স্বাস্থ্য সেবায় সামাজিক সমীক্ষা প্রতিবেদন: সাতক্ষীরা অঞ্চল


২০১০ সালে স্বাস্থ্য সেবার উপর পরিচালিত একটি সামাজিক নিরিক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, স্বাস্থ্যখাতে বিরাজমান সমস্যাগুলোর মধ্যে জনবল সংকট, চিকিৎসা সেবার জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি এবং উপকরণের অভাব, অবকাঠামোর অভাব, আঞ্চলিক বৈষম্য, বাজেটে অপর্যাপ্ত বরাদ্দ এবং সর্বোপরি স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ব্যবস্থাপনার ঘাটতি রয়েছে। উক্ত নিরিক্ষা প্রতিবেদনের পর সাতক্ষীরা অঞ্চলের সার্বিক দিক বিবেচনা করে ২০১৩ সালের আগষ্ট মাসে পুনরায় স্বাস্থ্য সেবায় সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হয়। নিরিক্ষায় যে বিষয়গুলো বিশেষভাবে চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হয় তা হল-

সরকারী স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারি প্রতিষ্ঠান সমুহের সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করা, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সমুহের কর্মদক্ষতা ও কর্মমান নিরুপন করা সহ দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করার কার্যকর সুপারিশ তৈরী এবং সুপারিশের ভিত্তিতে এলাকার জনগণের মধ্যে সচেতনতা ও জনমত তৈরী করার উদ্দেশ্য নিয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, খলিশখালি ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণকেন্দ্রর ও বয়ারডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সুপারিশ ও মতামত নেয়া হয়। সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সমুহের কর্ম সম্পাদনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা বৃদ্ধি, এলাকার দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগণের স্বাস্থ্য অধিকার অর্জনের পরিধি বৃদ্ধি, সবার জন্য সংশ্লিষ্ট নীতি, ব্যবস্থা ও বাস্তবায়ন সমস্যা চিহ্নিত করা ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ তৈরী করাই ছিল সমীক্ষার মূল লক্ষ্য।

সাতক্ষীরা জেলার সার্বিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি

দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরার সার্বিক স্বাস্থ্য সেবা পরিস্থিতি নাজুক। জনসংখ্যা অনুপাতে স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মোটামুটি থাকলেও অবকাঠামো ও জনবল সংকটের কারণে সরকারী স্বাস্থ্য সেবার শতভাগ সুফল জনগণ ভোগ করতে পারছে না। সীমিত সম্পদের সঠিক ব্যবহার না হওয়াসহ চাহিদানুযায়ী ঔষধ সরবরাহ ও জনবল না থাকায় সরকারী স্বাস্থ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলার বিশাল জনগোষ্ঠী। মাঠ পর্যায়ে সরকারী স্বাস্থ্যসেবা থেকে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। তবে সীমিত স্বাস্থ্য সেবা পেলেও সরকারী স্বাস্থ্য সুবিধার প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ও আগ্রহ বাড়ছে।

সীমান্ত কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সুন্দরবনের বিশাল এলাকা নিয়ে গঠিত শ্যামনগর উপজেলা সহ ৭টি উপজেলা ও একটি প্রশাসনিক থানা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা জেলা। ৩ হাজার ৮শ ৫৮ দশমিক ৩৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা জেলার লোক সংখ্যা ২০ লাখ ৭৪ হাজার। এই বিপুল জনসংখ্যা অধ্যুষিত জেলায় জেলা সদর হাসপাতাল সহ বাকি ৬টি উপজেলায় ১টি করে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়া ৯টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে ৪টি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে। ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ১শ৭৮টি। বর্তমানে চালু কমিউনিটি ক্লিনিকের সংখ্যা ১শ ৪০টি। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও জেলায় সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা চলছে নির্দিষ্ট লোক বল দিয়ে। সদর হাসপাতাল ও ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শয্যা বাড়ানো হলেও অবকাঠামো ও জনবল বাড়েনি। ১শ শয্যার জেলা সদর হাসপাতাল চলছে ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে। তালা, কলারোয়া ও শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, সখিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫টি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও এই এখানে বেড সংখ্যা ও জনবল বাড়ানো হয়নি। কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার দুই বছর পরও এখানে শয্যা সংখ্যা ও রোগীদের খাদ্য সরবরাহ হচ্ছে ৩১ শয্যা হিসাবে।

স্বাস্থ্য সেবা পরিস্থিতি: সদর হাসপাতাল

১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত সাতক্ষীরা জেলা হাসপাতালটি ৫০শয্যা থেকে ১শ শয্যায় উন্নীত করা হয় জুন ৯৭ সালে। কার্যক্রম শুরু হয় ১ জুলাই থেকে। কিন্তু বাড়ানো হয়নি জনবল। ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে হাসপাতালটি। অন্যদিকে ১শ শয্যার হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন ১শ ৫০ থেকে ২শ জন রোগী ভর্তি থাকে। বেডের অভাবে অধিকাংশ রোগীদের থাকতে হয় মেঝেতে। এখানে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হলেও অবকাঠামো বাড়ানোর কাজ বর্তমানে চলছে।

