ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু
রোকেয়া বেগম || Friday 14 December 2012 ||ভুল চিকিৎসায় মা ও নবজাতক দুজনেই মারা গিয়েছেন
চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর খবর ইদানিং খুব বেশি ঘটছে। পত্রিকা খুললেই এই দুঃসংবাদটি চোখে পড়ে । যেখানে সরকার মাতৃমৃত্যু এবং শিশুমৃত্যু রোধ করার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সেই সময়ে এই মৃত্যুর সংবাদ খুবই বেদনা দায়ক। চিকিৎসকের অবহেলা,ভুল চিকিৎসায় জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে প্রসূতি মৃত্যু হয়েছে ১৯ জন। চিকিৎসকের অবহেলায় ও ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে ১৮ টি নবজাতকের। দেখা গেছে বেশির ভাগ মৃত্যু হয়েছে বেসরকারী বা প্রাইভেট ক্লিনিকে। সরকারী হাসপাতালে যে সব মৃত্যু হয়েছে সেই মৃত্যুগুলি আসলে প্রাইভেট হাসপাতালেই হওয়ার কথা ছিল কিন্তু রোগীর অবস্থা যখন আশঙ্কাজনক হয়েছে তখনই রেফার করা হয়েছে সরকারি হাসপাতালে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে রোগী রাস্তায়ই মারা গেছে। হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার রোগীকে মৃত ঘোষণা করেছে। সরকারি হাসপাতালের ডাক্তার রোগীকে সেবা দেওয়ার সুযোগ পর্যন্ত পায়নি ।আমরা দেখছি সরকারি হাসপাতাল এখনো প্রসূতি সেবায় অনেক ভূমিকা রাখছে। ফলে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর যে খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তা বেশির ভাগ প্রাইভেট হাসপাতালে ঘটেছে। প্রাইভেট হাসপাতাল গুলিতাদের ব্যবসার জন্য রোগীদের ভাল চিকিৎসা সেবা দেবার নাম করে ভুলিয়ে ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে অপচিকিৎসা দিয়ে, অবহেলা করে এবং ভুল চিকিৎসা দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে ।সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে এই মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু রোধ করা অবশ্যই প্রয়োজন।
জানুয়ারি, ২০১২ থেকে সেপ্টেম্বর, ২০১২ পর্যন্ত মোট ৭ টি দৈনিক পত্রিকা থেকে তথ্য নিয়ে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।প্রত্রিকা কালের কণ্ঠ, প্রথম আলো, সমকাল, ইত্তেফাক, নয়াদিগন্ত, যুগান্তর, যায়যায়দিন।
১. নাটোরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু।
নাটোরের নলডাঙ্গার মাধবপুর গ্রামের নওশাদ আলীর গর্ভবতী স্ত্রী সীমাকে ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৭ টার দিকে শহরের মাদ্রাসা মোর এলাকার এ্যাপোলো ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি করা হয়। রাত ৮ টার দিকে সিজার করে পুত্র সন্তান প্রসব করানো হয়। এর পর রোগী প্রায় তিন ঘন্টা অজ্ঞান থাকেন। রক্তশূন্যতার কারণে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বাইরে থেকে এক ব্যাগ রক্ত এনে পুশ করে। এর পরই তার অবস্থার অবনতি হয়। কর্তব্যরত নার্স রাত সাড়ে চারটার দিকে প্রসূতিকে দুটি ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশন পুশ করার পরই তার শরীরে জ্বালা পোড়া ও অস্থিরতা শুরু হয়। ইনজেকশন দেয়ার আধা ঘন্টা পর ১৭ ফেব্রুয়ারি ভোর ৫ টার দিকে প্রসূতির মৃত্যু হয়। প্রসূতির স্বজনরা ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুললে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
(তথ্যসূত্র: যায়যায়দিন ১৮ ফেব্রুয়ারি,২০১২)
২. রামগঞ্জে ভুল অপারেশনে প্রসূতির মৃত্যু।
রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) পৌর শহরের উপশম জেনালের হাসপাতালে ডাক্তারের ভুল অপারেশনে সালমা আক্তার রুমানা (২২) নামের এক প্রসূতির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। পৌরসভার জগৎপুর গ্রামের ছলেমান মাস্টার বাড়ির মোবারক হোসেন আবুলের মেয়ের প্রসব ব্যথা উঠলে তাকে উপশম জেনালের হাসপাতাল এ- জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত ১০ টার দিকে রামগঞ্জ সরকারি হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. মোঃ মোজাম্মেল হক ও রামগঞ্জ আল হেলাল হাসপাতালের ডা. আজাদসহ কয়েকজন ডাক্তার মিলে প্রসূতির অপারেশন করেন। অপারেশনে ভুল করে প্রসূতির জরায়ু কেটে ফেলে। ফলে প্রসূতির প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। মূমুর্ষ অবস্থায় রোগীকে নোয়াখালীর চৌমুহনীর রাবেয়া প্রাইভেট হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে ঢাকা নেয়ার পরামর্শ দেয়। ঢাকা নেয়ার পথে সালমা মারা যায়। মৃত্যুর সংবাদে ক্ষোভে উত্তেজিত স্বজনরা উপশম জেনালের হাসপাতালে ইটপাটকেল ছুড়ে ভাংচুর করে। রামগঞ্জ থানার ওসি রেজাউল করিম ভূঁইয়া ও পৌর মেয়র বেলাল আহম্মেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। স্থানীয় পৌর মেয়র বেলাল আহম্মেদ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সমঝোতা বৈঠক করে নিহত প্রসূতির জীবনের মূল্য এক লাখ টাকা নির্ধারণ করে। এ নিয়ে এলাকা বাসীর মনে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিহতের স্বজনরা ডাক্তারদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে।
(তথ্যসূত্র:ইত্তেফাক ২৫ ফেব্রুয়ারি,২০১২।)যায়যায় দিন ২৫ ফেব্রুয়ারি,২০১২।)
৩. কুষ্টিয়া দৌলতপুর হাসপাতালে ডাক্তারের ভুল অপারেশনেপ্রসূতির মৃত্যু
তিনি কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলার হোলগাবাড়িয়া ইউনিয়নের শশিধরপুর শামিমুল ইসলামের স্ত্রী।দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সালেহ আহমেদ ১ মাচর,২০১২ বিকালে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রসূতি লাকি খাতুনের সিজারিয়ান অপারেশন করেন কিন্তু ডাক্তারের ভুল অপারেশনের কারণে অপারেশন কক্ষেই তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহতের স্বজনরা হাসপাতালের ডাক্তার ও কর্মচারীদের অবরোধ করে রাখেন। বিক্ষুব্ধ লোকজন কর্তব্যরত ডাক্তারের শাস্তি দাবি করে। খবর পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
(তথ্যসূত্র: যায়যায়দিন ৩ মার্চ, ২০১২।)
৪. অপচিকিৎসায় সাটুরিয়া উপজেলার রহুলি গ্রামের কৈফিয়ত আলীর মেয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
৮ এপ্রিল রাত ১০ টায় কৈফিয়ত আলীর মেয়ে সোনিয়া বেগমের প্রসব ব্যথা উঠলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন ‘পারভীন নার্সিং হোম,-এ নিয়ে যান। ক্লিনিকের মালিক সাটুরিয়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক পারভীন আক্তারের ছেলে পিন্টু। পারভীন আক্তার নিজেই এই ক্লিনিকের দেখাশোনা করেন। পারভীনের নির্দেশ মত কর্তব্যরত নার্স হেনা আক্তার সোনিয়ার শরীরে সেলাইন দেন। এর পর তাকে চেতনা নাশক ইনজেকশন দেয়া হয়। ইনজেকশন দেয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সোনিয়া মারা যায়। মুত্যুর ঘটনা ধামা চাপা দেয়ার জন্য ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার কথা বলে মৃত মেয়েকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। রাত ১২ টায় ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দীর্ঘ দিন ধরে ডাক্তার ছাড়াই চলছে এই ক্লিনিক। হাসপাতালে আসা প্রসূতিদের ফুসলিয়ে তার ক্লিনিকে নিয়ে আসে পারভীন। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি এ ধরণের কাজ চালিয়ে আসছে। সাংবাদিকরা ঘটনা জানতে চাইলে পারভীনের স্বামী সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে বলেন আপনারা যা খুশি তা লেখেন, কিছু আসে যায় না।
