ব্যর্থ বিকৃত বীজ (জিএমও) বিটি বেগুন কৃষকের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে
উবিনীগ ও নয়াকৃষি আন্দোলন || Monday 25 February 2019 ||বাংলাদেশে প্রথম বিতর্কিত বিকৃত বীজের (Genetically Modified Transgenic Organism) খাদ্য ফসল বিটি বেগুন কৃষক পর্যায়ে চাষের জন্য সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র পায় অক্টোবর, ২০১৩ সালে এবং কৃষকের হাতে চারা তুলে দেয়া হয় ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে। পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং অন্যান্য বৈজ্ঞানিক অনিশ্চয়তার কারণে ভারত ও ফিলিপাইনে এই বেগুন কোন অনুমোদন পায়নি, বাংলাদেশেও বিজ্ঞানী, পরিবেশ কর্মী ও কৃষক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা তুলে ধরে প্রতিবাদ করা হয়েছিল, এমন কি কোর্টেও মামলা হয়েছিল। কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে বহুজাতিক মার্কিন কোম্পানি মনসান্তো এবং ভারতের কোম্পানি মাহিকো বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (BARI)-এর মাধ্যমে এই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ এই ফসল পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির দিক থেকে শুধু বিতর্কিতই নয়, কৃষক পর্যায়ে চাষে সফলতা দেখাতেও চরম ব্যর্থ হয়েছে। বিটি বেগুনকে জিএমও বলে মূলত এর বিকৃত বৈশিষ্ট্যকে (transgenic) আড়াল করা হয়। বীজের স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক ‘জিন’ বা গঠন সংকেতের পরিবর্তন নয়, বরং ভিন্ন প্রজাতির জিন প্রবিষ্ট করবার ফলে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের মারাত্মক ঝুঁকির সম্ভাবনা তৈরি হয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই ধরণের বীজ প্রবর্তনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম ও বিধিনিষেধ রয়েছে। সেই সকল বৈজ্ঞানিক ও আইনী সতর্কতা বাংলাদেশে বিটিবেগুন প্রবর্তনের ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না।
ব্যাসিলাস থুরিনজেনেসিস (Bacillus Thuringeniesis সংক্ষেপে বিটি) ব্যাকটেরিয়া থেকে ক্রিস্টাল জিন বেগুনে সংযোজন করে ডগা ও ফল ছিদ্রকারি পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্যে জেনেটিক ইঞ্জিনীয়ারিং করা হয়েছে বাংলাদেশের নয়টি স্থানীয় জাতের বেগুনের ওপর। এর মধ্যে বিটি বেগুনের চারটি জাত, বিটি বেগুন ১ (উত্তরা), বিটি বেগুন ২ (কাজলা), বিটি বেগুন ৩ (নয়নতারা) এবং বিটি বেগুন ৪ (ISD 006) ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত প্রতিবছর টার্গেট করে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ (DAE)-এর মাধ্যমে শীতকালীন ফসল হিশেবে কৃষকদের দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি উৎপাদনের জন্যে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা দেয়া হচ্ছে, কারিগরিভাবেও তাদের চাষ করার পদ্ধতি শিখিয়ে দেয়া হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় নিজ নিজ এলাকার জাতের বেগুন কৃষক চাষ করেন। এ নিয়ে তাঁদের যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে। কিন্তু তাদের কাছে বিটি বেগুন পরিচিত নয়, এর চাষ পদ্ধতিও তাদের অজানা।