সাতক্ষীরা হাসপাতালের দুটি এক্সরে মেশিনের মধ্যে একটি মেশিন সচল রয়েছে। আলট্রাসোনোগ্রাম মেশিন চালু হয়েছে। নতুন করে ইকো মেশিন চালু হযেছে এখানে। রক্ত পরীক্ষার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে। নির্দিষ্ট ফি দিয়ে হাসপাতালে প্যাথলজি বিভাগ থেকে রক্ত সহ আনুসাঙ্গীক পরীক্ষা করার ব্যবস্থা চালু রয়েছে হাসপাতালে। হাসপাতালে ৫০ শয্যার অবকাঠামাতে যে লোকবলের প্রয়োজন সেই অনুপাতে লোকবল রয়েছে। ১শশয্যায় উন্নীত হওয়ার দীর্ঘ ১৫ বছর পরও ১শ শয্যার লোকবল দেয়া হয়নি। ১শ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের জন্য স্ট্যান্ডার্ড অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী প্রস্তাবিত মোট জনবলের প্রয়োজন ৩শ২৫ জন। বর্তমানে পদের সংখ্যা রয়েছে ১শ৪টি। প্রস্তাবিত শুণ্য পদের সংখ্যা রয়েছে ২শ ২১টি।

রোগীর সংখ্যা ও বরাদ্দ টাকা:

সাতক্ষীরা হাসপাতালে গত অর্থ বছরের জন্য বরাদ্দ ছিল ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এই বরাদ্দের মধ্যে ৭৫ ভাগ ৭২ লাখ ১০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয় ঔষধের জন্য। এ ছাড়া সার্জিকাল সরঞ্জামাদি কেনার জন্য ১০% ব্যায় হয় ১০লাখ ৩০ হাজার টাকা, ক্যামিকেল রি এজেন্টের জন্য ৫%, ৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা, অক্সিজেন গ্যাসের জন্য ৩% ৩ লাখ ৯ হাজার টাকা, গজ, ব্যান্ডেজ, কটনের জন্য ৪% ৪ লাখ ১২ হাজার টাকা এবং বেডশিট, মশারি, পিলো ইত্যাদির জন্য ৪% ৪ লাখ ১২ হাজার টাকা এবং খাবারের জন্য বেডপ্রতি ৭৫ টাকা হারে ২৭ লাখ, ৩৭ হাজার ৫শ টাকা ব্যায় করা হয়।

সাতক্ষীরা হাসাপতালে বহিঃর্বিভাগে প্রতিদিন গড় সাড়ে ৮শ থেকে ১ হাজার জন রোগী চিকিৎসা সুবিধা নিয়ে থাকেন। ৫ টাকা দিয়ে টিকিট কিনে এ সকল রোগীরা মেডিকেল অফিসারদের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপত্র নেয়ার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কাছ থেকে চিকিৎসা সুবিধা পেয়ে থাকেন। বহির্বিভাগের রোগীদের জন্য কোন ঔষধ বরাদ্দ নেই। ই্নডোরে সরবরাহ করা ঔষধ থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ বহিঃর্বিভাগের রোগীদের জন্য সরবরাহ করা হয়। বহিঃর্বিভাগে সরবরাহ করা ঔষধ জোড়াতালি দিয়ে রোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এখানে চক্ষু, ডেন্টাল, ইএনটি, মেডিসিন, শিশু বিশেষজ্ঞ, সার্জারী, অর্থপেডিক্স, বিশেষজ্ঞ ও গাইনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও চিকিৎসা নেন বেশিরভাগ আগত রোগী। বহিঃর্বিভাগে আগত রোগীদের মধ্যে গড় মহিলা রোগীদের সংখ্যা প্রায় ৫৫ ভাগ, ৩৫ ভাগ রোগী পুরুষ ও ১০ ভাগ রোগী শিশু।

অন্তঃবিভাগের রোগী :

সাতক্ষীরা জেলা হাসপাতালে আন্তঃবিভাগে নির্ধারিত শয্যা ছাড়াও মেঝেতে প্রতিদিন ৮০ থেকে ১শ জন অতিরিক্ত রোগী থাকে। নির্ধারিত ১শ শয্যার অতিরিক্ত এ সকল রোগীরা চিকিৎসা সুবিধা ছাড়াও হাসপাতালের সরবরাহ করা নির্দিষ্ট ঔষধ পেলেও খাবার পাচ্ছেন না। খাওয়ার জন্য হাসপাতালে বছরে বরাদ্দ ২৭ লাখ ৩৭ হাজার ৫শ টাকা। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের প্রতিদিনের খাবারের জন্য এখন বরাদ্দ ৭৫ টাকা। প্রতিদিন সকালে পাউরুটি, চিনি, কলা, ডিম সরবরাহ করার নিয়ম থাকলেও রোগী বেশি থাকায় অতিরিক্ত রোগীদের খাবার দেয়া হয় না। দুপুরে ও রাতে ভাত, মাছ, মাংস, তরকারী / ডাল সরবরাহ করা হয়। সাধারণ বেডের রোগীদের জন্য খাবার বিনামূল্যে সরবরাহ করা হলেও কেবিনের রোগীদের খাবারে টাকা দিতে হয়। অন্তঃবিভাগের বেশিরভাগ রোগীর মতে হাসপাতালে সরবরাহ করা খবারের মান গড় অনুপাতে মোটামুটি ভাল।

