নয়াকৃষি কৃষকের মাঠে বৈচিত্র্যময় ফসল

কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার মাতামুহুরী নদী ও এর শাখা-প্রশাখা বেষ্ঠিত বি এম চর ইউনিয়নের কৃষ্ণাপুর গ্রাম। গত ১৫ বছর ধরে এই গ্রামে নয়াকৃষির কাজ শুরু হয়েছে। নয়াকৃষির ধারাবাহিকতায় গত ২০০৯ সাল থেকে কৃষকেরা প্রাণ বৈচিত্র্যের সামাজিক ব্যবস্থাপনায় (সিবিএম) বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ সহ শস্যাবর্তন ও মিশ্র ফসল চাষ পদ্ধতিতে দানাদার শস্য, ডাল, তৈল, শাক-সবজি, ফলমূল, মসলা সহ বৈচিত্র্য পূর্ন ফসল উৎপাদন করছে।
চলতি রবি মৌসুমে (২০১৪-২০১৫) কৃষ্ণাপুর গ্রামের মোট ২৭৫ টি পরিবারের মধ্যে ১৫০ টি কৃষক পরিবার প্রাণবৈচিত্র্যের সামাজিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রায় ৪০ একর জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করছেন।
মাঠে ফসলের আবাদ ছাড়াও বাড়ির আঙ্গিনায় শাক-সবজি, ফলের চাষ, পুকুরে মাছের চাষ, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগী লালন-পালন করছে। উল্লেখ্য এর আগে এই গ্রামে শীতকালীন মাত্র কয়েক প্রজাতির চাষাবাদ হতো। সিবিএম কার্যক্রম শুরুর পর থেকে প্রতি বছরেই ফসলের বৈচিত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি রবি মৌসুমে এই প্রথম কৃষকরা সরিষার আবাদ করেছেন।
কোন প্রকার রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার ছাড়া সম্পূর্ন নয়াকৃষি পদ্ধতিতে চাষ করা ফসলের ভাল ফলন হয়েছে। এই গ্রামের কৃষকরা আশাবাদী উৎপাদিত ফসল থেকে নিজেদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে ফসল বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় লাভ করতে পারবেন। কৃষকেরা বাহারী ফসলের ফলন দেখে খুবই আনন্দিত।
কৃষ্ণাপুর গ্রামে চলতি রবি মৌসুমে আবাদকৃত খাদ্য ফসলের নাম:
শাক-সবজি: আলু, বেগুন, টমেটো, রঙ্গিামা সীম, সীম, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি, মূলা, লাউ, কচু, লাল শাক। ডাল জাতীয়: ফেলন। মসলা জাতীয়: পিয়াঁজ, রসুন, ধনিয়া, মরিচ। তৈল জাতীয়: রাই, সরিষা । ধান: (বোর) লাল ধান, সুম্মা, গনজালি, বিআর-২৮, বিআর-৩৩।
অংশীদারিত্ব মূলক জাত নির্বাচন (পিভিএস)
চলতি রবি মৌসুমে (২০১৪-২০১৫) সিবিএম ২ টি গ্রামের ১২ জন কৃষক নিজেদের মাঠে স্থানীয জাতের শাক-সবজি উৎপাদন ছাড়াও অংশীদারিত্ব মূলক জাত নির্বাচনের মাধ্যমে মরিচ ও বেগুন চাষের উপর গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছেন। কক্সবাজার, চট্রগ্রাম এলাকা ছাড়াও টাংগাইল, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোর এলাকা থেকে মোট ৭ জাতের মরিচ এবং ৯ জাতের বেগুনের পরিক্ষা মূলক ভাবে চাষ করেছেন।
বীজ সংগ্রহের পর কৃষকরা বীজতলায় চারা তৈরী করে জমিতে পৃথক পৃথক প্লটের মাধ্যমে চারা রোপন করেছেন।
এক নজরে অংশীদারিত্ব মূলক ভাবে নির্বাচনের জন্য বেগুন, মরিচের জাত সমূহ
ইতোমধ্যে গাছে ফল ধরতে শুরু করেছে। মরিচের মধ্যে দেশী মোটা, সিলেটি, আতাইকুলা, বিন্দি মরিচ এবং বেগুনের মধ্যে যশোরী, সীতনাথ, বারমাসি, কালোগোল, সাদা গোল, দোহাজারী এগুলোর ফলন ভাল হবে বলে কৃষকেরা আশা করছেন।