প্রথমবারে ২০১৪ সালে মাত্র ২০ জন কৃষককে দেয়া হয়েছিল, কিন্তু ১৭ জন কৃষকই বলেছিলেন তাঁদের ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। তাঁরা সরাসরি বারি’র মহাপরিচালকের কাছে ক্ষতি পুরণ দাবি করেছিলেন। দ্বিতীয় বারে ২০১৪-১৫ এর বোরো মৌসুমের শুরুতে ১০৬ জন কৃষককে দেয়া হয়েছিল। এই কৃষকদের একটি তালিকা ছিল যেখানে কৃষকদের নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর পাওয়া গিয়েছিল। উবিনীগ সেই তালিকা ধরে মৌসুম শেষে ২০১৫ সালে ৭৯ জন কৃষকের সাক্ষাতকার নিয়েছিল এবং এতে দেখা গিয়েছিল কৃষকের ওপর চাপিয়ে দেয়া এই বেগুন চাষ করে অধিংকাংশ কৃষক ক্ষতির শিকার হয়েছেন; যেসব অপ্রমাণিত দাবি্র ভিত্তিতে এই বেগুন তাদের দেয়া হয়েছিল তার সত্যতা পাওয়া যায় নি।
বিটি বেগুন কৃষকদের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলেও মনসান্তো এবং তাদের ভাড়া করা ‘“বিজ্ঞানী’ ও প্রপাগান্ডাওয়ালারা থেমে নেই। সেই সব ‘বিজ্ঞানী’ ও ‘সাংবাদিক’ বাংলাদেশে এসে নানারকম ‘গবেষণা’ করে মিথ্যাচার করে বলছেন বাংলাদেশে বিটি বেগুন নাকি সফল হয়েছে! বিভিন্ন এলাকায় গুটি কয় কৃষককে নানা ধরণের সহায়তা দিয়ে ও মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিদেশি সাংবাদিকদের দিয়ে তাদের সাক্ষাতকার দিয়ে দেখাচ্ছে যে সব কৃষকেরই চাষ সফল হয়েছে।
আসলে এই দাবি ডাহা মিথ্যা। ২০১৭ পর্যন্ত প্রায় ৬৫০০ কৃষককে ভাল ভাল কথা বলে এই বীজ বা চারা দেয়া হয়েছে। তার অর্থ এই নয় যে এই কৃষকরা স্বেচ্ছায় এই চারা নিয়ে চাষ করেছেন এবং লাভবান হয়েছেন। এখন দাবি করা হচ্ছে বাংলাদেশে ২৭,০০০ কৃষক বিটি বেগুন চাষ করছেন এবং ৬১% কীটনাশক ব্যবহার কমে গেছে। এই দাবির পক্ষে কোন সুনির্দিষ্ট নিরপেক্ষ গবেষণা নাই, দাবির ভিত্তি কি আমরা জানি না, তবে উবিনীগ (গত ডিসেম্বর, ২০১৮ থেকে জানুয়ারি ২০১৯) ১৯ টি জেলার ৪৮ জন কৃষকের সাথে কথা বলে তাদের কাছে বিটি বেগুনের গ্রহণ যোগ্যতা কেমন জানার জন্য তথ্য সংগ্রহ করেছে। এই ছোট গবেষণার কিছু ফলাফল এখানে তুলে ধরা হচ্ছেঃ
১। ৪৮ জন কৃষককে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ (DAE) এর স্থানীয় অফিস কিংবা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (BARI) এর কর্মকর্তারা চারটি বিটি বেগুনের চারা দিয়েছেন: বিটি বেগুন ১ (উত্তরা), বিটি বেগুন ২ (কাজলা), বিটি বেগুন ৩ (নয়নতারা) এবং বিটি বেগুন ৪ (ISD 006) জাত দিয়েছেন।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একজন কৃষককে দুটি জাত, বিশেষ করে বিটি বেগুন ২ (কাজলা), বিটি বেগুন ৩ (নয়নতারা) এবং তার সাথে এই বেগুনের স্থানীয় জাত কাজলা ও নয়ন তারা দেয়া হয়েছে জমির চার পাশে লাগানোর জন্যে।