এক নজরে সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা চিত্র:

হাসপাতালের বাইরে সিটিজেন চার্টার তালিকা রয়েছে। টিকিটের মূল্য বৃদ্ধির কারণ সম্বলিত নোটিশ টানিয়ে দেয়া হয়েছে টিকিট কাউন্টারের সামনে। ঔষধ সরবরাহের তালিকা আছে। ৫০শয্যার জনবলে প্রতিদিন বহিঃর্বিভাগে ৮শথেকে ১হাজার রোগীর ব্যবস্থাপত্র ও ঔষধ সরবরাহ করা হয়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের দেখানোর জন্য শত শত রোগী সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকে। বিজ্ঞে ডাক্তারের দেখানোর পর অনেক রোগীকে ঔষধ ছাড়া চলে যেতে হয়। হাসপাতালে গর্ভবতী মায়েদের সেবা দেয়া হয়। জরায়ুর মুখে ক্যান্সার পরীক্ষা করা হয়। হাসপাতালে প্রসুতি মায়েদের টিকা দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। হাসপাতালের সমাজ কল্যাণ বিভাগের টাকা শুধুমাত্র হাসপাতালে ভর্তি গরীব রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অনুদানে ঔষধ দেয়া হয়ে থাকে। রোগীর পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে জরুরী প্রয়োজনে সিভিল সার্জন ও আবাসিক মেডিকেল অফিসারের অনুমতিতে সর্বোচ্চ ৩শ টাকার ঔষধ কিনে দেয়া হয়। গত একমাসে (আগষ্ট-১২) হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে ১৫ হাজার ৪শ৬০ জন রোগী। এর মধ্যে মহিলা ৬ হাজার ৯শ ৩৮জন এবং পুরুষ ৫হাজার ৭শ ৫৩ জন। শিশুর সংখ্যা ২হাজার ৭শ ৬৯ জন।

হাসপাতালে কোন পেয়িং বেড নেই। জেনারেল বেডের জন্য কোন সিট ভাড়া দিতে হয় না । শুধুমাত্র কেবিনের জন্য প্রতিদিন ডায়াট সহ ৩শটাকা করে দিতে হয়। হাসপাতালে ভর্তির জন্য সাধারণ ভর্তি ফি ১০টাকা, জরুরী বিভাগে সরাসরি ভর্তি ফি ১২ টাকা ১০ পয়সা এবং গাইনি ওয়ার্ডে সরাসরি ভর্তি ফি ১৭ টাকা ৬০ পয়সা করে নেয়া হয়।

হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগে নির্দিষ্ট হারে ফি দিয়ে রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। রক্তের গ্রুপ, ক্রস ম্যাচিং, স্ক্রিনিং ভিডলটেষ্ট, ব্লাড সুগার, ব্লাড ইউরিয়া, পেগনেনসি টেষ্ট, এফ সি জি, মল, মূত্র ,পরীক্ষা করা হয়। চালু একটি এক্সরে মেশিন দিয়ে ইনডোর, আউটডোর ও কেবিনের রোগীদের এক্সরে করা হয়। নতুন সরকারি নিয়মে আউটডোর ও সাধারণ বেডের রোগীদের জন্য রক্তের স্ক্রিনিং, ক্রসম্যাচিং ও সাধারণ রোগীদের জন্য ২ শ’ ৫০ টাকা ও কেবিনের রোগীদের জন্য ৫ শ’ টাকা করে ফি নেয়া হয়।

বিভিন্ন ওয়ার্ডে এ সকল রোগীদের মেঝেতে থাকতে হয়। শিশু ওয়ার্ডে ৯ টি বেড থাকলেও সেখানে শিশু রোগী গড় ৩০ থেকে ৪০টি। বেডের গায় বেড লাগিয়ে এদেরকে রাখা হয়। আবার অনেক শিশুকে বাধ্য হয়েই মেঝেতে থাকতে হয়। অন্যদিকে ওয়ার্ডের মধ্যে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অধিকাংশ রোগীকে ওয়ার্ডের বারান্দায় রাখা হয়। ৫০ শয্যার জনবলে হাসপাতাল চলার কারণে নির্দিষ্ট নার্স দায়িত্ব পালন করলেও দিনের বেলায় প্রশিক্ষণার্থী নার্সদের দিয়ে রোগীদের সেবা দেয়া হয়।

