নারীর অধিকার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলুন
নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা || Wednesday 01 November 2017 ||আর্ন্তজাতিক নারী দিবস : আলোচনা সভার প্রতিবেদন
আর্ন্তজাতিক নারী দিবস উপলক্ষে অধিকার, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা ও স্বাস্থ্য আন্দোলন যৌথভাবে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনায় ৮ মার্চ,২০১৬ তারিখ বিকেল ৪ টায় আলোচনা সভার আয়োজন করে। পুরো সভাটি সঞ্চালনা করেন নতুন প্রজন্মের মুন্নী খানম। সভার শুরুতে প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ও চলচিত্র নির্মাতা খালিদ মাহমুদ মিঠুর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে নেত্রীরা এক মিনিট বিরবতা পালন করেন।
সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন, অধ্যাপক (অব:) তাসনীম ফেরদেৌস (জুলি) কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা।
সভায় উপস্থিত ছিলেন গার্মেন্ট শ্রমিক, কবি, সাংবাদিক, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার সাধারণ পরিষদ এর সদস্য, লেখিকাসহ নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন সংগঠনের প্রতিনিধি বৃন্দ।মোট অংশগ্রহনকারী ছিল ৭৩ জন।
স্বাগত বক্তব্য
মাহমুদা খাতুন নার্গিস নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা। নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার বেশ কয়েকটি নেটওয়ার্ক রয়েছে। এই নেটওয়ার্কে মাধ্যমে কাজ করিছ। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা কাজ করছে। আর্ন্তজাতিক নারী দিবসে নারীগ্রন্থের ডাকে যারা সারা দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই।
বক্তাদের বক্তব্য:
তাসকিন ফাহমিনা, জেন্ডার বিশেষজ্ঞ, অধিকার
তাসকিন ফাহমিনা বলেন, নারীর ওপর সহিংসতা ও বৈষম্য চলছেই। জনগোষ্ঠীর ৫০ ভাগকে কষ্টে রেখে কোন জাতি উন্নতি করতে পারেনি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর ২০১১ সালের জরিপ থেকে জানা যায় দেশের বিবাহিত নারীদের ৮৭ শতাংশই স্বামীর মাধ্যমে কোন না কোন সময়, কোন না কোন ধরণের নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। পারিবারিক সহিংসতার অনেকগুলো কারণের মধ্যে যৌতুক একটি অন্যতম প্রধান কারণ। শুধু দরিদ্র পরিবারে নয়; স্বচ্ছল ও তথাকথিত ‘শিক্ষিত’ পরিবারগুলোতেও যৌতুকের লেনদেনের ঘটনা ঘটছে ও যৌতুক না পেলে শারীরিক-মানসিক নিপীড়ন করার ঘটনা ঘটছে। যৌতুক নেয়া বা দেয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও- একে তো বন্ধ করা যায়ইনি- বরঞ্চ দিনকে দিন এ যেন বেড়েই চলেছে। অনেক মেয়েই তাঁর যৌতুকের টাকা জমানোর জন্য দিন-রাত খেয়ে-না খেয়ে গার্মেন্টসে কিংবা গৃহকর্মীর কিংবা অনেক ধরণের কষ্টসাধ্য ও ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেন এবং বিয়ের পর এঁদের অনেকেই সহিংসতা ও বৈষম্যের শিকার হন। যৌতুক অধিকাংশ ক্ষেত্রে বারবার চাওয়া হয় ও না পেলে বারবার নারীটিকে শারিরীক ও মানসিক নিপীড়নের সম্মুখীন হতে হয়। এর ফলে অনেক নারীই আহত বা নিহত হন। যৌতুক এর পরিমান নারীর চেহারা, গায়ের রং ইত্যাদির উপর ভিত্তি করেও নির্ধারিত হয়। অন্যদিকে ধর্ষণের ঘটনাগুলো ভয়ংকর ভাবে ঘটছে- কয়েক বছরের ধর্ষণের ঘটনাগুলোর রেকর্ড পর্যালোচনা করে উদ্বেগের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে যে প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর তুলনায় মেয়েশিশুরা অনেক বেশি ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। জানুয়ারি ২০০৯ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সাল পর্যন্ত অন্ততপক্ষে ৪৯১১ জন নারী ও মেয়ে শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে জানা গেছে; এর মধ্যে ৩৯% প্রাপ্ত বয়স্ক নারী এবং ৫৯% মেয়েশিশু।