(তথ্যসূত্র: প্রথম আলো ১২ এপ্রিল, ২০১২।)
৫. খুলনায় চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় আছিয়া বেগম ২২ ও রোকসানা বেগম ২০ নামের দুই জন প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়েছে।
দুই প্রসূতির মৃত্যুর পর তাদের স্বজনরা ক্লিনিক ভাংচুর করে। ১০ মে, রাত ১২ টায় প্রসূতি আছিয়া বেগমের খিচুনি শুরু হলে তাকে প্রথমে নগরীর সার ইকবাল রোডে রমা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক দীর্ঘক্ষণ পরীক্ষা করে অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে অন্য হাসপাতালে নিতে বলেন। রাত ২ টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে ডাক্তার না পেয়ে অপেক্ষা করতে করতে এক পর্যায়ে তার নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। অবশেষে আছিয়া মারা যান। এ সময় আত্মীয়-স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে গাইনি বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগ ভাংচুর করে।
(তথ্যসূত্র: যুগান্তর ১২ মে, ২০১২।)
মা রোকসানা বেগমের মৃত্যু হয়েছে।
গর্ভবতী রোকসানা বেগমকে ১০ মে, মহানগরীর ফুলবাড়িগেট এলাকায় অবস্থিত মমতা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। বিকেলে অস্ত্রোপচার করে তার একটি ছেলে সন্তান হয়। সন্ধ্যার পর রোকসানার রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় ৯ মে, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোকসানাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে। ১০ মে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোকসানা মারা যায়।
লাশ এলাকায় নিয়ে যাওয়ার পর এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে মমতা ক্লিনিক ভাংচুর করে।
(তথ্যসূত্র: যুগান্তর ১২ মে, ২০১২।)
৬. পিরোজপুরে অপারেশন টেবিলে এক প্রসূতি মারা গেছে।
পিরোজপুর সদর উপজেলার সুজন মিস্ত্রীর স্ত্রী সবিতা রানী ২২ প্রসব ব্যথা উঠলে তাকে ২৯ মে রাতে শহরের আফতাব উদ্দিন সেবা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সবিতাকে অপারেশন করতে হবে বলে জানায়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এইচ পি সিকদার নামে একজন ডাক্তার সবিতাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। আধা ঘন্টা পর অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে দ্রুত ক্লিনিক ত্যাগ করেন। কিছুক্ষণ পর জানা যায় অপারেশন টেবিলেই প্রসূতি মারা গেছে। ডাক্তার এইচ পি সিকদার বলেন আমি রোগীর সঙ্গে কথা বলে অস্ত্রোপচার শুরু করি। তাঁর হৃদরোগের সমস্যা ছিল। ডাক্তার বলেন এটি একটি দুর্ঘটনা।
(তথ্যসূত্র: কালের কণ্ঠ ৩১ মে, ২০১২।)
৭. ডুমুরিয়ায় ভুয়া চিকিৎসকের হাতে প্রসূতি ও শিশুর মৃত্যু।
ডুমুরিয়া উপজেলার নোয়াকাঠি গ্রামে গৃহবধূ নূরজাহান বেগমর প্রসব ব্যথা উঠলে প্রথমে বাড়িতে প্রসব করানোর চেষ্টা করা হয়। বাচ্চা প্রসব করাতে না পেরে ডুমুরিয়া সদরে অবস্থিত নার্গীস সার্জিক্যাল প্রাঃ লিমিটেডে ৬ হাজার টাকা চুক্তিতে ভর্তি করা হয়। নারর্গীস ও তার ভাই প্রসব করাতে চেষ্টা করেন। রোগীর অবস্থা অবনতি হলে রোগীর স্বজনরা ডাক্তারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। এ সময় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জানান খুলনা থেকে ভাল ডাক্তার আনা হচ্ছে। এদিকে রোগীকে অস্ত্রোপচারের জন্য ইনজেকশন পুশ করা হয়। ওই রাতে খুলনা থেকে কোন গাইনি ডাক্তার না আসায় ভোরে ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার ইউনুস আলীকে অস্ত্রোপচারের জন্য ডেকে আনা হয়। ডাক্তার ইউনুস আলী বলেন, অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে দেখি রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এক পর্যায়ে রোগী মারা যায়। ঘটনা জানাজানি হলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ স্থানীয় কয়েকজন ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মী পুলিশকে না জানিয়ে মৃত গৃহবধূকে দাফন করতে বলে। এ সময় পুলিশ খবর পেযে ক্লিনিক মালিক নার্গীস পারভীন ও তার ভাই মহসীনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। ডুমুরিয়া থানার ওসি জানান প্রসূতির পিতা ও স্বামীসহ আত্মীয় স্বজন লিখিত দিয়েছে প্রসূতির মৃত্যুর জন্য ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়্ তাই কোন মামলা না নিয়ে ক্লিনিক মালিক ও তার ভাইকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
(তথ্যসূত্র:ইত্তেফাক ৯ জুন,২০১২।)
৮. কিশোরগঞ্জের ইটনায় ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে।
তিন আগস্ট ইটনায় নীলমনি দাস নামে এক গর্ভবতীর প্রসব ব্যথা উঠলে সুশীল সাহা নামে এক গ্রাম্য ডাক্তার গর্ভবতীকে পর পর ৬ টি টিটেনাস ইনজেকশন পুশ করে। এর পর গ্রামের ধাত্রী অনেক চেষ্টা করে একটি মৃত সন্তান প্রসব করান । অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাকে ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে । ইটনা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, প্রসব ব্যথার সময় টিটেনাস ঝুঁকিপূর্ণ। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও ভুল চিকিৎসার কারণে প্রসূতি মারা গেছে।
(তথ্যসূত্র: সমকাল ৫ আগস্ট, ২০১২।)
৯. নারায়ণগঞ্জের বন্দরে হাতুরে ডাক্তারের হাতে এক নবজাতক ও প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
জিয়াসমিন নার্সিং হোমের ডাক্তার পরিচয় দানকারী জিয়াসমিন সহজে প্রসবের কথা বলে চান মিয়ার স্ত্রী সোমা আক্তারকে ওই নার্সিং হোমে ভর্তি করেন। ২৪ জুলাই তার স্ত্রী প্রসবের পর পরই নবজাতক মারা যায়। এ সময়ে অতিরিক্ত রক্ষক্ষরণে তার স্ত্রীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলেও জিয়াসমিন চান মিয়ার স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেয়নি। সোমার অবস্থা আরো সংকটাপন্ন হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও সেখানে তাকে রাখা হয়নি। অবশেষে উত্তরা সেন্ট্রাল হাসপাতাল নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
(তথ্যসূত্র: সমকাল ৩০ জুলাই, ২০১২।)
১০. ভালুকা পৌর সদরে অবস্থিত তাহমিনা জেনারেল হাসপাতাল এ- ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে।
