জলপাই
Friday 18 November 2016অন্যান্য স্থানীয় নাম: জয়তুন
বৈজ্ঞানিক নাম : Elaeocarpus robustus/ Elaeocarpus serratus পরিবার : Elaeocarpaceaeপ্রধান ব্যবহার :খাদ্য এবং ওষুধি
অন্যান্য ব্যবহার :সাধারণ ব্যবহার: জলপাই গাছ টকফল হিশেবে পরিচিত। জলপাই ফল থেকে আচার ও চাটনী তৈরী হয়। ডাল ও তরকারীর সাথে জলপাই খাওয়া হয়। জলপাই কাঠ থেকে সস্তা আসবাবপত্র, গৃহনির্মাণ সামগ্রী ও জ্বালনী তৈরী হয়।
আরো পড়ুন
জলপাই গাছ একটি চিরসবুজ মাঝারী গাছ। ১৫ থেকে ২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। কান্ডের গোড়াই আধমূল থাকে। বাকল কালো ও ধূসর। পাতা সরল, লম্বাটে বল্লমাকৃতির। গোড়ার দিকে গোলাকার, উপরি ভাগ মসৃণ ও উজ্জল। ফুল ছোট সাদা রংয়ের। ফল সবুজ, ডিম্বাকার ও লম্বায় ৩-৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। বছরে ৮ থেকে ৯ বার ফল ধরে।
বিস্তার: ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে, পশ্চিম এশীয় দেশে জলপাইয়ের জন্ম বা উৎপত্তি হয়েছে বলে জানা যায়। পশ্চীম এশীয় দেশ থেকে খ্রীস্ট জন্মের আগেই এটি দক্ষিণ ইউরোপে বিস্তার লাভ করে। এখানে উল্লেখ থাকে যে, একই বর্ণের অন্য একটি গাছ “গুলিয়া কাসপিডাটা” হিমালয়ের পাহাড়ী অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে দেখতে পাওয়া য়ায়। জলপাই গাছ শুকনো জলাহাওয়াতেও হয় এবং খরা সহ্য করতে পারে। বাংলাদেশের সর্বত্র এবং বসত বাড়ীর আশে পাশে জলপাই গাছ লাগানো হয়। আমাদের দেশে জলপাই চাষ করার প্রচেষ্টা দেখা যায় না তবে গ্রামাঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু গাছ দেখা যায়।
বংশবিস্তার: বীজ থেকে বংশবিস্তার সহজ পদ্ধতি। এছাড়া কলম করেও বংশবিস্থার ঘটানো হয়ে থাকে।
ফল সংগ্রহ ও ফলন: জলপাই গাছ ৪/৫ বছর বয়স থেকেই গাছে ফুল আসতে শুরু করে। মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল আসার ফল পুষ্ট হতে ৩/৪ মাস সময় লাগে। জলপাই গাছের ৮-১০ বছর বয়স থেকে স্বাভাবিক ফল পাওয়া যায়।
বীজ সংগ্রহ: ডিসেম্বর- জানুয়ারি।
জলপাইয়ে রাসায়নিক উপাদান: জলপাই এমন একটি ফল যা ভিটামিন ও পুস্টিমানে সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণ ফলে থাকে:
◙ প্রোটিন : ৮ গ্রাম
◙ ক্যালোরী :১১৫ কিলো-ক্যালোরি
◙ পানি : ৭৫%
◙ ভিটামিন-এ : ৫০ মিলিগ্রাম
◙ ক্যালসিয়াম : ৫২ মিলিগ্রাম
◙ ম্যাগনিসিয়াম : ১১ মিলিগ্রাম
◙ ফসফরাস : ৪ মিলিগ্রাম
◙ পটাশিয়াম : ৪২ মিলিগ্রাম
◙ আয়রন : ৪৯ মিলিগ্রাম
এসব ছাড়াও আরও রয়েছে-ভিটামিন-বি৬, ভিটামিন-বি৯, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-ই, কপার, থাইয়ামিন, নাইয়াসিন, এবং রিবোফ্লাভিনে সমৃদ্ধ।
জলপাইয়ের ওষুধি ব্যবহার এবং উপকার:
১। কার্ডিওভাসকুলার উপকারিতা: কোনো ব্যাক্তির রক্তনালীতে ক্ষতিকর চর্বি (কলেস্টরল) জমার কারণে হার্ট এ্যাটাকের ঝুকিঁ সৃষ্টি হয়, জলপাই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হবার কারলে রক্তনালীর কলেস্টরেল অপসারণ করে হার্টকে নিরাপত করে। এছাড়া জলপাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
২। জলপাইয়ের মধ্যে এমন এক ধরণের তৈল রয়েছে যা শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে।
৩। জলপাইয়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপদান থাকার কারণে জলপাই ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
৪। জলপাইয়ের তেল কোমর ব্যথায় উপকারী।
৫। জলপাইয়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপদান রয়েছে, এছাড়া ভিটামিন ই রয়েছে। ফলে জলপাই সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির বিকরণ থেকে ত্বক রক্ষা করে। এছাড়া উষ্ণগরম পানি দিয়ে শরীর ধুয়ে মুছে জলপাই তেল লোশনের মতো লাগালে চার্মের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
৬। গবেষণায় দেখা যায় জলপাই এলার্জিতে কার্যকরী আবদান রাখে।
৭। জলপাই ফল ও সবজি থেকে একটি বিকল্প হিসাবে খাদ্যতালিকাগত ফাইবার একটি উৎস.
৮। জলপাই বিশেষত অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং দীর্ঘস্থায়ী ভাইরাসঘটিত রোগে আক্রান্ত হওয়া থেকে শরীর রক্ষার্থে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
৯। জলপাই পুষ্টিকর এবং সোডিয়াম,পটাসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,আয়রন,ফসফরাস এবং আয়োডিন, থাইয়ামিন, নাইয়াসিন, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন-বি৬, ভিটামিন-বি৯, ভিটামিন-কে এবং অ্যামিনো অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাদ্য।
১০। জলপাই ভারী ধাতব পদার্থ এবং খনিজ যেমন: বোরন, সালফার, টিন, লিথিয়াম ইত্যাদি ক্ষতিকারক পদার্থের ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষা করে।
সূত্র:
1. www.health24.com/Diet-and-nutrition/Healthy-foods/20-health-benefits-of-olives-20131218
2. https://authoritynutrition.com/foods/olives/