সপ্তাহে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নির্ধারিত অপারেশনের দিন ধার্য থাকায় বহিঃর্বিভাগের রোগীরা চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। এ ছাড়া চিকিৎসক সংকটের কারণে বহিঃর্বিভাগের রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিতে বসে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। ৫০শয্যার জনবলে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৮শ’থেকে ১ হাজার রোগী ব্যবস্থাপত্র ও দেখাশোনা করতে হিমসিম খেতে হয় আউটডোরে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের। চিকিৎসকদের পাশাপাশি রোগীদের ভোগান্তি বাড়ে। হাসপাতালে বর্তমানে পর্যাপ্ত আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। তবে পর্যাপ্ত জনবল নেই। প্রয়োজনের তুলনায় ডাক্তার ও নার্স নেই। হাসপাতালে ভর্তি ফি ছাড়াও প্যাথলজিতে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত ফি দিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবস্থায় গরীব রোগীদের বিনামূল্যে এ সব পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।

হাসপাতালে এ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। রয়েছে ভাড়ার তালিকা। বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য জেনারেটর রয়েছে। ল্যাবে যন্ত্রপাতি ও ঔষধ সামগ্রী রক্ষার জন্য শুধুমাত্র আইপিএস এর ব্যবস্থা রয়েছে। হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ঔষধ পাওয়া যায় না এই অভিযোগ কিছুটা সত্য। হাসপাতালে ডাক্তারদের আবাসন ব্যবস্থা থাকলেও সেখানে শুধুমাত্র আর এম ও থাকেন। এ ছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই খারাপ। স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি কার্যকর রয়েছে।

সমীক্ষায় হাসপাতালের অন্তঃ ও বহিঃর্বিভাগের মোট ২০ জন রোগীর সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। এ সকল রোগীদের অধিকাংশই ঔষধ স্বল্পতার কথা বলেছেন। অন্তঃবিভাগে ডাক্তার ও নার্সদের সেবা পেলেও প্রায় অর্ধেক ঔষধ তাদেরকে বাইরে থেকে কিনতে হয়। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভাল থাকলেও হাসপাতালে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য কোন আলাদা টয়লেট নেই। টয়লেটগুলো নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন। ভর্তি রোগীদের সকলেই ডাক্তার ও নার্সদের ব্যবহারে সšু—ষ্ট। রোগীদের মতে হাসপাতালে দালারদের উপদ্রপ নেই। ভর্তি ফি ছাড়া এক্সরে, আলট্রাসোনো ও প্যাথলজি বিভাগে পরীক্ষার জন্য তাদেরকে অতিরিক্ত ফি দিতে হয়েছে। টিকেটের উপরেই প্রাপ্ত টাকার মূল্য লেখা থাকায় তাদেরকে আলাদা কোন রশিদ দেয়া হয় নি।

বহিঃর্বিভাগের রোগীদের অভিযোগ ভিন্ন। এদের বেশিরভাগ রোগীকে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে প্রায় ১ ঘন্টা থেকে ২ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। সময়মত ডাক্তার রুমে না আসা ও রোগীর ভীড়ের কারণে এই সমস্যা বলে তারা জানান। হাসপাতালে স্বাস্থ্য সেবার জন্য প্রয়োজনীয় ডাক্তার, জনবল, যন্ত্রপাতি আছে কি না এ বিষয়ে তারা কেউ উত্তর দিতে পারে নি। সেবার মান উন্নয়নে এ সকল রোগীরা ডাক্তার বৃদ্ধি সহ প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহের জন্য সুপারিশ করেন।

ফার্মাসিষ্ট কামরুজ্জামান

সদর হাসপাতালের ফার্মাসিষ্ট কামরুজ্জামান বলেন হাসপাতালে ঔষধের তালিকা আছে। হাসপাতাল থেকে এখন সরকারী ঔষধ বাইরে বিক্রি হয় না। রোগীদের উপস্থিতি ও তাদের চাহিদানুযায়ী ঔষধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাৎসরিক বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

স্টোর কিপার একেএম ফজলুল হক

জেলা সিএস স্টোর কিপার এর দায়িত্ব পালন করছেন একেএম ফজলুল হক। হাসপাতালে প্রতি তিন মাস অন্তর ঔষধ সরবরাহ করা হয়। এখানে ২০ ধরণের ঔষধ আসে। ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল মিলিয়ে প্রায় ৪ লাখ। চাহিদানুযায়ী ঔষধ সরবরাহ না থাকায় হাসপাতাল থেকে ঔষধ পাওয়া যায় না রোগীদের এমন অভিযোগ আসে। ঔষধের বরাদ্দ থেকে রোগীর সংখ্যা বেশি থাকায় সমস্যা হয়। পর্যাপ্ত সেবা পেতে প্রয়োজনীয় ঔষধ সরবরাহ প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