২০ আগস্ট রাতে ভালুকা ময়মনসিংহ উপজেলার চান্দটি গ্রামের জালাল উদ্দিনের স্ত্রী শামিমা আক্তারের প্রসব ব্যথা উঠলে তাকে তাহমিনা জেনারেল হাসপাতাল এ- ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসে । ২২ আগস্ট সকাল ৮ টায় হাসপাতালের মালিক ডাক্তার মোশারফ হোসেন রোগীর সিজারিয়ান অপারেশন করে একটি ছেলে সন্তান প্রসব করান । ওই দিন সন্ধায় প্রসূতি শামিমা আক্তারের শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক দেখে পরিবারের কাছে রেফার করার কাগজ ধরিয়ে দেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে প্রসূতির মৃত্যু হয়। রোগীর আত্মীয় স্বজনের অভিযোগ অপারেশনের কিছুক্ষণ পরই রোগীর মৃত্যু হয় কিন্তু ডাক্তাররা তাদের গা বাঁচাতে অহেতুক একটি মাইক্রেবাসে করে রোগীকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। প্রসূতির অপারেশনকারী ডাক্তার মোশারফ হোসেন জানান ভালুকা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ও এ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার কায়কোবাদকে নিয়ে অপারেশন করা হয়েছে । রোগীর হঠাৎ রক্তশূন্যতা দেখা দেয়ায় দুই ব্যাগ রক্ত দেয়া হয়। তারপরও পরিস্থিতি খারাপের পথে যাওয়ায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। তার পরের খবর আর জানা নেই।
(তথ্যসূত্র: যুগান্তর ২৩ আগস্ট,২০১২।) (ইত্তেফাক ২৪ আগস্ট,২০১২।)
১১. মুন্সিগঞ্জ শহরতলীর সিপাহীপাড়া এলাকায় একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ডাক্তার নাসিমা আক্তার মুন্নীর ভুল চিকিৎসায় রোকসানা বেগম এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে।
প্রসব ব্যথা শুরু হলে জেলা সদরের পানহাটা গ্রামের কাবিল মাদবরের স্ত্রী রোকসানা বেগম বিক্রমপুর ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। পর দিন তাকে অপারেশন করেন ডাক্তার মুন্নী। এ সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলেও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ প্রসূতিকে উন্নত চিকিৎসা দেয়নি। এক পর্যায়ে প্রসূতির শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হলে ডাক্তার মুন্নী প্রসূতিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। দু’দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ৩০ আগস্ট চিকিৎসারত অবস্থায় রোকসানা বেগম মারা যায়। এ ঘটনায় প্রসূতির স্বজনরা ওই ক্লিনিক ঘেরাও করে। উত্তেজনা সৃষ্টি হলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
(তথ্যসূত্র: সমকাল ১ সেপ্টেম্বর, ২০১২।)
১২. কিশোরগঞ্জ ইটনা উপজেলায় ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতি মৃত্যু হয়েছে।
একুশ সেপ্টেম্বর, ২০১২ কিশোরগঞ্জ উপজেলার বড়হাটি গ্রামের আজিজুল হকের স্ত্রী রওশন আরার (৩৮) প্রসব ব্যথা উঠলে ২২ সেপ্টেম্বর সকালে এলাকার পল্লী চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত সামছুল আলম খানকে খবর দেন। সামছুল রওশন আরাকে একটি স্যালাইন ও ছয়টি ইনজেকশন দেন। এর পরপরই রওশন নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরে তাকে ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান ওই প্রসূতিকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক জানান অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। তাকে ইনজেকশন দেওয়া ঠিক হয়নি।
(তথ্যসূত্র: প্রথম আলো ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১২।)
ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যু
ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল:
১. কর্তব্যরত নার্স রাত সাড়ে চারটার দিকে প্রসূতিকে দুটি ইনজেকশন পুশ করেন। ইনজেকশন পুশ করার পরই তার শরীরে জ্বালা পোড়া ও অস্থিরতা শুরু হয়। ইনজেকশন দেয়ার আধা ঘন্টা পর ১৭ ফেব্রুয়ারি ভোর ৫ টার দিকে প্রসূতির মৃত্যু হয়।
২. অপারেশনে ভুল করে প্রসূতির জরায়ু কেটে ফেলে। ফলে প্রসূতির প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়। মুমুর্ষ অবস্থায রোগীকে নোয়াখালীর চৌমুহনীর রাবেয়া প্রাইভেট হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে ঢাকা নেয়ার পরামর্শ দেয়। ঢাকা নেয়ার পথে সালমা মারা যায়।
৩. ডাক্তারের ভুল অপারেশনের কারণে অপারেশন কক্ষেই প্রসূতির মৃত্যু হয়।
৪. পারভীনের নির্দেশ মত কর্তব্যরত নার্স হেনা আক্তার সোনিয়ার শরীরে সেলাইন দেন। এর পর তাকে চেতনা নাশক ইনজেকশন দেয়া হয়। ইনজেকশন দেয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই সোনিয়া মারা যায়।
৫. রাত ২ টায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে ডাক্তার না পেয়ে অপেক্ষা করতে করতে এক পর্যায়ে তার নাক দিয়ে রক্ত বের হয়। অবশেষে আছিয়া মারা যান।
৬. এইচ পি সিকদার নামে একজন ডাক্তার সবিতাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। আধা ঘন্টা পর অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে দ্রুত ক্লিনিক ত্যাগ করেন। কিছুক্ষণ পর জানা যায় অপারেশন টেবিলেই প্রসূতি মারা গেছে। ডাক্তার এইচ পি সিকদার বলেন আমি রোগীর সঙ্গে কথা বলে অস্ত্রোপচার শুরু করি। তাঁর হৃদরোগের সমস্যা ছিল। ডাক্তার বলেন এটি একটি দুর্ঘটনা।
৭. রোগীকে অস্ত্রোপচারের জন্য ইনজেকশন পুশ করা হয়। ওই রাতে খুলনা থেকে কোন গাইনি ডাক্তার না আসায় ভোরে ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার ইউনুস আলীকে অস্ত্রোপচারের জন্য ডেকে আনা হয়। ডাক্তার ইউনুস আলী বলেন, অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে দেখি রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এক পর্যায়ে রোগী মারা যায়।
৯. গর্ভবতীর প্রসব ব্যথা উঠলে সুশীল সাহা নামে এক গ্রাম্য ডাক্তার গর্ভবতীকে পর পর ৬ টি টিটেনাস ইনজেকশন পুশ করে। এর পর গ্রামের ধাত্রী অনেক চেষ্টা করে একটি মৃত সন্তান প্রসব করান। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় তাকে ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। ইটনা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, প্রসব ব্যথার সময় টিটেনাস ঝুঁকিপূর্ণ। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও ভুল চিকিৎসার কারণে প্রসূতি মারা গেছে।
১০. অতিরিক্ত রক্ষক্ষরণে তার স্ত্রীর অবস্থা সংকটাপন্ন হলেও জিয়াসমিন চান মিয়ার স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেয়নি। সোমার অবস্থা আরো সংকটাপন্ন হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও সেখানে তাকে রাখা হয়নি। অবশেষে উত্তরা সেন্ট্রাল হাসপাতাল নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
১১. ডাক্তার মোশারফ হোসেন রোগীর সিজারিয়ান অপারেশন করে একটি ছেলে সন্তান প্রসব করান। ওই দিন সন্ধায় প্রসূতি শামিমা আক্তারের শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক দেখে পরিবারের কাছে রেফার করার কাগজ ধরিয়ে দেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে প্রসূতির মৃত্যু হয়।
১২. অপারেশন করেন ডাক্তার মুন্নী। এ সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলেও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ প্রসূতিকে উন্নত চিকিৎসা দেয়নি। এক পর্যায়ে প্রসূতির শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হলে ডাক্তার মুন্নী প্রসূতিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। দু’দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ৩০ আগস্ট চিকিৎসারত অবস্থায় রোকসানা বেগম মারা যায়।
১৩. পল্লী চিকিৎসক সামছুল প্রসূতি রওশন আরাকে একটি স্যালাইন ও ছয়টি ইনজেকশন দেন। এর পর পরই রওশন নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরে তাকে ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান ওই প্রসূতিকে মৃত ঘোষণা করেন।চিকিৎসক জানান অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে।