(সূত্র- অধিকার)।গণ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা এইসব ঘটনাও ঘটছে অনেক। এখন আবার মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মত ধর্ষণের ঘটনা ভিডিও করে ধর্ষণকারী বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে- এতটাই বিকৃত হয়ে পড়েছে এই সব ‘মানুষেরা’। সামাজিক চাপ, লোকলজ্জার ভয়ে বেশিরভাগ ধর্ষণের ঘটনা গোপন করা হয়, আর অনেক ধর্ষণের ঘটনা সালিশ করে মিটিয়ে ফেলা হয় এমনকি ধর্ষণকারীর সাথে নামেমাত্র বিয়েও দিয়ে দেয়া হচ্ছে। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাল্যবিবাহ, যৌতুক সহিংসতা, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির বিষয়ে তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেন। নারী পুরুষের সমতা আনার লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
শিরিন আজিজি, সদস্য, সাধারণ পরিষদ, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা
৬ বছর আগের সেই দিনটিকে স্মরণ করি। সামাজিক বা পারিবারিক ভাবে আমরা অনেক ভূমিকা রাখতে পারি। ছেলে মেয়ের দিয়ে দিলে বলি ছেলে পক্ষ মেয়ে পক্ষ এটা হবে কেন একত্রে তো অনুষ্ঠান করতে পারি। ভাইদের কাছে বোন সম্পত্তি চাইলে সম্পর্ক নষ্ট হয়। গার্মেন্ট শিল্পে মালিকদের নজর রাখতে হবে শ্রমিকে স্বাস্থ্যে প্রতি। শুধু পুজিঁ বাড়ালে হবে না শ্রমিকের স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে তো সে কাজ করতে করবে। মালিকের লাভের জন্যই শ্রমিকের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে হবে।
আঞ্জুমান আরা শিউলী, সদস্য, সাধারণ পরিষদ, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা
১৮৫৭ সালে নিউইয়র্ক শহরে শ্রমিকদের এই আন্দোলন শুরু হয়। নারী শ্রমিকদের থেকে শূরু হয়ে এখন সারা বিশ্বের নারীদের চাওয়া পাওয়ার বিষয়। এটা মানবতার অধিকার। সব জায়গায় নারী শ্রমিকদের বেতন বৈশম্য এখনো রয়ে গেছে। শ্রমিকের কর্ম দিবস বলতে কিছু নেই। সকল সেক্টরে নারীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে সমান মজুরি পায় না। তাছাড়া তারা স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত। এই দিনে তাদের ছুটি পাওয়ার কথা ছিল ছুটি পেলে তারা তাদের সমস্যার কথা বলতে পরতো। আমরা যারা গৃহব্যবস্থাপক যারা ঘরে থাকি আমাদের অনেক সমস্যা। হয়তো আমার নেই আরেক জনের আছে। পুরুষদের দৃষ্টিভংগির পরিবর্তন হওয়া উচিত। আমাদের নারীরা প্রতিটি কাজ সুচারেু ভাবে করতে পারে। নারীরা কারো প্রতিপক্ষ নয় পরিপূরক। সমতা আনতে গেলে নারী পুরুষের বৈশম্য দুর করতে হবে। নার তার নির্যাতনের কথা সবসময় প্রকাশ করতে পারে না। পারিবারিক এবং সামাজিক কারণে। নারীর কষ্টটা নারী ভাবে না এটা সত্য কথা। ২০৩০ সালে মধ্যে সমতা অর্জন করতে হলে সুচারুভাবে কাজ করতে হবে। তা হলেই সমতা অর্জন করা হয়তো সম্ভব হবে।
সীমা দাস সীমু, শ্রমবিকাশ কেন্দ্র
