তাবিনাজের দাবি: তামাকের উপর ৭০% কর বাড়াও


 তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) প্রতিবছর সরকারকে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর কর আরোপ করার আহবান জানিয়ে দাবী করছেন যে, তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত করতে ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের ওপর উচ্চহারে কর ও শুল্ক আরোপ করতে হবে। আমরা জানি জাতীয় বাজেটে জনগণের ব্যবহার্য নিত্যপ্রয়োজনীয় ও বিলাসদ্রব্যের ওপর কর আরোপ করা হলে সেই পণ্যের দাম বাড়বে এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। সরকারের দিক থেকে আমরা আশা করছি যে এমন কিছু বিশেষ কৌশল বা পদক্ষেপ গ্রহণ করবে যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য ব্যবহার কমানো যাবে ও পরোক্ষভাবে মানুষের উপকার করা হবে। এবং এর ফলে মানুষ নানা ধরণের রোগ ও আর্থিক ক্ষতি থেকে মুক্ত থাকবেন।

তামাকজাত দ্রব্য স্বাস্থ্যের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত এবং ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন রয়েছে। আইন বাস্তবায়নের বিধিমালা এখনো প্রকাশের অপেক্ষায়। বিড়ি, সিগারেট, জর্দা ও গুলসহ সকল তামাক পণ্যের ওপর এমনভাবে কর ধার্য করা প্রয়োজন যাতে এ সকল তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে স্বল্প আয়ের মানুষ এবং নতুন ভোক্তাদের ঠেকাতে সম্ভব হতে পারে। আমরা জানি, বাংলাদেশে ৪৩ শতাংশ (৪ কোটি ১৩ লাখ) প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ কোনো না কোনোভাবে তামাক সেবন করেন। ধূমপান পুরুষদের মধ্যেই বেশি, নারীদের মধ্যে কম, কিন্তু নারীরা ধূমপানের শিকার হন পরোক্ষভাবে। ঘরে স্বামী, বাবা, ভাই বা যে কোনো পুরুষ আত্বীয় অথবা সহকর্মী, সহপাঠী ধূমপান করলে নারীরা এর ক্ষতি থেকে রেহাই পান না। পাশাপাশি ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যে থাকলেও নারীদের মধ্যে বেশি। ২৮ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক নারী এবং ২৬ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করেন (গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে, ২০০৯)। বাংলাদেশে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জর্দা, গুল, সাদ পাতা ইত্যাদি।


৭০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ধার্য করে

সকল ধরণের তামাকজাত পণ্যের ওপর

কর আদায় নিশ্চিত করা হোক


তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) গত অর্থ বছরে ৩৮টি জেলায় একটি অনুসন্ধান চালিয়ে ১২৩টি জর্দা ও ২৩টি গুল কারখানার সন্ধান পেয়েছে। অধিকাংশ কারখানার কোন সাইনবোর্ড বা কোন নামফলক না থাকায় বেশীর ভাগ কারখানাগুলোকে চিহ্নিত করা যায় না। এই সকল কারখানা করের আওতায় আছে কি না জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের খতিয়ে দেখা উচিত। তামাকজাত পণ্যের মধ্যে ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্য যেমন জর্দা, গুল ইত্যাদি কর আরোপের আওতায় এনে দাম বাড়িয়ে ব্যবহার কমানোর দাবি তুলেছে তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ)।


zarda


দেশের কর ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করতে তামাক কোম্পানীগুলো তৎপর। প্রতিনিয়ত তামাক পণ্যের ওপর কর বাড়াতে বাধা সৃষ্টি করে। প্রতিবছর বাজেট ঘোষণার আগে তামাক পণ্যের উপর ও বিশেষ করে বিড়ি কোম্পানীগুলো করারোপ না করতে সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে সুপারিশ পত্র (ডি ও) পাঠায়। এবং এইসব কোম্পানীরা কখনও শ্রমিকের কথা বা কখনো রাজস্ব কমাবার কথা বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।

