শ্রীপুর ও ধীতপুর গ্রামে ছটকার কারণে নদী ভাঙ্গন ৯৫ ভাগ রক্ষা পেয়েছে
আল আমিন সরকার || Sunday 23 July 2017 ||সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতনী ইউনিয়নের বানতিয়ার, শ্রীপুর ও ধীতপুর গ্রামে উবিনীগ নয়াকৃষি আন্দোলন থেকে যে বাঁশের ছটকা গুলো দেওয়া হয়েছে তা বানতিয়ার বাজার বানতিয়ার উচ্চ বিদ্যালয়, বানতিয়ার গ্রাম ৯৫ ভাগ রক্ষা পেয়েছে। বিগত বছরগুলোকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় নদী ভাঙ্গন এর কারণে গ্রামের মানুষ তাদের সহায় সম্পত্তি ঘর বাড়ী হারিয়েছে। শত শত একর আবাদি জমি চলে গেছে নদী গর্ভে। ক্ষেতের ফসল এবং পাট তিলসহ ধানের বিপুল পরিমাণ জমি নদীতে চলে গেছে। কিন্তু আমাদের একটি সুভাগ্য গত কয়েক মাস আগে যে বাঁশের ছটকা স্থাপন করা হয়েছে সেটি বর্ষার পানিতে ছটকার আশে পাশে পলি মাটি জমাট বাঁধছে এবং বাঁশের সাথে বিভিন্ন আগাছা জমেছে। যার ফলে নদী ভাঙ্গন ৯৫% ভাগ রক্ষা পেয়েছে। ধীতপুর ও শ্রীপুর গ্রামে বন্যার প্রবল স্রোতের কারনে ছটকা কিছুটা ক্ষতি গ্রস্থ হয় কিন্তু গ্রামবাসীর প্রচেষ্টার ফলে ছটকা মেরামত করে আবার পুনঃস্থাপন করা হয়। আবার কিছু জায়গায় ভাঙ্গন রোধে ছটকা পুনস্থাপন করতে হয়েছে। ধীতপুরে ছটকার অপর পাশে গ্রামে কিছুটা ভাঙ্গন ধরেছে যা ইতি মধ্যে সরকারী লোকজন প্রত্যক্ষ করে গেছে। এ বছর প্রবল ব্ন্যার কারনে ছটকার উপর দিয়েও বন্যার পানি প্রবাহিত হয়েছে বর্তমানে পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যা পরবর্তীতে দেখা যাবে ছটকার সামনে ও পিছনে কি পরিমান পলি জুমে চর সৃষ্টি হয়েছে।
তাই উবিনীগের কাছে সোনাতনী ইউনিয়নবাসীর দাবী পরবর্তীতে বাঁশের ছটকা আরও বেশি করে দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
বাংলাদেশে বন্যা কবলিত জেলা গুলোর মধ্যে সিরাজ গঙ্জ অন্যতম। প্রতি বছরই বন্যায় প্লাবিত হয় এই জেলার বেশীর ভাগ গ্রাম গুলো। আর এ বছর তো সারা বাংলাদেশে বন্যা দূর্য়োগ আকারে দেখা দিয়েছ্। জেলা ও উপজেলা শহর থেকে সম্পূর্ন বিচ্ছিন্ন যমুনা নদীর মাঝখানে অবস্থিত সোনাতনী ইউনিয়নবাসীর পাশে দাড়াবার আকুল প্রত্যাশা করছেন ইউনিয়নের কৃষক সহ সব শ্রেনীর জনগণ।
বন্যার কারণ: মৌসুমী বায়ু দ্বারা প্রবাহিত প্রাকৃতিক দূর্যোগের শিকার বাংলাদেশ নদী অববাহিকতায় অবস্থিত। এদেশের দক্ষিণে অবস্থিত বঙ্গোপসাগর, উত্তরাঞ্চলে হিমালয় পর্বত। গ্রামের অনেকেই মত প্রকাশ করেছে যে, বাংলাদেশে বিগত বছরগুলোতে যত বন্যা হয়েছে তার অধিকাংশ প্রত্যক্ষ কারণ বাইরের নদীগুলো দ্বারা প্রবাহিত পানির ঢল। এছাড়া বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত ও হিমালয়ের বরফগলা পানির আধিক্য বন্যার সৃষ্টি করে।
প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা আমাদের জীবনকে দুর্বিসহ করে বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি করে। ভয়াবহতার কারণে বিশ্বে এদেশ বন্যার দেশ হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। বন্যার কারণে বর্তমান যে সমস্যা দেখা যাচ্ছে তা হলো পানি নদ-নদী, খাল-বিল, ডোবা, নালা, মাঠ প্রান্তর থেকে গ্রামে প্রবেশ করছে। ফলে মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে, বাধ্য হয়ে মানুষ নৌকায় ও কলার ভুড়াও চলাচল করছে। সোনাতনী ও আশে পাশের ইউনিয়নগুলোর বন্যার পানির কারণে মানুষের কষ্টের শেষ নেই। একদিকে বন্যার পানি অন্য দিকে বৃষ্টির পানি হওয়ার কারণে মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণীর জীবন যাপন অতি কষ্টকর হয়েছে।
