জিএসপি না পেলে কী অসুবিধা?
ফরিদা আখতার || Friday 01 December 2017 ||যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করেনি; ১২২টি দেশে এ সুবিধা পুনর্বহাল করা হয়েছে, বাংলাদেশ সেখানে বাদ পড়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশও পেয়েছে। জিএসপি (Generalised System of Preference) বা অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা মূলত স্বল্পোন্নত দেশের পণ্য ধনী দেশে আমদানির ক্ষেত্রে তাদের শুল্ক ছাড় দেয়া হয়, যা রফতানি আয়ের দিক থেকে অনেক সুবিধাজনক। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন এ সুবিধা পেয়েছে; কিন্তু ২০১৩ সালে তা স্থগিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার ২০১৫ সালে পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ সুবিধা নবায়ন করেনি। কেন করেনি তার কারণ হিসেবে জানিয়েছে, ২০১৩ সালে সুবিধা প্রত্যাহার করতে গিয়ে যেসব শর্ত দেয়া হয়েছিল, তা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। এ বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দিয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাট বলেছেন, শর্ত পূরণ হয়নি। এর মধ্যে কোনো রাজনীতি নেই। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ঘোষণা দিয়েছেন, ‘জিএসপির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া শর্ত পূরণের পরও তা পাওয়া গেল না। এ ব্যাপারে আর কোনো উদ্যোগ নিতে আমরা রাজি নই।’ একটি দেশের মন্ত্রী হয়ে অভিমান করে কথা বলা কতখানি ঠিক জানি না; কিন্তু দেশের উন্নয়নের জন্য যদি জিএসপি সুবিধা পাওয়া জরুরি হয় তাহলে শর্ত পূরণের চেষ্টা অবশ্যই করা উচিত। আর যদি তা না হয়, তাহলে এতদিনইবা কেন চেষ্টা করা হয়েছিল? আমরা কি কখনও বোঝার চেষ্টা করেছি, জিএসপি সুবিধা কোন পণ্যের জন্য এবং কার কাজে লাগে?
যতটুকু আমরা জিএসপির কথা জানি স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মূলত ইউরোপের বাজারে পণ্য প্রবেশের জন্য প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাকের জন্য পায়, যা রফতানি আয়ের জন্য খুব জরুরি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশ এ সুবিধা কখনোই পায়নি। যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রফতানির এ সুবিধা দেয়া হয়েছে তামাক, ক্রীড়া সরঞ্জাম, চিনামাটির তৈজসপত্র ও প্লাস্টিক সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্যের জন্য- তৈরি পোশাকের জন্য নয়। ২০১২ সালে জিএসপি সুবিধার আওতায় এসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ৩ কোটি ৪৭ লাখ ডলারে বিক্রি করে শুল্ক ছাড় পাওয়া গেছে ২০ লাখ ডলারের মতো। এখন জিএসপি সুবিধা নবায়ন না হওয়ায় যেসব পণ্য রফতানি করে লাভ কম হবে, তা কোনো ভালো পণ্য নয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে তামাক ও প্লাস্টিক সামগ্রী। বাংলাদেশ তামাক চাষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়াসহ ২০টি দেশে রফতানি করে ৩০ বিলিয়ন ডলার আয় করে। তামাক কোম্পানির আয়ের একটি অংশ মাত্র ভ্যাট আকারে সরকারের কাছে যায়, বাকিটা তামাক কোম্পানিগুলোই ভোগ করে। কাজেই তামাক রফতানি করে দেশের মানুষের কোনো লাভ নেই, বরং এর ফলে ক্ষতি অনেক বেশি। তামাক চাষ পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে সহজে উৎপাদন করা যায়। বাংলাদেশে এক একরে ২ হাজার ২০০ কেজি তামাক পাতা হয়, ভারতে হয় মাত্র ১ হাজার কেজি। পাতার মানও ভারতের চেয়ে অনেক ভালো। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি ও দেশীয় কোম্পানি যেমন ঢাকা টোব্যাকো, আবুল খায়ের, আকিজ গ্রুপ ইত্যাদি কোম্পানির সঙ্গে মার্কিন তামাক কোম্পানি ফিলিপ মরিসও জড়িত। বাংলাদেশ থেকে রফতানি করার ক্ষেত্রে রফতানি শুল্ক ১০ শতাংশ ছিল, যা ২০১১-১২ অর্থবছরে ৫ শতাংশ করা হয়। এতে তামাক কোম্পানিগুলো বেশি লাভবান হচ্ছে, একই সঙ্গে তারা যখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রেও সুবিধা পাচ্ছে, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। অথচ এ পণ্য বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো পণ্য নয়। একইভাবে প্লাস্টিক সামগ্রীও উৎপাদনের ক্ষেত্রে যেসব ঝুঁকি সৃষ্টি করে, এর সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের জীবনের জন্য ভালো নয়। গার্মেন্ট শিল্পের মতো খুব বড় সংখ্যক শ্রমিকও এর সঙ্গে যুক্ত নয়। আশ্চর্য যে, জিএসপি সুবিধা না পাওয়ায় এরা কেউ কথা বলছেন না, কথা বলছেন এবং উৎকণ্ঠিত হচ্ছেন একমাত্র গার্মেন্ট রফতানিকারকরা।
এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূতের মধ্যে যে ঠান্ডা লড়াই হচ্ছে, তাতে অন্য পণ্যের উৎপাদনের সমস্যার কথা নেই, আছে শুধু তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের অধিকার, নিরাপত্তা ও কর্মপরিবেশ ইত্যাদির কথা। মার্কিন রাষ্ট্রদূত তো একবারও বলেন না যে, তামাক রফতানি করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উৎকণ্ঠা আছে, কারণ তামাক চাষ পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং শিশুশ্রমের যথেচ্ছ ব্যবহার আছে! জিএসপি ফিরে পাওয়ার জন্য দেয়া তাদের শর্তের মধ্যে এসব পণ্যের উৎপাদনের পরিবেশ ভালো করার কোনো কথা নেই।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিতের কারণকে ‘রাজনৈতিক’ বলে মূল ইস্যুকে আড়াল করছেন। তিনি অনেকটা অভিমানের সুরে বলছেন, ‘যেখানে বারাক ওবামা নাইরোবি সফরে গিয়ে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছেন, সেখানে সামান্য জিএসপি না দেয়ার কোনো কারণ নেই। এটা না পেলে অবশ্য আমাদের তেমন কোনো ক্ষতিও হবে না’। আসলেই জিএসপি সুবিধা না দিলে যেসব পণ্যের বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাতে বাংলাদেশের তেমন ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাণিজ্যমন্ত্রী বেশি মর্মাহত হয়েছেন কারণ তিনি এতে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন। এবং ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব অপরিবর্তিত রয়েছে বলে মাঝে মাঝেই যেভাবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, তাতে বোঝা যায় মার্কিন সরকার এখনও বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের ওপর রাজনৈতিকভাবে আস্থা রাখছে না। এ কথা আমাদের সরকার খুব ভালো করেই জানে। তাই এ অভিমানের সুর! কারণ তারা জানেন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়নি। সরকার অভিমান দেখাচ্ছে, কাজের কথা কিছু বলছে না।