টেকনোলজিষ্ট রবীন্দ্র নাথ ঘোষ

সদর হাসপাতালে টেকনেশিয়ান (ল্যাবের) দায়িত্ব পালন করছেন রবীন্দ্র নাথ ঘোষ। এই ল্যাবে রক্তের টিসি, ডিসি, ইএসআর, হেমোগ্লোবিন, ভিডিআরএল, ইউরিক এ্যাসিড, প্লেটিলেট এমপি, প্রস্রাব (রুটিন) প্রস্রাব (প্রেগনেন্সি), মল, বিটি, সিটি, ব্লাড সুগার, ব্লাড ইউরিয়া, সিরাম বিলুরিবিন পরীক্ষা করা হয়। এখানে প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি রোগী সহ বহিঃর্বিভাগের কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী আসে। সম্প্রতি নতুন কিছু মেশিন এসেছে। এই দিয়ে রক্তের পরীক্ষা ছাড়াও হরমোন এনালাইজার, হেমোটোলজি এনালাইজার, ইলেকট্রোলাইস সেন্টু ফিউজ ইয়ার ওভেন দিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। অবকাঠামো সংকটের কারণে ছোট ঘরে কাজ করতে সমস্যায় পড়তে হয়। সেবার মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় জনবলবৃদ্ধি, অবকাঠামো পরিবর্তন এবং চাহিদানুযায়ী রিএজেন্ট সরবরাহ করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

স্টাফ নার্স রাশিদা বেগম

জেলা সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রাশিদা বেগম বলেন, দক্ষ জনবলের অভাবে যথাযথ সেবা দেয়া যায় না। তার মতে নার্সিং সুপারভাইজার, সিনিয়র স্টাফ নার্স, ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী বৃদ্ধি, উপসেবা তত্ত্বাবধায়ক এর পদ তৈরীর সুপারিশ করেন তিনি। পর্যাপ্ত সেবা প্রদানের জন্য দক্ষ জনবল ও পর্যাপ্ত নার্স বৃদ্ধির সুপারিশ করেন তিনি।

আর এম ও ডা: মারুফ হাসান

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আরএমও (আবাসিক মেডিকেল অফিসার) হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন ডা: মারুফ হাসান। এই হাসপাতালে সেবা নিতে টিকিট সংগ্রহ ও ভর্তি ফি দিতে হয়। এখানে বিনামূল্যে শুধুমাত্র ঔষধ সরবরাহ করা হয়। ভর্তি সাধারণ বেডের রোগীদের বিনামূল্যে অপারেশন করা হয। ভর্তি দুঃস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থায় সমাজ কল্যাণ বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ ৩ শ’ টাকা সাহায্য দেয়া হয়।

সেবা অনুপাতে পর্যাপ্ত জনবল নেই। এ বিষযে উর্ধতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আন্তঃবিভাগে শয্যানুযায়ী পর্যাপ্ত উপকরণ ও জনবল নেই। হাসপাতালে এ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন আছে। এ্যাম্বুলেন্স সচল। হাসপাতাল থেকে দেয়া সেবা স্থানীয় জনগণের জন্য পর্যাপ্ত নয়। বাজেট বরাদ্দ কম থাকা, জনবল সংকট ও ঔষধ সরবরাহ কম থাকায় চাহদানুযায়ী সেবা দেয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ডবলফেজ সংযোগ রয়েছে। হাসপাতালে তালিকাভুক্ত ঔষধগুলো প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। ইনডোরে ভর্তি দরিদ্র রোগীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাদেরকে সর্বোচ্চ ৩শ’ টাকা করে সাহায্য দেয়া হয়। কার্যকর ও পর্যাপ্ত সেবা প্রদানের জন্য জনবল, চাহিদানুযায়ী ঔষধ সরবরাহ প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

সিভিল সার্জন ডা: এ জেড আতিক

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জনের দায়িত্ব পালন করছেন ডা: এ জেড আতিক। এলাকার স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রমের জন্য জনবল বৃদ্ধি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, এম এস আর খাতে ও পথ্যখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা এবং হাসপাতালের উন্নয়নের জন্য জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

এক নজরে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিত্র

সাতক্ষীরা জেলার ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত কালিগঞ্জ উপজেলা। জেলা সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যার ভবনের উদ্বাধন করা হয় ২০১০ সালের ২০ ডিসেম্বর। ১১ সালের ১৭ জানুয়ারি ৫০ শয্যার বেড ও রোগীদের খাদ্য সরবরাহের প্রশাসনিক অনুমতি দেয়া হলেও ১২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই নির্দেশ মানা হয় নি। ফলে রোগীদের থাকতে হয় মেঝেতে। রোগীরা খাদ্য পায় না।

