আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য দিবস বড়াইগ্রাম উপজেলা পালিত হয়

গত ২২/০৫/২০১৪ইং তারিখ সকাল ১১: ৩০ ঘটিকায় আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য দিবস (International Day for Biological Diversity 2014) উপলক্ষে এক মানববন্ধন ও র্যালী অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন ও র্যালী আয়োজন করেন উবিনীগ, নয়াকৃষি আন্দোলনের প্রাণবৈচিত্র্যের সামাজিক ব্যবস্থাপনা (সিবিএম) প্রকল্প। আন্তর্জাতিক ভাবে এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় দেওয়া হয়েছে -দ্বীপ জীববৈচিত্র্য রক্ষা কর। উবিনীগ, নয়াকৃষি আন্দোলেনর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কৃষি পেক্ষাপটে প্রতিপাদ্য বিষয় দেওয়া হয়েছে “স্থানীয় জাতের বীজ, গাছপালা ও পশু পাখি রক্ষা কর”। এরই লক্ষ্যে বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে একটি মানব-বন্ধন ও র্যালীর আয়োজন করা হয়। উপজেলা পরিষদ চত্বরে আয়োজিত মানববন্ধন ও র্যালীতে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর প্রধান, উন্নয়ন কর্মী, সুধী, সাংবাদিক, কৃষক-জেলে, তাঁতী, কামার-কুমার অংশ গ্রহণ করে। এসময় বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফুন্নেসা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম, সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোনাজুল হক, চাঁন্দাই ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান, পানাসী প্রকৌশলী হাসান আলী, উবিনীগ সমন্বয়কারী জয়নাল আবেদীন খান, প্রাণবৈচিত্র্যর সামাজিক ব্যবস্থাপনা (সিবিএম) প্রকল্পের কর্মী আরফান আলী আলিফ, দাইমা লাইলী বেগম, জহুরা বেগম, কৃষক নূর মোহাম্মদ, বড়াইগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি আশরাফুল ইসলাম প্রমূখ। পথসভায় কৃষকদের মূল বক্তব্যের মধ্যে ছিলো- ষাটের দশক থেকে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর নামে মাটি ও পরিবেশ বিনিষ্টকারী সার বিষ, কিটনাশক ব্যবহারের ফলে প্রাণবৈচিত্র্যকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দেওয়া হয়েছে। বহুজাতিক বীজ কোম্পানীর হাতে আজ দেশের কৃষক জিম্মি। কৃষকের কৃষি আছে কিন্তু হাতের বীজ নেই। আধুনিক কৃষি করার ফলে দেখা মেলেনা স্থানীয় জাতের গবাদি পশু-পাখি এবং গাছপালা। কৃষকরা আরো বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে নেরিকার মতো সর্বনাশা আউশ ধান কৃষকের হাতে দিয়ে এবং জেনেটিকালি মডিফাইড বেগুনের ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এ গবেষণা কৃষকের জন্যে নয়, কোম্পানির স্বার্থে করা হচ্ছে। ডগা ও ফল ছিদ্রকারি পোকা দমনের নামে এই বিতর্কিত জেনেটিকালী মডিফাইড খাদ্য ফসল ভারত ও ফিলিপাইনের মতো দেশে প্রবর্তন করতে না পেরে বাংলাদেশের মতো কৃষি নির্ভর দেশে প্রবর্তন করে কৃষক, ভোক্তা এবং বাংলাদেশের কৃষি ও প্রাণবৈচিত্র্যের জন্যে হুমকি তৈরি করা হচ্ছে। কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও শস্যর ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না সরকারের এদিকে নজর নেই। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে পরিবেশের ক্ষতিকর তামাক চাষকে নিরূৎসাহিত করতে হবে। রবিশস্যের আবাদ বাড়াতে হবে। তামাক মাটি ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করছে। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টিতে কৃষি বান্ধব নয়াকৃষির পথ ধরা ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। কৃষকরা আরো বলেন, দেশের বেশির ভাগ লোক কৃষির উপর নির্ভরশীল, জীবিকা নির্বাহকারী কৃষিকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রাণবৈচিত্র্যকে বাঁচাতে হবে আর আর প্রাণবৈচিত্র্যকে টিকিয়ে রাখতে গেলে স্থানীয় বীজ দিয়েই চাষাবাদ করতে হবে এবং রক্ষা ও বৃদ্ধি করতে হবে স্থানীয় জাতের গাছ-পালা এবং পশুপাখি। প্রাণবৈচিত্র্য বাঁচলে কৃষি বাঁচবে, কৃষি বাঁচলে কৃষক বাঁচবে। কিন্তু দেশের প্রাণবৈচিত্র্য দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় সংস্কৃতি। বিদেশী বীজের উপর নির্ভরশীল হয়ে হারাতে বসেছে হাতের বীজ,পরিবেশ বান্ধব স্থানীয় জাতের বিভিন্ন গাছপালা এবং স্থানীয় জাতের পশু-পাখি। পরিশেষে সকল কৃষক শ্লোগানের মাধ্যমে বলেন, নয়াকৃষির পথ ধরেই একমাত্র প্রাণবৈচিত্র্যকে টিকিয়ে রেখে গ্রামে মাঠ পর্যায়ের প্রাণসম্পদের প্রাচুর্যতা কৃষক সম্প্রদায়ে পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ খাদ্যের নিরাপদ অবস্থার বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চাষাবাদে খাপ খাইয়ে নেওয়া সম্ভব।