জিএম ফসলের পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবেলায় এইভাবে মাঠের চারপাশে দিতে হয়। এবং অনুমোদনের অন্যতম একটি শর্ত Border and Row management হিশাবে তা করার কথা।
কোন কৃষককেই জানানো হয় নি যে এই বেগুনের চারা গুলি জিএমও এবং সে কারণে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। তবে তাদের জমিতে Border-row management এর জন্যে নন-বিটি জাত বা স্থানীয় জাতের কাজলা ও নয়নতারা দেয়া হয় এবং কৃষি কর্মকর্তার সরাসরি তত্ত্বাবধানে ৯৪% কৃষক এই পদ্ধতি পালন করেন। এক চারা থেকে অন্য চারার দূরত্ব ৮০ সেন্টিমিটার হওয়ার কথা, সেটা প্রায় ৬১ সেন্টিমিটার রাখেন ৬৮% কৃষক। কোন কোন ক্ষেত্রে এই দূরত্ব ছিল ৩০.৪৮ সেন্টি মিটার।
২। বিটি বেগুন চাষের জন্যে যাদের ২০১৪-১৫ সাল থেকে সম্পৃক্ত করা হয়েছিল তাদের মধ্যে মাত্র ১৩ জন পরের বছর (২০১৫-১৬) তে চারা নিয়েছিলেন, ৫ জন ২০১৬-১৭ তে নিয়েছিলেন এবং মাত্র ৩ জন ২০১৭-১৮ তে নিয়েছেন। ক্রমে কৃষক আগ্রহ হারিয়েছেন। সব মিলিয়ে ৭৩% কৃষক আর বিটি বেগুন চাষ করার কোন আগ্রহ প্রকাশ করেন নি।
৩। চারা বিতরণের জন্যে কৃষককে বেছে নেয়ার কারণের মধ্যে বেশির ভাগ (৮৭%) ছিল কৃষি কর্মকর্তার সাথে পরিচিত, এবং যেসব কৃষক নতুন জাত নিতে চান তাঁদের দেয়া হয়েছে (৮১%)।
৪। কৃষক নিজে কেন বিটি বেগুনের চারা নিতে রাজী হয়েছিলেন? দুটি কারণে: ১। বেশি লাভ হবে আশায় (৫৪%), ২। ফলন বেশি হবে (৫২%) । তাছাড়া বিনা পয়সায় বীজ, চারা পাওয়া (৩৫%), অন্যান্য উপকরণ পাওয়া (৩৭%), বাজারে দাম বেশি পাওয়া (৩১%) এবং কীটনাশক ব্যবহার লাগবে না (২৭%)। অর্থাৎ কীটনাশক ব্যবহার কম বা বেশি লাগবে কিনা কৃষকের কাছে তা প্রধান বিবেচ্য বিষয় ছিল না।
৫। অন্যদিকে, কৃষি কর্মকর্তা চারা দেয়ার সময় তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দিয়েছিলেন; ১। ডগা ও ফল ছিদ্রকারি পোকা লাগবে না (৭১%), ২। ফলন বেশি হবে (৬৮%) এবং ৩। বেশি লাভ হবে (৬৪%)। এর মধ্যে কৃষকের কাছে প্রথমটির চেয়েও পরের দুটিতে বেশি আগ্রহ ছিল। তাহলে যে কারণে বেগুনে জেনেটিক ইঞ্জিনীয়ারিং করা হয়েছে, তা কৃষকের কাছে মূখ্য নয়। তাহলে এই আগ্রহ কার জন্যে?
৬। কৃষককে জমির পরিমান অনুযায়ি ৩০০ থেকে ১০০০ চারা দেয়া হয়েছে, সাথে সার, কীটনাশক নগদ টাকা দেয়া হয়।
৭। সব কৃষক তাদের খরচের হিশাব দিতে পারেন নি, তবে ২৯ জন কৃষক যে আংশিক তথ্য দিয়েছেন তাতে দেখা যায় গড়ে তাদের খরচ হয়েছে প্রায় ১১০০০ টাকা, এবং সর্বনিম্ন ৫০০০ টাকা, সর্বোচ্চ ২০,০০০ টাকা।
৮। মাত্র ৫ জন কৃষক বিটি বেগুন চাষ করে লাভ হয়েছে জানিয়েছেন, গড়ে লাভ ৬৫০০ টাকা। অন্যদিকে ২৮ জন কৃষক বলেছেন তাদের ক্ষতি হয়েছে, ক্ষতির পরিমাণ গড়ে ১৮৭৫০ টাকা। লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ বেশি, এবং বেশি সংখ্যক কৃষকের ক্ষতি হয়েছে।