তামাক কোম্পানীর কোন ধরণের সুপারিশ তামাক নিয়ন্ত্রের কাজে সহায়তা করে না বরং তামাক কোম্পানী তামাক পণ্য ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য নানা ধরণের কৌশল অবলম্বন করছে। এ ধরণের নিকৃষ্ট পণ্যের চাহিদা নিরুৎসাহিত করার জন্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি হওয়া প্রয়োজন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য (WHO) এর ২০১১ সালে প্রকাশিত এক গবেষণার প্রতিবেদনে দেখা যায়, পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশে সিগারেট সস্তা। বিড়ির দাম আরো কম। তামাক ব্যবহারে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বাংলাদেশে জিডিপি প্রায় ৩ ভাগের সমপরিমাণ। বর্তমান কর ব্যবস্থার ব্রান্ডের ও ধরণভেদে তামাক পণ্যের উপর করের হার ভিন্ন। সস্তা ব্রান্ডের সিগারেট ও বিড়ির উপর করের পরিমাণ অনেক কম। জর্দা ও গুলের দামতো একেবারেই কম।

তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল (FCTC) রয়েছে। এবং বাংলাদেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। আন্তর্জাতিক চুক্তির (FCTC)-র তৃতীয় অংশে (আর্টিকেল ৬-এ বলা আছে) তামাকজাত দ্রব্যের চাহিদা হ্রাসে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসমূহ নিয়ে করণীয় সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। এই চুক্তিতে উল্লেখ আছে যে,

১. তামাকের ব্যবহার হ্রাসে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে তামাকের দাম বৃদ্ধিতে এর উপর কর বৃদ্ধি করা একটি কার্যকর উপায় হিসেবে বিষয়টি সরকার বিবেচনায় আনবে।

২. বিদ্যমান দাবি বা অধিকারকে ক্ষুন্ন না করে সদস্য রাষ্ট্রসমূহ দেশের স্বাস্থ্য রক্ষার বিষযটি বিবেচনা করে যথাপোযুক্তভাবে তামাকের উপর কর বৃদ্ধির নীতি নির্ধারণ এবং বাস্তবায়ন করবে।

তামাকজাত দ্রব্যের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে হলে জরুরী ভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

তাই তাবিনাজের দাবি হচ্ছে:

১. ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের ব্যবহারের হার বর্তমানে বাংলাদেশে ধোঁয়াযুক্ত তামাক যেমন সিগারেট ও বিড়ির চেয়েও বেশি। তাই জর্দা, গুলসহ সব ধরণের তামাকপণ্যের ওপর উচ্চহারে কর আরোপ অর্থাৎ এ বছর (২০১৫-২০১৬) বাজেটে ৭০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ধার্য করতে হবে। ফলে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কমে গেলেও রাজস্ব আয় বাড়বে।

২. জর্দা, গুল, বিড়ি, সিগারেটের উপর করারোপ করার জন্য বাজেট তৈরীর সময় গুরুত্ব আরোপ করা প্রয়োজন।

৩. জর্দা, গুল কারখানায় সরকারি তদারকি বা নজরদারিতে ও করের আওতায় আনা নিশ্চিত করা হোক।

৪. বিড়ি শ্রমিকের দোহাই দিয়ে বিড়ি মালিকরা বিড়ির ওপর কর আরোপ করা এবং বিড়ি কারখানা বন্ধ করার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছেন। নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এমন শিল্প বন্ধ করে বিড়ি, জর্দা ও গুলের শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার জন্য বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

৫. আদায়কৃত সম্পূর্ণ ট্যাক্স ক্যান্সার ইনষ্টিটিউট ও হৃদরোগ ইনষ্টিটিউট এ ব্যবহার করা।

তথ্য সূত্র:

১. ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল।

২. তামাকের খবর (সংখ্যা জানুয়ারি, ২০১৪ ও মে, ২০১৪)।

৩. ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য জর্দা ও গুল উৎপাদন একটি অনুসন্ধান


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।