আর্ন্তজাতিক নারী দিবস ১০৬ বছর আগের জাতিসংঘের স্বীকৃত একটি দিন। এবারের এই দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে। অধিকার মর্যাদায় নারী পুরুষ সমানে সমান। পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে অনেক আন্দোলন করছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার সফল হয়েছেন। কিন্তু কোন ফেডারেশন নারী শ্রমিকের স্বাস্থ্য অধিকারের বিষয় নিয়ে কখনো আন্দোলন করেনি। কিছু কিছু ফ্রাক্টরীতে স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে। কিন্তু সেখানে সব ধরণের চিকিৎসা সেবা নেই। মালিকরা তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নামে মাত্র মেডিকেল সেন্টা রেখেছে। শ্রমিকের জন্য প্রজনন স্বাস্থ্য খুব গুরুত্ব পায় । নারী গর্ভধারণ করলে তো ছুটি দিতে হবে। মালিকের প্রোডাকশনের ক্ষতি হবে তাই শ্রমিকের বাচ্চা হোক এটা মালিক চায় না। শ্রমিকের যেসব রোগ হয় তার জন্য ভাল কোন চিকিৎসা সেবা নেই। বাংলাদেশের শ্রমিকদের যক্ষা বেশি হচ্ছে। ২০ বছর ধরে যারা গার্মেন্টে কাজ করছে তাদের কোমড় ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যথা, চোখে কম দেখা, জরায়ুর সমস্যা, কিডনির সমস্যা দেখা দেয়। নারী শ্রমিকেরা এখনো স্বাস্থ্য বা চিকিৎসা বিষয়ক কোন অধিকার আদায় করতে পারেনি। তাই সবাইকে নারী স্বাস্থ্যসেবার অধিকার আদায়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সুলতানা বেগম, গার্মেন্ট শ্রমিক নেত্রী, মুক্তিসংগ্রাম গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশন
আর্ন্তজাতিক নারী দিবসে শুধু নারীরা আন্দোলন করবে তা কেন হবে। ছেলে মেয়ে উভয়ে একত্রে কাজ করতে হবে তাই অনেক ভাই এখানে এসেছেন। সংবিধানে নারীর অধিকারের কথা আছে তা হলে আমরা অধিকার পাই না কেন? পোশাক শ্রমিকরা সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত কাজ করে করেন। আবার রাত ১০ টা পর্যন্ত ওভারটাইম করেন। তাদের স্বাস্থ্যের কথা কেউ চিন্তা করেনা। নীতনির্ধারকরা সংসদে বসে গ্রার্মেন্ট শ্রমিকের কথা ভাবে না। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করতে করতে চোখে অন্ধকার দেখে । তাদের কোন কোন অসুস্থতার ছুটি নেই। কিছু কিছু গার্মেন্টে তুলা, স্যাভলোন, পারাসিটামল সেলাইন আছে এ ছাড়া কিছু নেই। কোন কোন গার্মেন্টে এসবও নেই। মাথা ব্যথা করলে পারাসিটামল খাওয়ায়ে শোয়ায়ে রাখে। আসলে কেন তার মাথা ব্যথা সেটাতো সেখানে ডাক্তার নেই যে দেখবে। ৫,৩০০ টাকা বেতনে চাকরি করে সেই শ্রমিক কেমন করে তার চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে? ডাক্তারের কাছে ৫০০ টাকা ফি দিয়ে চিকিৎসা নেয়ার ক্ষমতা তার নেই। শ্রমিক অসুস্থ হলে ফার্মেসী থেকে ওষুধ খায়, কবিরাজের কাছে যায়। এতে তাদের অসুস্থতা আরো বেড়ে যায়। দীর্ঘদিন গার্মেন্টে কাজ করলে কোমড়ের হাড় ক্ষয় হয়,কিডনি নষ্ট হয়, চোখে কম দেখে, যক্ষা হয়, গ্যাসটিক হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৬ মাস ম্যাটারনিটি লিভ আছে। অন্য কোন সেক্টর মেটারনিটি লিভ পায় না। আমাদের দেশে বিভিন্ন বিভাগে প্রধান নারীরা রয়েছে কিন্তু তা থাকা সত্বেও নারীরা কোন সুযোগ সুবিধা পায় না। নারীকে যেন মানুষ হিসেবে দেখা হয়। বছরের ৩৬৫ দিনই হবে মানবতার দিন। নারী দিবসে এটাই আমাদের অংগীকার হবে নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্যে নিশ্চয়তা দিতে হবে।
শামীমা নাসরীন সভাপতি, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্ট শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন
আমাদের দেশের পোশাক কারখানায় ৮৫ ভাগের বেমি নারী শ্রমিক কাজ করে থাকলেও ৮ মার্চ আর্ন্তজাতিক নারী দিবসে তাদের কোন ছুটি দেয়া হয় না। শুধু একদিন নারীর জন্য হবে কেন? সব দিন নারীর হওয়া উচিত। বলা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্য নারীপুরুষের সমতা সমান সমান হবে। অর্থাৎ ৫০/৫০। আমাদের দেশের পোশাক কারখানায় ৮৫ ভাগের বেশি নারী শ্রমিক কাজ করে থাকলেও ৮ মার্চ আর্ন্তজাকিত নারী দিবসে তাদের ছুটি দেয়া হয়না। আগে শ্রমিকরা এবং নারী নেত্রীরা রাজপথে নেমে আন্দোলন করতেন। এখন আন্দোলন রাজপথ থেকে টেবিলে চলে গেছে। সরকার বলছে নারী নির্যাতন কমেছে । আসলে নারী নির্যাতন নিরবে বেড়েছে। শ্রমিকরা যখন বেতন পায় স্বামীরা সাথে সাথে বেতন কেড়ে নেয়। বলা হয় যদি সংসার করতে চাও তা হলে টাকা আমাকে দিতে হবে। নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি আসুক এটা পুরুষরা কখনোই চায় না। শ্রমিকরা আজকে প্রেসক্লাবের সামনে তাদের দাবি দাওয়ার কথা বলেছে। তারা বলেছে আমরা কি আমাদের প্রাপ্য অধিকার রক্ষা করতে পারবো। শারীরিক, মানষিক, কোন না কোন ভাবে নারীরা নির্যাতিত হয়েই আসছে। এমন একদিন অবশ্যই আসবে সে দিন নারী নির্যাতন থাকবে না। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে সরকার, নাগরিক সমাজ, সবাইকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান।
নারীর স্বাস্থ্য নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য আন্দোলন নারীর স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছেন। চিকিৎসা এখন বাণিজ্যিকীকরণ হয়ে গেছে। শ্রমিকরা সরকারি হাসপাতালে যেতে পারে না। কারণ সেখানে লাইন ধরে সারাদিন অপেক্ষা করতে হয়। শ্রমিকের পক্ষে সম্ভব না সেখানে গিয়ে সেবা নেয়া। সরকারি হাসপাতালে ধনীর জন্য সেবা আছে । শ্রমিকের জন্য কোন সেবা নেই। শ্রমিকের জন্য হাসপাতালে একটি ইউনিট রাখতে হবে। তাহলেই হয়তো শ্রমিকরা যে কোন সময় সেখানে গিয়ে সেবা নিতে পারবে।
ফরিদা আখতার, সভাপ্রধান, সাধারণ পরিষদ, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা। বেগুনী রংটা একটা বেদনার রং। এখন এটা উৎসবের রং হয়ে গেছে। আফ্রিকার একটা আন্দোলনে তারা বেগুনী রং ব্যবহার করেছিল। আমরা আগে কথা বলতে পারতাম না। এখন আমরা সবাই প্রাণ খুলে কথা বলতে পারছি। আর্ন্তজাতিক নারী দিবসে রাশিয়াতে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরুষদের ছুটি দেয় হয়। যেন তারা সেই দিন নারীদের কাজগুলো করতে পারেন। আগে নারীরা নিজেদের অধিকারের কথা বলতে পারতেন না। বর্তমানে নারীরা অন্তত নিজেদের কথা বলতে পারছেন। আর্ন্তজাতিক নারী দিবসে এটাই আমাদের একটা অর্জন। নারীরা জেগে উঠলে পুরুষরা ভয় পাবে। নারীরা জেগে উঠলে নিজেদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হলে সমাজে পরিবর্তন আসবে। নারী নারীকে কতভাবে শোষন করতে পারে তা আমাদের দেশের অবস্থা দেখেই অনুমান করা যায়। নারী দিবসে আমরা বেগুনী রংগের শাড়ী পড়ছি । আর আমাদের দেশের স্থানীয় জাতের বেগুন চলে যাচ্ছ কোম্পানীর হাতে । এটা প্রতিবাদ যদি না করা হয় তা হলে আর্ন্তজাতি নারী দিবসের সফলতা আসবে না। মায়ের আদর কোম্পানি কেড়ে নিচ্ছে। সবাই মিলে মানুষ হবো তা হলে নির্যাতন কমবে।
মুক্ত আলোচনা:
লিলি হক, তিনি একজন কবি। কবিতার ছন্দে ছন্দে বলেন,স্বপ্ন, গল্প, গান এই তিনে নারীগ্রন্থের প্রাণ। আমাদের সামনে এতসব তারকারা থাকতে আমাদের কিসের ভয়। আমি শুধু উরির চলে যাইনি। এছাড়া বাংলাদেশের সব জায়গায় ঘুরেছি। পাবনা পাগলা গারদে গিয়েছিলাম সেখানে যেতে সবাই ভয় পায়। আমি এগিয়ে গেলাম এক নারী তার হাত বাড়িয়ে দিলেন। তার হাতে হাত রাখলাম। এর পরের ঘটনা ভয়াবহ। তিনি জানালেন আমি পাগল নই। আমার স্বামী পরকীয় ঘটনায় আমাকে ডাক্তারকে ঘুষ দিয়ে পাগল বানিয়ে এখানে পাঠিয়েছেন। আমরা সেই কারাগারকে ফুলের বাগান বানাতে চাই।
স্বপ্ন আমার স্বপ্নই হবে?
