ফকির লালন সাঁইয়ের গৌর পূর্ণিমা উৎসবে নয়াকৃষির বীজ উৎসব
আজমিরা খাতুন ও ডলি ভদ্র || Wednesday 27 March 2019 ||তিন দিন ব্যাপী গৌর পূর্ণিমার উৎসবের পাশাপাশি আখড়াবাড়ীতে বীজ মেলা আগত লালন ভক্তদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। প্রথম দিন, অর্থাৎ অধিবাসের দিনে বিকেলে একটূ আলোচনার আয়োজন করা হয়। ফসলের বীজের মতো একটি গভীর বিষয় বুঝতে হলে ফকির লালন সাঁইজির গানের আশ্রয় নিতেই হবে। তাই শুরু হোল গান দিয়ে, “অমৃত মেঘের বারী শুধু কথায় কি মেলে, চাতক স্বভাব না হলে” । ফরিদা আখতারের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন কৃষক নুরুজ্জামান (গজিয়া বাড়ী, টাংগাইল), মনোয়ারা বেগম (হাবাসপুর, কুষ্টিয়া), সূর্যবানু (রাজেন্দ্রপুর, নাটোর), মনোয়ারা বেগম (গোপালপুর, কুষ্টিয়া), ইয়াছমিন খাতুন, (চকরিয়া, কক্সবাজার), ফরহাদ মজহার, সীমা দাস সীমু, ডলি ভদ্র, আজমিরা খাতুন ও বেলু ফকির।
আলোচনা বিষয় ছিল বিভিন্ন উৎসব ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে বিশেষ জাতের ধানের ব্যবহার। লালন ভক্ত বেলু ফকির বলেন, আমাদের কুষ্টিয়া দৌলতপুরে আগের যুগে অনেক আমন ধান ছিলো। এখন বৃষ্টির পানি নাই, আমন ধান আর কেউ করে না। সবাই বিআর ২৮, ২৯ করে। কোন উৎসব করতে গেলে তখন ধান পাই না। বাধ্য হয়ে নাম্বারিং ধান দিয়ে উৎসব পালন করি। আগে আউস ধান ছিলো এখন আর নাই।
কৃষক মনোয়ারা বেগম বলেন, হাবাসপুর আমাদের এলাকায় কালাবড়ি ও শিলকোমড় ধানের মুড়ি ভেজে মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে দিতো। কালিজিরা ধানের পোলাউ খাই, পায়েস খাই। এখনো আমাদের এলাকায় এই ধান গুলো আছে। শিলকোমড় ধানের ভিজানো পিঠা অনেক ভাল হয়।
কৃষক নুরুজ্জামান বলেন, পাটজাগ ধানের অনেক ভালো পিঠা হয়। শীতের সময় সবার বাড়িতে পিঠা উৎসব করে খাই। চামারা ধানের মুড়ি দিয়ে উৎসব পালন করি। কথায় আছে ইষ্টির মধ্যে মামারা, ধানের মধ্যে চামারা। চামারা ধান ছাড়া ইষ্টি বাড়ির লোকদের আদর আপ্যায়ন হয় না। আমাদের এলাকায় কালিজিরা ধানটা অনেক হয়। কালিজিরা ধানের পায়েশ, পোলাউ খুব ভালো হয়। আর এই কালিজিরা ধান সব অনুষ্ঠানেই লাগে।