চিকিৎসকের অবহেলায় প্রসূতি মৃত্যু
১. ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রসূতির মৃত্যু, অভিযোগ এড়াতে ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার বন্ধ করার হুমকি দেয়।
চিকিৎসকের অবহেলা ও অদক্ষতার কারণে এক প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ধামরাই বাজারের হরিদাস বণিকের স্ত্রী শিপ্রা রানী ১৯ ডিসেম্বর, ২০১১ ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তিনি সন্তান প্রসব করেন। ২০ দিনের মধ্যে দুইবার হাসপাতালে ভর্তি হলেও তার ব্যথা কমেনি এবং রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। শিপ্রার স্বামীর অভিযোগ, চিকিৎসকের ভুলে শিপ্রা বর্তমানে নিজ বাড়িতে ব্যথার যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আরিফ আনোয়ার সাংবাদিকদের দেখেই ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়। তিনি বলেন ওটি বন্ধ করে দিলে রোগীর মৃত্যু হবে না এবং সমালোচনার মধ্যেও পড়তে হবে না। উল্লেখ্য, এ হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় ৪ জানুয়ারি প্রসূতি জোবেদা আক্তার মারা যান। সংবাদটি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
(তথ্যসূত্র: কালের কণ্ঠ ৯ জানুয়ারি, ২০১২।)
২. মাদারীপুরে ডাক্তারের অবহেলায় প্রসূতি মৃত্যুর অভিযোগ।
মাদারীপুর শহরের ২ নম্বর শকুনি এলাকার শাহজামান সরদারের স্ত্রী শানু বেগমকে নুরজাহান সেলিম নিরাময় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২০ জানুয়ারি তাঁকে ফেনারেক্স ও পেথিডিন ইনজেকশন দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পরই শানু বেগম মারা যান। স্বজনদের অভিযোগ ডাক্তারের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে। গাইনি চিকিৎসক নাসরিন রোজি বলেন, ওই রোগী একলামশিয়া রোগে ভোগছিল। ডাক্তার দাবি করেন চিকিৎসায় কোন অবহেলা করা হয়নি। মাদারীপুর সদর থানার উপপরিদর্শক ইউসুফ আলী ফকির বলেন, পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থল পরিদর্শ করেছে। প্রসূতির পরিবার ব্যাপারটি মীমাংসা করে। লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(তথ্যসূত্র:কালের কণ্ঠ ২২ জানুয়ারি, ২০১২)
৩. চিকিৎসকের ‘অবহেলায় অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু।
উপজেলার মান্দারচাপ গ্রামের কবীর হোসেনের স্ত্রী জোবেদা খাতুন (২০) প্রসব ব্যথা নিয়ে ৩ জানুয়ারি সকালে ৮ টার দিকে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। প্রসব ব্যথায় কাতরাতে থাকলেও উপযুক্ত চিকিৎসা না দিয়ে ডাক্তার জেসমিন আক্তার তাঁকে স্বাভাবিক প্রসব হওয়ার আশ্বাস দিতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত স্বাভাবিক প্রসব না হওয়ায় চিকিৎসক হাজেরা শিরীন হক অস্ত্রোপচারের জন্য তাঁকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। সময় মতো এ্যানসথেসিয়া ডাক্তার (অবেদনবিদ)না আসায় তার অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। এ্যানসথেসিয়া ডাক্তার (অবেদনবিদ) সাইফুল ইসলাম বলেন, জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করার কারণে তাঁর পক্ষে সময়মতো অপারেশন থিয়েটারে যাওয়া সম্ভব হয়নি।এর পরও দুপুর আড়াইটায় জোবেদাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার অবস্থা অবনতি হওয়ায় তাঁকে অজ্ঞান করা হয়নি। বিকেল তিনটার দিকে জোবেদা বেগম মারা যান। মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে এলাকাবাসী চিকিৎসককে হাসপাতালের একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে বিক্ষোভ করে। বিষয়টি তদন্ত করার জন্য চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
(তথ্যসূত্র:প্রথম আলো ৫ জানুযারি, ২০১২।)
৪. পটুয়াখালী দুমকি উপজেলা হাসপাতালে এক প্রসূতির চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ।
প্রসবকালীন সময় মেজর-ইনজুরির সেলাইকাটা ক্ষতে পুঁজ ও পোকার জন্ম হয়েছে। প্রসূতি শিল্পী বেগমের স্বামীর পক্ষে ডা. মাজেদা বেগমের দাবিকৃত ২৫০০ টাকা দিতে না পারায় (হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, আয়া) তার বেডের ধারে - কাছেও ঘেঁষছে না। প্রয়োজনী চিকিৎসা ও ওষুধপত্রের অভাবে চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায় ডাক্তার ডা.মাজেদা বেগম ছুটিতে রয়েছেন। এ সময়ে ৩ দিন রোগীর ড্রেসিং হয়নি। হাসপাতালে দায়িত্বরত টিএইচএ ডা.মীর শহিদুল হাসান শাহীন বলেন, গাইন রোগীদের চিকিৎসার ব্যাপার গাইনি বিশেষজ্ঞরাই দেখেন।আগে বিষয়টি তাকে কেউ বলেনি। তিনি যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
(যুগান্তর ৩ মার্চ, ২০১২।)
৫. অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় রামগঞ্জে প্রসূতি, দিনাজপুরে শিশু মৃত্যু।
রামগঞ্জ (লক্ষ্মীপুর) বাইপাস সড়কের জনতা মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকের অবহেলায় এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার ভোলাকোট এলাকার বেলায়েত হোসেনের স্ত্রী রাবেয়া আক্তার সীমুর প্রসব ব্যথা শুরু হলে তাকে ১২ এপ্রিল রাত ৮ টায় জনতা মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত ১০টার দিকে ডা. আবদুল্লাহ আল সাইদ তার সিজার অপারেশন করে। ভোর ৪ টার দিকে রোগীর অবস্থা খারাপ হলে চিকিৎসক ও নার্সদের ডাকাডাকি করেও কাউকে পাওয়া যায়নি। অবশেষে প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে প্রসূতির স্বজনরা ১০ টায় হাসপাতাল ঘেরাও করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হাসপাতালে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
(তথ্যসূত্র: সমকাল ১৪ এপ্রিল, ২০১২।)
৬. নরসিংদীতে ডাক্তারের অবহেলায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ
নরসিংদীতে ডাক্তারের অবহেলায় এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে নরসিংদী শহরের বৗয়াকুর এলাকার বাসিন্দা সাজিদ মিয়ার স্ত্রীর প্রসব ব্যথা উঠলে তাকে ২৮ মে দুপুরে শহরের বাজির মোড় সেন্ট্রাল হাসপাতালে প্রসূতি শাহীনুরকে ভর্তি করা হয়। দুপুর একটায় সহকারী সার্জন তাজরিয়ান আক্তার শিল্পী সিজারের মাধ্যমে তার বাচ্চা প্রসব করান।অপারেশন থিয়েটারে রোগীর প্রচ- রক্তক্ষরণ হতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যাবে বলে কর্তব্যরত ডাক্তার রোগীর স্বজনদের আশস্ত করেন কিন্তু রাতে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে ডাক্তার ও নার্স হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যান এ খবর এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তারা ক্ষোভে হাসপাতালে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। রাত ১০ টায় পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। শাহিনুরের মৃত্যুর জন্য স্বজনরা হাসপাতালের কর্তৃপক্ষসহ চিকিৎসকদের দায়ী করেছে।
(তথ্যসূত্র:ইত্তেফাক ৩১ মে,২০১২।)
৭. মুন্সীগঞ্জে অপচিকিৎসায় পপি আক্তার সন্তান ধারণের ক্ষমতা হারিয়েছেন।
