আমন ধানের চাষ: ধানের বীজ রাখার জন্যে দিত্বীয়বার চেষ্টা
ফাহিমা খাতুন লীজা || Thursday 12 September 2019 ||টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলায় বন্যার কারণে অধিকাংশ কৃষকের ধান তলিয়ে গেছে। শুধু স্থানীয় জাতের আমন ধান নয় উফসী বিআর-১১, বিনা-৭, বিআর-৪৯ ধানও নষ্ট হয়ে গেছে। তবুও কৃষক হাল ছাড়েন নি। যেসব কৃষক পরবর্তীতে চারা সংগ্রহ করতে পেরেছেন তারা পুনরায় আমন ধানের চারা জমিতে রোপন করেছেন। কিন্তু এই কাজ ও সহজ ছিল না। কয়েকজন কৃষকের কথা এখানে তুলে ধরা হচ্ছে:
কসবা-আটিয়া গ্রামের কৃষক ছালাম মিয়া বলেন, প্রথম বার চাষ করা ধান নষ্ট হওয়ার পর আমি চিন্তায় পড়ে যাই, পরের বছর আবাদ করার জন্য বীজ পাব কোথায়। এরপর আমার গ্রামের কয়েকজনের সাথে আলোচনা করে জানতে পারি এলেঙ্গা ধানের চারা বিক্রি হয়। আমি ২৪ ডিসিমাল জায়গার জন্য ২০০ নাজিরশাইল ধানের চারা ১ হাজার টাকায় এলেঙ্গা হাট থেকে কিনে আনি। আসা-যাওয়ার খরচ ৫০০ টাকা। টান জমিতে চারা রোপন করি। এখন জমির মাটিতে চারা লেগে গেছে। বৃষ্টির অভাবে ক্ষেত শুকিয়ে ফেটে গেছে। গত বছরের আগের বছর বন্যার কারণে ধান তলিয়ে গিয়েছিল। গত বছর তলায় নাই। এই বছর একেবারে ভিন্ন অবস্থা। সারা মাস ধরে বৃষ্টি নাই। মেশিন (শ্যালো) ওয়ালা ধানের পরিবর্তে পানি দেবে। কয়েকজন কৃষক ধান দ্বিতীয়বার রোপন করেছেন কিন্তু নাবি হওয়ায় ধানের ফলন কম হবে। বীজ রাখার জন্য অন্য জায়গা থেকে বেশি দাম দিয়ে চারা সংগ্রহ করে বুনছি। কৃষিকাজ একদিনের না। বিভিন্ন কৌশলে কৃষিকাজ করতে হয়।
লালমিয়া-চালআটিয়া গ্রামের কৃষক লালমিয়া বলেন, আমার ১৫০ শতাংশ জমিতে লাগানো ধান ডুবে যাওয়ার পর ৬০শতাংশ জমিতে সামান্য কিছু ধানের গাছ টিকে ছিল। চারা সামান্য হওয়ায় আমি ছিলিমপুর হাট থেকে একজন কৃষকের কাছ থেকে নাজিরশাইল ধানের চারা কিনে আনি। ৩০ মোটা (১ মোটায় ১০০-১৫০ চারা থাকে) চারার দাম খরচ সহ ১৫০০ টাকা। ৬০শতাংশ জমিতেই পানি শুকিয়ে গেলে নতুন চারা রোপন করি আজ থেকে ২২দিন আগে। কিন্তু আগের চারার বয়স বেশি হওয়ায় এখনই থোড় বের হয়েছে। কিছু বীজ ধানের আশায় আগের ধান রেখে দিয়েছিলেন। আগের লাগানো ধানের গাছ ফলন হবে না বলে কেটে ফেলবেন। পরের বার লাগানো ধানের জন্য শ্যালো ওয়ালাকে বলে পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই ধান টিকলেও শেষ আবাদ ফলন তেমন হবে না। তাহলে কেন আবাদ করেছেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বড় প্রয়োজনটা হলো বীজ। আগামী বছর লাগানোর জন্য বীজ রাখতে হবে। আর ধানের চেয়ে বীজের দাম বেশি। আবার জমি পতিত রাখলে ঘাস হবে তাই জমি একদম পতিত না রেখে কিছু খাওয়ার ধানও পাওয়া যাবে। বৃষ্টির আশায় বুনেছিলাম। এসব ধান বর্ষার পানিতে হয়ে যায়। স্যালোয়ালাকে সিকিভাগ ধান দিতে হয় না। কিন্তু এই বছর ভাদ্র মাস জুড়ে বৃষ্টি নাই তারপরও বীজের আশায় চাষ করছি।
মোঃ রোজনু মিয়া-কসবা আটিয়া গ্রাম আমার ১৮০শতাংশ জমিতে লাগানো সমস্ত ধান বন্যায় ডুবে যায়। দেশীয় ধান গাছ বড় হলে পানি কিছু না কিছু হলেও সহ্য করতে পারে। এবার ডুবে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো আগাম বন্যা। ধানের চারা ছোট ছিল। বন্যায় ধান নষ্ট হওয়ার পর চিন্তায় পড়ে যাই। এতো টাকা খরচ করে কোন লাভ হলো না। হাতে বীজও রাখতে পারব না। ৫০০০টাকা খরচ করে ৫০ মোটা ধানের চারা কিনে আনি। আমার গ্রামের এক প্রতিবেশীর সাথে আলোচনা করে এলেঙ্গা থেকে এক ব্যাপারীর (যিনি ধানের চারা পাহাড়ের কোন এক জায়গা থেকে চারা এনে বিক্রি করেন) কাছ থেকে ধানের চারা সংগ্রহ করে ১০০শতাংশ জমিতে রোপন করি। এখন কার্তিকঝুল, নাজিরশাইল ধান লাগানো নাবি (দেরি) হয়ে গেছে। এ কথা জানা সত্ত্বেও কেন ধান লাগিয়েছেন? প্রশ্ন করা হলে বলেন, জমিতে ধান লাগাই আগামীতে চাষের জন্য নিজের ঘরে বীজ রাখার জন্য এবং জমি আবাদে রাখলে ঘাস কম হবে। না হলে পরের আবাদের জন্য জমি পরিষ্কার করতে আরো খরচ বেড়ে যাবে। আবার গরুর খাবারের কথা চিন্তা করেও ধান লাগানো হয়েছে।