৩১ শয্যার লোকবল দিয়ে জোড়াতালি চলছে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। শয্যার জন্য বরাদ্দ চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের ভোগান্তি চরমে। এক্সরে মেশিনটি চালু আছে। এ্যাম্বুলেন্স সচল আছে। গত এক মাসে বিনামূল্যে মোট ৩ হাজার ১শ’ ৩৫ জন রোগীকে সেবা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বহিঃর্বিভাগে ২ হাজার ৯শ’ ১০ জন চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে ৮শ’ ২৫ জন পুরুষ ও ১ হাজার ৪শ’ ৪৩ জন নারী এবং ৬শ ৪২ জন শিশু। আন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে মোট ২শ’ ২৫ জন। এর মধ্যে ৮৯ জন পুরুষ ও ১শ’ ৩৬ জন নারী। প্রতিদিন বহিঃর্বিভাগে প্রায় ২ শ’ থেকে ২ শ’ ৫০ রোগীর ভীড় জমে। এর মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা বেশি। বহিঃর্বিভাগে ৩ টাকা ও আন্তঃবিভাগের জন্য ১০ টাকা দিয়ে চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া যায়। বেশির ভাগ রোগীদের কিছু জরুরী ঔষধ বাইরে থেকে কিনতে হয় ।

গত অর্থ বছরের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩০ লাখ টাকা। এই বরাদ্দের মধ্যে ৭৫ ভাগ টাকা ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যায় করা হয় ঔষধের জন্য। এ ছাড়া সার্জিকাল সরঞ্জামাদি কেনার জন্য ১০ % ৩ লাখ টাকা, ক্যমিকাল রি এজেন্টের জন্য ৫% ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, অক্সিজেন গ্যাসের জন্য ২% ৬০ হাজার টাকা, গজ, ব্যান্ডেজ, কটনের জন্য ৪% ১লাখ ২০ হাজার টাকা এবং বেডশিট, মশারি পিলো ইত্যাদির জন্য ২% ৬০ হাজার টাকা, ফার্নিচারের জন্য ২% ৬০ হাজার টাকা এবং খাবারের জন্য বেডপ্রতি ৭৫ টাকা হারে ১৩ লাখ, ৬৮ হাজার ৭শ’ ৫০ টাকা ব্যয় করা হয়।

হাসপাতালেল আন্তঃ ও বহিঃর্বিভাগের রোগীরা যা বলেন

কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা বেশিরভাগ রোগীদের বাড়ি ২ কিলোমিটার থেকে ৬ কিলোমিটারের মধ্যে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা সিট পেয়েছেন স্বাভাবিক ভাবে এবং ভর্তির সাথে সাথে। তবে বেড সংখ্যা বৃদ্ধি না করায় ৩১ জনের বেশি রোগীদের মেঝেতে থাকতে হয়। ভর্তি ১০ জন রোগী জানান, ডাক্তার ও নার্সদের ব্যবহারে তারা খুবই সন্তষ্ট। ভর্তির জন্য তাদেরকে ১০টাকা করে দিতে হয়েছে। এখানে খাবারের মান ও পরিমাণ নিয়ে তারা সন্তষ্ট। তবে বাথরুমের সমস্যা রয়েছে।

বহিঃর্বিভাগে বেশির ভাগ রোগী মেডিকেল অফিসারদের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ঔষধ পেয়ে থাকেন। বিশেষজ্ঞ ডক্তার না থাকায় রোগীদের সমস্যায় পড়তে হয়। ডাক্তারের দেয়া ব্যবস্থা পত্রে রোগীরা হাসপাতাল থেকে বেশিরভাগ ঔষধ পেয়েছেন। এরপরও তাদের অনেককে কিছু ঔষধ বাইরে থেকে কিনতে হবে বলে তারা জানান। স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে তারা প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও চাহিদামত ঔষধ সরবরারের পরামর্শ দিয়েছেন।

স্টাফ নার্স কামনা রানী শিকদার

কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স কামনা রানী শিকদার এর মতে হাসপাতালে দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। গাইনি কনসালটেন্ট প্রয়োজন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা সহ স্টাফ নার্স ও ঝাড়–দার, ওয়ার্ডবয়, আয়া, প্রয়োজন বলে তিনি সুপারিশ করেন।

মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট ল্যাব এমডি শামিম ইকবাল

কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট এর দায়িত্ব পালন করছেন এমডি শামিম ইকবাল। এখানে অনুবিক্ষণ যন্ত্র, ডিজিটাল ক্লোমিটার, সাইন্টিফিউজ, মেশিন রয়েছে। নির্দিষ্ট পরিমান ফি দিয়ে এগুলো দিয়ে রক্তের সিবিসি, ইউরিন আরই, পেগনেন্সি পরীক্ষা, এসও টাইটার, ব্লাডসুগার, ব্লাড গ্র“পিং ও আর এ করানো হয়। পরীক্ষার জন্য প্রতিদিন গড় ২৫ থেকে ৩০ জন রোগী আসে। ল্যাব চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় লোকবল নেই। ল্যাব পরিচালনার জন্য এনালাইজার, এলাইজা মেশিন সহ ব্লাড ব্যাংক ফ্রিজ প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

