৫ মে, দাইমা দিবস, ২০১৭
উবিনীগ || Monday 15 May 2017 ||৫ মে আন্তর্জাতিক দাই মা দিবস, ইংরেজীতে বলা হয় ইন্টারন্যাশনাল মিডওয়াইফ ডে (International Midwives Day)। সমাজে স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ করে গর্ভবতী নারী ও নবজাতকের সেবা প্রদানে দাইমার ভূমিকা তুলে ধরার জন্যে এই দিবসটি পালন করা হয়। দাইমাদের ভূমিকার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং দাইমার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরার জন্যে দিবসটিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। ১৯৯১ সাল থেকে বিশ্বের ৫০টি দেশে আনন্দমুখর পরিবেশে দাইমায়েরা দিবসটি পালন করেন। তারা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের কাজের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
আন্তর্জাতিকভাবে যারা মিডওয়াইফ বলে স্বীকৃত তাঁরা প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। কিন্তু বাংলাদেশে দাই মায়েরা কাজ শেখেন তাদের গুরুজনদের সাথে কাজ করে এবং নিজের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। এদের অনেকেই বিশেষ প্রশিক্ষণ পেয়েছেন,এবং সে অনুযায়ী স্বাস্থ্য সেবার সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশে দাইমায়েদের সেবার প্রয়োজন আছে। কমপক্ষে ৭১% প্রসব দাইমায়ের হাতেই হয়। তবে স্বাস্থ্য সেবার কাঠামোতে তাদের স্বীকৃতি নেই। অথচ স্বাস্থ্য সেবায় বিশেষ করে মাতৃ স্বাস্থ্য সেবায় জনবলের যে ঘাটতি রয়েছে তা পুরণ করতে হলে দাইমাদের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে।
উবিনীগ এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত দাইঘর দাইমা দিবস তিনটি এলাকায় পালন করেছে।
টাঙ্গাইলে আর্ন্তজাতিক দাইমা দিবস, ২০১৭ পালন
টাঙ্গাইল জেলার আটিয়া ইউনিয়নের নান্দুরিয়া গ্রামে ৫ মে, ২০১৭ দাইঘরে উবিনীগ আয়োজিত আর্ন্তজাতিক দাইমা দিবস পালিত হলো। দিবসটি পালনের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল “দাইমায়েদের যোগ্য মর্যাদা ও স্বীকৃতি চাই”। দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা এবং র্যালী করা হয়। উক্ত আলোচনা সভা এবং র্যালীতে নান্দুরিয়া দাইঘরের অধীনে ৫টি গ্রাম গড়াশিন, নান্দুরিয়া, কান্দাপাড়া, মৌশাকাঠালিয়া এবং নাল্লাপাড়া গ্রামের ৩৯ জন দাইমা এবং ৩৮ জন মা ও কিশোরীসহ মোট ৭৭জন উপস্থিত ছিলেন। সভায় টাঙ্গাইল উবিনীগের কর্মী ফাহিমা খাতুন লিজা, রওশন আকতার পাখি অংশগ্রহণ করেন।
