তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়া ২০১৫-১৬


ধোঁয়াবিহীন তামাক অর্থাৎ জর্দা, গুলের উপর কর আরোপ এর ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয় নাই

এবারের বাজটে ধোঁয়াবিহীন তামাকের উপর কর আরোপের কোন পদক্ষেপ দেখা যায় নাই। অর্থাৎ জর্দা, গুলে’র উপর কর আরোপ এর ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয় নাই। কেবলমাত্র বিড়ি ও অল্প দামের সিগারেটের উপর সামান্য কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর দামি সিগারেটের উপর করহারের কোন পরিবর্তন করা হয় নি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে গত বছরের তুলনায় এ বছরে জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় কার্যত দামি সিগারেট গত বছরের তুলনায় দামে সস্তা হলো। তাই এবারের বাজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে মূলত বড় তামাক কোম্পানিকেই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষার তেমন কোন পদক্ষেপ নাই।

ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের ব্যবহার বর্তমানে বাংলাদেশে ধোঁয়াযুক্ত তামাক যেমন সিগারেট ও বিড়ির চেয়েও বেশি। প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার মধ্যে ২৭ শতাংশেরও বেশি মানুষ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করছেন; অন্যদিকে ধূমপায়ীর হার ২৩ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোবাকো কন্ট্রোল) এফসিটিসিতেও তামাকপাতা থেকে তৈরী সব ধরণের পণ্যকেই ‘তামাকপণ্য’ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালের সংশোধনী) এ একই অর্থ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাই জর্দা, গুল, সাদাপাতা, খৈনীসহ সব ধরণের ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের ওপর উচ্চহারে কর আরোপ করা প্রয়োজন।

আমরা দেখেছি, বাজারে কমপক্ষে ১০টি কোম্পানীর জর্দা নানা নামে পাওয়া যায়। সবচেয়ে কম দামের জর্দার দাম ১৪ টাকা এবং বেশি দামের ১২০ টাকা প্রতি কৌটা। এছাড়া খুচরাতেও বিক্রি হয়। কিছু জর্দা আছে ডজন হিসাবে বিক্রি হয় ৬ টাকা থেকে ১৮ টাকা পযর্ন্ত দামে। সাদাপাতা ৩ টাকায় পাওয়া যায়। গুল ১ ডিব্বা পাওয়া যায় ৬ টাকায়। আমরা হিসাব করে দেখেছি একজন জর্দা সেবনকারীকে মাসে কমপক্ষে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা খরচ করতে হয়, যা গরিব মানুষের ক্ষেত্রে তার মোট আয়ের ১০% খরচ যা একই সাথে তার স্বাস্থ্যের জন্যে মারাত্মক ক্ষতিকর।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন এদেশে সবচেয়ে কম কর দেয় তামাক বা সিগারেট শিল্প, অথচ এই শিল্প জনস্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি করে। আমরা লক্ষ্য করেছি বাংলাদেশে রাজস্বখাতে যেটুকু কর জমা করা হয় তা তামাক কর হিসাবে আদায় হয়। এতে সব ধরণের তামাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান/কারখানা কর প্রদান করছে কি না সরকার নিশ্চিত হতে পারে না। জর্দা, গুলসহ ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যগুলির ব্যবহার ক্রমাগত বাড়তে থাকলেও এবারের বাজেটে এগুলোর উপরে কর বাড়ানো হয়নি যা অত্যন্ত হতাশাজনক।

তাবিনাজের দাবিসমূহ:

১. ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের উপর পৃথক পৃথক ভাবে কর আদায় করা হোক

২. জর্দা ও গুলের প্যাকেটে রাজস্ব আদায় নির্ধারণী চিহ্ন ব্যবহার নিশ্চিত করা হোক

৩. রাজস্ব আদায় করার ক্ষেত্রে তামাকজাত পণ্যের কর আদায় নিশ্চিত করা হোক

৪. তামাকজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যাতে কর ফাঁকি দেয়া বা এড়িয়ে যেতে না পারে তার জন্য প্রশাসনকে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে হবে

৫. বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, গুল উৎপাদিত কারখানাগুলোকে কর প্রদানের যোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে কারখানাগুলোকে সনাক্ত করার জন্য সরকারকে তৎপর হতে হবে

৬. তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করার জন্য ১০% রপ্তানী কর আরোপ করতে হবে। বর্তমানে মাত্র ৫% রপ্তানী কর আরোপ করা আছে যা খুবই সামান্য।

৭. ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের বিজ্ঞাপনী প্রচারণার জন্য কোন প্রকার অর্থনৈতিক অনুদান সরকারি পযার্য়ে গ্রহণ না করা

৮. ট্রেড লাইসেন্স শাখা থেকে যতগুলো লাইসেন্স দেয়া হয়েছে কর বিভাগে ঐ লাইসেন্সপ্রাপ্ত কারখানা থেকে কর আদায় হচ্ছে কি না সেটা খতিয়ে দেখা।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।