চিকিৎসকদের ধর্মঘট কীসের ইঙ্গিত?
ফরিদা আখতার || Tuesday 26 January 2016 ||ঘটনা খুবই দুঃখজনক, কিন্তু হঠাত্ ঘটেছে কিংবা একটি মাত্র ঘটনা, তা কিন্তু নয়। সরকারি ও প্রাইভেট হাসপাতালে বা ক্লিনিকে এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলে আমরা জানতে পারছি, আর না হলে স্বজনরা কেঁদে মরছেন। কেউ জানতে পারছে না। তাত্ক্ষণিক ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে কোথাও কোথাও ভাংচুর হয়েছে, চিকিৎসকের ওপর আক্রমণও হয়েছে। এগুলো কাম্য নয়। কিন্তু যার স্বজন মারা যায় এবং তার যদি মনে হয় চিকিত্সায় গাফিলতি হয়েছে, এ মৃত্যু ঠেকানো যেত, তাহলে এটুকু অবশ্যই বলা যায়— এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, তার ব্যবস্থার দায়িত্ব কাউকে না কাউকে নিতেই হবে।
এ বছরের শুরুতে সরকারেরই উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি পরিবার এমন এক ঘটনার করুণ শিকার হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসির ছোট ভাই খায়রুল বাশারের মেয়ে মেহেরুন্নেসা রীমা (২৫) ১০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ‘সার্জিস্কোপে’ সন্তান প্রসবের পর মারা যান। ধরে নেয়া যায়, তার ক্ষেত্রে যত্নের অভাব বা গাফিলতির অভিযোগ ওঠার কথা ছিল না। কিন্তু তা-ই ঘটেছে বলে অভিযোগ মিলছে। মেয়ের এ মৃত্যু মেনে নিতে না পেরে তার অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীমা সিদ্দিকী রোজী ও তার স্বামী চিকিৎসক মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ এনে মামলা করেছেন খায়রুল বাশার। একই দিনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রানা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ছেলের অঙ্গহানির অভিযোগ এনে একই আদালতে মামলা করেন আরেকজন। সংক্ষুব্ধ হলে আদালতে মামলা করার অধিকার নিশ্চয়ই নাগরিকদের রয়েছে। তাই তারা মামলা করেছেন, বিচার চেয়েছেন।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, ২০ জানুয়ারি বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ডাক্তার মুজিবুল হক মামলা দায়েরের প্রতিবাদে ও মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ধর্মঘটের ঘোষণা দেন। তারা মামলার মুখোমুখি হতে রাজি নন, মামলা প্রত্যাহারের জন্য সব রোগীকে জিম্মি করা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিটি করপোরেশনের মেয়রের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বাস দেন। সরকারের কি এর চেয়ে বেশি কিছু করার নেই? ধর্মঘট চলাকালীন চট্টগ্রামের সব প্রাইভেট ক্লিনিকে কোনো রোগী চিকিত্সা পায়নি, সঙ্গে বন্ধ ছিল ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোও; যা সাধারণত ক্লিনিকের ব্যবসার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। প্রাইভেট ক্লিনিকের চিকিৎসকরা তাদের চেম্বারেও রোগী দেখেননি। সরকারও কি তাদের কাছে জিম্মি? এ নিবন্ধ লেখার সময় মেয়রের হস্তক্ষেপে ডাক্তাররা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন বলে জানা যাচ্ছে।
তবে ধর্মঘটের সময় তারা দয়া (!) করেছেন এটুকু যে, চিকিৎসকরা বেসরকারি হাসপাতালে সিসিইউ ও আইসিইউ সেবা দিতে পারবেন। এছাড়া জরুরি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও রোগ নির্ণয় করতে পারবে বলে পরবর্তী একটি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এজন্য ধন্যবাদ। কিন্তু টেলিভিশনে দেখেছি, বহু রোগীর স্বজনরা চিকিৎসক আসছেন না বলে রোগী নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। শিশুদের জন্যও তাদের দয়া হয়নি। শিশুরাও চিকিত্সা পায়নি।
যারা ধর্মঘট করেছেন, তাদের যুক্তি কী? তারা কি বলতে পারবেন, তাদের আন্দোলনের ফলে চিকিত্সার অভাবে কোনো রোগী মারা যায়নি? তারা কি আইনিভাবে চিকিত্সা সেবা বন্ধ রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারেন? তারা কি এভাবে রোগীদের জিম্মি রেখে মামলা তুলে নেয়ার জন্য চাপ দিতে পারেন? এ অধিকার কোথা থেকে আসছে? এটাও কি এক ধরনের সন্ত্রাস নয়?
