আমরুল/আম্ররোলিকা
Monday 30 November -0001অন্যান্য স্থানীয় নাম: আমরুল, আমবলি, চুকাত্রিপাটি
বৈজ্ঞানিক নাম : Oxalis corniculata পরিবার : Oxalidaceaeপ্রধান ব্যবহার :খাদ্য/ওষুধ
অন্যান্য ব্যবহার :রাসায়নিক উপাদান: আমরুল শাক পুরো অংশ শাক হিসেবে খায়। এই শাকের পাতায় প্রচুর ভিটামিন-সি, ক্যারেটিন, ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম রয়েছে। পাতা এবং কান্ডের ভেতর ট্রাট্রেটিক, সাইট্রিক এসিড, এবং ম্যাইলিক এসিড রয়েছে।
আরো পড়ুন
অমরুল ছোট ছোট সরু লতানো উদ্ভিদ। এটি মাটিতেই প্রসারিত হয়। আম (অপক্ক দ্রব্য), রুক্ষ বা রোগ নাশ করে বলে একে কোথাও কোথাও আমরুক বলে। পাতায় তিনটি হৃদপিন্ড আকারের টক পাতা থাকে বলে একে চুকাত্রিপতীও বলা হয়ে থাকে। কোথাও কোথাও এটিকে আম্বলী শাকও বলা হয়ে থাকে। সাধারণত এটি বাড়ীর আনাচে কানাচে ও জমিতে এবং ভাঙ্গা বাড়ীর গায়ে দেখা যায়। শিকড় থেকে গুচ্ছাবদ্ধভাবে প্রায়ই ৪টি করে লম্বা দন্ডের মাথায় তিনটি পাতা বিশিষ্ট পাতা ছাতার ন্যায় গজায়। ডাঁটার গোড়া থেকে গজানো লম্বা দন্ডের মাথায় ছোট ছোট হলুদ রং-এর ফুল হয়। ফল আকারে যবের মতো। প্রতিটি ফলের মধ্যে ছোট ছোট অনেক বীজ থাকে।
বিস্তার: ভারত বাংলাদেশের সর্বত্র আমরুল দেখা যায়।
বংশবিস্তার: বীজ থেকে বংশবিস্তার সম্ভব হলেও সাধারণত এটি রুট সাকার থেকেই বংশ বিস্তার করে থাকে। এটি কোথাও চাষ করা হয় বলে জানা যায় না।
আমরুলের ওষুধি ব্যবহার:
◙ আম দোষ দূর করে বলে এটির এক নাম আমরুক, যা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।
◙ টাটকা পাতার রস ধুতরার মাদকতা নিবারণ করে এবঙ রক্ত আমাশয় রোগে হিতকর।
◙ আমরুল রস জ্বর নাশক। জ্বর চিকিৎসায়, আমাশয় এবং স্কার্ভি রোগে ব্যবহৃত ওষুধের অন্যতম ভেষজরূপে আমরুল পরিচিত।
◙ আমরুল শাক রান্না করে খেলে ক্ষুধা বৃদ্ধি হয়। এটি হজমীকারক।
◙ কোনো স্থানে ফোঁড়ায় যন্ত্রনা হলে আমরুলের পাতা বেটে প্রলেপ দিলে যন্ত্রণা লাঘব হয়। পাতা গরম জলে বেটে ফোঁড়ায় পুলটিস দিলে ফোঁড়া ফেটে যায়।
◙ বিছা কামড়ালে আমরুলের পাতার রস যন্ত্রনা লাঘব করে, পাতা হাতে রগড়ে নিয়ে বেদনার স্থানে প্রলেপ দিলে প্রদাহ ো যন্ত্রণা কমে যায়।
◙ পুরাতন আমাশয় রোগে মাখন তোলা দুধের সাথে আমরুল পাতা সিদ্ধ করে দিনে ২/৩ বার খেলে বিশেষ উপকার হয়।
◙ মুখের দূর্গন্ধনাশ ও দাঁত শোধনের জন্য আমরুল ব্যবহৃত হয়।