সফল কেন হবে না।
স্বপ্ন সফল করবো।
আপনার অধিকার আপনাকে আদায় করতে হবে। আমরা প্রত্যেকেই একজন মানুষ এটাই ভাবতে হবে।
সুফিয়া রহমান, লেখিকা,নারীগ্রন্থ প্রবর্তনার সাধারণ পরিষদ এর সদস্য
নারীরা এখন স্বনির্ভর হয়েছেন। এটা দেখতে খুব ভাল লাগে। রাস্তাদিয়ে যখন যাই তখন দেখি নারীরা দলবদ্ধভাবে কাজে যাচ্ছে। এটা আমাদের লক্ষনীয় একটা অর্জন। আমেরিকায় গিয়ে আমাদের দেশের নারী শ্রমিকের তৈরি সার্ট পাওয়া যায় এটা আমাদের গর্ব। ক্লারা জেৎকিনের স্বপ্ল পূরণ হয়েছে শ্রমিকদের দেখে সেটা বুঝি। নারীর ওপর যে সহিংসতা হচ্ছে সেটা যেন ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতে পারি।
শাহীনুর বেগম, নারী নেত্রী
নারীরা যে অর্জন করছে তার প্রমান আজ মঞ্চে যারা বসে আছেন তাদের দেখেই বুঝা যায়। আমার শ্রমিক নায্য পাওনা পচ্ছে কিনা তা দেখতে হবে। তাদের কথা ভাবতে হবে। নির্মান শ্রমিকের কথা কেউ ভাবে না তাদের কথাো ভাবতে হবে। ৪০ লক্ষ শ্রমিক যারা রয়েছে তাদের সমস্যার কথা কখনও সংসদে বলতে শুনিনি। এখন সব সেক্টরে নারী প্রধানরা রয়েছেন তার পরও কেন নারীরা নির্যাতিত হচ্ছেন। এক শ্রমিকের কথা আমি জানি তার বাড়ি রংপর। তার ২টি কিডনি নষ্ট হয়েছিল। গত মাসে সেই শ্রমিক বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। শোষনে কারখানা হচ্ছে সংসদ।
মিলি হক, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা সোমবারের আড্ডার সদস্য
মিলি হক বলেন আমার বাসা প্রেসক্লাবের সামনে। প্রেসক্লাবের সামনে অনেকেই বক্তব্য রাখেন প্রতিদিন আমি অনেকের কথা শুনি। আমরা জানি নরীরা বঞ্চিত। উচ্চবিত্তরা প্রেসক্লাবে গিয়ে নিজের কথা বলে না। একজন উচ্চ শিক্ষিত শিক্ষক যখন নির্যাতন হয় এটাকে আমরা কি বলতে পারি। চোখ তুলে নিযে যায় তার কিছুই করার থাকে না। তিনি কি সচেতন ছিলেন না? মিনা কাটুনে দেখেছি ছেলে টাকে বেশি খাবার দেয়া হয়। মেয়ে টাকে দেয়া হয় না। এই যে বৈষম্য চলছে। এটা কি ভাবে দুর হবে যদি না আমরা নিজেরা সচেতন হই। ছোট বেলায় আমার ভাই এবং আমার বসন্ত হয়েছিল । ভাইটাকে ডাক্তার দেখানো হলো। আমাকে সুপারীর খোসার নীচে রাখা হল। আমি মরিনি আমি এখনো বেচেঁ আছি। কাংগালীনি সুফিয়ার একটি বিক্ষাত গান আছে।
পরাণের বান্ধব রে
বুড়ি হলাম তোর কারনে।
এর পর একটি কবিতা আবৃতি করে শোনান।
সাহিদা আখতার, গার্মেন্ট দর্জি শ্রমিক কেন্দ্র