আমরা জানি, বাংলাদেশের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে ওবামা সরকার ২০১৩ সালের এপ্রিলে রানা প্লাজা ধসের দুই মাস পর জুনে বাংলাদেশের জন্য জিএসপি স্থগিত করে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দফতর (ইউএসটিআর) এ সিদ্ধান্তের কথা তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের সার্বিক শ্রম অধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে সরকারকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে পোশাক শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতে অগ্নি ও ভবন নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে; কিন্তু যথেষ্ট নয়। এ কথা ঠিক যে, রানা প্লাজা ধসের ঘটনা শুধু একটি দুর্ঘটনা ছিল না, এর সঙ্গে জড়িত ছিল শ্রমিক অধিকার ও নিরাপত্তা ইস্যুতে কারখানা মালিকের চরম গাফিলতি। এর আগে তাজরীন গার্মেন্টে আগুনের ঘটনাও আলোড়ন তুলেছিল। শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, অন্যান্য দেশের বাজারেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকে যেন পোড়া লাশের ছাই এবং চাপাপড়া শ্রমিকের রক্তের ছাপ লেগে গিয়েছিল। তবে বিদেশি ক্রেতারা এখন যা করছেন, তার সবটাই শ্রমিকের স্বার্থে করছেন বলে আমি মনে করি না। তারা নিজেদের মুখ রক্ষার জন্যই করছেন এবং এটাও তারা খুব ভালো করে জানেন এর চেয়ে সস্তায় তারা অন্য কোথাও তৈরি পোশাক পাবেন না। তাই শ্রমিকের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি করে তারা নিজেদের ব্র্যান্ডের বাজার ধরে রেখেছেন। তাদের শপিংমলগুলোতে যে ক্রেতা গিয়ে কাপড় কেনে সে যেন আশ্বস্ত হয়, এটাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে সব সময় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শুল্ক দিয়েই প্রবেশ করেছে। কাজেই জিএসপি ফিরে পেলেও তৈরি পোশাকের মার্কিন বাজারে প্রবেশের বাড়তি কোনো সুবিধা বয়ে আনত না। কিন্তু তৈরি পোশাক শিল্পের সমস্যাগুলোকেই বড় করে তুলে ধরে মার্কিন সরকার বাংলাদেশকে হাত মোচড়ানি দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের (ইউএসটিআর) মুখপাত্র মাইকেল ফ্রোম্যান বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার স্বীকৃত শ্রমিক অধিকার ও শ্রমিক নিরাপত্তা রক্ষার শর্ত মানতে ব্যর্থ হয়েছে। এবং এ কারণে ২০১৩ সালে ১ হাজার ২০০ শ্রমিকের প্রাণহানি ঘটেছে।
তবে সুবিধাটি ফিরে পেতে ওবামা সরকার কর্মপরিকল্পনার ১৬টি শর্ত দিয়ে দিয়েছিল। দেখা যাচ্ছে ২০১৫ সালে আবার পর্যালোচনায় বাংলাদেশ সেই শর্তগুলো ঠিকমতো পূরণ করতে পারেনি বলে নবায়ন হয়নি।
এদিকে রানা প্লাজা ও তাজরীনের দুর্ঘটনার পর আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের দুটি বড় জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকার, নিরাপত্তা ও কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার প্রশ্নে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের খবরদারিতে কমপ্লায়েন্সের নামে ছোট ছোট গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, বেকার হচ্ছে হাজার হাজার শ্রমিক। অ্যাকর্ড (ইউরোপের জোট) ও অ্যালায়েন্স (উত্তর আমেরিকার জোট), দুইটিই বড় বড় ফ্যাশন ব্র্যান্ড পোশাকের ক্রেতাদের জোট। তারা শ্রমিকদের স্বার্থে কাজ করছে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হলেও আসলে তারা চায়, তাদের ব্র্যান্ডগুলোতে কোনো দাগ না লাগুক। তাদের শর্ত পূরণ করতে গিয়ে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে অন্য শ্রমিকদের চাকরি গেলেও তাদের কিছু যায় আসে না। তারা ৫ বছরের পরিকল্পনা হাতে নিয়ে এসেছে এবং অনেক গার্মেন্ট শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি কাজ করছে। তাদের নিয়ম মেনে চলাকে তারা নাম দিয়েছে কমপ্লায়েন্স, অথচ এভাবে কোনো বাইরের সংগঠন এসে খবরদারি করতে পারে কিনা, সরকার সে বিষয়ে কোনো কথা বলছে না, কারণ সরকারের দুর্বলতা রয়েছে। তারা আসলেই শ্রমিকের মজুরি