২৪ আগস্ট মুন্সীগঞ্জ শহরের আধুনিক হাসপাতাল প্রাইভেট লিমিটেড এ গাইনি বিশেষজ্ঞ না হয়েও নাসিমা আক্তার মুন্নী প্রসূতি পপি আক্তার এর সিজার অপারেশন করে বাচ্চা বের করার চেষ্টা করেন। বাচ্চা বের করতে না পেরে অবশেষে মৃত নবজাতকসহ পেট সেলাই করে রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে। ঢাকা মেডিকেলে আনার পর ডাক্তাররা দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচার করে মৃত কন্যা সন্তান বের করা হয়।সেলাই করা অবস্থা থাকায় জরায়ুর মারাত্বক ক্ষতি হয়। প্রসূতিকে বাঁচিয়ে রাখতেই জরায়ু কেটে ফেলে দেয়া হয়।
(তথ্যসূত্র: কালের কণ্ঠ ২৭ আগস্ট, ২০১২।)
ডাক্তারের অবহেলায় মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের । ডাক্তারের অজ্ঞতার কারণে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের
চিকিৎসকের অবহেলায় প্রসূতি মৃত্যু
ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু
১. ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে নবজাতকের মৃত্যু
চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে নার্স-আয়ারা এক প্রসূতিকে প্রসব করায়। এ সময় ওই প্রসূতি মৃত কন্যা সন্তান প্রসব করে। ফতুল্লা নবীনগরের বাসিন্দা গৃহবধূ নাসিমা প্রসব ব্যথা শুরু হলে নারায়ণগঞ্জ ২০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে আসেন । এ সময় হাসপাতালের ১৮ নং ওয়ার্ডের কর্তব্যরত নার্স সুমা ও তানিয়া সুলতানা, আয়া রেণু বেগম, ও সুইপার পার্বতীর সঙ্গে নার্গিসের চুক্তি হয়। কোন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই তারা নার্গিসের প্রসব করাতে যায়। তাদের অজ্ঞতার কারণে নার্গিস মৃত কন্যা সন্তান প্রসব করে। চুক্তির ৩ হাজার টাকা না দেয়ায় প্রসূতিকে ১৮ নং ওয়ার্ডের প্রসব কক্ষে আটকিয়ে রাখে। ভার প্রাপ্ত সুপার ডা. শফিউল আজম জানান, এ ধরণের কোন খবর তিনি জানে না।
(তথ্যসূত্র: সমকাল ৩ মার্চ, ২০১২।)
এই শিশু সঠিক চিকিৎসা সেবা পেলে বাঁচতে পারে। সরকারী হাসপাতালে জন্ম নেয়া এই শিশুটি ভাল আছে
২. প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে দিনে গড়ে মারা যাচ্ছে ৫ জন নবজাতক
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউনেটাল ইউনিটের অবস্থা খুবই খারাপ। যন্ত্রপাতি না থাকায় চিকিৎসা ও সেবা শুশ্রƒষার অভাবে প্রতিদিন গড়ে ৫ জন নবজাতকের মৃত্যু হচ্ছে। চট্টগ্রাম হাসপাতালের ৩২/এ ওয়ার্ডে নিওনেটাল ইউনিটের প্রধান ডা. চৌধুরী চিরঞ্জীব বড়–য়া জানান অপরিণত বয়সে যে সব বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে তাদের এই ইউনিটে ভর্তি করা হয়। তাদের লাইফ সাপোর্ট ও চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য ভেনটিলেটর, রেডিয়্যান্ট, ইনকিউবেটর, ওয়ারমারের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি নেই। প্রতিদিন ভর্তি হয় ২৫ থেকে ৩৫ জন নবজাতক। এদের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ৫ টি শিশু মারা যায়।
(তথ্যসূত্র:যুগান্তর ৭ মার্চ,২০১২।)
৩. মাথা কেটে গর্ভের সন্তান প্রসবের চেষ্টা। ঝিনাইদহে ক্লিনিক মালিক ও ডাক্তারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা।
জানা যায় ২২ এপ্রিল, ২০১২ রাতে শৈলকুপা উপজেলার কাচের কোল গ্রামের লাল্টু ওরফে নালোর স্ত্রী জোসনা খাতুন প্রসব ব্যথা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। পরদিন সকালে হাসপাতালের দালাল চক্র জোসনা খাতুন এর স্বামী লাল্টু ওরফে নালোকে ফুসলিয়ে শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে অবস্থিত কবিরপুর রহমানিয়া সুপার মার্কেটে মহিলা ও শিশু ক্লিনিকে নিয়ে আসে। ডাক্তার না পেয়ে ক্লিনিক মালিক মোঃ শাহিন আক্তার নিজে ও তার লোকজন জোসনার হাত পা বেঁধে ডেলিভারী করানোর চেষ্টা করে। ৫/৬ ঘন্টা চেষ্টা করার পর না পেরে একপর্যায়ে ডাকা হয় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ডাক্তার জাহিদুর রহমানকে। তিনি বিকেল ৪ টার দিকে অপারেশন করে জোসনার পেট থেকে মাথা কেটে ফেলা মরা বাচ্চা বের করেন। শৈলকুপা থানার অসি আহসান হাবিব খবর পেয়ে ক্লিনিক মালিকসহ দুইজনকে আটক করেন এবং পরে ছেড়ে দেন। ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে যায়। ২৯ এপ্রিল ঝিনাইদহ জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আব্দুল খালেক সাগর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিট্্েরট শিমুল কুমার বিশ্বাসের আদালতে ৯ জনকে আসামি করে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি এজাহার হিসাবে গ্রহণ করে নিহত শিশুর লাশ তুলে ময়না তদন্তের জন্য থানার ওসি ও সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেন। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অর্থের লোভে এ ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে।
(তথ্যসূত্র: যুগান্তর ৪ মে, ২০১২।)
৪. চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মা ও নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ।
পরিবার সুত্রে জানা যায় ১৫ মে, ২০১২ ভোরে পারভীন বেগম নামে এক প্রসূতির প্রসব ব্যথা উঠলে তাকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গাইনি চিকিৎসক মিনু রানীর তত্তা¡বধানে পারভীন কন্যা সন্তান প্রসব করেন। কয়েক মিনিট পরেই নবজাতক শিশুটি মারা যায়। সন্তান প্রসবের পর পারভীনের অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে ব্যর্থ হন ডা. মিনু রানী। রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে ডাক্তার তাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরিবার পারভীনকে চাঁদপুর ড্রিমল্যা- হাসপাতালে নিয়ে গেলে রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে তারা ভর্তি করে নি। পরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি করার ১০-২০ মিনিট পর পারভীন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। চাঁদপুর সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. হামিমা আক্তার জানান সন্তান প্রসবের সময় পারভীন জরায়ুতে মারাত্বক আঘাত পান। এ কারণে অতিরিক্ত রক্ষক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
(তথ্যসূত্র: যুগান্তর ১৬ মে, ২০১২)
৫. গর্ভের জীবিত শিশুকে ‘মৃত’বলে অস্ত্রোপচার।
গর্ভে ৫ মাসের সন্তানের অবস্থা জানতে নাজমুন নাহার নামে একজন গর্ভবতী মা গিয়েছিলেন সিলেট নগরীর পুরনো মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাস সংলগ্ন একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে। ক্লিনিকের নাম ‘সিটি পলি ক্লিনিকÕ। ক্লিনিকের গাইনি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আফরোজা বেগম শীলা আলট্রাসনোগ্রাম করতে বলে। আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখে তিনি জানান গর্ভের সন্তান মারা গেছে। দ্রুত গর্ভপাত করাতে হবে। এর জন্য তিনি গর্ভপাতের ওষুধ দেন। ওষুধ দেয়ার দুইদিন পরও কোন কাজ হয়নি। ডাক্তারের পরামর্শে দুই দিনের মধ্যে অপারেশন করানো হয়। অপারেশনের পর দেখা গেল শিশুটি মৃত নয় জীবিত। এ অবস্থা দেখে রোগীর ভাই তাহমিদ হাসান চৌধুরী ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেও ডাক্তারের দেখা পাননি।
(তথ্যসূত্র: সমকাল ৫ জুন, ২০১২।)
