বাজেট ২০১৬ – ১৭: অবহেলিত মানুষের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া নিশ্চিত করা এবং চাহিদা পুরণের জন্যে অর্থ বরাদ্দ চাই
উবিনীগ || Wednesday 27 April 2016 ||স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন ও জনগণের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকার আছে কি নেই তা জাতীয় বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ মেপে বলা যায় না। স্বাস্থ্য আন্দোলন এই বিষয়টি অর্থ বরাদ্দের পরিমাণের উর্ধ্বে চিন্তা করে। জনগণের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার অধিকার তা নিশ্চিত করার জন্যে সরকারের যে অঙ্গীকার ও বাধ্যবাধকতা রয়েছে তা পুরণ করা হচ্ছে কিনা সেটাই মুল বিষয়। আমরা এখন বিশ্ব অর্থনীতির যে পর্যায়ে আছি তাতে জনগণের স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার দায়িত্ব থেকে সরকার মুক্তি পেতে চাইছে। স্বল্প আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হয়ে সরকারের দায়দায়িত্ব আরও সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। তারা অবাধ দরজা খুলে দিয়েছে বে-সরকারি খাত থেকে সেবা নেয়ার ওপর। যার সোজা অর্থ হচ্ছে “টাকা থাকলে সেবা পাবে, না থাকলে মরতে হবে!।”
জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কি পরিমাণ এবং কোন খাতে দেয়া হচ্ছে সেটা নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে চিন্তা ভাবনা হয়, কিন্তু এর সাথে স্বাস্থ্য অর্থায়নের সম্পর্ক কি এবং কোন অর্থ রাজস্ব থেকে আসবে, কোনটা বৈদেশিক সাহায্য থেকে আসবে, এবং জনগণ নিজে কতখানি বহন করবে তার কোন দিক নির্দেশনা নেই। সরকারের বাজেট বরাদ্দের দিক থেকে স্বাস্থ্য খাত ধীরে ধীরে অবহেলিত একটি খাত হিসেবে বাজেটে স্থান পেতে শুরু করেছে। সার্বিক বাজেটের পরিধি বিশাল হচ্ছে, প্রতি বছরই বাড়ছে। উল্টো দিকে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আনুপাতিক হারে প্রতি বছর কমছে। গত অর্থ বছরের (২০১৫ – ১৬) বাজেটে অর্থ বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা, টাকার পরিমানে বাড়লেও মুল বাজেটের মাত্র ৪.৩% ছিল । এর আগের বছরের তুলনায়ও কম, ২০১৪ – ১৫ বছরে ছিল ৪.৮১% । স্বাস্থ্য আন্দোলনের পক্ষ থেকে আমরা এবারের বাজেট ২০১৬-১৭ নিয়ে আলোচনায় শুধু বাজেট বরাদ্দে অর্থের পরিমাণ নিয়ে কথা বলবো না, আমরা পর্যালোচনার মাধ্যমে দেখাতে চাই স্বাস্থ্য খাতে অর্থের যোগানের বিষয় শুধু বাজেটে অর্থ বরাদ্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এর ব্যাবহার কোথায় হচ্ছে এবং সেখান তার আদৌ প্রয়োজন ছিল কিনা, কিংবা যেখানে প্রয়োজন ছিল সেখানে আদৌ কোন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কিনা তা আমরা দেখতে চাই। স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ স্বাস্থ্য অর্থায়নের একটি অংশ মাত্র। স্বাস্থ্য অর্থায়নের নানা পথ আছে, সেখানে এখন রোগীর পকেট বা গাইট থেকেই খরচটাই এখন প্রধান হয়ে উঠছে।
