে ধরে সচেতন করা যাতে জনগণ সকল প্রকার তামাক ব্যবহার আর না করে।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।