সমাজে স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ করে গর্ভবতী নারী এবং নবজাতকের সেবা প্রদানে দাইমায়েরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। দিনে-রাতে দাইমায়েরা তাদের সেবা দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশে বেসরকারী সংগঠন হিসাবে উবিনীগ এই প্রথম দিবসটি পালন করছে। বাংলাদেশে দাইমায়েরা কাজ শেখেন তাদের মা-খালা, ফুপু, দাদী-নানীদের কাছ থেকে এবং নিজেদের দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতা দিয়ে। আমাদের দাইমায়েদের সেবার অবশ্যই প্রয়োজন আছে। আজও আমাদের শতকরা ৭০/৭৫ জন গর্ভবতী মায়েদের প্রসব দাইমায়েদের হাতেই হয়ে থাকে। তাই তাদের এই অবদানের জন্য আজকের দিনটি পালন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ, বলেন, উবিনীগের কর্মী ফাহিমা খাতুন লিজা।
দাইমা রাবেয়া বেগম: আমরা নিজেদের সম্মানের জন্য মা ও শিশু স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য, ঝড়-তুফান মাথায় রেখে, রাত-দিন ঘুম কামাই দিয়ে গর্ভবতী মায়েদের পাশে থাকি। এছাড়া কোন গর্ভবতী মায়ের সমস্যা দেখা দিলে সাথে করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। গর্ভবতী মায়ের বাচ্চা প্রসবের আগে খাওয়া, গোসল, চলাফেরা সম্পর্কে পরামর্শ দেই। বাচ্চা প্রসবের পর যে কয়দিন আতুর ঘরে থাকে সে কয়দিন বাচ্চাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, খাওয়া, গোসল দাইমায়েরাই করে থাকি। গর্ভবতী মায়ের ঝুঁকি দেখা দিলে তখন আমরা রোগীর সাথে হাসপাতালে যাই। কিন্তু ডাক্তার এবং নার্সরা আমাদের মূল্যায়ন করে না।
একজন গর্ভবতী মায়ের মাসিক বন্ধ থাকলে ডাক্তারের কাছে বলা তো দূরের কথা বাড়িতে মা, শ্বাশুড়ি, স্বামী, বোন, ভাবী কারো কাছে না বলে আগে দাইমার কাছে বলে। একজন নারী গর্ভবতী হলে আগে দাইমা জানে। পরে দাই মা পরিবারের সবাইকে জানায়। আমরা দাইমা হিসেবে আমাদের যোগ্য সম্মান এবং স্বীকৃতি চাই।
দাইমা জামেলা বেগম (গড়াশিন) এবং খাদিজা বেগম: একজন গর্ভবতী মায়ের ১ম মাস থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে পরামর্শ দেওয়া, বাচ্চা হওয়ার পর প্রসূতি মা এবং বাচ্চার বয়স ৭ বছর হওয়া পর্যন্ত আমরা দাইমায়েরা পরামর্শ দিয়ে থাকি। যেমন:
- গর্ভবতী মায়ের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা
- নিয়মিত গোসল করা
- ঠিকমত খাওয়া, খাওয়ার পর কমপক্ষে দিনে ২ ঘন্টা বিশ্রাম নেওয়া
- সরকারী স্বাস্থ্য বিভাগে গর্ভকালীন চারবার চেকাপ করানো
- গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টি বিষয়ক পরামর্শ
- গর্ভকালীন, প্রসব কালীন এবং প্রসূতিকালীন সময়ে মায়েদের খাওয়া, চলাফেরা সম্পর্কে পরামর্শ
- ০-৫ বছর বয়সের শিশুদের পুষ্টি বিষয়ক পরামর্শ
- ৬-১৪ বছর বয়সের ছেলে-মেয়েদের পুষ্টি বিষয়ে পরামর্শ
- সার-বিষ ছাড়া ফসল উৎপাদন করে খাওয়া
- শিশুকে টি টি টিকা দেওয়ার পরামর্শ
- ওষুধি গাছ সম্পর্কে ধারণা দেওয়া
- কোন ঝুঁকি দেখা গেলে গর্ভবতী মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া
- গর্ভবতী মায়ের খাওয়া, চলা-ফেরার যেন কোন সমস্যা না হয় সে ব্যাপারে স্বামী, শ্বশুড়-শ্বাশুড়িকে বুঝানো।