স্বাস্থ্য সেবা শুধুমাত্র হাসপাতাল, ডাক্তার-নার্স, ওষুধ ও চিকিৎসা নয়। স্বাস্থ্য সেবার সাথে যুক্ত হয়েছে পুষ্টিহীনতা, খাদ্য বাহিত রোগ, জীবন যাপনের ধরণ, নগরায়ণ, পরিবেশ, সড়ক দুর্ঘটনা, ডুবে যাওয়া, রাজনৈতিক হানাহানি, কারখানায় আগুন ও ভবন ধ্বস, ট্রমাজনিত রোগ, অটিজম ও প্রতিবন্ধিতা ইত্যাদীসহ অনেক রোগ যা একজন সুস্থ মানুষকে পরক্ষণে অসুস্থ করে ফেলতে পারে। এর সাথে দেশের উন্নয়ন ও মানুষের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা জড়িয়ে আছে।
স্বাস্থ্য খাত সরকারের বার্ষিক বাজেট পরিকল্পনায় গুরুত্ব দিনে দিনে কমে আসছে, এটা শুভ লক্ষণ নয় কোনভাবেই। কিন্তু একই সাথে এটাও দেখার বিষয় যে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দটা কোথায় ব্যয় করা হচ্ছে, এবং সেটাই জনস্বাস্থ্যের জন্যে প্রয়োজনীয় ছিল কিনা। জন প্রতি বাজেট বরাদ্দ হচ্ছে মাত্র ৭০০ টাকা বছরে, দৈনিক মাত্র ১.৯২ টাকা। দুই টাকাও পুরো নয়। কি সেবা পাবে মানুষ এই টাকায়? অবশ্য বিনা পয়াসায় যদি চিকিৎসকের পরামর্শ পাওয়া যায় তাহলেও রোগীর অনেক উপকার হতে পারে। সরকারি হাসপাতালে ওষুধ ‘বাইরে’ থেকে কিনতে হলেও প্রাইভেট হাসপাতালের তুলনায় খরচ অনেক কম । তাই লাইন দিয়ে টিকেট কেটে আউটডোরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়। যদিও সরকারি স্বাস্থ্য সেবা নিলে শতকরা ৬০ ভাগই নিজের বহন করতে হয়, বেসরকারি সেবা নিলে তার পরিমাণ ১০০ থেকে ২০০ ভাগ বেড়ে যায়।
বিগত বছর গুলোতে স্বাস্থ্য খাতে্র যে কাজগুলো বিশেষভাবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ, ওষুধ সামগ্রী ও যন্ত্রপাতি কেনায় একতৃতীয়াংশের বেশী খরচ হয়ে যায়, আবার দেখা যায় বরাদ্দকৃত বাজেটের টাকা পরবর্তী বাজেট ঘোষণার আগে খরচ করা হয় না। কম্যুনিটি ক্লিনিক সরকারের তালিকায় প্রাধান্য পেলেও এর জন্যে বরাদ্দ টাকা সময় মতো ব্যবহার হতে দেখা যায়না। ডিজিটাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ‘উন্নত’ বলে দেখা যেতে পারে কিন্তু দেশের গরিব মানুষের জন্য তা কত কাজে লাগবে আমাদের জানা নেই। বিগত বাজেটে (২০১৪-১৫) ১৩,৮৬২ মিনি ল্যাপটপ দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ল্যাপটপ দিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া, জনশক্তি বৃদ্ধি করার জন্যে অর্থ বরাদ্দ যথেষ্ট ছিল না। হাসপাতালে টেলিমেডিসিন সেন্টার করা হচ্ছে, এ পর্যন্ত ২৮টি হাসপাতালে টেলিমেডিসিন সেন্টার খোলা হয়েছে, আরও ১৫টি খোলার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে গ্রামের মানুষ বিনা পয়সায় চিকিৎসা পাবে বলে সরকার বলছে। গ্রাম পর্যায়ে গিয়ে এর কোন প্রভাব দেখা যায় নি। স্বাস্থ্য