৬. মাদারীপুরে ভুল চিকিৎসায় দুই নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ
রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট সেন্ট্রাল ক্লিনিক। ডাক্তারের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় দুই নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে রাজৈর উপজেলার নাগরদী গ্রামের শঙ্কর বিশ্বাসের স্ত্রী কণিকা রানী বিশ্বাসের প্রসব ব্যথা উঠলে ২৫ আগস্ট টেকেরহাট সেন্ট্রাল ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ক্লিনিকের ডাক্তার অপূর্ব কুমার মল্লিক ও মালিক এমদাদুল হক বয়াতি দুজনে ডাক্তার সেজে সিজার করার পর পরই নবজাতক মারা যায়। এ ছাড়া রাতে ভর্তি করা হয় পশ্চিম রাজৈর গ্রামের রিয়াজুল ইসলামের স্ত্রী শিউলি বেগমকে। ডাক্তার নাসিরউদ্দিনের তত্ত্বাবধানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এক সুস্থ শিশু সন্তানের জন্ম হয়। রাত তিনটায় শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে কর্তব্যরত আয়া বাবলি ফোনে ক্লিনিকের মালিককে জানালে তিনি বাবলিকে একটি ইনজেকশন দিতে বলেন। আয়া ইনজেকশন দেয়ার পর পরই শিশুটি মারা যায়। খবর পেয়ে পরদিন মাদরীপুরের রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (টিএইচও) মশিউর রহমান ক্লিনিক পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(তথ্যসূত্র: নয়া দিগন্ত ২৭ আগস্ট, ২০১২।)
৭. মুন্সিগঞ্জে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু ডাক্তার আটক
মুন্সিগঞ্জ শহরের বাগমামুদআলী পাড়া এলাকার জাহাঙ্গীরের স্ত্রী মিলিয়া মমতাজ পপির ২৪ আগস্ট সন্ধ্যায় প্রসব ব্যথা শুরু হলে তাকে মুন্সিগঞ্জ শহরের জুবলি রোডে মুন্সিগঞ্জ আধুনিক হাসপাতাল নামে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ভর্তি করার পর তাকে সিজারের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। ডাক্তার নাসিমা আক্তার মুন্নী এমবিবিএস ডাক্তার হলেও তিনি গাইনি বিশেষজ্ঞ না হয়েও সিজার অপারেশন করেন। ভূমিষ্ট হওয়ার পরই নবজাতক মারা যায়। প্রসূতির শারীরিক অবস্থা আশংকাজনক হলে ভাল করে সেলাই না করে রোগীকে ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দেন, হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার নাসিমা আক্তার মুন্নী। এতে প্রসূতির স্বজনরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। উত্তেজনার খবর পেয়ে পুলিশ এসে স্বজনদের শান্ত করে।স্বজনদের চাপের মুখে নাসিমা আক্তার মুন্নীকে পুলিশ আটক করে।পুলিশকে তিনি বলেন প্রসূতিকে বাঁচানোর লক্ষ্যেই তাকে ঢাকা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
(তথ্যসূত্র:সমকাল ২৫ আগস্ট, ২০১২।)
৮. নবজাতক শিশুকে মেয়াদোত্তীর্ণ ইনজেকশন প্রয়োগ
গাইবন্ধা সাঘাটা উপজেলার হাট ভরতখালী গ্রামের শাহজাহান মিয়ার গর্ভবতী স্ত্রী শারমিন আক্তারের প্রসব ব্যথা উঠলে ২২ মে তাকে শহরের কলেজ রোডে অবস্থিত গাইবান্ধা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওই দিন বিকেলে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে শারমিন একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। জন্মের পর শিশুটির সমস্যা দেখা দিলে ক্লিনিকের চিকিৎসক ‘সিডোব্যাক-২৫০, নামের সেফটাজিডিম ইনজেকশন প্রেসক্রিপশন করেন। ক্লিনিকে কর্মরত কর্মী ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে মেয়াদোত্তীর্ণ ইনসেফটা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির তৈরি ইনজেকশন দুই দফায় শিশুটিকে প্রয়োগ করা হয়।এতে শিশুটির অবস্থার অবনতি হয়।এর প্রতিবাদ জানালে গাইবান্ধা ক্লিনিকের ম্যানেজার কাঞ্চন কুমার বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও এক বছর পর্যন্ত ওষুধ ব্যবহার করা যায়। এ যুক্তি দেখিয়ে তৃতীয়বারের মত ওই ইনজেকশন দেন। ফলে শিশুটি আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঘটনা জানাজানি হলে ক্লিনিকে আসা রোগীর আত্মীয় স্বজন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।
(তথ্যসূত্র: কালের কণ্ঠ ২৭ মে, ২০১২।)
৯. শ্রীবরদীতে (শেরপুর) মেয়াদোত্তীর্ণ ইনজেকশন প্রয়োগে মৃত্যুর মুখে নবজাতক।
৯ আগস্ট শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার টাংগারপাড়া গ্রামের রেজুমিয়ার ১০ দিন বয়সী মেয়ে ঠাÛv জ্বরে আক্রান্ত হলে শিশুটিকে শ্রীবরদী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় হাসপাতালে কর্তব্যরত স্বাস্থ্য সহকারী খাদিজাতুল কোবরা হাসপাতালে শিশুটির চিকিৎসা না করে হাসপাতালের পাশে তার নিজস্ব ফার্মেসী রিফাত মেডিক্যোল হলে নিয়ে যায়। নবজাতককে সিডোব্যাক-২৫০ ইনজেকশন প্রয়োগ করে। আরেকটি পরে দেয়ার জন্য সঙ্গে দিয়ে দেন। শিশুটিকে বাড়িতে নিয়ে গেলে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। পল্লী চিকিৎসক শিশুটির দেহে পুশ করা এবং পরবর্তীতে দেয়ার জন্য যে ইনজেকশন দেয়া হয়েছে তা মেয়াদোত্তীর্ণ জানালে বিষয়টি সকলের গোচরে আসে। ওষুধের গায়ে মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ লেখা রয়েছে নভেম্বর ২০১১। মুমুর্ষ অবস্থায় শ্রীবর্দী হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার শিশুটিকে শেরপুর সদর হাসপাতালে পাঠান। পরবর্তীতে শিশুটি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে বলে জানা যায়। শ্রীবর্দী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুজাহিদুল ইসলাম বালেন, ঘটনাটি হাসপাতালের বাইরে ঘটেছে। কেউ অভিযোগ দিলে আইনাঅনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক ১৩ আগস্ট, ২০১২।)
১০. নওগাঁয় ভুল অপারেশনে নবজাতকের মৃত্যু। হাসপাতাল ঘেরাও, পুলিশ মেতায়েন।
নওগাঁ শহরের ইসলামী হাসপাতালে ডাক্তারের ভুল অপারেশনে এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।
নওগাঁ মান্দা উপজেলার গণেশপুর গ্রামের শামসুল আলমের স্ত্রী লাবনী গর্ভবতী অবস্থায় ইসলামী হাসপাতালের ডাক্তার ফাতেমা কামরুন নাহারের কাছে চিকিৎসা নিয়ে আসছিল। ১১ ফেব্রুয়ারি ডাক্তার ফাতেমা কামরুন নাহার রোগীকে পরীক্ষা করে সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করে দেন। ডাক্তারের দেয়া তারিখ মত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অপারেশন করে ডাক্তার ফাতেমা একটি মৃত শিশু প্রসব করান। লাবনীর স্বামী জানান অপারেশনের আগ পর্যন্ত পেটে শিশু নড়াচড়া করছিল। ওই নবজাতক শিশুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত চিহ্ন ছিল ও মাথা থেতলানো ছিল। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে এলাকার লোকজন রাতে হাসপাতাল ঘেরাও করে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
(তথ্যসূত্র: যায়যায়দিন ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১২।)
ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় নবজাতক মৃত্যু
ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় নবজাতক মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল:
১. চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে নার্স ও আয়া প্রসব করান। অজ্ঞতার কারণে শিশুটি মারা যায়।
