চট্টগ্রাম বিভাগে তামাক বিরোধী নারী জোটের আলোচনা সভা


গত ২৫ আগস্ট ২০১৪, তারিখে তাবিনাজ ও ইপসার আয়োজনে সিটিএফকের সহযোগিতায় চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার নারী সংগঠদের নিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামের ব্যুরো বাংলাদেশ মিলনায়তনে। সভা সঞ্চালনা করেন ইপসার স্মোক ফ্রি প্রজেক্টের টিম লিডার নাছিম বানু শ্যামলী। সভার আলোচনার বিষয় ছিল “নারীকে তামাকের ক্ষতি থেকে রক্ষা করুন এবং ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ বাস্তবায়নে করণীয় নির্ধারণ’’।

আলোচনা সভার প্রথম অদিবেশনে ইপসার প্রধান নির্বাহী মোঃ আরিফুর রহমান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাঃ মোঃ আলাউদ্দিন মজুমদার, পরিচালক (স্বাস্থ্য), চট্রগ্রাম বিভাগ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাঃ সরফরাজ খান চৌধুরী, সিভিল সার্জন, চট্রগ্রাম; চট্রগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কমিশনার শাহেদা কাসেম সাথী, আন্জুমান আরা বেগম।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন তাবিনাজের সদস্য ও উবিনগের পরিচালক সীমা দাস সীমু। তিনি ধোঁয়াবিহীন তামাকের ক্ষতি নিয়ে আলোচনা করেন । তিনি আরো বলেন- এবার আইনে জর্দা, সাদাপাতা, গুল, খৈনিসহ চোষণ ও চিবানোর মাধ্যমে গ্রহণ করা তামাকজাত দ্রব্য সজ্ঞায় যুক্ত হয়েছে। পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন-ফরিদা আখতার, আহবায়ক, তাবিনাজ এবং নির্বাহী পরিচালক, উবিনীগ। ধোঁয়াবিহীন তামাকের ক্ষতি, বর্তমান পরিস্থিতি, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও এর প্রয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করেন। তাঁর প্রেজেন্টেশনের পর উপস্থিত সদস্যরা এ বিষয়ের উপর মুক্ত আলোচনা করেন।

বিশেষ অতিথি সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সরফরাজ খান চৌধুরী বলেন, মা-বোনদের উচিৎ জর্দা থেকে দূরে থাকা এবং এগুলো গ্রহণের ফলে গলার ক্যান্সার, মুখের ক্যান্সার, পাকস্থলীর ক্যান্সার ও লিভার ক্যান্সার হতে পারে। আমাদের এগুলো থেকে দূরে থাকা উচিৎ।


সিভিল সার্জন


প্রধান অতিথি ডাঃ আলাউদ্দিন মজুমদার, পরিচালক (স্বাস্থ্য), চট্রগ্রাম বিভাগ বলেন ধূমপান, তামাক, জর্দা, গুল ইত্যাদি গ্রহণ করা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি এবং এগুলো থেকে মা-বোনদের দূরে রাখার জন্য প্রচারণা চালানোর জন্য সরকারের পাশাপাশি উপস্থিত নারী সংগঠনদের আহবান জানান।


প্রধান অতিথি ডাঃ আলাউদ্দিন মজুমদার


সভাপতি বক্তব্যে ইপসার প্রধান নির্বাহী মোঃ আরিফুর রহমান বলেন, ধূমপানবিরোধী চট্রগ্রামের বিভিন্ন সফল কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন এবং তামাকের ক্ষতির দিক নিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগে তাবিনজের নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করার জন্য আহবান জানান।

দ্বিতীয় অধিবেশনে তিনটি দলে আলোচনা হয়:

১.আইনের কোন কোন জায়গাতে তাবিনাজ কাজ করতে পারবে, তাবিনাজ কাদের সাথে কাজ করবে, কি কাজ করবে,এই কাজে বাধাগুলো কি হতে পারে তা চিহ্নিত করে একই সাথে-

২. তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণের নীতিমালা তৈরীতে কিছু সুপারিশ প্রদান করেন,

-তামাক চাষে জমির পরিমান নির্দিষ্ট করা,

-তামাক চাষ বন্ধ করলে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা এবং অন্যান্য সুবিধা- বীজ, সার বৃদ্ধি করা

-তামাক পাতা বিক্রয় স্থান নির্দিষ্ট করা

-কর/ ভ্যাট বৃদ্ধি করা

-তামাক চাষীর শাস্তি ও জড়িমানা বিধান রাখা

-জমির মালিকের উপর আইনগত বিধি নিষেধ আরোপ করা (স্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর হুমকি স্বরুপ তামাক চাষে জমি লিজ দেয়া যাবেনা)

-কৃষক তামাক কোম্পানীর কাছ থেকে ঋণ নিলে তাকে অন্যান্য কৃষি সম্পর্কিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা

-তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মনিটরিং সেল গঠন

-সরকারের নজরদারিমূলক ফলোআপ পরিকল্পনা করা এবং বাস্তবায়ন করা

-কৃষি ফসল উৎপাদন উপকরণসহ সকল প্রকার সহযোগিতা করা


গুরুপ আলোচনা


তাবিনাজের কর্মশালায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহপরিচালক ও জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাগণের অংশগ্রহণে কর্মশালা

