কলা গাছ
Monday 30 November -0001অন্যান্য স্থানীয় নাম:
বৈজ্ঞানিক নাম : Musa spp. পরিবার : Musaceaeপ্রধান ব্যবহার :ফল/ওষুধ এবং সবজী
অন্যান্য ব্যবহার :ফল/ওষুধ
আরো পড়ুন
বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশে কলা অন্যতম প্রধান ফল। সকল উষ্ণ জলবায়ু সম্পন্ন দেশগুলোতে কলা ভালো জন্মে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াই কলার উৎপত্তিস্থল। কলা দেশের যে কোনো স্থানে প্রায় যে কোনো প্রকার মাটিতে জন্মে।এদেশে কলা চাষের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, সারা বছর দেশের প্রায় সব অঞ্চলের উঁচু জমিতেই চাষ করা যায়। এছাড়া পার্বত্য এলাকার ‘বন কলা’, ‘বাংলা কলা’, ‘মামা কলাসহ বিভিন্ন ধরণের বুনোজাতের কলার চাষ হয়।
কলার গাছ, পাতা, কান্ড সবই সবুজ। কাঁচাকলাও সবুজ, পেকে গেলে হলুদাভ হয়। কলা পরিবারের Musaceae একটি উদ্ভিদ। বাংলাদেশে প্রায় ১৯টি কলার জাত রয়েছে। কলার তিনটি উল্লেখযোগ্য প্রজাতি (Species) রয়েছে যেমন: Musa sapientum, Musa cavendishii এবং Musa paradisiaca। বীজ বিহীন ও পাকা অবস্থায় খাওয়ার উপযোগী কলা Musa sapientum প্রজাতির অন্তর্গত। ইহার গাছ দীর্ঘকায়। যেসব উৎকৃষ্ট কলার গাছ বামনাকৃতির সেসব Musa cavendishii প্রজাতির অন্তভুক্ত। আর যেসব কলা রান্না করে খাওয়া হয় সেসব Musa paradisiaca প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত।
খাওয়ার দিক থেকে কলার জাত চার ধরনের। যথা:
- সম্পূর্ণ বীজমুক্ত কলা। যেমন: সবরি, অমৃত সাগর, কগ্নিশ্বর, দুধসর, দুধ সাগর প্রভৃতি।
- দুই-একটি বীজযুক্ত কলা। যেমন: চম্পা, চিনি চম্পা, কবরি, চন্দন কবরি, জাব কাঁঠালি ইত্যাদি।
- বীজযুক্ত কলা। যেমন: এঁটে কলা, বতুর, আইটা, গোমা, সাঙ্গি ইত্যাদি।
- কাঁচাকলা। যেমন: আনাজি কলা, ভেড়ার ভোগ, চোয়াল পউশ,বর ভাগনে, বেহুলা, মন্দিরা ও বিয়ের বাতি ইত্যাদি।
কলার গুণাগুণ
কলা বিভিন্ন গুণাগুণে সমৃদ্ধ একটি সুপরিচিত ফল। এর পুষ্টিগুণ অধিক। এতে রয়েছে দৃঢ় টিস্যু গঠনকারী উপাদান। যেমন: আমিষ, ভিটামিন এবং খনিজ। তাছাড়া কলা ক্যালরির একটি ভালো উৎস। এতে কঠিন খাদ্য উপাদান সমন্বয় যে কোনো তাজা ফলের তুলনায় বেশি শক্তি পাওয়া যায়। কলায় রয়েছে সহজে হজমযোগ্য শর্করা! এ শর্করা পরিপাকতন্ত্রকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে। গবেষকরা জানিয়েছেন, ‘রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ নিশ্চিত করতে দেহে পটাশিয়ামের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি। এছাড়াও দেহে পটাশিয়ামের কার্যকারিতা উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে কমে যায় স্ট্রোকের ঝুঁঁকি। আর উপযোগী পটাশিয়াম আছে কলায় প্রচুর পরিমাণে। গবেষকরা জানান, একটি কলায় প্রায় ৫০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে। আর মানবদেহে প্রতিদিন ১ হাজার ৬০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়ামের জোগান দেয়া গেলে স্ট্রোকের হাত থেকে বছরে বেঁচে যেতে পারেন বহু মানুষ!