◙ আমরুল পাতার রস অল্প চিনির সাথে মিশিয়ে সরবতের মতো খেলে আমাশয় রোগজনিত পিপাসার শান্তি হয়।
◙ শিশুদের সর্দি বুকে বসে গেলে অথবা অল্প কাশি হলে মূলসহ আমরুল পাতার এক চা-চামচ রস গরম করে দিনে ১ বার বা প্রয়োজনে ২ বার খাওয়ালে জমা সর্দি উঠে যায়। সরিষার তেলের সাথে আমরুলের রস মিশিয়ে গরম করে বুকে-পিঠে মালিশ করলে আরও ভালো হয়।
◙ অনেকে টক খেতে ভালোবাসেন, কিন্তু খেলে অম্ল হয়। এক্ষেত্রে আমরুল ব্যবহার শ্রেয়। কারণ এতে আছে অম্ল, মধুর ও কষায় এ তিনটি রসের সমন্বয়। তাই আমরুল অম্লপিত্ত রোগ না বাড়িয়ে অতৃপ্ত রুচিকে তৃপ্ত করে।
◙ গায়ে চুলকানি অনেক সময় পাঁচড়া হয়ে যায়। মনে হয় যেন দাদ হয়েছে। এমন ক্ষেত্রে আমরুল পাতার রস গায়ে মাখলে উপশম হয়।
◙ মূত্রগ্রহ রোগ হলে-অর্থাৎ প্রস্রাবের বেগ হয় কিন্তু প্রস্রাব হয় না। অনেক ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়োজন পরে। এরূপ ক্ষেত্রে আমরুল পাতার রস ২ চা-চামচ করে প্রতিদিন ৪ বার আধা কাপ পানি মিশিয়ে খেলে ঐ অসুবিধা সেরে যায়।
◙ সাধারণত অনেকের টক জাতীয় কিছু খুব খেতে ইচ্ছে হয় কিন্তু খেতে গেলেই আর খাওয়া যায়না। সাধারণত এই সব ক্ষেত্রে আমরুল শাক খে টকের রুচি ফিরে আসে।
◙ সরিষার তেলে আমরুলের রস মিশিয়ে গরম করে অথবা রোদে দিয়ে ওই তেল বুকে ও পিঠে মালিশ করলে সর্দিতে উপকার পাওয়া যায়।
◙ রাত্রে ঘুম কম হলে আমরুল পাতার রস করে সন্ধ্যায় ১ কাপ পরিমাণ করে কয়েক দিন খেলে ঘুম হবে এবং মাথা ঠাণ্ডা থাকবে।
◙ বিষাক্ত কোন কিছু কামড়ালে এই পাতার রস লাগালে যন্ত্রণা কমে যায়। বিছা কামড়ালে আমরুল পাতার রস যন্ত্রণা লাঘব করে।
◙ কঙ্কনদেশীয় লোকেরা আমরুল পাতা ছেঁচে গরম জলে সিদ্ধ করে রসুন রসের সাথে মিশিয়ে মাথায় লাগায় এতে পিত্তজনিত মাথাধরা আরাম হয়।
◙ হাঁপানি হলে শ্বাস কষ্ট হয়। সেই সময় এই পাতার রস করে এক কাপ পরিমাণ বিকেলে খেলে ভাল উপকার পাওয়া যায়। এভাবে ১ সপ্তাহ খেতে হবে।
◙ উচ্চরক্তচাপ হলে আমরুল পাতার রস আখের গুড় দিয়ে শরবত করে এক গ্লাস পরিমাণ প্রতিদিন সকালে খেলে ভাল উপকার পাওয়া যায়।
তথ্যসূত্র:
১। ইউজফুল প্ল্যান্ট অব বংলাদেশ, প্রকাশনা: দি এড কমিউনিকেশন, আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম।
২। উবিনীগ মাঠ গবেষণা তথ্য ও চিরঞ্জীব বনৌষধি-দ্বিতীয় খন্ড পৃ: ১৮৯-১৯৫