গত ৩০ আগষ্ট ২০১৪ তারিখে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অংশগ্রহনে “ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন- বাস্তবায়নে করণীয় নির্ধারণ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় আসাদ এভিন্যু, মোহাম্মদপুরে। কর্মশালায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের জেলা পযার্য়ের ৩১টি জেলার কর্মকর্তা, ১৫টি জেলার নেতৃস্থানীয় তাবিনাজের সদস্য, তামাক নিয়ন্ত্রণ কাজের সংগঠনসমূহ অংশগ্রহন করেন। কর্মশালা সঞ্চালনা করেন উবিনগের পরিচালক সীমাদাস সীমু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন তাবিনাজ ও নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা সমন্বক সাইদা আখতার। সভাপ্রধান ছিলেন দি ইউনিয়নের টেকনিক্যাল এডভাইজার ইসরাত চৌধুরী।

প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহিন আহ্মেদ চৌধুরী। আলোচক ছিলেন উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক ও তাবিনাজের আহবায়ক ফরিদা আখতার; ক্যাম্পেন ফর টোবাকো ফ্রি কিডসের কান্ট্রি ডাইরেক্টর তাইফুর রহমান; জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী আমিন-উল-আহসান; এবং বাগেরহাট জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা।


30 agust


দ্বিতীয় অধিবেশনে তামাক ব্যবহারে স্বাস্থ্য ঝুকি নিয়ে আলোচনা করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক ডাঃ সোহেল রেজা চৌধুরী; তামাক ব্যবহার ও নারী বিষয়ের উপর আলোচনা করেন ডাব্লিউবিবি ট্রাষ্টের পরিচালক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন; বাংলাদেশে তামাকের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা ও পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধে করণীয় বিষয়ের উপর আলোচনা করেন ইনভায়রনমেন্ট কাউন্সিল বাংলাদেশের প্রোজেক্ট কোর্ডিনেটর এমদাদুল হক ভুঁইয়া; এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম মিডিয়াতে কি রিফ্ল্যাকশন তার উপর আলোচনা করেন প্রজ্ঞার প্রজেক্ট কোর্ডিনেটর হাসান শাহরিয়ার। সবশেষে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের জেলা কর্মকমর্তাদের কাছে প্রত্যাশা তুলে ধরেন তাবিনাজের সিরাজগঞ্জ জেলার সদস্য হোসনে আরা জলি, নির্বাহী পরিচালক, প্রোগ্রাম ফর উইমেন ডেভেলপমেন্ট। প্রত্যাশাসমূহ:

জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাগণ ধোয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সভা, সেমিনার, ভিজিডি, মাতৃত্বভাতা, ল্যাটিটিং ভাতা, ডাব্লিউটিসি, মহিলাদের উঠান বৈঠকে আলোচনা করবেন।


WBB


মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কতৃর্ক আয়োজিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণের সেশনে তাবিনাজ সদস্যদের দ্বারা আলোচনার সুযোগ করে দেয়া।

উপজেলা/ জেলা পযার্য়ের টাস্কফোর্স সভায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাগণের বিশেষ গুরুত্ব দেয়া।

-তামাক চাষ সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে তাবিনাজকে সহযোগিতা করা।

-তাবিনাজ আয়োজিত যে কোন সভা, সেমিনারে সক্রিয় অংশগ্রহন করা

-উপজেলা/ জেলা পযার্য়ে ধোঁয়াবিহীন তামাকের উপর সচেতনমূলক সাইনেজ ব্যবহার করা।

-রেজিষ্ট্রেশনকৃত প্রতিটি সংগঠনকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সম্পর্কে ধারণা এবং আইন বাস্তবায়নে সহযোগি হিসাবে কাজ করা।

- ধোঁয়াবিহীন তামাকের বিল বোর্ড স্থাপনের জন্য স্থানীয় সরকারকে উদ্বুদ্ধ করা।

- বিভিন্ন দিবসে ধোঁয়াবিহীন তামাকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা।

- ‘দেয়াল লিখন’ সতর্কবাণী দেয়া।

কর্মশালার শেষে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাগণ তাদের নিজস্ব কাজের এলাকায় কর্মপরিকল্পনা প্রদান করেন:

-ধূমপান মুক্ত এলাকার সাইনেজের মতো ধোঁয়াবিহীন তামাকের উপর তথ্য সচেতনতার জন্য ব্যবহার ও প্রচার করতে পারি,

-কর্মশালার তথ্যগুলো টাস্কর্ফোস মিটিংয়ে আদান প্রদান করতে পারি,

- মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কতৃর্ক আয়োজিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণে, মতবিনিময় সভা, উঠান বৈঠকে তামাকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরতে পারি,

আইন বাস্তবায়নের জন্য:

-জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাগণ টাস্কর্ফোস মিটিং নিয়মিত করার জন্য স্মরণ করানো

-স্থানীয় সরকারকে অর্ন্তভুক্ত করা তবে সাথানীয সরকারের সাথে বিশেষ ভাবে কাজ করার জন্য মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ঢাকা থেকে নির্দেশনা থাকা।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।