হেলেঞ্চা
Saturday 12 November 2016অন্যান্য স্থানীয় নাম: হিঞ্চা শাক, হিঞ্চে, হিংচা, হাড়হাচ, হেলচী, তিতির ডগা, তিতির শাক, তিতির ডাটা, তিতা ডাটা, হিমলোচিকা (সংস্কৃত)
বৈজ্ঞানিক নাম : Enhydra fluctuans পরিবার : Asteraceaeপ্রধান ব্যবহার :খাদ্য এবং ওষুধি
অন্যান্য ব্যবহার :
আরো পড়ুন
হেলেঞ্চার সাধারণ বৈশিষ্ট্য:
এটি একটি বর্ষজীবী লতা। ভূ-সংলগ্ন মূলযুক্ত (rooted) অথবা ভাসমান শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট্য জলজ অথবা আধা জলজ লতা। এর কান্ড মসৃণ, ভেতরে ফাঁপা ধরণের, লম্বা পর্বসন্ধি বিশিষ্ট্য। পর্ব থেকে অনেক শিকড় গজিয়ে পানিতে ভেসে থাকে। অনেক সময় বেশ কিছু সঙখ্যক শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে পানির উপর মাদুরের মতো গঠন (mat) তৈরি করে। পাতাগুলো কিছুটা বল্লমাকৃতির, বোঁটা নেই বললেই চলে। পাতা বিপরীতভাবে অবস্থিত। পাতার কিনারা খৎাজকাটা। ফুলগুলো ছোট আকারের এবং সাদা রংয়ের। হেলেঞ্চার লম্বা কান্ড অনেক সময় কাদা মাটির উপর দিয়ে আরোহী (creeping) হিশাবে বৃদ্ধিপায়। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে ফুল ধরে। শিকড়ের গোড়া, কান্ডাংশ এবং বীজের সাহায্যে এটি বংশবিস্তার করে।
প্রায় সারা বছরই হেলেঞ্চা জন্মাতে পারে তবে রবি মৌসুমে জলী আমন, রোপা আমন, বোরো ধানের ক্ষেতে বেশী পরিমাণে জন্মাতে দেখা যায়। তাছাড়া পুকুর, বিল, ঝিল এবং বদ্ধ জলাশয়ে এটি জন্মিয়ে থাকে।
হেলেঞ্চার ব্যবহার: হেলেঞ্চা বাংলাদেশে বিভিন্নি এলাকায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন-কোথাও বলা হয় হিনচা শাক, কোথাও তিতাডোগা, কোথাও হারহস, কোথাও হিংজা আবার কোথাও এলিচি শাক বলা হয়। হেলেঞ্চা বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত আনাবাদি শাক হিশেবে খেয়ে থাকে। এটা তিতা-কষা স্বাদ যুক্ত। তাবে হেলেঞ্চার বেশ কিছু ওষুধি গুণ রয়েছে। যা নিম্ন উল্লেখ করা হলো-
হেলেঞ্চার ওষুধি গুণ:
■ ডাযরিয়িা, অধিক পাতলা পায়খানা হলে: যদি কারো অধিক পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হয়, মল গোটা হয় না, তাহলে এক চা-চামুচ হেলেঞ্চার রস গরম করে সকাল-বিকাল দু’বেলা খাবেন।
■ চর্ম রোগ, খোস-চুলকানিতে: সাধারণত বর্ষাকালে এই উপসর্গ বেশী দেখা দেয়। এই অবস্থা হলে প্রত্যহ তিন চা-চামুচ হেলেঞ্চার রস একটু গরম করে খাবেন,খোস-চুলকানি কমে যাবে।
■ ঘামাচি হলে: গ্রীষ্মকালে অধিক ঘামাচি হলে, হেলেঞ্চা শাক, ডাঁটাসহ বেটে গায়ে মাখলে ঘামাচি কমে যাবে।
■ অরুচিতে: কারো জিভে যেন একটা সর পড়ে আছে, তার ফলে মুখে কোনো স্বাদ নেই এবং অরুচি ভাব। এই অবস্থায় রোগীকে দুই হা-চামুচ হেলেঞ্চার রস গরম করে দিন কতক খেতে দিন। যথেষ্ট উপকার পাবেন।
■ হাত-পায়ে জ্বালায়: এই উপসর্গ সাধারণত বর্ষা ো শরৎকালে দেখা যায়। এই অবস্থায় দুই চা-চামুচ হেলেঞ্চার রস আধা কাপ কাঁচা দুধের সঙ্গে খাবেন। হাত-পা জ্বালা কমে যাবে কয়েকদিনের মধ্যেই।
■ হেলেঞ্চা শোথ নিরাময়ে বেশ উপকারী। জ্বর বা টাইফয়েডের কারণে দীর্ঘদিন দূর্বলতার পার অরুচি হলে ক্ষুধা সৃষ্টিতে এবং পিত্ত বিঘ্নতায় বেশ উপকারী।
■ ধবল, ব্রঙ্কাইটিস রোগেও হেলেঞ্চা বেশ উপকারী।
সূত্র:
১। বাংলাদেশের আগাছা পরিটিতি, বাংলা একাডেমি, ঢাকা
২। বৌনষধি ও দ্রব্যগুণ বিজ্ঞান, বেনীমাধব শীল’স লাইব্রেরী, কলকাতা-৭০০০০১।