ইয়াছমিন খাতুনের বাড়ি কক্সবাজার। সেখানে লবন চাষ হয়। আর লবন সহনশীল কিছু ধান হয়। যেমন লালধান, লেম্বরু, আশাইল ও বিন্নি ধান। বিন্নি ধানের মধুভাত করে খাই। আদিবাসী মেয়ের বিয়েতে বিন্নি ধান লাগে। বিন্নি চাল দিয়ে আতিক্কা (হঠাৎ) পিঠা তৈরী করে জামাই মেয়েকে উৎসব করে খাওয়ানো হয়। লাল ধানের ভাপা পিঠা তৈরী করে শীতের দিনে শীতে পিঠা দিতে হয়। মেয়ের বাড়িতে এটা না দিলে যেন শীতের পিঠা উৎসব হয় না। আমাদের এলাকায় বিন্নি ধানের অনেক সুন্দর খৈ হয়। লাল চালের জালপুলি অনেক মজা করে খাই। আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে দেই। আমাদের এলাকায় ভাপা পিঠা গরুর মাংস ও মুরগীর মাংস দিয়ে খাই। শীত শুরু হলে যেন ভাপা পিঠা মেলা বসেছে। আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত দিয়ে খাওয়াই।
মনোয়ারা বেগম বলেন, আমাদের শিলাইদহ এলাকার মানুষ ঈদের দিনে খিচুড়ী সেমাই এতো করে না। বাশিরাজ ধানের খৈ মুড়ির সাথে দই দিয়ে খেয়ে ঈদের নামাজ পড়তে যায়। কালিজিরা ধানের পোলাউ অনেক ভাল হয়। আমাদের এলাকায় কলামুছা ধানের ভাত ও বাশিরাজ ধানের ভাত দিয়ে আম কাঁঠাল, দুধ দিয়ে জৈষ্ঠ্য মাসে খায়। ছেলের মুসলমানির সময় এই ধান গুলো রাখে। নিজের না থাকলেো অন্যজনদের কাছ থেকে চেয়ে এনে রাখে।
ডলি ভদ্র বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের বিয়েতে বরন ধান দিয়ে বউ বরন ডালা সাজাতে হয়। আর একটি ধান আছে জষ্টিমধু । বউ ভাতের অনুষ্ঠানে এই ধানের ভাত নতুন বউকে খাওয়াতে হয়। এই ভাত খেলে নাকি বউ সারা জীবন মধুর কথা বলে। চামারা ধান- বাচ্চার মুখে-ভাতের সময় এই চালের ভাত মামীরা এসে প্রথমে বাচ্চার মুখে দেয়। চামারা অন্য রকম ধান। যদি আমরা ধরে না রাখি তাহলে অনেক উৎসবের জন্য সমস্যা হবে।
সীমা দাস সীমু বলেন, দিনাজপুরে সুগন্ধি ধান হয়। ভাদই নামের একটি ধান হতো। যেদিন ভাদই ধানের ভাত রান্না হতো, সেই দিন মনে হতো একটি উৎসব হচ্ছে। আর এই ভাত ভর্তা দিয়ে খেতে মজা। কৃষ্ণপূজা, গোবিন্দ পূজায় এই ধানগুলো লাগে। পূজাতে খৈ পায়েস করতে হয়। রাধুনীপাগল ধানের পোলাউ খুব ভাল হয়। কাটারীভোগের মুড়ি বেশী হয়। সিদ্ধ চালের ভাত অনেক ভালো। গর্ভবতী মাকে এই চালের ভাত খাওয়ানো হয়।
বীজের প্রদর্শনীতে বীজগুলো বিভিন্ন ভাগে সাজানো হয়
উৎসবের ধান: ১। হাতিয়া মোটা, ২। কালিজিরা, ৩। রাধুনি পাগল, ৪। মারিয়ম, ৫। কালাবকরী, ৬। পাকড়ী, ৭। বালাম বিচি, ৮। মতি চিকন, ৯। তিলকাজল, ১০। বরণ ধান, ১১। ঘিগজ, ১২। পাকড়ী, ১৩। ছোড়া মোড়া, ১৪। দুলকাদি, ১৫। লালরোদা, ১৬। চামাড়া, ১৭। বাশমতি, ১৮। চিনিগুড়ি, ১৯। লালমানিক, ২০। হিদি, ২১। ধলদিঘা, ২২। লালরোপা, ২৩। কালাপাত, ২৪। খিরসা, ২৫। লালকুামারী, ২৬। বউ জামাই, ২৭। মুরকি কানাই, ২৮। শার্লি, ২৯। সাদা কাহিল, ৩০। বেগুন বিচি, ৩১। সোনাশাইল, ৩২। লক্ষ্মী ভোজন, ৩৩। উকুন মধু, ৩৪। টোপা আমন, ৩৫। বিন্নি ধান, ৩৬। নাতু, ৩৭। পাকড়ী, ৩৮। কার্তি কাইকা, ৩৯। লাল কাইকা ও ৪০। বয়াল জাকি।