বন্যা মোকাবেলার উপায়: বন্যার কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন ব্যাহত হচ্ছে। বন্যার কারণে নৌকায় করে, কলার ভুড়ায় পাড়াপাড় হচ্ছে। পড়ালেখা করার জন্য ছেলে/মেয়েরা স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় যেতে পারছে না। কেউ কেউ অতি কষ্ট করে নৌকায় পাড় হয়ে যায়। হাট-বাজারে যাওয়ার জন্য নৌকা ছাড়া কোন উপায় নাই।
বন্যার কারণে গরু-ছাগল, ভেড়া, মুরগী, কবুতর এদের চলাচল ও খাদ্যের অনেক কষ্ট হচ্ছে। গরু মাঠে নেমে ঘাস খেতে পারছে না। গরুর জন্য বাড়ীর আশে পাশে উচু জায়গায় খড়ের পালা রাখা হয়েছে। এছাড়া ছাগল, ভেড়ার জন্য বিভিন্ন গাছের পাতা, ডাল খাওয়ানো হচ্ছে। যেমন- ধুমচা গাছের পাতা, পাটের পাতা, কলার পাতা ইত্যাদি খাওয়ায়ে জীবন বাঁচানো হচ্ছে।
মুরগী ও কবুতরগুলো বাড়ীর নিচে নামতে পারছে না বন্যার পানির কারণে মুরগী ও কবুতর গুলোকে চাউল, গম, কাউন ইত্যাদি খাদ্য দিয়ে জীবন বাঁচানো হচ্ছে। বাড়ীর আশে পাশে সাপ বিচ্ছু এর আক্রমন দেখা যাচ্ছে, এমনি ভাবে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে বন্যার সাথে মোকাবেলা করা হচ্ছে।
কৃষকের ক্ষতি: বন্যার কারণে অনেক ফসলের ক্ষতি হয়েছে। যেমন, বাদাম, তিল, ধান, কাউন, পাট ইত্যাদি। বন্যার কারণে আবাদি জমির তিল অনেক ক্ষতি হয়েছে, কিছু কিছু জমিতে বন্যার পানির কারণে তিল, কাউন, পাট, ধান তলিয়ে গেছে। শ্রীপুর, সোনাতনী, ছোট চামতারা গ্রামে অনেক আমন ধান লালঢেপা, দিঘা, হিজলদিঘা, সাদা ঢেপা তলিয়ে গেছে। তবে বকঝুল, কার্তিকঝুল, দিঘা ধান এখনও টিকে আছে। বাড়ির পালানের সবজিরও অনেক ক্ষতি হয়েছে। যেমন, চালকুমড়া, লাউ, ধুন্দুল, উসি, পটল, শসা গাছ। এসব সব্জি গাছগুলো বন্যার কারণে পানিতে তলিয়ে গেছে। মাঠে আবাদ করা শসা, ডাঁটা, মিষ্টিকুমড়া বন্যায় তলিয়ে গেছে। ফলে মানুষের তরকারির অভাব আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। নদী ভাঙ্গনের কারনে কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। ফলে জমিতে আবাদ করা তিল, কাউন, ধান, বাদাম নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। শিশুদের রোগ-ব্যাধি এবং স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলে/মেয়েদের দুর্ভোগ সবচেয়ে বেশি।
অপকারিতা: ঘন ঘন বৃষ্টিপাত হলে লোকজন কাজ করতে পারে না। কাজ কর্ম না করায় গরীব লোকদের কষ্টের শেষ নেই। এই সময় গ্রামের পথ ঘাট কর্দমাক্ত হয়। লোকজনের যাতায়াত ও মালামাল আনা নেওয়ার খুবই অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। বন্যার শেষে অনেক ধরণের রোগ কলেরা, আমাশা, প্রভৃতি জলবাহিত রোগ দেখা দেয়। বন্যার কারণে যে সব গ্রামে পর্যাপ্ত পরিমানে নলকুপ নেই, সেই সব স্থানে পানির কষ্ট দেখা যাচ্ছে। বন্যার কারণে ধীতপুর গ্রামে নদী ভাঙ্গন এর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই গৃহহারা হয়েছে। নদী ভাঙ্গন দেখার জন্য শাহজাদপুর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসে দুঃখ প্রকাশ করেছে এবং গত ১০/০৭/২০১৭ তারিখে তিনি ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদেরকে ২০০/= টাকা করে প্রদান করেছেন।
বন্যার পর কৃষি জমির পদক্ষেপ: বন্যার পর কৃষকরা কৃষি জমিতে বিভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন ফসল চাষ করবে। যেমনঃ কাদা বা পলি মাটিতে চাষ ছাড়া মাস কালাই, খেসারী কালাই রোপন করবে। এছাড়া গরুর লাঙ্গল, পাওয়ার টিলার দিয়ে জমিতে রাই, সরিষা পিয়াজ, রসুন চাষ করবে। গ্রামের অনেকেই ধারণা করছে যে, আমরা নয়া কৃষি এর নিয়ম নীতি নিয়ে বন্যার পর আমরা জমিতে আবাদ করব এবং নয়া কৃষির যে ১০টি নীতি আছে আমরা সে নীতি মেনে চলবো।
সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতনী ইউনিয়ন এর বন্যা উপর প্রতিবেদন।
মূল প্রতিবেদক : আল আমিন সরকার
শ্রীপুর সোনাতনী থেকে।
সহযোগিতায়: রবিউল ইসলাম চুন্নুুু ও ফাহিমা খাতুন লিজা ।