অর্থায়নের একটি মাধ্যম হচ্ছে স্বাস্থ্য বীমা করা। সরকারের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সাথে গ্রীণ ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সাথে চুক্তির মাধ্যমে টাঙ্গাইলের তিনটি উপজেলায় এক লাখ কার্ড দেয়া হচ্ছে যার মাধ্যমে ৫০টি রোগ নির্ণয় ও বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া হবে। সরকার কার্ডধারীদের ১০০০ টাকা বছরে প্রদান করবেন, তার বিনিময়ে তারা বছরে ৫০,০০০ টাকার চিকিৎসা সেবা পাবেন।
এ বছর শেষ হচ্ছে দাতা গোষ্টির সাথে করা প্রকল্প ‘স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত উন্নয়ন কর্মসুচি (২০১১-২০১৬)’। এই কর্মসুচিতে দাতা গোষ্টি বিশাল অংকের অর্থ বরাদ্দ করলেও তাদের বিবেচনায় ভৌগলিক অবস্থানের কারণে, জাতি ও পেশাগত ও সামাজিকভাবে পশ্চাদপদ অংশ, শ্রম জীবী মানুষ, প্রতিবন্ধী এবং বয়স্ক মানুষ যাদের স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া যাদের সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন তারাই বাদ পড়ে যাচ্ছে। একই সাথে এ বছর থেকে শুরু হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) বছর, যার বেশ কিছু বিষয় স্বাস্থ্য বাজেটে গুরুত্বের সাথে প্রতিফলন ঘটানোর প্রয়োজন থাকতে পারে। বিষয়গুলো শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নয়, এর সাথে যুক্ত আছে অন্যান্য অনেক মন্ত্রণালয়। তাদের বাজেটে স্বাস্থ্যের প্রতিফলন কোথায়? যেমন জলবায়ু পরিবর্তন জনিত রোগের মোকাবেলা করার সক্ষমতা অর্জন। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাজ এখানে অনেক, অথচ জিকা ভাইরাসের কোন ঝুঁকি বাংলাদেশে নেই এই কথা বলাই যথেষ্ট মনে করা হচ্ছে। মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্যে অনেক উদ্যোগ নেয়া হলেও দক্ষিণাঞ্চলে লবনাক্ততা বেড়ে গিয়ে বাড়তি ঝুঁকি সৃষ্টি করছে বলে গবেষণায় উঠে আসছে। নগরের সমস্যা দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে, শব্দ দুষণ, বায়ু দুষণ রোধের জন্যে পরিবেশ মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দেবে কি?
সংক্রামক রোগে মৃত্যু কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও এখন স্বাস্থ্য সেবার প্রধান চ্যালঞ্জ হিসেবে আসছে অ-সংক্রামক রোগের কারণে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি। শত করা ৬০ ভাগের বেশী মৃত্যু ঘটছে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, কিডনী রোগ, ক্যান্সার ইত্যাদি মারাত্মক রোগে যা জীবন যাত্রা, পরিবেশ দুষণ, খাদ্য উৎপাদনে অতি মাত্রায় রাসায়নিকের ব্যবহার, তামাকের ব্যবহার ইতিমধ্যে চিহ্নিত হয়েছে। তার সাথে যুক্ত হচ্ছে অজানা অনেক রোগের সম্ভাবনা যা জিএমও খাদ্যের প্রবর্তনের সাথে আসতে পারে। এই ধরণের রোগের সনাক্ত করার বাজেট কি আছে?
