ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের উপর কর ও ভ্যাট আদায়ের দাবীতে তাবিনাজের মানববন্ধন


ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের উপর পৃথক পৃথক ভাবে কর আদায়ের দাবীতে ১০মে, ২০১৫ তারিখ বিকেল ৪টায় ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) এর মানববন্ধন অনুষ্টিত হয়। এই মানববন্ধনে বাংলাদেশের ৪০টি (কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, বগুড়া, পঞ্চগড়, নীলফামারী, ভোলা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, সিলেট, ফেনী, ব্রাক্ষণবাড়িয়া, নোয়াখালী, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ি, পিরোজপুর, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর, মাদারীপুর, নাটোর, খুলনা, যশোর, বরিশাল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, নারায়নগঞ্জ, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার, ঝিনাইদহ, পটুয়াখালী, গোপালগঞ্জ, রংপুর, হবিগঞ্জ, বাগেরহাট, চাঁদপুর, রাজবাড়ি এবং চট্টগ্রাম) জেলার নারী সংগঠনের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।

তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) ও তামাক বিরোধী সংগঠনগুলো প্রতিবছর তামাক পণ্যের উপর কর আরোপ করার দাবী জানিয়ে আসছে। কারণ উচ্চহারে কর আরোপ করলে এর ব্যবহার কমবে বলে বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু যারা তামাক পণ্য উৎপাদন করে এবং এর বানিজ্যের সাথে যুক্ত, তার নানা অজুহাতে উচ্চহারে কর আরোপের বিরোধীতা করে আসছেন এবং রাজস্বখাতে এর নেতিবাচক প্রভাবের কথা বলে সরকারকে জনস্বাস্থ্যের পক্ষে কাজ করার ক্ষেত্রে বাধা দেয়া হচ্ছে। অথচ আমরা দেখেছি ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের হুমকী এবং এর সাথে জড়িত রয়েছে নানা ধরণের সামাজিক সমস্যা।

বাংলাদেশে তামাকজাত পণ্যের উপর বিভিন্ন ধরনের কর আরোপের নিয়ম বিদ্যমান-ধোঁয়াযুক্ত তামাকজাত পণ্য সিগারেট ও বিড়ি এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্যের উপর সম্পূরক কর (সাপ্লিমেনটারি ডিউটি); আমদানি করা তামাকজাত পণ্য, এবং আমদানি ও রপ্তানি করা তামাক পাতার উপর শুল্ক আরোপ; এবং সব রকম তামাকজাত পণ্যের বিক্রয়মূল্যের উপর মূল্য সংযোজন কর (মূসক)। সূত্র: প্রস্তাবিত তামাক-কর নীতিমালা, হিউম্যান ডেবেলপমেন্ট রিসোর্স সেন্টার।

ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্যের উপর বর্তমানে (২০১৪-১৫ অর্থ-বছর) ধার্যকৃত সম্পূরক কর ৬০% এবং মূসক ১৫%। বর্তমান রাজস্ব আদায় ব্যবস্থায় ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্যের কর আদায় প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের ফাঁক-ফোকর বিদ্যমান। জর্দ্দা ও গুলের প্যাকেটে কর পরিশোধের কোন রকম চিহ্নই সচরাচর দেখা যায় না। এটি রাজস্ব ফাঁকির একটি প্রমাণ। এ ছাড়াও ভিন্ন ভিন্ন ওজনের মোড়কে এসব বিক্রয় করা হচ্ছে। এতে কর ফাঁকি দেয়া বা এড়িয়ে যাওয়ার পথ সুগম হয়েছে। সূত্র: প্রস্তাবিত তামাক-কর নীতিমালা, হিউম্যান ডেবেলপমেন্ট রিসোর্স সেন্টার।

মানববন্ধনে তাবিনাজ সদস্যরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন প্রকাশ যে, তামাক ব্যবহার ও উৎপাদনের ফলে নারীরা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। নারীরা ধূমপায়ী হিসাবে সংখ্যায় পুরুষের তুলনায় কম হলেও তারা ঘরে এবং বাইরে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছে। শতকরা ১.৫ ভাগ নারী সিগারেট এবং ১.১% নারী বিড়ির মাধ্যমে ধূমপান করেন। কিন্তু ৩০% নারী কর্মস্থলে এবং ২১% নারী পাবলিক প্লেসে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। নিজে ধূমপান না করেও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার প্রায় ১ কোটি নারী। ফলে সিগারেট ও বিড়ির ওপর উচ্চহারে কর আরোপ করা হলে পুরুষদের মধ্যে ধূমপানের পরিমাণ কমে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে নারীরা পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে। তাবিনাজের সদস্যগণ আরো বলেন, তামাক কোম্পানীগুলো নারীর মধ্যে বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে ধূমপানের আগ্রহ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে এবং তাদের বাজার সম্প্রসারিত করছে। নারীদের মধ্যে ধূমপান কমাতে হলে এর মূল্যবৃদ্ধি একটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে। একইভাবে গরিব নারীদের মধ্যে বিড়ি সেবন কমাতে হলে এর উপর উচ্চহারে কর আরোপ করা প্রয়োজন।