পিঠার ধান: ১। কননা ময়না, ২। বাদামবিটি, ৩। লাল পাইজাম, ৪। খুই শাইল, ৫। বাদামটেপা, ৬। বাঙ্গাবিন্নি, ৭। পাটেশ্বরী, ৮। মলিকা, ৯। সোনাজান, ১০। সোনামুকি, ১১। দুধকলি, ১২। চমক সাদা, ১৩। সুরমামতি, ১৪। শনি, ১৫। আসাম্বর, ১৬। কনলভোগ, ১৭। আছুলঝরা, ১৮। সাতীরুলা, ১৯। গঙ্গমানিক, ২০। সাইটাকলি, ২১। রঙ্গিখামা, ২২। বাতি, ২৩। চামেলাবাজ, ২৪। পঙ্খিরাজ, ২৫। মুক্তাহার ও ২৬। দুধবিন্নি।
পায়েসের ধান: ১। বউ আদুরী, ২। কালোজিরা, ৩। চিনিসাগর, ৪। বেগুনবিচি, ৫। বাধুনী পাগল, ৬। চিনিগুরি, ৭। সাহেবগিজা, ৮। পোড়া বিন্নি, ৯। তুলসিমালা, ১০। মোহনভোগ ও ১১। নাজির শাইল।
চিড়া, মুড়ি, খৈ: ১। সাক্ষরখোরা, ২। এলাচি, ৩। ফাইপাইকা, ৪। লালবিন্নি, ৫। করচামুড়ি, ৬। টেপাশাইল, ৭। জল কুমারী, ৮। বাঁশ ঝালা, ৯। চিনি দিঘা, ১০। চৈতে বোরো, ১১। লাল গহরী, ১২। মোটাযশা , ১৩। গইচা, ১৪। দুধরাজ, ১৫। কানাইফুল, ১৬। পিঠা, ১৭। বেতি, ১৮। মনাশাইল, ১৯। মিলনডক, ২০। সাদামোটা, ২১। রজনীশাইল, ২২। সিতাচিকন, ২৩। আয়নামতি, ২৪। কুসুমলামিনী, ২৫। চম্পামনি, ২৬। করচামুড়ি, ২৭। কালো মোটা, ২৮। গাবি, ২৯। ঝুলমালতি, ৩০। রাইচা, ৩১। বিরহ , ৩২। মালামোটা, ৩৩। চিরল, ৩৪। রূপসী, ৩৫। জাইলা, ৩৬। মধুশাইল, ৩৭। মটকি, ৩৮। চান্দুমনি, ৩৯। কনকুচরা, ৪০। লালগাছি, ৪১। জয়মনি, ৪২। কোচামোটা, ৪৩। সুবোধমুখি, ৪৪। লালসরু, ৪৫। সোনালী বরন, ৪৬। হোয়যালি, ৪৭। সোমাশাইল, ৪৮। গাছমলি, ৪৯। চানমতি, ৫০। আইলাশাইল, ৫১। লুঙ্গিগাইচা, ৫২। লালসরু, ৫৩। পরানমুলা, ৫৪। গাতি, ৫৫। সজিনাশাইল, ৫৬। সুন্দরীশাইল, ৫৭। মোটাশাইল ও ৫৮। ধানমনি।
ঔষধী ধান: ১। সোনাকলি, ২। ভইরা, ৩। কালাআউস , ৪। মুখকালি, ৫। লতামুড়ি, ৬। আয়নাশাইল, ৭। ডিংগাহরি, ৮। ভাতুরী, ৯। খড়াজামড়ী, ১০। পইটা, ১১। বিরান, ১২। কালাবকরী, ১৩। কালামানিক
ভিটামিন যুক্ত ধান: ১। চিনিসর ২। জবসিতি, ৩। খাড়াজামড়ি, ৪। হলুদজাকন, ৫। কানিমা, ৬। কালোবকরি, ৭। জলটেপা