ফার্মাসিস্ট জহুরুল আজিম

কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফার্মাসিস্টের দায়িত্বে রয়েছেন জহুরুল আজিম। এই হাসপাতাল থেকে এন্টাসিড, প্যারাসিটামল, মেট্রনিডাজল, টেট্রাসাইক্লিন, এ্যামোক্সিসিলিন, ইডোমেথাসিন, লিবোফ্লোক্সিন,ও হিস্টাসিন ঔষধ সরবরাহ করা হয়। ঔষধের জন্য বাৎসরিক চাহিদা দিতে হয়। ঔধের গায়ে সরকারী লেবেল থাকার কারণে এগুলো বাইরে বিক্রির সুযোগ নেই। তার মতে পর্যাপ্ত ঔষধ সরবরাহ রয়েছে। জনবল বৃদ্ধির জন্য তিনি সুপারিশ করেন।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: আবুল কালাম আজাদ

কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্ব পালন করছেন ডা: আবুল কালাম আজাদ। ঔষধ সরবরাহ, জনবলের অভাব এখানে প্রধান সমস্যা। সেবার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। হাসপাতালে স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির পরিবর্তে রয়েছে হাসপাতাল সুষ্ঠুু ব্যবস্থাপনা কমিটি। প্রতি মাসে এই কমিটির সভা হয়ে থাকে। কার্যকর ও পর্যাপ্ত সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে তিনি প্রয়োজনীয় জনবল বৃদ্ধি, ঔষধ সরবরাহ এবং সেবা দেয়ার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ প্রয়োজন বলে মনে করেন।

এক নজরে খলিশখালি ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের চিত্র

তালা উপজেলার খলিশখালি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা হিসাবে ২ বছর ধরে দায়িত্ব পালন করছেন সুফিয়া খানম। জেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের এই কেন্দ্র থেকে বিনামূল্যে গর্ভবতী সেবা, স্বাভাবিক প্রসব সেবা, প্রসবোাত্তর সেবা, নবজাতকের সেবা, এম আর, ৫ বছর কমবয়সী শিশুদের সেবা, ইপিআই, ভিটামিন এ ক্যাপসুল দেওয়া ও প্রজনন তন্ত্রের সেবা দেয়া হয়ে থাকে। গত আগষ্ট (১২) মাসে এই স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ৮শ, ৮০ জন রোগী স্বাস্থ্য সেবা নিয়েছেন। এর মধ্যে ৪শ’৫৫ জন নারী, ১শ’ ২৫ জন পুরুষ ও ৩শ’ ৫ জন শিশু রয়েছে। এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বাড়ি কেন্দ্র থেকে আধা কিলোমিটার থেকে ১ কিলোমিটারের মধ্যে। এখানে আসা বেশির ভাগ রোগীই দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যবহারে সন্তষ্ট। স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে তারা আরো ঔষধ সরবরাহের প্রয়োজন বলে মনে করেন।

এই কেন্দ্র থেকে সপ্তাহে ৫দিন সেবা দেয়া হয়। এখানে কোন ফি দিতে হয়না। বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। নিরাপত্তার ব্যবস্তা নেই। বৃষ্টি হলেই অঢিসের সামনে পানি জমে। রবিবারে গ্রামে স্যাটালাইট ক্লিনিকে যেতে হয়। স্থানীয় চাহিদানুযায়ী সেবা প্রদান যথেষ্ট নয়। জনবলের অভাবের কারণে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে চিকিৎসা সেবার তালিকা টানানো আছে। এই কেন্দ্র থেকে রোগীদের বিনামূল্যে প্যারাসিটমল, মেট্রনিডাজল, কোট্রিম, আয়রন, এন্টাসিড, এমোক্সিসিলিন সহ আরো কিছু ওষুধ দেয়া হয়। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসাবে তাকে ডেলিভারী কাজ, চেকআপ, প্রসুতি মায়েদের দেখা ও সেবা দেয়ার কাজ করতে হয়। কার্যকর ও পর্যাপ্ত সেবার জন্য এই কেন্দ্রে একজন মেডিকেল অফিসার প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। প্রয়োজনীয় লোকবল, চাহিদনুযায়ী ঔষধ সরবরাহ, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, চেয়ার টেবিল প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।

এক নজরে বয়ারডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিক :

তালা উপজেলার খলিশখালি ইউনিয়নের বয়ারযাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিকের দায়িত্ব পালন করছেন পরিবার কল্যান সহকারী সাধনা রানী সরদার। এই ক্লিনিক থেকে সাধারনত: স্বাস্থ্য সেবা ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয় এবং ইপিআই কার্যক্রম চালানো হয়। সপ্তাহে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৩ দিন ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ থেকে ৩দিন এই ক্লিনিক খোলা হয়। প্রতিদিন স্বাস্থ্য বিভাগে গড় ৫০ থেকে ৮০ জন রোগী এখান থেকে সেবা নিয়ে থাকে। এখান থেকে ২৬ প্রকার ঔষধ সামগ্রী দেয়া হয়। এখানে আসা রোগীদের বেশিরভাগই মহিলা। গত এক মাসে আগষ্ট-১২ এই ক্লিনিক থেকে মোট ৯শ’৯৮ জন রোগী সেবা ও ঔষধ নিয়েচেন। এর মধ্যে ৬শ’ ৮৪ জন মহিলা ও ৩শ’১৪ জন পুরুষ ।

