জর্দা, গুল, সাদাপাতাসহ ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্য ব্যবহার বন্ধ করুন


বাংলাদেশে ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবনের প্রবনতা অনেক বেশি। পানের সাথে জর্দা, সাদাপাতা ও গুলের ব্যবহার গ্রাম ও শহর সবখানেই দেখা যায়। পান, সুপারি, সাদাপাতা এবং সঙ্গে নানা রংয়ের পান মসলা খাওয়া সামাজিক ভাবে এর গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে বলে এর ক্ষতির দিক কেউ দেখেনি। বিয়ে শাদীতে পানের সাথে জর্দা খাওয়া একটি আকর্ষণীয় ব্যাপার কিন্তু ক্ষতিকর।

বাংলাদেশে ৪৩% (৪ কোটি ১৩ লক্ষ) প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ কোন না কোন ভাবে তামাক সেবন করেন। ধূমপানের হার (২২%) ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবনের হার (২৭%)। ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার নারীদের মধ্যে পুরুষের তুলনায় বেশী। ২৮% প্রাপ্ত বয়স্ক নারী এবং ২৬% প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করেন (গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে-২০০৯)।

ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার একটি বৈশ্বিক সমস্যা যা ৩০ কোটি মানুষকে মৃত্যু ঝুঁকির মধ্যে আটকে রেখেছে। ভারতে ২২ কোটি, বাংলাদেশে ২ কোটি ২০ লক্ষ এবং মিয়ানমারে ১ কোটি ১০ লাখ লোক ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করে। নারী সেবনকারীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশী ভারত ও বাংলাদেশে। বিশ্বের ৭০ টি দেশের ৩০ কোটি মানুষ সরাসরি তামাক পাতা গ্রহণ করে। এদের ৮০-৮৬% বাংলাদেশ ও ভারতের। সংখ্যায় যা প্রায় ২৫৯ মিলিয়ন।

স্বাস্থ্য ঝুঁকি : ধোঁয়াবিহীন তামাকে আসক্তি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বাড়ছে। ধোঁয়াবিহীন তামাক আসক্তি তৈরী করে মুখগহ্বর, খাদ্যনালী, অগ্নাশয়ে ক্যান্সার সৃষ্টি করে এবং প্রজন্ম স্বাস্থ্যে (যেমন মৃত শিশু ও কম ওজন সম্পন্ন শিশুর জন্ম) মারাত্বক প্রভাব ফেলে। এছাড়া ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের সঙ্গে হৃদরোগ, ডায়রিয়া এবং ষ্ট্রোকের গভীর সম্পর্ক আছে ।


ক্যান্সার


ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ (সংশোধনী ২০১৩)

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫ প্রণীত হবার পর ২০১৩ সালের আইনের সংশোধনী এনে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য যেমন- জর্দা, গুল, খৈনী, সাদাপাতা ইত্যাদি তামাকজাত দ্রব্যের সংজ্ঞায় সংযুক্ত হয়েছে। এ আইন ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্যসহ সব ধরণের তামাক পণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রবর্তন, বিজ্ঞাপন, প্রচরণা ও পৃষ্ঠপোষকতা নিষিদ্ধ করণের কথা বলা হয়েছে।


childern


আইনে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচার এবং পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ন্ত্রণের কথা বলা আছে। কিন্তু তামাক বিরোধী নারী জোটের অনুসন্ধানে দেখা যায় যে জর্দ্দা কম্পানী নানান ধরণের কৌশল অবলম্বন করতে শুরু করেছে। যেমন মূল্য ছাড়, কমিশন, উপহার দেয়া, দোকান সাজিয়ে দেয়া, ইত্যাদি আবার কোন জায়গায় ৫ লক্ষ টাকায় পণ্য কিনলে ফ্রিজ দেয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া ক্রীড়া টুনামেন্ট, নাটক ও ভ্রামমান যাত্রার আয়োজনে তথ্য পাওয়া গেছে।

সিগারেট-বিড়ি অর্থাৎ ধোঁয়াযুক্ত তামাকজাত দ্রব্য যেভাবে বিজ্ঞাপন, প্রচারণা ও পৃষ্ঠপোষকতা দৃশ্যমান হয়, ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিশেষ করে জর্দা, গুল সেভাবে করতে দেখা যায় না বটে কিন্তু সরবরাহকারী হিসাবে কোম্পানী নিজের পণ্য বিক্রয়ের জন্যে দোকানদারকে নানা ভাবে প্রভাবিত করে।


পান দোকান


ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ (সংশোধনী ২০১৩)‘ধারা ৬ (ক): ‘অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির নিকট বা দ্বারা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ’ অথচ তামাক বিরোধী নারী জোট ১৪টি জেলার ২৩১টি দোকানের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে ১৮ বছরের নীচে বয়সের ছেলে ও মেয়ের নিকট বিক্রি করা হচ্ছে, এবং বিপণন কাজে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। আইনে শিশুদের কোনভাবে তামাকজাত দ্রব্যের কেনা বা বিক্রির কাজে ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও তা অনেকেই জানেন না, কিংবা জানলেও মানছেন না। শিশুরা একই সাথে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রেতা ও ক্রেতা এ আইন লংঘন বিষয়ে কোন তদারকিও নেই।


চা পান


তাবিনাজের আহবান:

  • ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য “বিড়ি, সিগারেট, জর্দ্দা, গুল, সাদাপাতা ইত্যাদি” ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এসব দ্রব্য ব্যবহার কমাবার জন্য ব্যাপক সচেতনতার কাজ করতে হবে।
  • ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য “বিড়ি, সিগারেট, জর্দ্দা, গুল, সাদাপাতা ইত্যাদি” কেনা বা বিক্রির কাজে শিশুদের ব্যবহার করলে তা আইনের আওতায় নিয়ে আসা।
  • তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার বা ব্যবহারে উৎসাহিত করলে তা আইনের আওতাই নিয়ে আসা।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।