মামলা হয়েছে সুনির্দিষ্টভাবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাদেরই বিরুদ্ধে। বাদীর ভাষায়, ‘যারা অপরাধ করেছে, আমি শুধু তাদের বিচার চাই। আমি তো সব চিকিৎসকের বিরুদ্ধে না। বিচার চেয়ে আমি আদালতে গেছি।’ তিনি মামলা করেছেন বলে বিএমএ সরাসরি অভিযুক্ত চিকিৎসকদের পক্ষ নিয়ে ধর্মঘট করে অসহায় রোগীদের দুর্ভোগ ঘটাবে, এটা সরকার কী করে নিশ্চুপ থেকে দেখেছে! তারা সরাসরি নাকচ করে দিচ্ছেন যে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু অস্বাভাবিক নয়, কারণ দেশে এখনো মাতৃমৃত্যুর হার শূন্যের কোঠায় নামেনি। বাহ, সুন্দর যুক্তি! এই প্রসূতি মায়ের সমস্যা ছিল বলেই হাসপাতালে আসা। আমার বিশ্বাস সব প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসক এমন আমানবিক সিদ্ধান্তের পক্ষে নন। তবে তাদের দায়িত্ব ছিল অবস্থান পরিষ্কার করা। তারা রোগীদের চেয়ে বেশি নিজেদের পেশার সংঘবদ্ধতার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন, এটা দুঃখজনক। তবে তা ন্যায়সঙ্গত কোনো কারণে হলে সেটা মেনে নেয়া যেত।
আমরা পুলিশের অপরাধের ক্ষেত্রে দেখেছি, পুলিশ প্রশাসন বলে দেয়, আমরা ব্যক্তিগত অপরাধের দায় নেব না। আবার যখন তদন্ত করা হয়, তখন তারা সেই পুলিশের পক্ষেই সাফাই গায়। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাকে শেষ পর্যন্ত অপরাধী প্রমাণ করারও চেষ্টা হয়েছে। কাজেই পেশার পক্ষে সবাই উঠেপড়ে লাগে, কারণ সব রসুনের গোড়া যে একখানেই বাঁধা!
শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবির আন্দোলনের সময় সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বলা হয়েছিল, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন মেনে নেয়া হবে না। এখানে শিক্ষার্থীদের ক্ষতির দিক ছিল সেশন জট হওয়ার ভয়, তাদের বাঁচা-মরার প্রশ্ন নয়। কিন্তু হাসপাতালে যারা আসে এবং হাজার হাজার টাকার বিল দেয়, তাদের সেবা না পাওয়ার অর্থ হচ্ছে, বাঁচা-মরার বিষয়। সময়মতো চিকিত্সা না পেলে রোগীর জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে, প্রাণ হারানোর ভয় থাকতে পারে।
বিভিন্ন পত্রপত্রিকার প্রতিবেদনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, চিকিৎসকরা কি আইনের ঊর্ধ্বে? তাদের কি কোনো ভুল-ত্রুটি নেই। তাদের মধ্যে কি কেউ অপরাধ করতে পারেন না? তাদের অপরাধ, অবহেলা বা উদাসীনতার কারণে কোনো রোগী মারা গেলে, কোনো রোগী পঙ্গুত্ববরণ করলে, তার প্রতিকার কি চাওয়া যাবে না? এ বিষয়ে আইনের আশ্রয় নেয়া যাবে না? প্রতিকার চাইতে গেলেই কি তারা রোগীদের চিকিত্সা না দিয়ে জিম্মি করবেন? এখন চিকিৎসকরা যে শর্ত দিয়েছেন, তার সঙ্গে আগের কিছু উদ্যোগের মিল পাওয়া যাচ্ছে। তারা বলছেন, অভিযোগ উঠলে চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি বিষয়টির তদন্ত করবে এবং তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
এ ধরনের ঘটনা আগে ঘটেছে বলে দুটি আইনের খসড়া তৈরি হয়েছিল, যা শেষ পর্যন্ত চাপা পড়ে আছে বলে মনে হয়। একটি হচ্ছে রোগী সুরক্ষা আইন, ২০১৪; অন্যটি স্বাস্থ্য সেবাদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন, ২০১৪। রোগী সুরক্ষা আইনের লক্ষ্য ছিল, রোগী বা স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারীদের হয়রানি লাঘব করা এবং স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান (যার আওতায় ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ডাক্তারের চেম্বার ইত্যাদি), ব্যক্তি, চিকিৎসকদের সুরক্ষা। এখানে চিকিত্সার অবহেলা, অপরাধসম অবহেলা এবং রোগীর শারীরিক-মানসিক ক্ষতির কথা রয়েছে।