অন্যান্য ধান: ১। ভাওয়ালিয়া, ২। পানিভাঙ্গা, ৩। পানিতরঙ্গ, ৪। কালোজিরা, ৫। স্থরন্থরি, ৬। কাইকা, ৭। পানিশাইল, ৮। পাটজাবা, ৯। স্বর্ণলতা, ১০। কালামুগি, ১১। মধুমালতি, ১২। আবছায়া, ১৩। রোপাখের, ১৪। লালরোদা, ১৫। চাপামালতি, ১৬। আশাইললেম্বু, ১৭। ফুফু শাইল, ১৮। সরমাসাদা, ১৯। বাশিশাইল, ২০। চান্দমালতি, ২১। ঝিঙ্গাশাইল, ২২। বাতিমোটা, ২৩। কাজলগুর, ২৪। হোগলপাতা, ২৫। মাটিশাইল, ২৬। ভুয়া, ২৭। মনিশাইল, ২৮। লালটেপা, ২৯। বালামভাওয়া, ৩০। ধুলা বানর, ৩১। দিঘা ও ৩২। বামামন।
শাক সবজী মসলা ডাল জাতীয় বীজ: ১। কাজল বেগুন, ২। ধনিয়া, ৩। বড়চালকুমড়া, ৪। বীচি সীম, ৫। লাল পুইশাক, ৬। কদর ধুন্দল, ৭। ধানি মরিচ, ৮। বরবটি, ৯। কালোজিরা, ১০। ধানী মরিচ, ১১। পাঁচসিরা ঝিঙ্গা, ১২। চটকা সীম, ১৩। অটোসীম, ১৪। পাটশাক, ১৫। কাউন, ১৬। তিল, ১৮। বাশ পাতা ডাটা, ১৯। স্যাতি সরিষা, ২০। ইরি বেগুন, ২১। আমনডাটা, ২২। রুপভান সীম, ২৩। পেঁপে, ২৪। লম্বা সাদা লাউ, ২৫। তবলা বেগুন, ২৬। খেসারী, ২৭। চানা, ২৮। মুক্তা বেগুন, ২৯। রতন টমেটো, ৩০। ঢেঁড়স, ৩১। মাসকালাই, ৩২। ঘীকাঞ্চন সীম, ৩৩। সিরা সীম, ৩৪। চেরি টমেটো, ৩৫। মিষ্টি ধুন্দল, ৩৬। মুসুর, ৩৭। কেজুর, ৩৮। আকাশি মরিচ, ৩৯। মাঘী রাই, ৪০। চকলেট সীম, ৪১। কালো ধুন্দল, ৪২। রঙ্গিমা সীম, ৪৩। দেশী সরিষা, ৪৪। আউশ ডাটা, ৪৫। হাতিকেনে, ৪৬। ক্ষিরনলি গম, ৪৭। চিচিংগাভও ৪৮। চালকুমড়া
বিভিন্ন ধানের প্রদর্শনী দেখে দর্শকদের প্রশ্ন:
ঢাকা গাজীপুরের আব্দুস সাত্তার বলেন পায়েস, পিঠা পোলাউর ধান, চিড়া মুড়ির ধান বুঝলাম কিন্তু ওষুধী ধান কি এটা বুঝি নাই।
উত্তর- ওষুধী ধান হলো যে ধানগুলো ওষুধী গুনাগুন আছে। কোন ধানে কোন ওষুধী গুনাগুন আছে তা নয়াকৃষির কৃষকরা জানে। এই কথা শুনে সাত্তার বলেন, এই জন্য ডাক্তার আমাকে লাল চালের ভাত খেতে বলেন। কারন আমার ডায়বেটিস আছে।
মাগুরা থেকে আসা কৃষক সালাউদ্দিন নামের বলেন, এখনো এতো জাতের ধান দেশে আছে। আমাদের এলাকায় কিছু ধান ছিল। বোয়োরী, ঝিনুক শাইল পানিতে হতো। এখন আর দেখি না। আমার মা এই ধানের মুড়ি ভেজে রাখতো আমরা সারা বছর খেতাম। আবার মুড়ি চিড়া করে আমার বোনদের দিতো। এখন আর চল নাই। চিড়া মুড়ির পরিবর্তে এখন মেয়েদের আপেল কমলা, বিস্কুট চানাচুর দেয়। আগে খৈ মুড়ির সাথে কলসি ভরে দুধ দিতো। এখন দেয় সেভেন আপ, জুস, কোকা কোলা। আমার খুব ভালো লাগলো এতো জাতের ধান দেখে।
নওগাঁ থেকে আসা আলতাফ হোসেন বলেন, আমি যদি এখান থেকে কিছু ধান নিতে চাই তাহলে কিভাবে নিবো। আমি একজন পুরাতন কৃষক।