২. হাসপাতালে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকায় চিকিৎসা ও সেবার অভাবে শিশু মারা যায়।
৩. মাথা কেটে গর্ভের সন্তান প্রসবের চেষ্টা করা হয়।
৪. জন্মের পর পরই শিশুটি মারা যায়।
৫. জীবিত শিশুকে মৃত বলে অস্ত্রোপচার ।
৬. ক্লিনিকের ডাক্তার অপূর্ব কুমার মল্লিক ও মালিক এমদাদুল হক বয়াতি দুজনে ডাক্তার সেজে সিজার করার পর পরই নবজাতক মারা যায়।
৭. ডাক্তার নাসিমা আক্তার মুন্নী এমবিবিএস ডাক্তার হলেও তিনি গাইনি বিশেষজ্ঞ না হয়েও সিজার অপারেশন করেন। ভূমিষ্ট হওয়ার পরই নবজাতক মারা যায়।
৮. জন্মের পর শিশুটির সমস্যা দেখা দিলে ক্লিনিকের চিকিৎসক ‘সিডোব্যাক-২৫০, নামের সেফটাজিডিম ইনজেকশন প্রেসক্রিপশন করেন। ক্লিনিকে কর্মরত কর্মী ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে মেয়াদোত্তীর্ণ ইনসেফটা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির তৈরি ইনজেকশন দুই দফায় শিশুটিকে প্রয়োগ করা হয়। এতে শিশুটির অবস্থার অবনতি হয়।
৯. মেয়াদোত্তীর্ণ সিডোব্যাক-২৫০ মি: ইনজেকশন প্রয়োগ করা হয়।
১০. লাবনীর স্বামী জানান অপারেশনের আগ পর্যন্ত পেটে শিশু নড়াচড়া করছিল। ওই নবজাতক শিশুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত চিহ্ন ছিল ও মাথা থেতলানো ছিল।
ডাক্তারের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু
১. ভোলায় ডাক্তারের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ।
ভোলা শহরের উকিলপাড়া ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার ক্লিনিকে চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত সন্তান প্রসব করার অভিযোগে ক্লিনিকে ভাংচুর চালিয়েছে তার স্বজনরা। ২০ জানুয়ারি ভোর বেলায় চরফ্যাশন উপজেলার আবু বকরপুর ইউনিয়নে সুমন তার স্ত্রীকে ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার ক্লিনিকে ভর্তি করেন। রাত ৮ টার দিকে একটি মৃত সন্তান প্রসব করেন তার স্ত্রী। ক্লিনিকের ডাক্তার ও নার্সের অবহেলায় ভূমিষ্ট হওয়া শিশুটি মারা গেছে এমন অভিযোগ করেন স্বজনরা। শিশুটি মৃত্যুর খবর পেয়ে মৃত শিশুর স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। রাত ১০ টায় ক্লিনিকে ইট পাটকেল ছুড়ে ক্লিনিকের জানালা-কপাট ভাংচুর করে।
(তথ্যসূত্র: নয়াদিগন্ত ২২ জানুয়ারি, ২০১২।)
২. কুষ্টিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রধান গেটে বন্ধ থাকায় এক নবজাতকের মৃত্যু।
কুষ্টিয়া দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রধান গেটে তালাবদ্ধ থাকায় বাইরে সন্তান প্রসব করতে বাধ্য হন এক মা। কিছুক্ষণের মধ্যে নবজাতকের মৃত্যু হয়। ৮ এপ্রিল সকাল ৯ টার দিকে দৌলতখাল চৌহদীমাঠ গ্রামের মোঃ টিপুর স্ত্রী মমতা খাতুনের প্রসব ব্যথা ওঠে। এ সময়ে টিপু মমতা খাতুনকে নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। প্রধান গেটে তালাবদ্ধ দেখে ভেতরে চিকিৎসদের খবর দেয়া হয়। কিন্তু কেউ মমতাকে দেখতে আসেনি। এক পর্যায়ে গেটের সামনেই সন্তান প্রসব করেন মমতা। এর পর তড়িঘড়ি করে মমতাকে হাসপাতালের ভেতর নেয়া হয়। হাসপাতালে নেয়ার আগেই নবজাতকের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় উপস্থিত লোকজন ও মমতার আত্মীয় স্বজনা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। তারা হাসপাতালের দরজা জানায় ভাংচুর করে। কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন তরুণ কান্তি হালদার উপস্থিত হয়ে তদন্তের আশ্বাস দিলে জনতা শান্ত হয়।
(তথ্যসূত্র: প্রথম আলো ৯ এপ্রিল, ২০১২।)
৩. চাঁপাইনবাগঞ্জের আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।
চাঁপাইনবাগঞ্জ পৌর এলাকার দ্বারিয়াপুর মহল্লার সাদরুল ইসলামের স্ত্রী বিউটি নবাব ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশন করে পুত্র সন্তান প্রসব করেন। বার্থ অ্যাসফিকসিঅ্যায় (অংঢ়যুীরধ) শিশুটি আক্রান্ত হলে ২২ আগস্ট সকাল ১০ টায় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডাক্তারা চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় শিশুটির অবস্থার অবনতি ঘটে। ২৩ আগস্ট সকালে শিশুটিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয় কিন্তু হাসপাতালে এ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন না থাকায় শিশুটি সকাল ১১ টায় মারা যায়। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অতিস সরকার অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের জানান, শিশুটিকে অত্যন্ত সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি ঘটলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরের পরামর্শ দেয়া হয়। শিশুটি বার্থ এ্যাসথেসিয়া রোগে মৃত্যুবরণ করে। তবে চিকিৎসক বা নার্সদের কোন অবহেলা রয়েছে কিনা তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক ২৪ আগস্ট, ২০১২।)
৪. অপচিকিৎসায় দুই নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ।
রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট সেন্ট্রাল ক্লিনিকে ডাক্তারের অবহেলা ও অপচিকিৎসায় ২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। রাজৈর উপজেলার নাগরদী গ্রামের শংকর বিশ্বাসের স্ত্রীকে ২৫ আগষ্ট প্রসব ব্যথা উঠলে টেকেরহাট সেন্ট্রাল ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ডাক্তার অপূর্ব কুমার মল্লিক ও সেন্ট্রাল ক্লিনিকের মালিক এমদাদুল হক নিজেই ডাক্তার সেজে সিজার অপারেশন করে বাচ্চা প্রসব করান। সিজার করার পরপরই নবতাজক টিমারা যায়। একই দিন ২৫ আগষ্ট রাজৈর উপজেলার পশ্চিম রাজৈর গ্রামের রিয়াজুল ইসলামের স্ত্রী শিউলি বেগমের প্রসব ব্যথা উঠলে বিকেলে তাকে টেকেরহাট সেন্ট্রাল ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। রাত ১০টার পর শিউলিকে ডাক্তার নাসির উদ্দিন সিজার করে। সিজারের পরই ডাক্তার কোন ফলোআপ না করেই রোগী ফেলে চলে যায়। রাত ১২ টায় নবজাতক অসুস্থ হয়ে পড়লে সেন্ট্রাল ক্লিনিকের মালিক এমদাদুল হককে জানালে তিনি একটি ইনজেকশন ও অক্সিজেন দিতে বলেন। ইনজেকশন দেয়ার পরপরই শিশুটি মারা যায়। মৃত্যুর ঘটনা ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে। এই ক্লিনিকে সার্বক্ষণিক কোন ডাক্তার নেই। বাহির থেকে ডাক্তার এনে কাজ করানো হয়। কাজ শেষ হলে ডাক্তার চলে যান। থানা নির্বাহী অফিসার আলহাজ্ব ডা. মোঃ মশিউর রহমান ক্লিনিক পরিদর্শন করে জানান ৫ আগস্টের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হবে। শিশু দুটি মৃত্যুর জন্য ক্লিনিকের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং ৫ আগস্টের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়া হবে।
(তথ্যসূত্র:ইত্তেফাক ২৭ আগস্ট,২০১২।) (ইত্তেফাক ৩ আগস্ট, ২০১২।)
৫. সরিষাবাড়ীতে নার্সের অবহেলায় মা ও নবজাতকের মৃত্যু।