স্বাস্থ্য জনবল বৃদ্ধির ক্ষেত্রে চিকিৎসকের ক্ষেত্রে যতো গুরুত্ব দেয়া হয়, নার্স ও অন্যান্য সহযোগী কর্মীদের বেলায় সরকারে উদাসীনতা দেখা যায়। তাদের জন্যে নির্দিষ্ট বাজেট রাখলে নিশ্চয় এই সমস্যার সমাধান করা যেতো।
উবিনীগ ও স্বাস্থ্য আন্দোলন সম্প্রতি কিছু চর এলাকায় মানুষের সাথে মত বিনিময় করে দেখেছে স্বাস্থ্য বাজেটের ব্যপারে তাদের কোন ধারণা নেই। তাদের কাছে স্বাস্থ্য সেবাই পৌঁছায় না। তারা বলেন, চরের গরিব মানুষদের কোন পাত্তা নেই হাসপাতালে। তাদের সামান্য চিকিৎসার জন্যে যাতায়াতে খরচ হয় দুই থেকে তিন গুন। বড় রোগ হলেও ঘরে বসে থাকতে হয়। গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসারও কোন ব্যবস্থা নেই। সেখানে দাই মায়েরা সেবা দিচ্ছেন কিন্তু তারাও কোন সহযোগিতা পাচ্ছেন না।
শ্রমিকদের কাজের ধরণ এমন যে তারা কাজের সময়ের আগে কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে সেবা নেবেন তার উপায় নেই, তাই বাধ্য হয়ে নিকটস্থ ফার্মেসী থেকে ওষুধ কিনে খেতে হয়, এতে রোগ সনাক্ত হয়না। আপাতত ব্যাথা বা উপসর্গ দমন হয় মাত্র আর ভেতরয়ে রোগ বাড়তে থাকে। এই বিষয়টি গার্মেন্ট শ্রমিকের বেলায় বেশী দেখা যায়।
স্বাস্থ্য সেবায় বৈষম্য খুব প্রকটভাবে দেখা যায়। যেমন খুলনায় শুকর পালেন বা যাদের কাওরা বলা হয় তারা এই পরিচয় দিয়ে কোন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গেলে সেবা পান না। তেমন পরিচ্ছন্নতা কর্মীদেরও অচ্ছুৎ হিসেবে আচরণ করা হয়। প্রতিবন্ধিতার শিকার মানুষের জন্যে স্বাস্থ্য সেবা অন্য সবার মতোই। অন্ধ, বধির, হাত-পা অবশ হওয়া, মানসিক প্রতিবন্ধিতার চিকিৎসা উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে পাওয়া যায় না, ফলে তাদের ছুটতে হয় এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে। এতে তাদের ভোগান্তি ও খরচ বাড়ে।
স্বাস্থ্য আন্দোলন এবার বিশেষ এলাকার অবহেলিত মানুষের দাবীগুলো তুলে ধরছে:
১. দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহ বিশেষত চর এলাকার গ্রামগুলো ছোট,বড় বহু নদী দ্বারা বিভক্ত। তাই ওই সব এলাকায় ইউনিয়ন ভিত্তিক একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র যথেষ্ট নয়। চর ভেদে ওই সকল এলাকায় একাধিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে,যাতে চর এলাকার মানুষ ওই কেন্দ্রগুলো থেকে সেবা গ্রহণ করতে পারেন।
২. চর,পাহাড়ী এবং অন্যান্য দূর্গম এলাকায় চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী এবং নার্স যাতে তাদের কর্ম এলাকায় বসবাস করে চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন তার ব্যবস্থা করতে হবে। এই কাজ করার জন্য ডাক্তারদের যে সংগঠন আছে বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েশনকে নজর রাখতে হবে।
৩. উপজেলা এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী এবং নার্সদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক যথাযথ নিয়মে খোলা রাখাতে হবে। দেখা যায় দূর্গম পথ পাড়ি দিয়ে অসুস্থজনদের নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে হাসপাতাল বন্ধ থাকে অথবা চিকিৎসক থাকে না। তখন অসুস্থ রোগীদের নিয়ে চরের জনগণ পড়ে বিপদে।
৪. বেসরকারী উন্নয়ন সংগঠন যারা স্বাস্থ্য নিয়ে চরাঞ্চলে কাজ করছে তাদের সঙ্গে সরকারকে সমন্বয় করে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে হবে। তাদেরকেও সরকারীভাবে সহায়তা দিতে হবে। সরকার নদী পারা-পারের জন্য নৌকা দিয়ে তাদের সহায়তা করতে পারে। তাহলে চরাঞ্চলের জনগণ স্বাস্থ্য সেবা পাবেন।
৫. চরবাসী এবং দূর্গম এলাকায় বসবাসরত মানুষের জন্য স্বাস্থ্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখা হোক। ওই বরাদ্দ যেন কেবল মাত্র চরবাসীদের জন্যই ব্যয় করা হয়।
