কালো জিরা
Monday 22 August 2016অন্যান্য স্থানীয় নাম: কাইলাজিরা (নরসিংদি), কালিজিরা
বৈজ্ঞানিক নাম : Nigella sativa পরিবার : Nigellaপ্রধান ব্যবহার : মসলা
অন্যান্য ব্যবহার :খাদ্য, ওষুধ
আরো পড়ুন
বর্ণনাঃ কালোজিরা একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এ উদ্ভিদটি ১৫-৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উচু হয়ে থাকে। কালোজিরা বাংলাদেশে খুবই পরিচিত একটি মসলা। কালোজিরা উদ্ভিদের বীজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এর ওষুধি গুণাগুণও অনেক। এর বীজ খুবই ক্ষুদ্র আকৃতির। রং কালো। কালোজিরা বীজের খুব সুন্দর একটি গন্ধ রয়েছে। এটি বাংলাদেশেও চাষ করা হয়ে থাকে। বেলে দোঁআশ এবং দোঁআশ মাটিতে ভালো জন্মে। কালোজিরা উদ্ভিদ জলবদ্ধতা পছন্দ করে না, সে কারণে যে জমিতে কালোজিরা চাষ করা হবে সে জমির পানি নিশ্কাসন ব্যবস্থা ভালো হতে হবে। কালোজিরা গাছ কখনোই ছায়ায় জন্মে না। সেজন্য কালোজিরার জন্য সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে বৃষ্টিহীন সূর্য উজ্জ্বল আবহাওয়া এবং ময়েশচার যুক্ত মাটি। কালোজিরা বীজ ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে মার্চ মাস পর্যন্ত বপন করা যায়। কালোজিরা গাছে জুলাই মাসে ফুল ধরে। এর নীল-বেগুনী-সাদা রং মিশ্রিত ফুল ফোঁটে। তারপর ফল ধরে এবং সেপ্টেম্বর মাসে কালোজিরা বীজ পরিপক্ক হয়ে থাকে। কালোজিরার অপরিপক্ক বীজের স্বাদ তিতা এবং তাতে কোনো গন্ধ থাকে না। যখন এটি পরিপক্ক হয় তখন সে বীজ থেকে সুন্দর গন্ধ বের হয়। কিছুটা ঝালের মতো ঝাঁঝালো গন্ধ। কোনো কোনো স্থানে কালোজিরাকে মরিচের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে কালো জিরার বীজ রান্নায় ব্যবহার করা হয়, ভর্তা করে খাওয়া হয়। এছাড়া ওষুধি হিসেবে বিভিন্ন পদ্ধতিতে সেবন করা হয়ে থাকে। কালোজিরা বাঙলাদেশের যেকোনো স্থানে পাওয়া যায়। এর বীজ সংরক্ষণ করতে হলে অবশ্যই বায়ুরুদ্ধ পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।
কালোজিরার গুনাগুণঃ
■ একনি দূর করেঃ কলোজিরার তেল ত্বকের যেকোনো সমস্যা দূর করতে কাজ করে। এক কাপ লেবুর রসে আধা টেবিল চামুচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে নিন। এই তেল ত্বকে দিনে দুইবার ব্যবহার করুন। ত্বকের ফ্যাকাসে ভাব ও একনি দূর হয়ে যাবে।
■ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ প্রতিদিন সকালে এক কাপ ব্ল্যাক টি’র সঙ্গে আথা চা চামুচ কালোজিরার তেল মেশিয়ে খান। এতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
■ স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং অ্যাজমায় উপকারীঃ এক চা চামুচ মধুতে একটু কালোজিরা দিয়ে খেয়ে ফেলুন। এতে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পাবে। তাবলে একদিন খেলে হবে না, নিয়ম করে খেতে হবে। হালকা উষ্ণ পানিতে কালোজিরা মিশিয়ে ৪৫ দিনের মতো খেলে অ্যাজমা সমস্যার উন্নতি ঘটে।
