বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০১৭
নয়াকৃষি আন্দোলন || Monday 05 June 2017 ||৫ জুন, বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবছর (২০১৭) জাতি সংঘের প্রতিপাদ্য ছিল “Connecting People to Nature,” যার মাধ্যমে এই বার্তাই দেয়া হয়েছে যে প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের সাথে মানুষের ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে এবং এই সম্পর্কের গোড়ার কথা হচ্ছে প্রকৃতিকে লালন করতে হবে। বাংলাদেশে পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য করা হয়েছে “প্রাণের স্পন্দনে, প্রকৃতির বন্ধনে”। সরকার দিবসটি পালন করেছেন জাতীয় বৃক্ষ রোপন অভিযান, পরিবেশ ও বৃক্ষমেলার আয়োজনের মাধ্যমে। দিবসটি খুব নীরবেই কেটে গেল। প্রকৃতির সাথে মানুষের সম্পর্ক নিয়ে আমরা খুব সোচ্চার হলাম না।
নয়াকৃষি আন্দোলনের মূল কথা হচ্ছে প্রকৃতি ও মানুষকে আলাদা ভাবে না দেখা। মানুষ প্রকৃতিরই অংশ। তবে মানুষ প্রকৃতি যেমন রক্ষা করতে পারে তেমনি মানুষই প্রকৃতিকে ধ্বংস করতে পারে এবং করছে। উন্নয়নের নামে প্রকৃতি ধ্বংসের উৎসব চলে। শুধু তাই নয় আধুনিক কৃষির নামেও প্রকৃতিকে ধ্বংস করা হয় নিষ্ঠুরভাবে। তাদের যুক্তি খাদ্য উৎপাদন বাড়বে। প্রকৃতি ধ্বংস করে খাদ্য উৎপাদন কখনোই সম্ভব নয়, তা ইতিমধ্যে প্রমানিত হয়ে গেছে।
নয়াকৃষি আন্দোলনে মূলত কৃষকরাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তবে এর সাথে জড়িত রয়েছেন পরিবেশ কর্মীরাও। নয়াকৃষির কৃষক নিজ কৃষি জমির মাটি যত্ন করে রাখেন, কোন প্রকার কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার না করার কারণে মাটি নরম থাকে। এই মাটিতে জীব-অনুজীব গড়ে উঠতে পারে অনায়াসে। এককাট্টা ফসল নয়, নয়াকৃষির কৃষকরা মিশ্র ফসলের আবাদ করেন। মাটি ও ফসল নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে নিয়ে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা করা এবং মানুষের খাদ্য যোগান দেয়া দুটোই চলে। কোন কীটনাশকের উৎপাত নাই বলে পানি পরিস্কার থাকে, জলাশয়ে মাছ পাওয়া যায় অবাধে। কোন কীটনাশক নাই বলে পাখি এসে বসে, প্রজাপতি, মৌমাছি, কেঁচো, সাপসহ সব নতুন জীবন ফিরে পায়। আনন্দে মাতে। প্রকৃতি এই সব জীব মানুষের কত উপকারে আসে তা আধুনিক শিক্ষিত মানুষের বুঝতে অক্ষম, তাই তাদের হত্যা করে।
প্রকৃতির এক অপরূপ সুন্দর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে “বৈচিত্র্য”। দেখতে ছোট, বড়, সাদা, কালো, লাল, নীল, সবুজ, তেড়া বেকা, লম্বা হলে সবাই খুশি হন না। আধুনিক মানুষ এক সাইজ ও রংয়ে বিশ্বাস করে বলে কৃষিতে বৈচিত্র্য কমে গেছে। মাত্র কয়েকটি জাত ও কয়েকটি সাইজের ফসল যা সুপার মার্কেটের শেলফে ঠিকমতো সাজানো যায়, তাই উৎপাদন করা হয়। তারা উচ্চ ফলনশীল, হাইব্রিডে সফল হতে না পেরে এখন নিয়ে আসছে জিএমও । বেগুন দিয়ে শুরু করে, ধান, আলু ও অন্যান্য ফসল উৎপাদন করার উদ্যোগ নিচ্ছে, যা প্রকৃতির সাথে সাংঘর্ষিক। এই উৎপাদনের সাথে কৃষকও থাকে না, প্রকৃতি তো শেষ হয়েই যায়। থাকে শুধু কোম্পানি। এতে প্রকৃতি হত্যা হয়। নয়াকৃষির কৃষকরা নানা জাতের, যেখানে যে ফসল হয়, এবং যে মৌসুমে হয়, তাই আবাদ করে । তাদের কাছে হাজার জাতের বীজের সংগ্রহ আছে। নয়াকৃষি মনে করে বীজ হচ্ছে লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ। এই বীজ রক্ষায় প্রকৃতির সাথে এক নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কৃষক নারী সেই জ্ঞানের ভান্ডার। তিনি জানেন কোন বীজ কেমন করয়ে শুকাতে হয়, কেমন করে সংরক্ষণ করতে হয়। তারা নানা জাতের বোজ সংগ্রহ করেন আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যের জনয়ে যেমন ধান চালের দরকার হয়, তেমনি এর সাথে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক । এক একটী জাত এক একটি কাজে লাগে। আবার কোন প্রকার দুর্যোগ হলে কোন জাতের বীজ লাগাল তা মোকাবেলা করতে পারবে তাও এই বৈচিত্র্যপুর্ণ বীজ ভান্ডার থাকলেই সম্ভব।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ঢাকায় বসে, আমি প্রকৃতির, প্রকৃতি আমার” শ্লোগান দিলে হবে না। ধ্বংসাত্মক কৃষি পদ্ধতি বন্ধ করতে হবে। এক্ষুণি।