৯। সব মিলিয়ে বিটি বেগুন চাষ করে সন্তুষ্ট হয়েছেন মাত্র ২২% কৃষক, কিন্তু ৬৬% কৃষক তাদের খুব খারাপ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। যেসব কৃষক কৃষি কর্মকর্তার সরাসরি সহযোগিতা পেয়েছেন তাদের অভিজ্ঞতা ভাল, কিন্তু যারা পান নি তাদের অভিজ্ঞতা খারাপ। তাঁদের বেগুন ফসল ভাল হয় নি, বেগুন ঠিক মতো ধরে নি, গাছেই পচে গেছে। তাদের অভিযোগ কৃষি কর্মকর্তারা এই সব ক্ষেত্রে তাদের কোন প্রকার সহায়তা দেন নি। দেখাও মেলেনি।
গবেষণার ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, কৃষকের অভিজ্ঞতা ভাল নয় এবং সার্বিক বিবেচনায় বোঝা যাচ্ছে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জিএমও ফসল খোলা মাঠে চাষের জন্য দেয়ার মতো নিরাপদ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারেন নি। জিএমও ফসল চাষের ফলে সেখানে কোন ধরণের পরিবেশ ক্ষতি, অন্যান্য ফসলে সংক্রমণ বা দূষণ, মাটির ক্ষতি ইত্যাদি নিয়ে কোন মূল্যায়ন করা হয় নি। অথচ ২০১৩ সালে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল কমিটি অন বায়োসেফটি (NCB) বিটি বেগুনের মাঠ পর্যায়ের চাষের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে যে অনুমোদন দিয়েছিল তাতে ৭টি শর্তের মধ্যে তৃতীয় শর্ত ছিল “ যে সকল স্থানে সীমিত চাষাবাদ করা হবে তার বায়োসেফটি মেজার্স (Biosafety measures) মনিটরিং এ সংশ্লিষ্ট অধিক্ষেত্রের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তা, বিএআরআই গবেষণা কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক, পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তা সমন্বয়ে ফিল্ড বায়োসেফটি কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা বিএআর আই কর্তৃক এনসিবি বরাবরে প্রেরণ করতে হবে”। অথচ আজ পর্যন্ত এমন কোন কমিটি হয়েছে কিনা বা তার কার্যক্রম সম্পর্কে কিছু জানা যায় নি। কৃষকরা এ ব্যাপারে কিছু জানেন না। আমাদের প্রশ্ন, এসব পরীক্ষা ছাড়াই কি করে সীমিত চাষাবাদ থেকে এখন হাজার হাজার কৃষকের মাঝে (দাবি করা হচ্ছে ২৭,০০০) কোন মনিটরিং ছাড়াই চারা দেয়া হচ্ছে! এটা কি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে দেখার বিষয় ছিল না?
অনুমোদনের ৬ নম্বর শর্ত ছিল “বায়োসেফটি রুলস এর আওতায় বিটি বেগুন যাতে লেবেলিং বজায় রেখে বাজারজাত করা হয় লক্ষ্যে আবেদনকারিকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহম করতে হবে”। অথচ কৃষকদের এই ব্যপারে কোন সহায়তার কথা শোনা যায় নি। বিটি বেগুন লেবেল লাগাতে হবে এ কথা কৃষক শোনেন নি। বিটি বেগুন বাজারে কোন প্রকার লেবেল ছাড়াই বিক্রি করা হচ্ছে। পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির দায় দায়িত্ব সরকার কিভাবে এড়াবেন? এই শর্ত শুধু কৃষকের দিক থেকেই নয়, ভোক্তার দিক থেকেও গুরুত্বপুর্ণ। সারা পৃথিবীতে যারা জিএম খাদ্য কিনছেন তারা লেবেল দেখে জেনে শুনে কিনছেন। বাংলাদেশের মানুষের জানার অধিকার আছে তারা বাজারে যে বেগুন কিনছেন তার মধ্যে কোনটি বিটি বেগুন বা জিএমও?