ভর্তি হওয়ার ১০ ঘন্টার মধ্যে কোন ডাক্তারের দেখা না পেয়ে সরিষাবাড়ী হাসপাতালে এক প্রসূতি মা ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। সরিষাবাড়ীর ধানাটা গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে পারভিন আক্তার (৩০) প্রসব ব্যথা নিয়ে ২৮ এপ্রিল রাত ১২ টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়। রাতভর ব্যথায় কাতরালেও কর্তব্যরত নার্স শামীমা খাতুন কোনো ডাক্তার ডাকেনি। ২৮ এপ্রিল ভোরে পারভীন আক্তার একটি পুত্র সন্তান প্রসবের পরপরই নবজাতকটি মারা যায়। এক পর্যায়ে পারভিন আক্তারের অবস্থা অবনতি হয় এবং সকাল ৯ টার দিকে পারভীন আক্তারও মারা যায়। হাসপাতালের আরএমও ডা. সোহেল মাহমুদ নবী বলেন, সকাল ৮ টায় হাসপাতাল থেকে তাকে প্রসূতি রোগীর কথা জানানো হয়। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এম. এ. ওয়াহাব বলেন কর্তব্যরত নার্সের দায়িত্ব অবহেলার কারণে তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ করা হয়েছে। জামালপুরের সিভিল সার্জন ডা. নারায়ণ চন্দ্র দে বলেন ঘটনা তদন্তের জন্য ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
(তথ্যসূত্র:সমকাল ৩০ এপ্রিল, ২০১২।)
৬. চিকিৎসকের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ।
রাজধানীর মিরপুরে ২৭ জানুয়ারি রাতে চিকিৎসকের অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। মিরপুরে জনতা হাউজিংয়ের বিল্লাল হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা বেগমের প্রসব ব্যথা উঠলে তাকে এবিসি মেটারনিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময় ডা. রাবেয়া মরিয়মের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয় তিনি বাইরে আছেন সন্ধ্যায় আসবেন । ঐ সময়ের মধ্যে হাসপাতালে কোন ডাক্তার পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যা ৭ টায় ডা. রাবেয়া মরিয়ম এসে ফাতেমাকে দেখে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। অপারেশন করে ফাতেমা একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। নবজাককে ডাক্তার দ্রুত শিশু হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। নবজাতককে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
(তথ্যসূত্র: কালের কণ্ঠ ২৯ জানুয়ারি, ২০১২।)
৭. চিকিৎসকের অজ্ঞতার কারণে মরা সন্তান এক মাস গর্ভে ছিল মিতুর।
নারায়ণগঞ্জ নগরীর ১০/৯ এসি ধর রোড কালী বাজার এলাকার মিতু মনির স্বামী জানান মিতু গর্ভবতী হওয়ার পর থেকেই চাষাঢ়ার মর্ডান ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চিকিৎসক লায়লা পারভীন বানুর কাছে চিকিৎসা নেন। মিতুর শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে ২৬ জানুয়ারি তারা চিকিৎসক মাধবীকে দেখান। চিকিৎসক রোগীকে দেখে বলেন মা ও গর্ভের বাচ্চা ভাল আছে। কিন্তু দিন দিন মিতুর শরীর আরো খারাপ হতে থাকে। তাছাড়া গর্ভের শিশুর কোন নড়াচড়া তিনি অনুভব করছিলেন না। পরে ঢাকার এক চিকিৎসকের পরামর্শে আলট্রাসনোগ্রাম করে জানতে পারেন, গর্ভের সন্তান কমপক্ষে এক মাস আগে মারা গেছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি তারা বাহির থেকে যে আলট্রাসনোগ্রাম করেছে সে কথা গোপন রেখে আবার মাধবীর কাছে যান। তারা জানতে চান গর্ভের বাচ্চা কেমন আছে। এ সময়ও তিনি বলেন সন্তান ভাল আছে। এ সময় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। এদিকে মৃত বাচ্চার কারণে পেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করলে তাকে জরুরী ভাবে নারায়ণগঞ্জের মেডিস্টার ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি ভোরে মিতুর পেট থেকে মৃত সন্তান বের করা হয়। মিতুর অবস্থা গুরুতর। নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জ ডা. দুলাল চন্দ্র চৌধুরী জানান, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
(তথ্যসূত্র: সমকাল ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১২।)
৮. দুই ‘মৃত, নবজাতককে ডাস্টবিনে ফেলার ২ ঘন্টা পর নবজাতক দুটি কেঁদে উঠল ।
সাতাশ জুলাই খুলনা বাটিয়াঘাটার রিনা খাতুনের প্রসব ব্যথা উঠলে খুলনার দাকোপ উপজেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নেয়া হয়। কর্তব্যরত ডাক্তারকে ডাকাডাকি করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। এক পর্যায়ে প্রসূতি ভ্যানের উপরেই একটি শিশুর জন্ম দেন। প্রসূতির অবস্থা খারাপ হলে তাকে ডেলিভারী কক্ষে নেয়ার পর ডাক্তার সন্তোষ কুমার আসেন। তিনি ওই প্রসূতির গর্ভ থেকে আরো একটি শিশু প্রসব করান এবং দুটি শিশুকেই মৃত ঘোষণা করে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। ঘন্টা দুয়েক পর নার্স কাবেরী আত্মীয়দের ‘মৃত, বাচ্চাদের নিয়ে যাবার জন্য বলেন। প্রসূতির মা বাচ্চা দুটি তুলে নিতেই বাচ্চা দুটি চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠে। রোগীর লোক ক্ষুব্ধ হয়ে ডাক্তারের কাছে জানতে চান কেন তিনি জীবিত বাচ্চাকে মৃত বলে ফেলে দিলেন। বাচ্চা জীবিত আছে জানার পর ডাক্তার বিব্রতকর অবস্থায় পরে শিশু দুটিকে খুলনা নিয়ে যেতে বলেন। খুলনা নেয়ার পথে একটি শিশু মারা যায়। অন্য শিশুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। শিশু দুটির বাবা আশিক বলেন, ডাক্তারের অবহেলায় তার যমজ শিশুদের মৃত্যু হয়েছে। শিশু দুটির বাবা আশিক বলেন, ডাক্তারের অবহেলায় তার যমজ শিশুদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনা তদন্ত করার জন্য ডেপুটি সিভিল সার্জন ইয়াসিন আলীকে দেয়া হয়।
(তথ্যসূত্র: ইত্তেফাক ৩ আগস্ট, ২০১২।)
ডাক্তারের অবহেলায় ৬ টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে । ডাক্তারের অজ্ঞতার কারনে ২ টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে ।
ডাক্তারের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু
ডাক্তারের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল:
১. ভোর বেলায় ভর্তি হলেও সারাদিন ডাক্তাররা কোন চেষ্টা করেন নি। ফলে রাত ৮ টার দিকে একটি মৃত সন্তান প্রসব করেন তার স্ত্রী। ক্লিনিকের ডাক্তার ও নার্সের অবহেলায় ভূমিষ্ট হওয়া শিশুটি মারা গেছে এমন অভিযোগ করেন স্বজনরা।
২. নিয়মিত তিনি এক ডাক্তারের কাছে ফলোআপা করাতেন। গর্ভবতী মা গর্ভের শিশুর কোন নড়াচড়া অনুভব করছিলেন না। সেই জন্য ডাক্তার দেখিয়ে ছিলেন ডাক্তার বলেছিলেন শিশুটি ভাল আছে। পরে ঢাকার এক চিকিৎসকের পরামর্শে আলট্রাসনোগ্রাম করে জানতে পারেন, গর্ভের সন্তান কমপক্ষে এক মাস আগে মারা গেছে।
৩. হাসপাতালের প্রধান গেটে তালা থাকার কারণে সময় মত ভিতরে ডুকতে না পারার জন্য হাসপাতালের বাইরে বাচ্চা প্রসব করেন। পরে শিশুটি মারা যায়।
৪. শিশুটি বার্থ এ্যাসফিকসিঅ্যায় আক্রান্ত ছিল। ডাক্তারা চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় শিশুটির অবস্থার অবনতি ঘটে। পরে শিশুটিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় কিন্তু হাসপাতালে অক্সিজেন না থাকায় শিশুটি মারা যায় ।
৫. সিজারের পরই ডাক্তার কোন ফলোআপ না করেই রোগী ফেলে চলে যায়। রাত ১২ টায় নবজাতক অসুস্থ হয়ে পড়লে সেন্ট্রাল ক্লিনিকের মালিক এমদাদুল হককে জানালে তিনি একটি ইনজেকশন ও অক্সিজেন দিতে বলেন। ইনজেকশন দেয়ার পরপরই শিশুটি মারা যায়।
৬. ডাক্তারের অজ্ঞতার কারণে জীবিত শিশুকে মৃত বলে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হয়।
৭. সময়মত ডাক্তার না পাওয়ায় প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।
৮. সময়মত ডাক্তার না পাওয়ায় প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।