হাজেরা বেগম (গ্রামের একজন মা): আমাদের জীবনের সাথে দাইমায়েরা অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। একজন বাচ্চা জন্মের পরই দাইমায়ের মুখ আগে দেখে। দাইমাকে আমরা দিন-রাতে যে কোন সময় কাছে পাই। আমাদের বিপদে নিদানের বন্ধু দাইমা।
তবে দাইমাদের জন্য দরকার, সরকারী ভাবে প্রশিক্ষণ। বাচ্চাদের পুষ্টি নির্ণয়ের জন্য ফিতা। ডায়বেটিস পরীক্ষা করার নিয়মাবলী জানা। পুষ্টি বিষয়ক প্রশিক্ষণ। সন্তান জন্মের পর পরই কান্না করানো বিষয়ক নিয়মাবলী জানার প্রশিক্ষণ। দাই মা হিসাবে দাইমায়েদের পরিচয়পত্র প্রদান এবং সরকারী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দাইমাদের স্বীকৃতি দেওয়া হোক আজকের দিনে এই দাবীই করি।
আলোচনা শেষে দাইমাদের র্যালী নান্দুরিয়া গ্রাম হয়ে গড়াশিন গ্রামে এসে শেষ হয়।
পাবনায় দাইমাদের যোগ্য মর্যাদা ও স্বীকৃতি চাই দাবীতে আলোচনা সভা ও র্যালী আয়োজন
৫ মে, ২০১৭ ছিল আন্তর্জাতিক দাইমা দিবস। এই দিবসটি পালন করার জন্য পাবনা জেলার আটঘড়িয়া উপজেলার হাতিগাড়া, পাড়াসিধাই, হাজারী পাড়া, খয়েরবাড়ী, বাগবাড়ীয়া, টংবয়রা ও সুলতানপুর মোট ৭টি গ্রামের ৫২ জন দাইমা ‘দাইমাদের যোগ্য মর্যাদা ও স্বীকৃতি’র দাবীতে একটি আলোচনা সভা এবং র্যালীর আয়োজন করে।
হাতিগাড়া গ্রামে সকাল ১০.০০ টায় নারী ও শিশু স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্রে (দাইঘর) দাইমায়েদের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই আলোচনা সভায় দাইমায়েদের সাথে অংশ নেয় গ্রামের মায়েরা, নয়াকৃষির কৃষক, স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী এবং প্রাক্তন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মরিয়ম বেগম। সভায় বক্তব্য রাখেন দাইমা রিজিয়া বেগম, দাইমা যায়েদা বেগম, দাইমা মমতাজ বেগম। নয়াকৃষি আন্দেলনের সদস্য পাপিয়া খাতুন। সভাপ্রধান ছিলেন প্রাক্তন ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও দাইমা মরিয়ম বেগম।
দাইমাদের বক্তব্য
রিজিয়া বেগম: আমি ৩০ বছর ধরে দাইয়ের কাজ করতেছি। গ্রামের প্রায় অর্ধেক বাচ্চা আমার হাতেই জন্ম নেওয়া। আমি এই কাজ শ্বাশুড়ির কাছ থেকে শিখেছি। এই দাইঘরের মাধ্যমে তিন বছর আগে প্রশিক্ষণ পেয়েছি। আমার গ্রামে সবাই আমাকে ডাকে। নিজের এলাকা ছাড়া দূরের মানুষও আমাকে এ কাজের জন্য ডাকে। গর্ভবতী মা বা প্রসবকালীন কোন সমস্যা দেখলেই আমি তাড়াতাড়ি হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাই। আমি দাইমা। আমার কাজের স্বীকৃতি পাব এমন আশা করছি।
যায়েদা বেগম: আমার দাইয়ের কাজের অভিজ্ঞতা ২০ বছর। কাজ করলে যে যা দেয় তা কিছু পাই। কিন্তু সেটা বড় কথা নয়। আমি জানি সন্তান জন্ম দেয়া বড় কষ্টের। তাই একজন গর্ভবতী মায়ের এই কঠিন সময় আমি চুপচাপ ঘরে বসে থাকতে পারি না। যত দিন বেঁচে থাকি দাইয়ের এ কাজ করবো। গ্রামের মায়েদের পাশে থাকবো।
