আসন্ন বাজেট (২০১৬-২০১৭) তে ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের উপর কর বৃদ্ধির জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাক্ষাৎ


আসন্ন বাজেট (২০১৬-২০১৭) তে ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের উপর কর বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনার জন্য ২৫ মে, ২০১৬ তারিখ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সভাকক্ষে চেয়ারম্যান জনাব মোঃ নজিবুর রহমানের সাথে তাবিনাজের একটি প্রতিনিধি দল সাক্ষাৎ করে। এই প্রতিনিধি দলে অংশগ্রহন করেন কুমিল্লা, জামালপুর, টাংগাইল, জেলার তাবিনাজ সদস্যগণসহ ঢাকা আহছানিয়া মিশন, উবিনীগ ও তাবিনাজের সচিবালয় নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা ঢাকা।

নির্দিষ্ট ভাবে ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের উপর কর বাড়ানোর দাবীতে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের ক্ষতি ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। যেমন, ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন মুখের ক্যান্সার, খাদ্যনালীর ক্যান্সার, অগ্নাশয়ের ক্যান্সার, রক্তচাপ ও হৃদকম্পন বৃদ্ধির মতো মারাত্মক রোগের কারণ। এছাড়া নারীদের ক্ষেত্রে সন্তান জন্মদান সংক্রান্ত জটিলতা (যেমন কম ওজনের সন্তান জন্মদান) হতে পারে ।

সবচেয়ে বেশি মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে। বাংলাদেশে ধূমপানের (২৩% অর্থাৎ ২ কোটি ১৯ লক্ষ) তুলনায় ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবনের হার (২৭% অর্থাৎ ২ কোটি ৫৯ লক্ষ) বেশী। সবমিলিয়ে দেশের ৪৩% অর্থাৎ ৪ কোটি ১৩ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করে । বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সের প্রায় ৪.৫% কিশোর-কিশোরী ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য ব্যবহার করে । ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের হার নারীদের মধ্যে অনেক বেশি (২৮ শতাংশ অর্থাৎ ১ কোটি) ।

ধোঁয়াবিহীন তামাক সবচেয়ে সস্তা। দেশে গুল, জর্দ্দা, সাদাপাতা ইত্যাদি জাতীয় ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের দাম অত্যন্ত সস্তা। বাজারে প্রতি কৌটা গুল মাত্র ২ টাকা ও জর্দ্দা মাত্র ৫ টাকায় পাওয়া যায়।

সবচেয়ে কম রাজস্ব আসে ধোঁয়াবিহীন তামাক থেকে । ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে মাত্র ১৪.৩৬ কোটি টাকা যা তামাকখাত থেকে অর্জিত মোট রাজস্বের ১ শতাংশেরও কম। তামাক উৎপাদনে অগ্রসর ভৌগলিক অঞ্চলসমূহ পর্যবেক্ষণ করে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, জর্দ্দা এবং গুলের প্যাকেটে রাজস্ব আদায় নির্ধারণী কোন চিহ্নই নেই যা রাজস্ব ফাঁকির প্রত্যক্ষ প্রমাণ। এছাড়াও, জর্দ্দা ও গুলের প্যাকেটের ধরন ও মাপের ভিন্নতা কর ফাঁকির পথ সুগম করে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ নজিবুর রহমান বলেন, আপনাদের আগে আরো কয়েকজন আমার সাথে বসেছেন এবং তারা তাদের লিখিত বক্তব্যও দিয়েছেন। বিড়ি শ্রমিকদের বিষয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক মেজবাহ কামাল। আমরা পরবর্তীতে একটি বড় ফোরামে বসতে পারি। সেখানে সকলের মতামত আমরা জানতে পারবো।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বিড়ি কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে শ্রমিকদের কি হবে। এর জবাবে তাবিনাজ থেকে বলা হয়, প্রথমত বিড়ি কারখানা কোন শিল্প নয়। দ্বিতীয়ত বিড়ি কারখানায় যারা কাজ করে তারা অন্যান্য পেশার লোক।

তাবিনাজের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান মোঃ নজিবুর রহমানকে জর্দা গুল কারখানার অনুসন্ধানের বই, বিভিন্ন ফ্যাক্টশীট আরো অন্যান্য তথ্যাদি প্রদান করা হয়। তাবিনাজের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনাগুলো নজরে রাখবেন বলে তিনি জানান।

আলোচনার মাধ্যমে যেসকল প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়:

  • ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যে কর আরোপের ক্ষেত্রে বিদ্যমান এক্স-ফ্যাক্টরী প্রথা বাতিল করে খুচরা মূল্যের ৭০ শতাংশ সমপরিমান স্পেসিফিক এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপ করা।
  • কর আদায় সহজীকরনের লক্ষ্যে অভিন্ন ১০০ গ্রামের প্যাকেট বা কৌটা চালু এবং এর ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ স্পেসিফিক) এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপ করা।
  • মোড়কে বা কৌটায় বিড়ি-সিগারেটের ন্যায় রাজস্ব আদায় নির্ধারণী স্ট্যাম্প বা ব্যান্ডরোল প্রথা চালু করা।
  • ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যে বিদ্যমান স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি কওে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা।

ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্য উৎপাদন ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে লাইসেন্সিং প্রথা চালু করা। সারাদেশে অসংখ্য অনিবন্ধিত ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্য উৎপাদন কারখানা ও বিক্রয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেগুলোকে শক্ত মনিটরিং এর আওতায় নিয়ে আসা।

1 International Agency for Research on Cancer (IARC). IARC Monographs on the Evaluation of Carcinogenic Risks to Humans. Volume 83: Tobacco smoke and involuntary smoking: Summary of data reported and evaluation. Geneva: WHO; 2002. Available from: http://monographs.iarc.fr/ENG/Monographs/vol83/volume83.pdf.
2 Global Adult Tobacco Survey, 2009
3 Global Youth Tobacco Survey, 2013
4 Global Adult Tobacco Survey, 2009


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।