আলতাফ হোসেন জানান, তাঁর এলাকায় অনেক ধান ছিল। যেমন মগুর শাইল, কনকচুড়া, কাটারীভোগ, জিরাশাইল, রোগুখামা, কইতোর ঝাকি, খই শাইল, চিনি আতোব, বাখরাজ, সাদাকার্তিক, বাধারোন, চালানী, লাগডুমুর, বেতো, মাটাগোরন, ইন্দু শাইল। তিনি বলেন আপনাদের স্টল দেখে আমার মনে হচ্ছে আমি যদি আপনাদের সাথে নিয়মিত আসা যাওয়া করতাম, তাহলে আপনাদের কাছ থেকে আরো অনেক ধান সম্পর্কে জানতে পারতাম। আমি মাত্র ১৬ টি ধানের নাম বলতে পারছি। আপনাদের স্থানীয় জাতের ধান দেখে ছোট বেলার কথা মনে হলো। আমার দাদার সাথে ছোট বেলায় মাঠে যেতাম। দাদা বলতো বাড়ি যেয়ে বাখরাজ ধানের বীছন নিয়ে আয়। আমার লাঙ্গল বাওয়া শেষ। এখন বুনে দিবো। তখন আনন্দ করে বাড়ি এসে মাচির উপর দাদী তুলে দিতো আমাকে দিয়ে বীছন বের করাতো। আমার খুব খুশি লাগতো। আর এখন বাজারের প্যাকেট করা বীজ, নাম্বারিং ধান বীজ কোম্পানী তার ছেলে মেয়ের নাম দিয়ে রাখছে । কোথায় গেলো সেই দিন। আমি যে ধানের নাম বললাম তার কিছু কিছু ধান আছে। এসব ধানের কত চিড়া, মুড়ি, খৈ খেয়েছি। ভাতের ঘ্রান শুনেই দুই থালা খেয়ে ফেলতাম। এখন ভাতের কোন সাধ নাই। তরকারির সাধ নাই। যাই হোক সাঁইজির মেলায় এসে এবার বড় অভিজ্ঞতা লাভ করলাম আপনাদের ধান দেখে। আমার মনে হচ্ছে দেশের প্রাণ এখনো আপনারা বাঁচিয়ে রেখেছেন। স্থানীয় জাতের ধানের নাম শুনলেই এখনো গর্বে প্রাণ ভরে যায়। আমি ফিরে গিয়ে আমাদের এলাকার ধান খুজে বের করবো। আপনাদের কিছু বীজ দিবো আগামী কার্তিকে।
সাতক্ষিরার মলিজান বলেন, মানুষ মেলা দেখতে আসে রঙ বেরঙের জিনিস দেখে। যেটা মেলা ছাড়াও দেখতে পারতো। কিন্তু আপনাদের এখানে এমন জিনিস দেখলাম যা পুরাটাই অবাক করানোর বিষয়। বিভিন্ন উৎসবের ধান, চিড়া, মুড়ি, খৈ এর ধান। আসলেই এই ধান ছিলো সারা দেশে। আমরা ছোট বেলায় দেখতাম সখিবরন নামের একটি ধান। সেই ধান দিয়ে এলাকায় বিয়ের ক্ষির রান্না করে পাড়ার লোকদের খাওয়াতো। এই ধান না হলে সখিদের নাকি মুখ মিষ্টি হবে না। এখন আর কিছুই নাই। এখন বাজারের মিষ্টি চমচম কিনে মুখ মিষ্টি করানো হয়। আর একটি ধান হতো হলুদ বরন। এই ধান ছাড়া আগের ছেলে মেয়েদের গাঁয়ে হলুদ হতো না। হলুদের পাশে সাতটি ধান দিতে হতো। নিজেদের ঘরে না থাকলেও পাড়ার কারো কাছ থেকে চেয়ে আনা হতো। এখন বাটা হলুদ বাজারে বিক্রি হয়। তাই দিয়ে গাঁয়ে হলুদ হয়। দুনিয়া আজ কোথায়। আপনাদের এতো ভালো চিন্তা দেখে আমার অনেক ভালো লাগলো।
২০-২২ মার্চ, ২০১৯
নবপ্রাণ আখড়াবাড়ী, ছেউড়িয়া, কুষ্টিয়া