মমতাজ বেগম: আমি প্রথম জীবনে দাইমা ছিলাম না। আমার মায়ের কাছে এ কাজ শিখেছি। দশ বছর হয় দাইয়ের কাজ করছি। এই দাইঘর হওয়ার পর থেকে (প্রায় চার বছর) দাইঘরে আমি নিয়মিত কাজ করছি। দাইঘর থেকে প্রশিক্ষণ পেয়েছি এবং গর্ভবতী মায়েদের ৫টি ঝুঁকি সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছি। আমরা দাইমা। এই দাইঘর হলো আমাদের ঠিকানা। আমি নিয়মিত দাইঘরে এবং আমার আশেপাশের গ্রামে কাজ করি। আমার মনে বিশ্বাস ছিল এই কাজের স্বীকৃতি একদিন মিলবেই। আজকের এই আন্তর্জাতিক দাইমা দিবস পালন করার মধ্য দিয়ে আরও বুঝতে পারছি।
সভাপ্রধানের বক্তব্য
মরিয়ম বেগম: আমার নানী সাহেরা বেগমের কাছে এই দাইয়ের কাজ শিখেছি। তিনি আজ জীবিত নাই। দু’বছর হয় তিনি মারা গেছেন। উবিনীগ ২০০৬ সালে বাংলাদেশের ১৫টি জেলা থেকে দাইমাদের এনে অনেক বড় দাই সম্মেলন করেছিল। সেই দাই সম্মেলনে আমার মা সভাপ্রধান ছিলেন। দাই সম্মেলনে দাইমাদের ছবি সহ বই প্রকাশ করা হয়েছে। দাইমা সাহেরা বেগমের ছবিও দাই সম্মেলনের বইতে চাপান হয়েছে। উবিনীগ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ সেই বই দেখেছে। আমার মা বলছিলেন, “একদিন এ কাজের ফল পাওয়া যাবে” আমি বিশ্বাস করি। প্রতি বছর আমরা এভাবে আন্তর্জাতিক দাইমা দিবস পালন করবো।
পাপিয়া খাতুন (নয়াকৃষি আন্দেলনের সদস্য): আজ আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলাসহ পাবনা জেলার হাতিগাড়া গ্রামে নারী ও শিশু স্বাস্থ্য পরামর্শকেন্দ্রে (দাইঘর) ছোট পরিসরে আন্তর্জাতিক দাইমা দিবস পালন করছি। বিশ্বের ৫০ টি দেশে এ দিবস পালন করা হচ্ছে। কিন্ত বাংলাদেশে আমরা আজ এই প্রথম পালন করছি। এ দিনটি আমরা প্রতি বছর নিয়মিত পালন করবো। আজ হোক কাল হোক দাইমাদের যোগ্য মর্যাদা ও স্বীকৃতি মিলবেই। এটা আমাদের বিশ্বাস।
আলোচনা শেষে দাইমায়েরা একত্রে একটি র্যালী বের করে। এই র্যালীটি দাইঘর থেকে হাতীগাড়া মোড় হয়ে হাতীগাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এসে শেষ হয়। র্যালী শেষে দাইমা মরিয়ম বেগম অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
দাইমাদের শ্লোগান ছিল:
১. আন্তর্জাতিক দাইমা দিবস সফল হোক সফল হোক
২. দাইমাদের স্বীকৃতি দিতে হবে দিতে হবে।
৩. দাইমাদের যোগ্য মর্যাদা দিতে হবে দিতে হবে।
কুষ্টিয়াতে আন্তজার্তিক দাইমা দিবস পালিত
দাইমা শব্দটির মধ্যেই মা কথাটি যুক্ত আছে, যার সাথে মা ছাড়া কারোর তুলনা হয় না। যাদের কারনে এখনও গ্রামের প্রায় ৮৫ ভাগ মা সন্তান প্রসব করছে। যাদের কারণেই গ্রামের অসহায় মায়েরা নিরাপদ মাতৃত্বের স্বাদ পেয়ে সন্তানকে বুকে পাচ্ছে। একজন নবাগত শিশু দুনিয়ার সুখ ভোগ করার সুযোগ পাচ্ছে। সেই বংশপরম্পরায় দাদী, নানী, খালা, চাচীর পাশে বছরের পর বছর থেকে শেখা দাইয়ের কাজ। দুটি জীবন বাচানোর তাগিদে যারা নিঃস্বার্থ ভাবে আজও নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে কাজ করে যাচ্ছে। সেই দাইমাদের স্বরণ করে আজ আন্তজার্তিক দাইমা দিবস পালিত হচ্ছে সারা বিশ্বে।
