নারায়ণগঞ্জের সরকারী হাসপাতালকে বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, গুল ব্যবহার থেকে মুক্ত রাখার ঘোষণা


তামাক এবং তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের ফলে হৃদরোগ, ক্যান্সার, বক্ষব্যাধি, স্ট্রোক এবং অন্যান্য অনেক রোগে নারী পুরুষ এমনকি শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে। তামাক ব্যবহারের এই ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য আমরা অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারি। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের ক্ষতির দিক বিবেচনা করে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রন) আইন ২০০৫, সংশোধিত ২০১৩ প্রণয়ন করেছে। উল্লেখিত আইনের ৪ নং ধারা মোতাবেক পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রন) আইন ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) তে পাবলিক প্লেস এর সংজ্ঞায় হাসপাতাল ও ক্লিনিক ভবন অন্তর্ভুক্ত আছে।

হাসপাতালগুলোকে তামাক মুক্ত রাখার লক্ষ্যে ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ তারিখ বুধবার নারায়ণগঞ্জের জেনারেল হাসপাতাল এর সম্মেলন কক্ষে তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) ও ইউনাইটেড ফোরাম অ্যাগেনইস্ট টোব্যাকো (UFAT) এর যৌথ আয়োজনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন, আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার, মেডিক্যাল অফিসার, মেট্রোন,নার্সিং সুপারভাইজার, ওয়ার্ড ইনচার্জ, ওয়ার্ড মাষ্টারসহ অন্যান্য কর্মচারী, বেসরকারী সংগঠন এবং সাংবাদিক।

সভায় সঞ্চালনা করেন তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) এর সমন্বক সাইদা আখতার। সভাপ্রধান ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ আশুতোষ দাশ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নারী কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভানেত্রী রাহিমা আক্তার লিজা। বক্তব্য রাখেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মোঃ আসাদুজ্জামান এবং তাবিনাজের আহবায়ক ফরিদা আখতার।


৯ সেপ্চেম্বর ২০১৫ তাবিনাজ মিটিং


ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এপিডেমিওলজি এন্ড রিসার্চ এর বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডাঃ সোহেল রেজা চৌধুরী মুল উপস্থাপনার মাধ্যমে সভায় তামাক ব্যবহারের ক্ষতির দিক এবং হাসপাতালগুলোকে তামাক মুক্ত রাখার জন্য আহবান করেন। তিনি বলেন বাংলাদেশে প্রতিদিন ৪ কোটি মানুষ কোন না কোন ভাবে তামাক (বিড়ি, সিগারেট, জর্দ্দা, গুল, সাদাপাতা) ব্যবহার করে। মানসিক রোগীদের মধ্যে সিগারেট ব্যবহার বেশি হয়। এখন তার উল্টা দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন রোগের কারন হচ্ছে তামাক। বাংলাদেশে পরোক্ষ ধূমপান ব্যবহারকারীর সংখ্যা বিশাল। ধূমপান না করেও তাদের নানা রকম শারীরিক ক্ষতি হয়। যারা ধূমপান করছে না তাদের রক্ষা করা আমাদের কাজ। হাসপাতাল শতভাগ ধূমপান মুক্ত করতে হবে। শতভাগ তামাক মুক্ত হাসপাতাল বলতে কি বোঝায় সে সম্পর্কে বলেন,

  • হাসপাতালের সকল স্থানে এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় ধূমপান নিষিদ্ধ করা
  • স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের সকল স্থান এমনকি বাইরে ধুমপান এলাকা না রাখা
  • ধূমপায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারী, রোগী এবং দর্শনার্থীদের তামাক পরিত্যাগের পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান। তামাক মুক্ত বলতে ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়াহীন উভয় প্রকার সকল তামাক ও তামাক জাতীয় দ্রব্য অন্তর্ভুক্ত
  • হাসপাতাল এবং নিকটবর্তী এলাকায় তামাক এবং তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি বন্ধ করা
  • হাসপাতাল এলাকায় তামাকের বিজ্ঞাপন ও তামাক কোম্পানীর সহযোগীতায় কোন ধরণের কার্যক্রম বা অনুষ্ঠান না করা

তামাক মুক্ত হাসপাতাল বাস্থবায়নের জন্য তিনি কিছু সুপারিশ করেন:

  • সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগকে তামাক মুক্ত হাসপাতাল বাস্থবায়নের জন্য নির্দেশ প্রদান করা
  • কর্মকর্তা- কর্মচারীদের নিয়োগের সময় তামাক মুক্ত গাইড লাইন সমন্ধে অবহিত করা
  • হাসপাতাল ভবনের সকল স্থান (এমন কি বাইরের নিদিষ্ট ধুমপান এলাকাও), হাসপাতাল ভবনে বসবাসকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাসস্থান ও যানবাহন ধুমপান মুক্ত করা
  • ধূমপান মুক্ত বিভিন্ন বার্তা অফিস বিল, প্রেসক্রিপশন, অফিস প্যাড ও অন্যান্য নথীতে ছাপানো
  • হাসপাতালের সকল দাপ্তরিক কাজ ও বিভিন্ন অনুষ্টানাবলী ধূমপান মুক্ত রাখা
  • ধূমপান মুক্ত এলাকার সাইন হাসপাতারের প্রতিটি প্রবশ পথ ও বাহির হবার পথে সুষ্পষ্ট ভাবে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা

মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন নিকোটিন হচ্ছে তামাকের প্রধান বিষ। এটা খেলে মানুষ মারা যায়। গর্ভবতী মহিলারা তামাক সেবন করলে গর্ভের বাচ্চার ক্ষতি হয়। মায়ের ক্ষতি হয়। আমরা মহিলাদেরকে তামাক ব্যবহার থেকে সচেতন করতে পারবো। হাসপাতালের প্রত্যেকটা ওয়ার্ডে গিয়ে বিড়ি, সিগারেট, পান জর্দা বা অন্যান্য জিনিস থেকে বিরত রাখতে পারবো। 

তাবিনাজের আহবায়ক ফরিদা আখতার বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে হাসপাতালকে তামাক মুক্ত করা।পুরুষদের মধ্যে ধূমপানের বিষয় সম্পর্কে জানা আছে। তামাক কোম্পানীরা এখন পুরুষদের প্রতি আগ্রহ কমিয়ে তরুণদের দিকে বিশেষ করে নারীদের মধ্যে ধূমপানের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলছে। উচ্চবিত্ত এবং গরিবদের মধ্যেও তামাক/ধূমপানের ব্যবহার আছে। গরীব মহিলারা দুপুরে সময় মতো খেতে না পারলে একটা পান খেয়ে ক্ষুধা নষ্ট করে রাখে। ক্ষুদার্থ অবস্থায় আরেকটা ক্ষতিকর জিনিস সে ব্যবহার করছে। ক্ষতিকর এসব দ্রব্যর ব্যবহার কমানোর জন্য কিছু উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে যেমন,

  • হাসপাতালের রোগীর আত্মীয় স্বজনদের সচেতন করা
  • কাউন্সিলিং করা
  • সিভিল সার্জন ও তাবিনাজ যৌথ উদ্যোগে নারায়ণগঞ্জের হাসপাতালকে তামাক মুক্ত করে উদাহরণ তৈরী করা

সভাপ্রধানের বক্তব্যে মতবিনিময় সভায় সিভিল সার্জন ডাঃ আশুতোষ দাশ বলেন, হাসপাতালে এখন থেকে নিয়মিত সকল কর্মী যারা আছে তাদের সাথে মিটিংয়ের বসা হবে। সেবিকারা প্রতিটি ওয়ার্ডে নিয়মিত ভাবে তামাক ব্যবহার না করার বিষয়টি অবহিত করবে। তামাক নিষিদ্ধকরণের মধ্যে যা যা আছে সেগুলো ব্যবহার না করার কথা বলবে। চর্বণযোগ্য তামাক ব্যবহার করে নারীরা পুরুষের থেকে এগিয়ে আছেন। নীরবে নিভৃতে এটা নারীদের ক্ষতি করছে। আজ থেকে আমাদের হাসপাতাল শুধু ধূমপান নয় তামাকজাত দ্রব্য মুক্ত ঘোষণা করবো। আমরা আর্থসামাজিক সেবায় নিয়োজিত। আমরা সত্যিকারের সেবক হতে চাই। সবশেষে তিনি নারায়ণগঞ্জের সকল সরকারী হাসপাতাল তামাক মুক্ত হবে বলে ঘোষণা দেন এবং এই ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করবেন বলে আশ্বত করেন।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।