পেশাগত এথিক্স, বিশেষ করে চিকিৎসক হিপোক্রিটিস শপথ, জেনেভা ঘোষণা, ২০০৬, হেলসিংকি ঘোষণা ইত্যাদির উল্লেখ আছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে চিকিৎসক রোগীর সেবা দিতে বাধ্য। পেশাগত এথিক্সের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো রোগীকে রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্ম, বর্ণ, জাতীয়তা বা লিঙ্গভেদে সেবা প্রদান হইতে স্বাস্থ্য সেবাদানকারী ব্যক্তি নিজেকে বিরত রাখিতে পারিবেন না।’ তাহলে চট্টগ্রামে ডাক্তারদের ধর্মঘট নেহাত গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষার জন্য নয় কি? এখানে দুই ধরনের অপরাধের দণ্ডের কথাও রয়েছে। যেমন— স্বাস্থ্য সেবাদানকারী ব্যক্তির পেশাগত ও চিকিত্সায় অবহেলা দ্বারা সেবা ও চিকিত্সা গ্রহণকারী ব্যক্তির জীবন যদি ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তবে তার বিরুদ্ধে প্রমাণসাপেক্ষে অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড বা ২ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় শাস্তি আরোপ করা হবে; এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করার ক্ষেত্রে অপরাধসম অবহেলা দ্বারা মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য সেবাদানকারী ব্যক্তি বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ধারা ৩০৪-ক প্রয়োগ করা যাবে।
সেবাদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন, ২০১৪-এ চিকিৎসকদের সুরক্ষার যথেষ্ট ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখানে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি নিজে অথবা কোনো সংগঠনের সদস্য বা কর্মী বা গোষ্ঠীর বা সংঘের কোনো সদস্য হয়ে সহিংস কর্মকাণ্ড বা বিশৃঙ্খলা সংঘটিত করে অথবা যেকোনো অপরাধ করার চেষ্টা করে অথবা প্ররোচনা দেয়। আর অপরাধ হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবাদানকারী ব্যক্তির প্রতি কোনো সহিংস কাজ বা স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পত্তির ক্ষতিসাধন, বিনষ্ট, ধ্বংস বা উক্ত রূপ সম্পত্তি অপরাধী কর্তৃক নিজ দখলে অপরাধ বলে গণ্য হবে।
সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ‘অবহেলা’ বলতে সেবা গ্রহণকারীর প্রতি ইচ্ছাকৃতভাবে যথাযথ দক্ষতার সঙ্গে সেবা প্রদানে ব্যর্থতা, যার দ্বারা সেবা গ্রহণকারীর শারীরিক, মানসিক ক্ষতি, জীবন ঝুঁকিপূর্ণ বা মৃত্যুর কারণ হওয়া। সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের দিক থেকে অবহেলা থাকার পরও যদি গ্রহণকারী ‘অপরাধ’ করে তাহলে তাদের জন্য দণ্ডের ব্যবস্থা রয়েছে। এ দণ্ড অনূর্ধ্ব তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
আরো লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে রক্ষার ব্যবস্থা খুব পাকাভাবে করা হয়েছে। এমনকি কোনো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী উত্থাপন করলে ধারা-১০ অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত না হয়ে সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে গ্রেফতার করা যাবে না। এর ব্যত্যয় ঘটলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অপরাধ করেছে বলে গণ্য হবে।