এই উপলক্ষে উবিনীগ আয়োজিত কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের বেলগাছি গ্রামে একটি র্যালী ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। উক্ত র্যালীতে বেলগাছি, জাহেদপুর, দ্বাড়িকগ্রাম, কষবা এবং নাউথী গ্রামের দাইমা, নয়াকৃষির কৃষক বোনেরা, অন্যান্য মায়েরা মিলে প্রায় শতাধিক মায়েরা অংশগ্রহণ করেন। তারা প্রথমে বেলগাছি গ্রামের দাইঘরে উপস্থিত হয়। এরপর দাইদের একটি র্যালী জাহেদপুর দ্বাড়িকগ্রাম শিলাইদহ তিন রাস্তার মোড় ঘুরে আবার দাইঘরে এসে শেষ হয়।
র্যালীতে শ্লোগান:
১. দাইমা দিবস দাইমা দিবস -সফল হোক সফল হোক।
২. দাইমাদের যোগ্য মর্যাদা ও স্বীকৃতি চাই।
৩. মাতৃমৃত্যু রোধ চাই- দাইমাদের স্বীকৃতি চাই।
৪. শিশু মৃত্যু রোধ চাই-দাইমাদের স্বীকৃতি চাই।
৫. নিরাপদ মাতৃত্ব চাই -দাইমাদের স্বীকৃতি চাই।
দাইমাদের বক্তব্য:
দাইমা আলেয়া বেগম: আমি দাইয়ের কাজ করি। আমাদের কাছে যখন কোন খালা, চাচী বা দাদী আসেন তার মেয়ের বা বৌয়ের প্রসব বেদনা হচ্ছে তখন আমরা ভাতের হাড়ি চুলায় রেখে, ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়েও ছুটে যাই। কারণ আমার মাথায় থাকে মেয়েদের এর চেয়ে বড় বিপদ আর নেই। আমার একটু অবহেলায় এই মা ও বাচ্চা মারা যেতে পারে তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ছুটে যাই।
দাইমা আক্তার ভানু: রাত একটার সময় এসেও যদি ডাক দেয়, ঘুমের ঘোরে টলতে টলতে চোখে পানি দিয়ে দৌড়াতে থাকি। বাচ্চা প্রসব করিয়ে মা ও বাচ্চা দুজনকে সুস্থ করে প্রয়োজনে রাতে মায়ের পায়ের কাছে শুয়ে থেকে সকালে বাড়ী আসি।
দাইমা হাওয়া বেগম: যতক্ষণ ভালভাবে বাচ্চা খালাস না হয় ততক্ষণ দোয়া পড়তে থাকি। আল্লাহ আমার হাতে দুটি জীবন, তুমি আমার সাহায্য কর।
সাকেরা বেগম (গ্রামের একজন মা): আমরা গরীব মানুষ ডাক্তারের কাছে গেলে অনেক টাকা লাগে। সে সামর্থ আমাদের নেই। তাই সমাজে দাইমা যতদিন আছে ততোদিন আমরা আছি। দাইমায়েরাই আমাদের একমাত্র ভরসা, আমাদের নিদানের ভরসা। তাই দাইমাদের মর্যাদা ও সম্মান সবাইকে দিতে হবে।
ডলি ভদ্র (উবিনীগ): দাইমায়েরা গর্ভবতী মায়েদের যে সেবা দেন তা অর্থ দিয়ে পরিমাপ করা যাবে না। মায়ের দুধের ঋণ যেমন সন্তান পরিশোধ করতে পারে না তেমনি দাইমাদের ঋণ ও পরিশোধ করা যায় না। তাইতো আজ আন্তর্জাতিক দাইমা দিবস সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে। সারা বিশ্বের মানুষ দাইমাদের স্বরণ করছে। দাইমাদের যোগ্য মর্যাদা সরকারকে দিতে হবে একদিন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।