বিশেষ উপকারিতা:
- শরীরের ক্লান্তি দূর করতে কলা বিশেষভাবে উপযোগী।
কলার বিভিন্ন উপকারিতা নিম্নরূপ:
- কলা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে তা থেকে প্রায় পুরোপুরি সুষম খাদ্য পাওয়া যায়।
- কলা নিরাপদ হজমের জন্য পথ্য হিসেবে কাজ করে।
- কলা নরম হওয়ার কারণে হজমশক্তির কাজে বাড়তি ঝামেলা দেখা দেয় না।
- দীর্ঘকাল স্থায়ী আলসারের ক্ষেত্রেও কোনো সমস্যা ছাড়াই কলা খাওয়া যায়।
- কলা পরিপাকতন্ত্রের অতিরিক্ত অম্লত্ব নিরসন করে, এটি পাকস্থলীর অভ্যন্তরীণ দেয়ালের আস্তরণের ওপর একটি আবরণ সৃষ্টি করে, আলসারের উত্তেজনা প্রশমিত করে।
- এছাড়া কলা কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ডায়রিয়ার মতো রোগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কলা যেহেতু ‘পেকটিন’ সমৃদ্ধ, যা পানিতে দ্রবণীয়, তাই উভয় ক্ষেত্রেই কলার ভূমিকা সমান দরকারি। তাছাড়া কলা পেটের ক্ষতিকারক জীবাণুকে উপকারী ব্যাকটেরিয়ায় পরিণত করতে পারে।
- কলা ‘গেঁটে বাত’ ও বাতের চিকিৎসায় সবিশেষ উপকারী।
- কলায় উচ্চপরিমাণ ‘আয়রন’ থাকায় তা ‘অ্যানিমিয়ার’ চিকিৎসার জন্য উপকারী। কারণ তা রক্তে ‘হিমোগ্লাবিনের’ মাত্রা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- কলা ও দুধের সংমিশ্রণ শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- কলার মোচা এবং থোর
কলার মোচা এবং থোর খাদ্য মানের দিক থেকে অনেক পুষ্টি কর:
কলার মোচা: আহার উপযোগী ১০০ গ্রাম পরিমাণ কলার মোচায়: আমিষ-১.৭ গ্রাম, শ্বেতসার-৫.১ গ্রাম, খনিজ লবন-১.৩ গ্রাম, ভিটামিন বি১-০.০৫ মি.গ্রাম, ভিটামিন বি২- ০.০২ মি.গ্রাম, ভিটামিন সি-১৬ মি.গ্রাম, ক্যালসিয়াম-৩২ মি.গ্রাম, লৌহ-১.৬ মি.গ্রাম ক্যারোটিন-২৭ মাই.গ্রাম এবং শক্তি -৩৪ কিলো-ক্যালোরী রয়েছে।
কলার থোর: আহার উপযোগী ১০০ গ্রাম পরিমাণ কলার মোচায়: আমিষ-০.৫ গ্রাম, শ্বেতসার-৯.৭ গ্রাম, খনিজ লবন-০.৬ গ্রাম, ভিটামিন বি১-০.০২ মি.গ্রাম, ভিটামিন বি২- ০.০১ মি.গ্রাম, ভিটামিন সি-৭ মি.গ্রাম, ক্যালসিয়াম-১০ মি.গ্রাম, লৌহ-১.১ মি.গ্রাম এবং শক্তি -৪২ কিলো-ক্যালোরী রয়েছে।
পুড়ে গিয়ে ক্ষতের সৃষ্টি হলে কলা গাছের পানি দিয়ে ক্ষত স্থান ধৌত করা হয়। এতে তাড়াতাড়ি জ্বালাপোড়া কমে যায়। ছোট খাট পুড়া হলে এ ধরণের চিকিৎসা প্রযোজ্য। থার্ড ডিগ্রী অর্থাৎ বেশি পুড়ে গেলে পুড়ার জন্য রোগীকে হাসপাতালে প্রেরণ করতে হবে। সর্তকতা: ইলেকটিক শক লেগে পুড়লে সেখানে পানি দেবেন না।
তথ্য সূত্র:
১। উদ্ভিদ, পশুপাখী ও মৎস্য সম্পদ, কামাল উদ্দীন আহমদ, সদস্য পরিচালক, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল,,চতুর্থ সংস্করণ;১৯৮৪, কৃষি খামারবাড়ি সড়ক, ঢাকা-১২১৫।
২। ফল-সবজীর চাষ ও পুষ্টি পরিচিতি, প্রথম সংস্করণ, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ, কৃষি খামারবাড়ি সড়ক, ঢাকা-১২১৫।
উবিনীগ মাঠ গবেষণার তথ্য