দেয়া, ওভারটাইম দেয়া, শ্রমিকের স্বার্থরক্ষার জন্য যা করা দরকার তা করছে না। এবার ঈদের আগেও দেখলাম শ্রমিকরা ফুটপাতে ঈদের দিন কাটিয়েছে বেতন-বোনাসের দাবিতে। তাজরীন ও রানা প্লাজার ঘটনায় দোষীদের রক্ষার চেষ্টা করেছে সরকার। শ্রমিকের পক্ষে সরকার কাজ করছে না বলে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের মতো বিদেশি ব্র্যান্ড জোট বেঁধে এভাবে খবরদারি করছে। এর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে নৈতিক মনোবল সরকারের নেই। শ্রমিকদের অধিকারের প্রশ্নে আন্তরিক হলে সব সমস্যা সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করা যেত। বাণিজ্যমন্ত্রী জোর দিয়ে বলতে পারছেন না, আমাদের শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা আমরা অবশ্যই করব।
জিএসপি সুবিধা তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হলেও বাংলাদেশকে নবায়ন না করার পরপরই মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাটের সঙ্গে ১০টি দেশের কূটনীতিকরা গাজীপুরে তিনটি তৈরি পোশাক কারখানা পরিদর্শন করে একেবারে অভিভূত হয়ে পড়েন। এর মধ্যে ছিলেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ), কানাডা, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, ব্রাজিল ও ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ও চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স। অর্থাৎ উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিকরাই ছিলেন। তারা গেছেন গাজীপুরে দুটি গ্রুপের তিনটি কমপ্লায়েন্টে বা উন্নত কর্মপরিবেশসম্পন্ন তৈরি পোশাক কারখানায়। যেখানে এইচ অ্যান্ড এম, জেসি পেনি, টেসকো, নেক্সটসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত ব্র্যান্ডের জন্য পোশাক তৈরি করা হয়। এর মধ্যে একটি কারখানা ইউটাহ ফ্যাশনে ৪ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। বছরে তাদের রফতানির পরিমাণ সাড়ে ৩ কোটি মার্কিন ডলার (প্রথম আলো, আগস্ট ১৩, ২০১৫)। জিএসপির সঙ্গে এ পরিদর্শনের সম্পর্কি কী? কূটনীতিকরা এসব কারখানা দেখে খুশি এবং মনে করছেন গত দুই বছরে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে এখনও জিএসপি ফিরে পেতে কর্মপরিবেশ ও শ্রমিক অধিকারের বিষয়ে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছায়নি। কারখানা পর্যায়ে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন হলেও সেটি ধীরগতিতে হচ্ছে। অনেক শ্রমিকই অধিকার আদায়ের কথা বললে চাকরিচ্যুতির শিকার হচ্ছেন। সব মিলিয়ে জিএসপি ফিরে পেতে শ্রমিকদের উচ্চ কণ্ঠস্বর থাকতে হবে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কারখানার নিরাপত্তা মান উন্নত করা। তাহলে কি জিএসপি সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি ব্র্যান্ডের পোশাকের মান রক্ষার বিষয় হয়ে থাকবে? এর সঙ্গে শ্রমিকের অধিকারের সম্পর্ক কী?
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আমাদের দাবি হওয়া উচিত, জিএসপি পেতে গিয়ে কোন পণ্য দেয়া হবে তা বাংলাদেশ নিজে নির্ধারণ করবে এবং শ্রমিক অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি গার্মেন্টসহ সব শিল্পেই হতে হবে। ব্র্যান্ডের মান রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব নয়, আর ব্র্যান্ডের কমপ্লায়েন্সের কারণে শত শত কারখানা বন্ধ হবে, হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হবে, তা-ও কাম্য নয়। সরকারের অভিমান নয়, কাজ করাই বেশি জরুরি।