■ মাথা ব্যথার মুক্তিতেঃ মাথা ব্যথা অনেকের প্রতিদিনের পেরেশানি। কোনো ওষুধ না খেয়ে কিছু কালোজিরা নিয়ে কপালে ঘসতে থাকুন। মুক্তি মিলবে ব্যথা থেকে।
■ ওজন কমাতেঃ যারা শরীরের ওজন কমাতে চান, তাদের খাদ্য তালিকায় উষ্ণ পানি, মধু ও লেবুর রসের মিশ্রণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এখন এই মিশ্রণের সঙ্গে কিছু কালোজিরা পাউডার ছিটিয়ে দিন। দারুণ উপকারী পানীয়।
■ ফোড়ার ব্যথা ভালো করতেঃ তিলের তেলের সাথে কালিজিরার তেল মিশিয়ে ফোঁড়ায় দিলে ফোঁড়ার ব্যথা ভাল হয়ে যায়।
■ মায়েদের স্তনের দুধ বৃদ্ধিতেঃ প্রসূতি মায়েদের স্তনের দুধ বাড়ানোর জন্য রসুনের সাথে কালোজিরা বেটে খাওয়ানো হয়ে থাকে। এতে মায়ের স্তনের দুধ বৃদ্ধি পায়, শিশু তার মায়ের থেকে প্রয়োজনীয় দুধ খেতে পারে।
■ সর্দি কাশিতেঃ সর্দি-কাশি হলে কাপড়ের নেকড়ায় অল্প পরিমাণে কালোজিরা নিয়ে কচলিয়ে নাকে শুকতে হয়, এতে সর্দি-কাশি ভালো হয়ে যায়।
■ হাড়ের ব্যথায় উপশমঃ বহু পুরনো চিকিৎসা এটি। কিছু পরিমাণ কালোজিরা সলিষার তেলে গরম করুন। আগুন থেকে সরিয়ে একটু ঠান্ডা করে নিন। এবা এই তেল হাড়ের যেসব সংযোগ স্থলে ব্যথা সেখানে মালিশ করুন। উপকার পাবেন।
■ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতেঃ যারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন তারা এক কাপ উষ্ণ পানিতে আধা চা চামুচ পরিমাণ কালোজিরার তেল মিশিয়ে খান। এতে হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
■ কিডনির যত্নেঃ কিডনির পাথর এখন অনেক মানুষের সমস্যা। আধা চা চামুচ কালোজিরা তেলের সঙ্গে দুই চা চামুচ মধু, একে এক কাপ উষ্ণ পানিতে মিশিয়ে পান করুন। এতে কিডনির ব্যথা, পাথর সংক্রমণ দূর হয়ে যাবে। এটি নিয়ম করে কয়েক পান করতে হবে।
■ দাঁত শক্ত করতেঃ বহুকাল থেকে দাঁতের সুরক্ষায় কালোজিরা ব্যবহার হয়ে আসছে। টক দই এবং কালোজিরা পাউডার প্রতিদিন দুইবার দাঁতে ব্যবহার করুন। এতে দাঁতের শিরশির অনুভূতি ও রক্তপাত বন্ধ হবে।
■ কালোজিরা উপকার পাবার জন্য অনেকে ভাতের সাথে কালোজিরা ভর্তা খেয়ে থাকেন।
■ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ কালোজিরা তেল ও মধু গরম পানিতে মিলিয়ে খাওয়ার উপকারিতা পূর্বেই দেয়া হয়েছে। এতে দেহের কিছু রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ফুটন্ত পানিতে কালোজিরা ছেড়ে দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করলে নাসা রন্ধ্রের চলে যায়।
■ কালোজিরা খাদ্য হজম ক্রিয়া এবং পেটের গ্যাস নিস্বরণে সহায়তা করে।
সূত্রঃ
১। উবিনীগ মাঠ গবেষণার তথ্য
২। http://www.pfaf.org/user/Plant.aspx?LatinName=Nigella+sativa