১০ মে ২০১৫ তাবিনাজ মিটিং প্রেসক্লাব


ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের ব্যবহারের হার বর্তমানে বাংলাদেশে ধোঁয়াযুক্ত তামাক যেমন সিগারেট ও বিড়ির চেয়েও বেশি। প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার মধ্যে ২৭ শতাংশেরও বেশি মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করছেন; অন্যদিকে ধূমপায়ীর হার ২৩ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল) এফসিটিসিতেও তামাকপাতা থেকে তৈরী সব ধরণেল পণ্যকেই ‘তামাকপণ্য’ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালের সংশোধনী) এ একই অর্থ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই জর্দা, গুল, সাদাপাতা, খৈনীসহ সব ধরণের ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যেও ওপর উচ্চহাওে কর আরোপ করা প্রয়োজন।

তাবিনাজের সদস্যগণ বলেন, বাজারে কমপক্ষে ১০টি কোম্পানীর জর্দা নানা নামে পাওয়া যায়। সবচেয়ে কম দামের জর্দার দাম ১৪ টাকা এবং বেশি দামের ১২০ টাকা প্রতি কৌটা। এছাড়া খুচরাতেও বিক্রি হয়। কিছু জর্দা আছে ডজন হিসাবে বিক্রি হয় ৬ টাকা থেকে ১৮ টাকা পযর্ন্ত দামে। সাদাপাতা ৩ টাকায় পাওয়া যায়। গুল ১ ডিব্বা পাওয়া যায় ৬ টাকায়। হিসাব করে দেখাগেছে একজন জর্দা সেবনকারীকে মাসে কমপক্ষে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা খরচ করতে হয়, যা গরিব মানুষের ক্ষেত্রে তার মোট আয়ের ১০% খরচ যা একই সাথে তার স্বাস্থ্যের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকর।

বাংলাদেশে রাজস্বখাতে যেটুকু কর জমা করা হয় তা তামাক কর হিসাবে আদায় হয়। এতে সব ধরণের তামাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান/কারখানা কর প্রদান করছে কি না সরকার নিশ্চিত হতে পারে না। তামাক বিরোধী নারী জোট একটি অনুসন্ধানের মাধ্যমে দেখা গেছে বড় বড় কয়েকটি জর্দা, গুলের কারখানা ছাড়া বেশিরভাগ কারখানা নিয়ম মেনে চলছে না। আমরা কয়েকটি কর আদায়কারী প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য নিয়ে দেখছি যে, জর্দা ও গুল কারখানা থেকে রাজস্ব আদায় করা হয় ক্ষুদ্র ব্যবসা হিসাবে। জর্দা ও গুল কারখানা থেকে রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত নির্দিষ্ট তথ্য নাই।

তাবিনাজের সদস্যরা নিজেও তথ্য নিয়ে দেখেছে বেশির ভাগ জর্দা, গুলের কারখানা সাইনবোর্ড ব্যবহার করে না। এবং কারখানা নিয়ম মেনে চলছে না। এই অবস্থায় আমরা উদ্বিগ্ন এই সকল কারখানা অনিয়ম মেনে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শুধু তামকা পণ্য হিসাবে নয়, প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানকে পৃথক পৃথক ভাবে করের আওতায় নিয়ে আসা হোক।

তাবিনাজের দাবিসমূহ:

১. ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের উপর পৃথক পৃথক ভাবে কর আদায় করা

২. জর্দা ও গুলের প্যাকেটে রাজস্ব আদায় নির্ধারণী চিহ্ন ব্যবহার নিশ্চিত করা

৩. রাজস্ব আদায় করার ক্ষেত্রে তামাকজাত পণ্যের কর আদায় নিশ্চিত করা

৪. তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যাতে কর ফাঁকি দেয়া বা এড়িয়ে যেতে না পারে তার জন্য প্রশাসনকে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে হবে

৫. বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, গুল উৎপাদিত কারখানাগুলোকে কর প্রদানের যোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে কারখানাগুলোকে সনাক্ত করার জন্য সরকারকে তৎপর হতে হবে

৬. তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করার জন্য ১০% রপ্তানী কর আরোপ করতে হবে। বর্তমানে মাত্র ৫% রপ্তানী কর আরোপ করা আছে যা খুবই সামান্য

৭. ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের বিজ্ঞাপনী প্রচারণার জন্য কোন প্রকার অর্থনৈতিক অনুদান সরকারি পযার্য়ে গ্রহণ না করা

৮. ট্রেড লাইসেন্স শাখা থেকে যতগুলো লাইসেন্স দেয়া হয়েছে, কর বিভাগে ঐ লাইসেন্সপ্রাপ্ত কারখানা থেকে কর আদায় হচ্ছে কি না সেটা খতিয়ে দেখা


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।