২০১৭-১৮ বাজেটে ধোয়াঁবিহীন তামাকের কার্যকর কর বৃদ্ধি না করার প্রতিবাদ


তামাক দ্রব্যের ব্যবহার বাংলাদেশে উদ্বেগজনক হারে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় বেশি। বাংলাদেশে ৪৩ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৪ কোটি ১৩ লক্ষ (GATS, ২০০৯) প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করেন, যার মধ্যে ২৩% (২ কোটি ১৯ লক্ষ) ধূমপানের মাধ্যমে তামাক ব্যবহার করেন এবং ২৭.২% (২ কোটি ৫৯ লক্ষ) ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন। অর্থাৎ অর্ধেকেরও বেশি তামাক ব্যবহারকারী ধোঁয়াবিহীন তামাক (জর্দা, গুল) সেবন করেন। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে এগুলোর উপর কর বাড়ানো হয়নি। আমাদের দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষতঃ নারীদের মাঝে এই পণ্য ব্যবহারের প্রবনতা সবচেয়ে বেশি। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে জর্দা-গুল ব্যবহারের স্বাস্থ্যঝুঁঁকি থেকে রক্ষা করার কোনো উদ্যাগ বাজেটে নেই, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। প্রস্তাবিত বাজেটে (২০১৭-১৮) ধোঁয়াবিহীন (গুল, জর্দা) তামাকপণ্যে কর না বাড়ানোর প্রস্তাব চরম জনস্বাস্থ্য বিরোধী, এবং নারী বিরোধী।

ধোঁয়াবিহীন তামাক স্বাস্থ্যের অত্যন্ত ক্ষতিকর, বিশেষ করে নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব নেতিবাচক। ধোঁয়াযুক্ত এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমাবার আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি হচ্ছে জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে করারোপ করে তামাক পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়া। কিন্তু তামাক দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি ও উচ্চ হারে করারোপ এর মতো কার্যকর পদক্ষেপ এবারের বাজেটে নেই। এই পর্যন্ত করারোপের যে কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে তার ফলে পণ্যের মূল্য ক্রেতার ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে যেতে পারেনি। বিশেষ করে ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্য সংক্রান্ত করের কৌশল উল্লেখযোগ্যভাবে নেয়া হয়নি। এবং জর্দা, গুল, সাদাপাতা অত্যান্ত কম দামে এবং খুচরাভাবে পাওয়া যাওয়ার কারনে ক্রেতা এর প্রতি আকৃষ্ট থাকে। ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য যে ধরনের স্বাস্থ্য হুমকির সৃষ্টি করে সে দিক বিবেচনায় এর ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্যে কার্যকর হারে কর/শুল্ক আরোপ করার জন্যে তাবিনাজসহ তামাক বিরোধী সংগঠন প্রস্তাব করেছে।

২০১৬-১৭ বাজেটে জর্দা ও গুলের উপর সম্পূরক শুল্কের হার ৬০% থেকে বাড়িয়ে ১০০% করা হয়েছে। এছাড়াও পণ্য দুটির আমদানি শুল্কও ১০০% থেকে বৃদ্ধি করে ১৫০% নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্পূরক শুল্ক যতই বাড়ানো হোক না কেন ভিত্তি মূল্য এতো কম যে বাজারে এসব পণ্যের মূল্য খুব একটা পরিবর্তন হয় না। ভ্যাট ধার্য্য করা হয়েছে ১৫%। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এসব পণ্যের রাজস্ব আদায় খুবই দুর্বল। দেশে রেজিষ্ট্রেশনবিহীন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জর্দা ও গুল কারখানা থাকায় ঐসব কারখানা থেকে কর সংগ্রহ করা কঠিন। সুতরাং জর্দা ও গুলের উপর প্রযোজ্য কর আহরণের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তথা সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ জরুরি।


স্বাস্থ্য বাজেট ২০১৭


বাংলাদেশে তামাকের উপর শুল্ক-কাঠামো অত্যন্ত জটিল যেমন, সিগারেটের ক্ষেত্রে মূল্যস্তর প্রথা, বিড়ির ক্ষেত্রে অতি স্বল্পমাদ্রার ট্যারিফ ভ্যালু, গুল-জর্দার ক্ষেত্রে এক্স-ফ্যাক্টরি প্রাইজ ইত্যাদি প্রথা চালু থাকায় দেশে তামাকের ব্যবহার ও ক্রয়-ক্ষমতা হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালের তথ্য বলছে, পৃথিবীর যেসব দেশে তামাকপণ্যের দাম অত্যন্ত সস্তা বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। ফলে সামগ্রিকভাবে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

তামাক জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও অর্থনীতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর একটি পণ্য। তামাকের বহুমাত্রিক ক্ষতি উপলব্ধি করে Sustainable Development Goals (SDG) এর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ৩য় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে WHO Framework Convention on Tobacco Control (FCTC) বাস্তবায়ন একটি অন্যতম কৌশল হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। SDG এর আলোকে প্রণীত দেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেও তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রামকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।

তামাকের নেতিবাচক প্রভাবের কথা বিবেচনা করে প্রস্তবনাসমূহ বাস্তবায়নের আমাদের সুপারিশসমূহ-

  • সিগারেটের ক্ষেত্রে মূল্যস্তরভিত্তিক কর-প্রথা, বিড়ির ক্ষেত্রে ট্যারিফ ভ্যালু প্রথা বাতিল করে কার্যকরভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ স্পেসিফিক এক্সাইজ ট্যাক্স নির্ধারণ করা।
  • গুল-জর্দার ক্ষেত্রে এক্স-ফ্যাক্টরি প্রথা প্রভৃতি বাতিল করে প্যাকেট/কৌটা ওজন ও সাইজ অনুযাযী কার্যকরভাবে নির্দিষ্ট পরিমাণ স্পেসিফিক এক্সাইজ ট্যাক্স নির্ধারণ করা।

জনস্বাস্থ্য, বিশেষ করে নারী স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় রেখে এবারের বাজেটের সংশোধনীতে জর্দা ও গুলের খুচরা মূল্যের ওপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করার দাবি জানাচ্ছি।

ধন্যবাদ।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।