আইনে নিষিদ্ধ থাকলেও শিশুরা এখনও তামাক পণ্য বিক্রি করছে


শিশুদের দিয়ে তামাক পণ্য অর্থাৎ জর্দ্দা, গুল, সাদাপাতা, বিড়ি, সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ এ কথা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ ( ২০১৩ সালে সংশোধনী) তে ৬ (ক) তে বলা আছে। আইনে এ কথা বলা থাকলেও আমরা প্রতি নিয়ত শিশুদের দিয়ে এ পণ্য ক্রয় বিক্রয় করতে দেখি। তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) এর পক্ষ থেকে শিশুদের দিয়ে তামাক পণ্য বিক্রি হচ্ছে কিনা দেখার জন্য ২২ আগষ্ট, ২০১৬-তারিখে শ্যামলী বাস স্ট্যান্ড কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ড ও গাবতলী বাস স্ট্যান্ডে পরিদর্শন করা হয়। সেখানে আমরা শিশুদের দিয়ে কেনা বেচা করতে দেখতে পাই এবং ২ জন শিশু পান ও সিগারেট বিক্রেতার কথা এখানে তুলে ধরা হলো।

বিক্রেতার নাম- শামীম, বয়স-১৩ বছর ৬ মাস। পিতার নাম- মোস্তফা, গ্রামের বাড়ি: কিশোরগঞ্জ, ঢাকায় থাকে পানির টেংকী টুলার বাগ মিরপুর। বাবা নিরাপর্ত্তা কর্মী। এরা তিন ভাই। বড় ভাই ব্যবসা করেন, ছোট ভাই পড়াশুনা করেন আর শামীম ঘুড়ে ঘুড়ে পান, সিগারেট বিক্রি করে। শামীম ফেরি করার আগে কোন কাজ করতো না এখন সে ফেরি করে এই কাজ করতে তার ভাল লাগে না। কিন্তু অন্য কোন কাজ পায় না বলে সে এই কাজ করছে। শামীম মিরপুর-১, মিরপুর-১০, টেকনিকেল ও গাবতলী এলাকায় ঢালি করে পান, সিগারেট বিক্রি করে। ফেরী সে নিজেই একাই করে। সে সকাল ৭ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত ফেরি করে আবার বিকাল ৪ টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত ফেরি করে। তার ঢালায় ১৫ রকমের জর্দ্দা আছে ও ৭ রকমের সিগারেট আছে। সে প্রতি দিন ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করে। আবার কোন দিন এর থেকেও বেশি হয়। তার লাভ হয় ১২০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা। আগে সে পান খেতো না। পান বিক্রি করতে করতে সে পান ও জর্দ্দা খাওয়া শিখেছে। শামিম পানের সাথে হাকীমপুরী জর্দ্দা খায়। পান খওয়া যে ক্ষতি তা সে জানে। ঢালি তার বড় ভাই বানিয়ে দিয়েছে।


পথে পান বিক্রি


আর একজন বিক্রেতার নাম: রাজিব, বয়স-১২ বছর, পিতার নাম: আকবর, গ্রামের বাড়ি: টেকেরহাট, গোপালগঞ্জ। ঢাকায় থাকে বাগ বাড়ি গাবতলী। রাজিব পরিবারে বড় ছেলে তার আরও ১ টা ভাই ও ১ টা বোন আছে যারা খুবেই ছোট কিছু করে না। বাবা অসুস্থ কাজ করতে পারে না। রাজিবের মা মানুষের বাড়িতে কাজ করেন। আগে সে ফুতপাতের কাপড়ের দোকানে কর্মচারী হিসাবে কাজ করতো। ফুটপাতের দোকান উঠিয়ে দেওয়ার কারণে তার চাকুরী চলে যায়। সে আর কোন কাজ না পেয়ে বাধ্য হয়ে ফেরিতে পান, সিগারেট বিক্রির কাজ শুরু করে। তার এই কাজ করতে ভাল লাগে না সংসারের খরচ চালানোর জন্য তাকে এই কাজ করতে হচ্ছে। রাজিব ফেরি করে জর্দ্দা, সিগারেট বিক্রি করে। তার ফেরিতে ১১ রকমের জর্দ্দা আছে । তার প্রতিদিন ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা বিক্রি হয়। এতে লাভ থাকে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। সে কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ড ও গাবতলী বাস স্ট্যান্ডে ঘুরে ঘুরে পান ও সিগারেট বিক্রি করে। ঢালি (পান বিক্রি ট্রে) সে নিজেই কিনেছে। মাঝে মধ্যে শখ করে সে ১ টা ২ টা পান খায়। অন্য কোন কাজ পেলে সে করবে। সে এই কাজ ছাড়তে চায়। জর্দ্দা ও সিগারেট যে ক্ষতি করে তা সে জানে।

শিশুদের দিয়ে এ কাজ করতে দেয়া একে বারে আইনিভাবে নিষিদ্ধ, কিন্তু সচেতনতার অভাবে এবং আইন সম্পর্কে না জানার কারণে তারা এ কাজ করে যাচ্ছে, পাশাপাশি তারা নিজেরাও আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাদের সাথে কথা বলে এটা পরিষ্কার হলাম যে বিকল্প যদি কাজ সে পায় তবে এ কাজ ছেড়ে দেবে।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।