জলবায়ু পরিবর্তনঃ বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাসঃ খরায় নয়, বৃষ্টিতে ফসল এলোমেলো
আজমিরা খাতুন || Tuesday 25 July 2017 ||পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলায় একটি গ্রাম পাড়াসিধাই। নয়াকৃষির কৃষক কামাল হোসেনের বাড়ীতে একটি বৈঠক বসে। উবিনীগের গবেষক দলের সাথে আলোচনা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন কি কৃষকরা আদৌ বুঝতে পারছেন? তাদের ফসলের মধ্যে কোন কি পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে? নয়াকৃষির কৃষকরা মৌসুমের পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে ফসল পরিকল্পনা করেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে গেলে বিকল্প ফসলের চিন্তাও তাদের থাকে। এই সভা অনুষ্ঠিত হয় ৩রা শ্রাবণ, ১৪২৪ ( ১৮ জুলাই, ২০১৭) । এতে অংশগ্রহণ করেন ২৯ জন নারী (১৬) ও পুরুষ (১৩) কৃষক। তাঁরা বৈশাখ থেকে আষাঢ় মাস পর্যন্ত মৌসুমের তারতম্য পর্যবেক্ষণ করেন।
এই এলাকা সাধারণত খরা প্রবণ। কৃষকরা খরা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্যে প্রস্তুত থাকেন। তবে এবার বৈশাখ থেকে আষাঢ় পর্যন্ত ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে।
বৈশাখ মাসঃ অন্য বছরের তুলনায় এই বছর বৈশাখ মাসটা আমাদের কাছে অন্য রকম ছিল। যেমন- বৈশাখ মাসে প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টি হয়েছে আর বৃষ্টি হওয়ার পর সাথে সাথে মাটিতে জো আসে। ফলে সাথে সাথে পাট বোনা হয়েছে। অন্য বছর বৈশাখ মাসে সেচ দিয়ে পাট বোনা হতো। যখন পাট বোনা হয় তখন মাঠে শসা, ঝিংগা, চিচিংগা, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, মরিচ, বেগুন, কলা, পেঁপে ছিল।
বৈশাখ মাসের ২য় সপ্তাহে এসে হঠাৎ করে প্রচুর শিলা বৃষ্টি হয়েছে। শিলা গুলো এবার অনেক বড় বড় ছিল। কৃষকরা বলেন,প্রথম সপ্তাহ বৃষ্টিতে যত উপকার হয়েছিল পরের সপ্তাহের শিলে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। মাঠের সবজি গুলো একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁরা আফসোস করে বলেন , ‘আমাদের তখন লোকসান হয়ে গেল’। কৃষকদের কাছে জনতে চাওয়া হয় ক্ষতি কিভাবে পূরণ করেছেন? কৃষকরা বলেন, আমরা আবার শসা, লাউ, ঝিংগা, অটো সীম রোপন করেছিলাম। তাতে আমাদের বেশি ক্ষতি হয়নি। শিলা বৃষ্টির কারণে গৃহপালিত পশু পাখিরও ক্ষতি হয়েছে, বিশেষ করে হাঁস মুরগী, গরু ছাগলের। হাঁস মুরগী মরেছে শিলার আঘাতে। আর গরু ছাগল মরেছে পরের দিন। মাঠে যে ঘাস ছিল তাতে শিলার পানির কারণে ঠান্ডা ছিল। সেই ঠান্ডা পানি সহ ঘাস খেয়ে গরু ছাগল পি পি আর রোগ হয়ে কিছু ছাগল গরু মারা গেছে। এছাড়া বৈশাখ মাস গেছে বৃষ্টি ও খরায়। তবে খরায় কোন ক্ষতি হয়নি।
জৈষ্ঠ্য মাসঃ এই মাসটায় যখন বৃষ্টি হয়েছে ২-৩ দিন বৃষ্টি হয়েছে আবার যখন খরা হয়েছে ৩-৪ দিন খরা হয়েছে। এই খরা ও বৃষ্টি মিলে মাসটা ছিল শাক সবজি চাষের জন্য অনেক ভাল আবহাওয়া। বিশেষ করে শসায় অনেক লাভ হয়েছে।
আষাঢ় মাসঃ অন্য বছরের তুলনায় এই বছরের একটু আলাদা লেগেছে। আষাঢ় মাসে শুরু থেকে খরা একভাবে ১৫-২০ দিন হয়েছে। মাঝে মাঝে হালকা বৃষ্টি হয়েছে তাতে ফসলের কোন লাভ হয়নি। বরং খরার কারণে পাটের মাথা পুরে গেছে, পাট চিকন হয়ে গেছে। অন্য বছরে পাট বিঘায় ১২-১৩ মণ হতো এবার কৃষকের ধারণা ৮-১০ মণ হবে। মাঝে যে শাক সবজি ছিল তা খরায় লাল হয়ে গেছে। ফুল পরে গেছে। ফল ধরছেনা। ফল ধরলেও অনেক কম। আষাঢ় মাসের শেষের দিকে একটানা ৮-১০ দিন ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টির কারণে বাকী শাক সবজির গাছ মারা গেছে। কিছু উচু জায়গায় শাক সবজি আছে। যেমন অটো সীমের গাছের গোড়া উঁচু ঢিপি করার কারণে গাছ মারা যায়নি। একটু গোড়ায় পচন ধরার ভাব দেখে কৃষকরা সীমের গাছের গোড়ায় আবার নতুন করে মাটি ও চুন দিয়েছে। তাতে সীমের গাছের গোড়ার সমস্যা কেটে গেছে।
শ্রাবণ মাস- শ্রাবন মাসের শুরু থেকে এক সপ্তাহ ধরেও কৃষকরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেন। এই কয়দিনে খরা ও তার সাথে অনেক গরম। যে খরা ও গরম ভাদ্র মাসে পরে সেই খরা ও গরম এই বার শ্রাবন মাসে হচ্ছে।
কৃষকরা বলেন,এটা আবহাওয়া পরিবর্তণের কারণে হচ্ছে।