এই ক্লিনিকে বিদ্যুতের ব্যবস্থা রয়েছে। জমি দাতার বাড়ি থেকে এই সংযোগ দেয়া হয়েছে। ক্লিনিক ব্যবস্থাপনার জন্য ১১ সদস্যের কমিউনিটি গ্র“প রয়েছে। কমিউনিটি গ্র“পের সভা মাঝে মধ্যে হলেও সভায় সকলে উপস্থিত থাকেনা । এখানে সেবা নেয়া রোগীদের বাড়ি ক্লিনিক থেকে আধা কিলোমিটার থেকে ১ কিলোমিটারের মধ্যে। এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবায় তারা সকলে সন্তষ্ট বলে মনে করেন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, নৈশপ্রহরী নিয়োগ ও দ্বিগুন ঔষধ সরবরাহ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই কেন্দ্রের দায়িত্বে নিযোজিত স্বাস্থ্য কর্মীরা ।

কমিউনিটি গ্রুপের সদস্যরা বলেন

বয়ারডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিকের গ্রুপে সভাপতি মাওলানা আজিজুর রহমান, সদস্য অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক রেজাঊল করিম এবং ইউপি সদস্য শাহিন কাগুজির মতে, এই কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে রোগীরা পর্যাপ্ত সেবা পেয়ে থাকেন। এখানে কোন ফি দিতে হয়না। তবে ক্লিনিক পরিচালনার খরচ নির্বাহের জন্য ৩ টাকা হারে ফি নেয়ার জন্য তারা একটি প্রস্তাব রেখেছেন। এখানে গ্রুপের সভা মাসে একটি হয়। তবে সপ্তাহে ৩ দিনের পরিবর্তে আরো বেশি দিন স্বাস্থ্য বিভাগের কার্যক্রম চালু রাখলে এলাকাবাসি উপকার পেতে পারে বলে তারা মনে করেন। এ ছাড়া একজন ডাক্তার নিয়োগ সহ এখানে ডেলিভারী ব্যবস্থা চালুর জন্য পর্যাপ্ত উকরণ সররাহ করার জন্য তারা পরামমর্শ দেন।

সমীক্ষা ফলাফল ও স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়নে প্রাপ্ত সুপারিশ সমুহ

সরকারী স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারি প্রতিষ্ঠান সমুহের সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করা,সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সমুহের কর্মদক্ষতা নিরুপন করা সহ দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগনের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার কার্যকর সুপারিশ অনুসন্ধানে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল, কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ,খলিশখালি ইউনিয়ন ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র ও বয়ারডাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসক, রোগী সহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সুপারিশ ও মতামত নেয়া হয়।

প্রাপ্ত সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়

মতামত প্রদানকারী সকলেই বিদ্যমান স্বাস্থ্য সেবার পরিস্থিতির প্রধান সমস্যা হিসাবে জনবল কাঠামোকে চিহ্নিত করেছেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য কেন্দ্র সমুহের অবকাঠামো উন্নয়ন, ও চাহিদামত সকল ঔষধ সরবরাহ না থাকায় সাধারণ মানুষ সরকারী স্বাস্থ্য সেবার পরিপূর্ণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মতামত দিয়েছেন। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় স্বাস্থ্য সেবার মান অনেকটাই উন্নত হয়েছে এবং জনগণ সরকারি স্বাস্থ্য সেবার প্রতি পুনরায় বিশ্বাস ফিরে পেতে শুরু করেছে বলে সকলের অভিমত। নাম মাত্র মূল্যে টিকিট সংগ্রহ করে বিশেষঙ্গ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াও কিছু নিত্য প্রয়োজনীয় ঔষধ সুবিধা, অন্ত: বিভাগের সাধারণ বেডের রোগীদের বিনামূল্যে অপারেশন সুযোগ সহ খাদ্য সুবিধা ভোগ করছে নিু মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা। সরকারী স্বাস্থ্য সেবা পরিস্থিতি উন্নয়নে সকলেই জনবল কাঠামো সংকট, অপ্রতুল বাজেট এবং ঔষধ স্বল্পতা সমস্যাকে চিহ্নিত করেছেন।

সমীক্ষক দল

------------

০১. মিজানুর রহমান

     গবেষক ও উন্নয়ন কর্মী

০২. ফারুক রহমান

      ডি সি এফ

 

০৩. মাধব চন্দ্র দত্ত

       স্বদেশ,সাতক্ষীরা

০৪. মো : আমিনুর রসুল বাবুল

      উন্নয়ন ধারা ট্রাস্ট


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।