ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে করণীয় শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা


তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে তাবিনাজের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে করণীয়’ শীর্ষক দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত।

তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) এর আয়োজনে ১২ আগষ্ট, ২০১৫ বুধবার কেআইবি কমপ্লেক্স, কৃষি খামার সড়ক, ফার্মগেট, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালের সংশোধনী সহ) ‘ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে তাবিনাজের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে করণীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালা’। সকাল ১০ টা থেকে দিনব্যাপী এই কর্মশালা চলে। বিকাল ৬টায় তাবিনাজের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে করণীয় নির্ধারণের মাধ্যমে এই কর্মশালার পরিসমাপ্তি ঘটে।

এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় উপস্থিত অংশগ্রহণকারী ছিলেন বাংলাদেশের ৪০টি জেলার তাবিনাজ নারী প্রধান সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং যারা তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন তাদের প্রতিনিধিবৃন্দ।

সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত চলে উদ্বোধনী পর্ব। উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন রোকসানা কাদের, অতিরিক্ত সচিব (জ ও বি), স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

আলোচক হিসাবে ছিলেন, আলমগীর সিকদার, প্রোগ্রাম অফিসার, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল। এডভোকেট রেহানা সুলতানা, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা।

ফরিদা আখতার, তাবিনাজের আহবায়ক ও উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক এর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী পর্বের কার্যক্রম শুরু হয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সীমা দাস সীমু, পরিচালক, উবিনীগ।

কর্মশালায় মূল আলোচনা উপস্থাপনা করেন সাইদা আখতার, সমন্বক, তাবিনাজ ও নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা। এই আলোচনায় তুলে ধরা হয় ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালের সংশোধনী সহ) সংশোধীত আইনের সংজ্ঞায় ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য যুক্ত করা হয়েছে। এটা ভাল দিক। কিন্তু আইনে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য (জর্দা, গুল) ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের সীমাবদ্ধতা যে রয়েছে। যেমন, পাবলিক প্লেস এবং পাবলিক পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ। কিন্তু ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য (জর্দা, গুল) এর ক্ষেত্রে কোন বিধি বিধান নাই।

উদ্বোধনী পর্বের শুরুতে তাবিনাজের আহবায়ক ফরিদা আখতার কর্মশালার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেন, ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য (জর্দা, গুল) নিয়ে আর্ন্তজাতিক ভাবে এখনো জোড়ালো কাজ শুরু হয়নি। সারা বিশ্বের ধোঁয়াবিহীন তামাক এর ৮০% ব্যবহারকারী ভারত এবং বাংলাদেশ। সাইন বোর্ডে লেখা থাকে ‘ধূমপান মুক্ত’ এলাকা কিন্তু ‘তামাক মুক্ত’ এখনো বলা হয়নি। যারা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য (জর্দা, গুল) ব্যবহারকারী তাদের প্রত্যেককে ধরাটা কঠিন। নিজ নিজ এলাকায় যারা পান, জর্দা খাচ্ছেন তাদের ধরা কঠিন। তবে আইনের কোন জায়গা লংঘন হচ্ছে সেটা আমরা চিহ্নিত করতে পারি। আইনে জর্দা ব্যবহারকারীকে ধরার মতো জায়গাটা নাই। আইনে এমন কোন দিক উল্লেখ নাই যে, ঘরে জর্দা খেলে তাকে ধরা যাবে। কিন্তু ধূমপান করলে তাকে আইনে ধরা যাবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কিছু জায়গায় পরিস্কার আছে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন দেয়া যাবে না। অপ্রাপ্ত বয়সীদের দ্বারা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করা যাবে না। এই জায়গাতে তাবিনাজ কাজ করতে পারে। আইনের ধারা অনুযায়ী তাবিনাজ কি করতে পারে সেই পরিকল্পনা করা জরুরী।

কর্মশালায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, টাস্কফোর্স কমিটি, কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বএবং জেলা পযার্য়ের মহিলা আইনজীবীগণ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে তাবিনাজকে কিভাবে সহযোগিতা করতে পারবে এ বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়।