এইসব বক্তব্য দীর্ঘ দিন ধরেই শুনছি। এইগুলি এখন পরিবর্তন হওয়া উচিত। পরিবারে নারীরা বেশি নির্যাতিত হয়। মহিলারা মহিলাদের নির্যাতন করে। শ্রমিকের স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার দায়িত্ব মালিকের। গার্মেন্টে যে কাজের পরিবেশ এটা স্বাস্থ্য সম্মত না। স্বাস্থ্য ভাল থাকবে কি করে। যে চেয়ারে বসে কাজ করে সেটা স্বাস্থ্য সম্মত না। আমাদের শ্রমিকের কাজের মান অনেক ভাল। শ্রমিকের স্বাস্থ্য সেবার দায়িত্ব অবশ্যই সরকারকে নিতে হবে।
সালেহা ইসলাম স্বাধীন বাংলা কর্মচারী ফেডারেশন
দীর্ঘদিন ধরে গার্মেন্টে কাজ করি। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি নাসরীন নামে এক শ্রমিকে মাথা ব্যথা ছিল। তাকে পারাসিটামল খাওয়ায়ে শোয়ায়ে রেখেছিল। পরে সে মারা যায় । মারা যাওয়ার পর তাকে ডাক্তারের কাছে নেয়া হয়। ডাক্তার বলে সে মারা গেছে অনেক আগে। শ্রমিকরা কাঁচা পানি খায় ।এ কারণে তাদের ডায়রিয়া, টাইফয়েড, আমাশয় নানা ধরনের রোগ হয়। শুধু গার্মেন্ট না প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে নারীরা নানা ভাবে নির্যাতিত হয়।
মিটিং বসে একটি গানের কলি লিখেছেন তা গান গেয়ে শুনান
বিশ্ব মাঝে সবার সেরা বলতো কোন দেশ
বাংলাদেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ।
এই দেশের সকল কর্মের ক্ষেত্রে নারী আহ্বান
অত্যচারের শিকার হয়ে রাস্তায় নেমেছি আমরা।
সারা দিন কাজ করি বাসায় গিয়ে রান্না করি।
তাইনা আমার বেশ
বাংলাদেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ।
সভাপ্রধানের বক্তব্য:
তাসনীম ফেরদৌস জুলি, সদস্য সাধারণ পরিষদ, নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা
১৮৫৭ সালে নুইয় সুই মহিলা শ্রমিকরা অমানবিক কাজের পরিবেশ, নিম্ন মজুরী এবং দেনি ১৬ ঘন্টা কাজের পরিবর্তে ৮ ঘন্টা কাজে প্রতিবাদ জানিয়ে মিছিল বের করে। এরই প্রেক্ষিতে
১৯৯০ সালে ডেনমার্কে অনুষ্ঠিত সমাজতান্ত্রিক নারীদের দ্বিতীয় আর্ন্তজাতিক সম্মেলনে ক্লারা জেৎকিনের প্রস্তাবে মার্চের ৮ তারিখ আর্ন্তজাতিক নারী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
১৯৭২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভার সিদ্ধন্ত অনুযায়ী ১৯৭৫ সালকে নারীবর্ষ ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে বিভিন্ন সময়ে নারী সম্মেলন হয়ে আসছে । প্রতিবছর একটি প্রতিপাদ্য থাকে। এদেশে উচ্চপদে নারীরা রয়েছে তারপরও আমাদের নারীদের অধিকার আদায় হচ্ছে না। নারীরা যারা বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছেন তাদের সুবিধা আরো সম্প্রসারিত করতে হবে। সবনারী এক হয়ে কাজ করলে আমরা আমাদের অধিকার আদায় করতে পারবো।