রোগীর সুরক্ষা আইনে রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেবাদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কোনো সাজা দিতে অপরাধকে আমল অযোগ্য ও জামিনযোগ্য বলা হয়েছে, কিন্তু সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের কোনো ক্ষতি হলে তখন অপরাধ আমলযোগ্য ও জামিন অযোগ্য করা হয়েছে। এ আইন খসড়া অবস্থায় মতামত চাওয়া হলে স্বাস্থ্য আন্দোলনের পক্ষ থেকে মতামত দেয়া হয়েছিল, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে যে ছাড় দেয়া হয়েছে, তা ক্ষতিগ্রস্ত রোগীর জন্য রাখা হয়নি। বলা বাহুল্য, এ আইনের খসড়া তৈরি করেছেন চিকিৎসকরাই এবং রাজশাহীতে এক চিকিৎসককে গ্রেফতারের পর এমনই এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এ আইনের এখন কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না; বোঝা যাচ্ছে যে, ডাক্তাররা ধরে নিয়েছেন তাদের দ্বারা ভুল হোক বা অবহেলা, সবই হতে পারবে কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কিছু করা যাবে না। কেউ তাদের ঘাঁটাবে না, কারণ অসুখ-বিসুখ সবারই হয়। ডাক্তার সাহেব যদি চিকিত্সা না করেন তাহলে বিপদ!
সেবা দেয়া বন্ধ করে আন্দোলন করতে গিয়ে চিকিৎসকরা এতই উত্সাহিত হয়ে উঠেছেন যে, ডেইলি স্টার পত্রিকায় (২৪ জানুয়ারি, ২০১৬) দেখা যায়, দিনাজপুরের ডায়াবেটিক হাসপাতালের ১৩ জন চিকিৎসক অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট করছেন বেতন বাড়ানোর দাবিতে। এখানে প্রতিদিন শত শত রোগী আসে দূর-দূরান্ত থেকে, কিন্তু এসে ডাক্তার না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ হাসপাতালে ১৩ জন ডাক্তারের জন্য ৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকা খরচ হয়। যদিও বেতনের বিষয়টি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের নিজস্ব ব্যাপার, কিন্তু তাদের দাবি আদায়ের জন্য রোগীদের সেবা না দেয়া নিজস্ব বিষয় নয় বলে পত্রিকার খবর হয়ে এসেছে। এটা কি দায়িত্বে অবহেলা নয়?
ডাক্তারদের প্রতি অন্যায় হোক— এটা যেমন কাম্য নয়, তেমনি ডাক্তারদের অপরাধ হলে ভুক্তভোগী রোগী বা তার স্বজনদের বিচার চাওয়ার পথ বন্ধ করে দেয়া হবে— এটা হতে পারে না। বিচার চাইতে গিয়ে বাধা দেয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের পর্যায়ে পড়ে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, সেবা প্রদানকারী সুরক্ষা আইনে বিশেষজ্ঞ মতামত নেয়ার বিষয়টি ১০ নং ধারায় উল্লেখ আছে। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, আইনটি করে চিকিৎসকরা নিজেদের অবস্থান আরো দৃঢ় করতে চাইছেন। অথচ রোগী সুরক্ষা আইনে চিকিৎসকদের সেবা প্রদানে বিরতির ক্ষেত্রে কোনো কথাই বলা হয়নি। এটা ভয়াবহ ইঙ্গিত বহন করছে।
আশা করি, চট্টগ্রামের চিকিৎসকরা অবিলম্বে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করবেন এবং আইনিভাবেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভুল বলে প্রমাণ করবেন। চিকিৎসকরা মানবিক হবেন— এটাই সবাই দেখতে চায়।