বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস ২০১৪


কর বৃদ্ধির আওতায় ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য আনা হোক

প্রতিবছর ৩১ মে বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস পালিত হয়। প্রতিবারের মতো এবারও পালিত হলো বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এই দিবসে ‘কর বৃদ্ধির আওতায় ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য আনা হোক’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা ও তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ)। সহযোগিতায়: ক্যাম্পেন ফর টোবাকে ফ্রি কিড্স (CTFK)। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক জাত দ্রব্যে কর বৃদ্ধি’। সভাটি অনুষ্ঠিত হয় আসাদ এভিনিউর সিবিসিবি অডিটোরিয়ামে। এই সভায় চিকিৎসক, অথনীতিবিদ, কর কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও নারী আন্দোলনের নেত্রী অধ্যাপক লতিফা আকন্দ। সভাপ্রধান ছিলেন ফরিদা আখতার নির্বাহী পরিচালক, উবিনীগ। সভাটি সঞ্চালনা করেন সাইদা আখতার, সমন্বক, তাবিনাজ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফরিদা আখতার,নির্বাহী পরিচালক, উবিনীগ। শুরুতেই তাবিনাজ সদস্যদের মধ্যে যারা তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভাল প্রতিবেন করেছেন এবং টাংগাইলে অনুষ্ঠিত তাবিনাজের সম্মেলনে যারা ভাল পোষ্টার তৈরী করেছিলেন তাদের কাজের স্বীকৃতির জন্য কিছু উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়। প্রধান অতিথি লতিফা আকন্দ স্বীকৃতি প্রাপ্ত ৬ জনের হাতে উপহার তুলে দেন। প্রতিবেদনের জন্য স্বীকৃতি প্রাপ্তরা হলেন মির্জা তাহমিনা আখতার, নাইস ফাউন্ডেশন, খুলনা, নাসরীন আক্তার, আদর্শ মহিলা সংস্থা, পটুয়াখালী, রহিমা আক্তার লিজা, নারী কল্যাণ সংস্থা নারায়ণগঞ্জ। পোষ্টারের জন্য পেয়েছেন, নিয়াজী সুলতানা অংকুর দুঃস্থ নারী উন্নয়ন সংস্থা, সিরাজগঞ্জ, জিনাত রহমান দিনাজপুর, লায়লা কানিজ, রুরাল ডেভেলপমেন্ট বগুড়া।

সভায় আলোচক হিসেবে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন ফরিদা ইয়াসমিন, রাজস্ব কর্মকর্তা, কাস্টম একসাইজ ও ভ্যাট। সালমা খান, অর্থনীতি বিদ, ইভা নাজনীন, প্রজেক্ট ম্যানেজার, টিএফকে, ডা.স্মিতা কানুনগো, সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন। ডা. শওকত আলী আরমান, গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল।

আলোচকরা বলেন ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কর আরোপ করা হোক। কর বাড়লে ব্যবহার কমবে। বাংলাদেশে ৪৩% (৪ কোটি ১৩ লক্ষ) প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ কোন না কোন ভাবে তামাক সেবন করেন। ধূমপান পুরুষদের মধ্যে বেশী। নারীদের মধ্যে কম, কিন্তু নারীরা পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। কাজেই সিগারেট বিড়িতে কর করারোপ করে ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ হলে নারীদের স্বাস্থ্য রক্ষা হবে। তার সাথে রক্ষা পাবে শিশুরাও। এই বিষয়টি সরকারের নজর দেয়া উচিত। পাশাপাশি ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যে থাকলে ও নারীদের মধ্যে বেশি ২৮ % প্রাপ্ত বয়স্ক নারী এবং ২৬ % প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য সেবন করেন। তামাক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যদিও এসব ক্ষতিকর তামাকপণ্য নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরী। ২০২০ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের ফলে ১ কোটি লোক মারা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তামাকের কারণে সারা বিশ্বে প্রতিবছর ৬০ লাখ মানুষ মারা যায়। যার ৬ লাখই পরোক্ষ ধুমপায়ী। ধুমপানের কারণে অসুস্থতার জন্য সরকারের স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত ব্যয় হয় ১১ কোট টাকা। ডাক্তারা জানান আজকাল ধুমপানের কারণে যুবকদের মধ্যে হার্ট এ্যাটাক বেশি হচ্ছে। পা থেকে মাথা পর্যন্ত কোন জায়গা বাকি নেই যে তামাক ক্ষতি করে না। গর্ভবতী নারীর নিজের ও গর্ভের শিশুর ক্ষতি হয়। মৃত্যু বাচ্চা প্রসব হয়। তামাকের কারণে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হয়। রাজস্ব কর্মকর্তা জানান এবারের বাজেটে তামাক পাতার ওপর ১০% রপ্তানী শোল্ক দেয়া হতো তা না জানার কারণে দেননি। ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যে কর বাড়ালে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। কর বাড়ালে পণ্যের দাম বাড়বে ফলে মানুষ ব্যবহার কমাবে। দারিদ্রতার মূল কারণ তামাক চাষ। সাড়ে ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশী। পশ্চিমা বিশ্বে ২ শতাংশ হারে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার কমছে। আমাদের দেশে ১ শতাংশ হারে বাড়ছে এটা ভয়াবহ খবর। তামাকের ব্যবহার কমাতে উচ্চ- মধ্য-নিম্নমান বা স্লাব ব্যবস্থা তুলে, গড়ে ৭০ শতাংশ কর বাড়ানোর জোর দাবি জানালেও বাস্তবে ২০০৪ সালে কর না বাড়িয়ে আরো একটি স্লাব যুক্ত করা হয়েছে। কর বাড়ানো রাজস্ব আয়ের জন্য নয়। জনস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য তামাকজাত দ্রব্যে কর বাড়াতে হবে। এটা বন্ধ করার জন্য তাবিনাজের একার পক্ষে সম্ভব না। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

সভা বিড়ি সিগারেটের পাশাপাশি জর্দা-গুল-সাদা পাতার ব্যবহার কমানোর জন্যে এর উৎপাদন ও বিক্রয় করেরে আওতায় আনার জানানো দাবী জানানো হয়। তাবিনাজ মনে করে নারীদের, বিশেষ করে গরিব নারীদের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে হয়ে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বাড়াতে হবে, এবং সেটা কর আরোপের মাধ্যমে করলে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।

বাংলাদেশের ৩০ টি জেলার তাবিনাজ সদস সংগঠনের প্রধানরা অংশগ্রহণ করেন। জেলাগুলি হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, সুনামগঞ্জ, মাগুড়া, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, বান্দরবান, পটুয়াখালী, রংপুর, মৌলভী বাজার, হবিগঞ্জ, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম, যশোর, জামালপুর, গোপালগঞ্জ, খুলনা, ময়মনসিংহ, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, বগুড়া, খাগড়াছড়ি, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, সিলেট ও দিনাজপুর। আলোচনা অনুষ্ঠানের আগে তাবিনাজ সদস্যরা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত র‌্যালীতে (প্রেস ক্লাব থেকে ইঞ্জিনীয়ারিং ইন্সটিটিউট পর্যন্ত) অংশগ্রহণ করেন।

 


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।