৬. চরবাসী এবং দূর্গম এলাকায় বসবাসরত মানুষদের স্বাস্থ্য সেবা তাড়াতাড়ি পাওয়ার জন্য আলাদা কার্ড প্রদান করতে হবে। সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে ওই কার্ডধারী মানুষদের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
৭. সরকারী স্বাস্থ্যগুলোতে পর্যাপ্ত জীবন রক্ষাকারী ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। অপর্যাপ্ত ওষুধের কারণে স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীদের পূর্ণমাত্রায় ওষুধ প্রদান করতে পারে না। একইসঙ্গে হাসপাতলগুলোতে প্যাথলজী ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি থাকতে হবে।
৮. চর এলাকার গর্ভবতী মা ও ৫ বছর পর্যন্ত শিশুদের প্রয়োজনীয় সকল চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
৯. চর এলাকার গুরুতর অসুস্থদের দ্রুত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য সরকারীভাবে দ্রুতগামী নৌযানের ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. চরবাসী মানুষদের খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ক শিক্ষা প্রদান এবং সচেতন করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। একইসঙ্গে রাসায়নিক কৃষিকে নিরুৎসাহিত করে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে সকল ধরনের খাদ্য উৎপাদনকারীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
১১. চরাঞ্চলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নিরাপদ খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ক শিক্ষা প্রদানে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
১২. চরে স্যাটালাইট ক্লিনিক এর জন্য ওষুধের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এতই কম ওষুধ দেওয়া হয় ১০/১২ জনকে ওষুধ দেওয়া যায়। তাও সম্পূর্ণ ডোজ দেওয়া যায় না।
১৩. চরে উচ্চ ঝুঁকি সম্পন্ন গর্ভবতী নারীদের জন্য অবশ্যই স্বাস্থ্য খাতে সরকারের বরাদ্দ থাকতে হবে।
শ্রমিকদের বিশেষ দাবী
১. সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে গার্মেন্ট শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সকাল ও সন্ধ্যায় অফিস সময়ের আগে একটি বিশেশ বিভাগ খোলা থাকতে হবে।
২. গার্মেন্ট শিল্প এলাকায় অবস্থিত সরকারী চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে ওষুধসহ সকল ধরণের রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৩. গার্মেন্ট শ্রমিকদের চিকিৎসা ভাতা দিতে হবে।
৪. কোন কোন গার্মেন্ট শিল্প এলাকায় শ্রমিকদের জন্য পানীয় ও পয়-নিস্কাশন ব্যবস্থা যথাযথ করার জন্যে ফ্যাকক্টরীতে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. গার্মেন্ট শিল্প এলাকায় অবস্থিত সরকারী চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে ওষুধসহ সকল ধরণের রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
৬. গার্মেন্ট কারখানায় দুর্ঘটনার পর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে এবং যতোদিন এই শ্রমিক সুস্থ হয় ততদিন বিনা পয়াসায় তার চিকিৎসা চালিয়ে যাবার বরাদ্দ থাকতে হবে।
কোন দেশ উন্নত হয়েছে কিনা তার মানদন্ড হচ্ছে সকল শ্রেণীর মানুষে স্বাস্থ্য সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা। বাংলাদেশের ধনীদের জন্যে বড় বড় হাসপাতাল থাকলেও তারাও বিদেশ যাচ্ছেন চিকিৎসার জন্যে। এবং দেশের অর্থ বিদেশে চলে যাচ্ছে। দেশের স্বাস্থ্য সেবা উন্নত করলে এই অর্থ রক্ষা পেতো। বাংলাদেশে উন্নয়ন হচ্ছে কিনা তার প্রমাণ দিতে হলে ডিজিটাল ও প্রযুক্তি নির্ভর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নয়, উন্নত ও দক্ষ জনবল এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত হলেই বলা যাবে এ দেশ সুখী দেশ। কারণ স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।