জেলা পযার্য়ের মহিলা আইনজীবীগণ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে তাবিনাজকে কিভাবে সহযোগিতা করতে পারবে এ বিষয়ে এডভোকেট রেহানা সুলতানা বলেন, বাংলাদেশের সকল জেলাতেই বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির অফিস ও সদস্য আইনজীবী আছে। সে সব এলাকায় তাবিনাজ ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে একত্রে কাজ করতে পারবে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (২০১৩ সালের সংশোধনীসহ) এর ধারা ৫ নিয়ে আদালত পযর্ন্ত সহযোগিতা করা সম্ভব। তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সদস্যদের সহযোগিতা নিয়ে একত্রে কাজ করতে পারবে। বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির মাধ্যমে সব জেলাতে তাবিনাজকে সহযোগিতা করার জন্য চিঠি প্রদান করার ব্যবস্থা করা যাবে। তাহলে মহিলা আইনজীবীদের সাথে তাবিনাজের কাজ করার সুযোগ বাড়বে।


১২ আগষ্ট ২০১৫ তাবিনাজ মিটিং


আলমগীর সিকদার, প্রোগ্রাম অফিসার, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল, তিনি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, টাস্কফোর্স কমিটি, কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব সম্পর্কে তাবিনাজ প্রতিনিধিদের অবগত করেন। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, টাস্কফোর্স কমিটি, কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব সম্পর্কে তিনি বলেন, আইন প্রয়োগের একটি কৌশল হচ্ছে মোবাইল কোর্ট। সব সময় মোবাইল কোর্ট করা যায় না। আইন ভঙ্গ করলে মোবাইল কোর্ট করা যায়। তাই আইন ভঙ্গ করলো কি না এই তথ্যটা জানা থাকতে হবে।

মোবাইল কোর্ট করতে হলে কিছু জিনিস দরকার। যেমন, প্রথমে দরকার একটি পরিকল্পিত উদ্যেগ, আইন প্রয়োগকারীর সংস্থার সহযোগিতা। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের যাতাযাতের জন্য একটি গাড়ী ও ফুয়েল তৈরী রাখা। আইনজীবী, সাংবাদিক, সুশীল সমাজ সকলেই মোবাইল কোর্ট করার উদ্যেগ নিতে পারে। তবে মোবাইল কোর্ট আয়োজন করার জন্য জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল থেকে সিভিল সার্জন বরাবর চিঠি দিয়ে মোবাইল কোর্ট করার আহ্বান করতে হবে। এইভাবে মোবাইল কোর্ট করা যাবে।

তামাক কোম্পানীগুলো নতুন নতুন কৌশল নিয়ে কাজ করছে। এই জায়গাগুলো বন্ধ করার জন্য আইনী উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। তাবিনাজের কাজ হবে জেলা, উপজেলা, টাস্কফোর্স সভায় সক্রিয়ভাবে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য সম্পর্কে তথ্য তুলে ধরা। জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা। মোবাইল কোর্ট আয়োজনে তাবিনাজ সহযোগীতা করতে পারে। জনসচেতনমূলক কার্যক্রমে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমের কর্মীদের সম্পৃক্ত করা।

ডাঃ সোহেল রেজা চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, বলেন, উপমহাদেশে জর্দা গুলের ভয়াবহ চিত্র দেখা যায়। আমাদের দেশে অসংক্রামক রোগে বেশি লোক মারা যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি হচ্ছে ক্যান্সার। বাংলাদেশ এবং ভারতে মুখের ক্যান্সার অনেক বেশি। এতদিন জানতাম শুধু পানের সাথে জর্দা খেলে সেটা ক্ষতিকর। এখন গবেষণায় দেখা গেছে সুপারি ব্যবহার করলেও ক্যান্সার হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য চ্যালেন্স। প্রতিটা বাসায় আমাদের শিক্ষিত মা পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে পরিবার থেকে অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারবে। অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করার জন্য সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। সুপারি খাওয়ার ক্ষতিকর দিকটি সকলের মাঝে ঝড়িয়ে দিতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্য:

কর্মশালার প্রধান অতিথি রোকসানা কাদের, অতিরিক্ত সচিব (জ ও বি), স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, বলেন, নারীদের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে আমাদের। মায়েরা শিক্ষিত হলে অনেক বিষয় সম্পর্কে জানানো সহজ। যাদের ঘরে মেয়েরা আছে তাদেরকে শিক্ষিত করতে হবে। তাবিনাজ নারীদেরকে সচেতন করার জন্য মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মাধ্যমে, কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার বন্ধের জন্য কাজ করছেন। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (২০১৩ সালের সংশোধনীসহ) এই আইনের ১৯টি ধারার মধ্যে ৪টি ধারায় ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের কথা আছে। আইনটি প্রণয়ন করার সময় তাবিনাজ থাকলে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য সম্পর্কে আরো কয়েকটি ধারা আইনে ঢুকে যেতে পারতো। আইনটি পাশ হবার সময় আমি ছিলাম। তার আগে এই প্রক্রিয়ায় আমি যুক্ত ছিলাম না। আমি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ঘুরে দেখেছি ধূমপান মুক্ত লেখা সাইনেজ আছে কিন্তু ধোঁয়াবিহীন তামাকের কথা কোথাও বলা নাই। আমি যতদিন আছি চেষ্টা করবো ধোঁয়াবিহীন তামাক এর বিষয়টি যাতে আইনের আওতায় আনা যায়। তবে এর জন্য সময় লাগবে। আইনটি গেজেট হওয়ার এক বছর পর থেকে কার্যকর করা হবে। ধোঁয়াবিহীন তামাকের কৌটায় সচিত্র বাণী দেয়ার কথা বলা আছে। এখনও সেটা কার্যকর হয় নাই। মার্চ ২০১৬ সাল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে তাবিনাজ যে কাজটি করতে পারে- জেলা টাস্কফোর্সে বিষয়টি তুলে ধরা, মোবাইল কোর্ট করা। এমনকি ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে মসজিদের ঈমামদের সাথেও আলোচনা করা যেতে পারে। টাস্কফোর্সের সদস্য বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি পরামশর্ দেন তাবিনাজের সদস্যরা টাস্কফোর্সের সদস্য করার জন্য আবেদন করতে পারে। আমি চেষ্টা করবো সদস্য করার জন্য। তবে এটা সময় সাপেক্ষ। বর্তমানে টাস্কফোর্সে ২৫ জন সদস্য সংখ্যা বাড়াতে অনেক সময় লেগেছে।


১২ আগষ্ট ২০১৫ তাবিনাজ মিটিং


দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় জেলা পর্যায়ের টাস্কফোর্স সভায় তাবিনাজের সদস্যগণ কিভাবে ভুমিকা রাখে সে সম্পর্কে বলেন, লায়লা কানিজ বানু, নির্বাহী পরিচালক, রুরাল ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন, মাগুড়া এবং জিনাত রহমান, নির্বাহী পরিচালক, আরসিডিএ, দিনাজপুর।

তামাক নিয়ন্ত্রণ কাজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা ও মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহন করেন ঢাকা আহছানিয়া মিশনের প্রোগ্রাম অফিসার ওদুদ রহমান ইমন। এনভায়রনমেন্ট কাউন্সিল বাংলাদেশের এডভোকেসি অফিসার ফারহানা হক অভি। প্রজ্ঞার টোবাকো ইন্ডাস্ট্রি মনিটরিং এক্সপার্ট মনোয়ার হোসেন। একলাবের প্রকল্প সমন্বয়কারী মাকসুদ উল্লাহ। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর এডভোকেসি অফিসার, সৈয়দা অনন্যা রহমান এবং ক্যাম্পেন ফর টোবাকো ফ্রি কিডস্ এর প্রোগ্রাম সার্পোট অফিসার, সেলিনা আকতার।

আইন বাস্তবায়নে তাবিনাজের কাজের ক্ষেত্র নিয়ে পরবর্তীতে দলীয় আলোচনা এবং কাজের পরিকল্পনা করা হয়।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।