বিটি বেগুন প্রবর্তনের ক্ষেত্রে প্রধান দাবি ছিল কীটনাশকের ব্যবহার না করা। বলা হয়েছিল ব্যাসিলাস থুরিনজেনেসিস (Bacillus Thuringeniesis সংক্ষেপে বিটি) ব্যাকটেরিয়া থেকে ক্রিস্টাল জিন বেগুনে সংযোজন করে ডগা ও ফল ছিদ্রকারি পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। জেনেটিক ইঞ্জিনীয়ারিং এর মাধ্যমে বেগুন গাছকে বিষাক্ত উদ্ভিদে পরিণত করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে চাষে ডগা ও ফল ছিদ্রকারি পোকা প্রতিরোধ কতটা হয়েছে তা এখনো দেখার বিষয়। কিন্তু বেগুনে শুধু এক ধরণের পোকা লাগে না, পাতা ও গাছে আরও অনেক পোকা লাগে। এই গবেষনায় দেখা গেছে, কৃষকের ভাষায়, বেগুন গাছের পাতা কুকড়ে গিয়েছিল, বেগুনে পচন ধরেছিল, চারা মরেছিল, ছত্রাক লেগেছিল, গাছের শিকড় হলুদ হয়ে গিয়েছিল। এবং সে সব দমনের জন্যে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শেই কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছে। যেসব কীটনাশক ব্যবহার করেছেন বলে কৃষক জানিয়েছেন তা হচ্ছে এডমার, ফোরাজং, একতারা, রিজেন্ট, এমিস্টা, সায়োনেট, ল্যাকেড, ভারাটমেক, কনফিড্র, ইমিটাব ইত্যাদী। এই নামগুলো কৃষক যা বলেছেন তাই লেখা হয়েছে। মোট কথা হচ্ছে, কীটনাশক কমার যে দাবি বিটি বেগুনের ক্ষেত্রে করা হয় তা সত্যি নয়। বারি থেকে প্রকাশিত ‘বিটি বেগুনের জাত উদ্ভাবন ও উৎপাদন প্রযুক্তি’ শীর্ষক চটি বইয়ে পাতার হপার পোকা, ইপিল্যাকনা বিটল দমনের জন্যে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি, লাল মাকড় দমনের জন্য মাকড়সা নাশক ওমাইট ৫৭, কান্ড পচা ও ফল পচা জন্যে ব্যাভিস্টন/নোইন ছত্রাক নাশক স্প্রে করার পরামর্শ ছাপার অক্ষরে দেয়া হয়েছে। কিছু কৃষক এসব রোগের আক্রমণে বিরক্ত হয়ে বলেছেন “ইচ্ছে মতো বিষ দিয়েছি”।
কাজেই বিটি বেগুন আদৌ কীটনাশক মুক্ত নয় এবং কৃষক পর্যায়ে এর গ্রহণযোগ্যতা নেই। যারা নিচ্ছে তারা কৃষি অধিদপ্তরের দেয়া সার-কীটনাশক-বীজ ও নগদ টাকার জন্যে নিচ্ছেন। কেউ মিথ্যে আশ্বাসে বিশ্বাস করে নিচ্ছেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, যে কৃষক এক বার চাষ করেছেন তারা নিজের ইচ্ছায় পুণরায় চাষ করতে চান নাই। এটা তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। সকল উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও অনেকটা বাধ্য হয়ে দিচ্ছেন কারণ তাদেরকে ওয়ার্ড প্রতি কমপক্ষে ২ জন কৃষককে চারা বিতরণের টার্গেট বেঁধে দেয়া হয়েছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসুচির আওতায় জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিতরণের মতো। এই ‘দুইজন কৃষক’ পেতেও তাদের হিমশিম খেতে হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বিটি বেগুন ২ এবং বিটি বেগুন ৩ যারা করেছেন তারা জানিয়েছেন যে এই বেগুন কাল হয়ে যায়। অন্যান্য বেগুন যেমন দুএকদিন সতেজ থাকে বিটি বেগুন একদিনে বাজারে নিলে এগুলো মরা মরা হয়ে যায়, চিমসে যায়। এবং ক্রেতারা দেখে কিনতে চান না।
ডাহা মিথ্যা দাবি করে বিটি বেগুনের সফলতা দেখিয়ে বাংলাদেশের কৃষককে বিভ্রান্ত করা যাবে না। সরকারের কাছে আমাদের আহবান বহুজাতিক কোম্পানি নিজ স্বার্থে যা করছে, তার কাছে আমাদের কৃষক, পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যকে বিসর্জন দেবেন না। কৃষকের ওপর বিটি বেগুন চাপিয়ে দেয়া বন্ধ করুন।