হাওরে ফসলহানি: প্রাকৃতিক নাকি মানবসৃষ্ট?
ফরিদা আখতার || Sunday 24 April 2022 ||আধুনিক জাতের ধান উৎপাদন সম্পর্কে কৃষকদের অভিযোগ হচ্ছে হঠাৎ বন্যা এবং বেঁটে জাতের ধান তলিয়ে যাওয়া। যার জন্য বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু সেটা ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় কৃষক মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কৃষকেরা তাই বাঁধের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু দেশি ধানের ক্ষেত্রে সেটা কখনও প্রকট সমস্যা হয়ে দেখা দেয়নি। তারপরও প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্যের কোনো হদিস না নিয়ে বলা হচ্ছে স্বল্পকালীন জাত উদ্ভব করা দরকার। অথচ দরকার পরিবেশের সাথে খাপ খায় এমন ধান যেখানে কোনো সার, বিষ বা বাড়তি পানি লাগে না।
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হাওরে বন্যার পানি আসা বন্ধ করা যাচ্ছে না, তাই কৃষকেরা বোরো ধান না পাকতেই তুলে ফেলছেন। এরপর বন্যার পানি আরো বেড়ে গেলে এখন যা পাওয়া গেছে সেটাও পাওয়া যাবে না, এই ভয়ে। সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলার বিভিন্ন হাওরে পাহাড়ি ঢল এবং বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বোরো ধানের ফসল তুলে কৃষক হেসে বাড়ি ফিরতে পারল না, তাদের আধাপাকা ধান তুলেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। নইলে যে বিপদ আরও বড়।
হাওরে পাহাড়ি ঢল নতুন কিছু না। সংবাদপত্রে এ নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হচ্ছে। তাতে জানা যাচ্ছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া ফসলরক্ষা বাঁধ টিকছে না। জগন্নাথপুর উপজেলার নলুয়ার হাওরে একটি ফসলরক্ষা বেড়িবাঁধের কাজ সঠিকভাবে হয়নি বলে বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। এবং বেড়িবাঁধে ফাটল ধরে চুইয়ে চুইয়ে পানি ঢুকছে। নলুয়ার হাওর উপজেলার সবচেয়ে বড় হাওর। কাজেই এখানে ফসলরক্ষা বাঁধ না টিকলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
সুনামগঞ্জের আরও একটি উপজেলা তাহিরপুরে গুরমার হাওরের একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের কয়েকটা স্থান দিয়ে বিপজ্জনকভাবে পানি চুইয়ে পড়ছে। কৃষকেরা নিজেরাই বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছেন, কিন্তু কোনো কূল-কিনারা করতে পারছেন না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী হাওরের বাঁধ এমনভাবে তৈরি করা হয়, যাতে একটা নির্দিষ্ট সীমার পর বর্ষা মৌসুমে হাওরে ঠিকমতো পানি প্রবেশ করতে পারে। এই বাঁধ ডুবন্ত বাঁধ (submersible embankment) নামে পরিচিত। এ বাঁধগুলোর প্রধান উদ্দেশ্যই হচ্ছে আগাম বন্যা থেকে ফসল রক্ষা করা। বোরো ধান তোলার সময় পর্যন্ত ১৫ মে পর্যন্ত হাওরে পানি প্রবেশ আটকে রাখা। অর্থাৎ হাওরে আগাম বন্যার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, কিন্তু এরপরও পানি ঢুকে ধান নষ্ট হচ্ছে। এর কারণ মূলত বাঁধগুলোই ত্রুটিপূর্ণ।
কৃষকদের আহাজারি শোনা গেলেও আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও কর্তাব্যক্তিরা এ বিষয়ে তেমন উদ্বিগ্ন নন বলেই মনে হচ্ছে। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক সুনামগঞ্জে আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন হাওর পরিদর্শনে এসেছিলেন এবং নিজ চোখে সব কিছু দেখেছেন। কিন্তু তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে বাস্তব চিত্র অনুধাবন না করে একে সংখ্যার রাজনীতিতে পর্যবসিত করেছেন। তিনি বলেছেন বাঁধের কাজের মান ভাল হয়েছে, তাই "সেই ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি"। তিনি আরও বলেছেন, সুনামগঞ্জে ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল হয়েছে। সেখানে এ পর্যন্ত মাত্র ৫ হাজার হেক্টর জমির ক্ষতি হয়েছে। এটা ২ লাখ ২৩ হাজারের মধ্যে কোনো "পার্সেন্টেজের" ভেতরে আসে না (প্রথম আলো, ২০ এপ্রিল, ২০২২)। সংখ্যার হিসাব দিয়ে ক্ষুদ্র কৃষকদের অভিযোগ নস্যাৎ করা খুবই অমানবিক হয়েছে। এতে তিনি বাঁধের ঠিকাদারি সুবিধা যারা পেয়েছে তাদের পক্ষাবলম্বন করেছেন। সুনামগঞ্জ ছাড়াও কিশোরগঞ্জ ও ব্রাম্মণবাড়িয়ার হাওরেও উজান থেকে নেমে আসা বানের পানি ঢুকে বিস্তীর্ণ এলাকার বোরো ধানক্ষেত তলিয়ে গেছে।
বোরো ধানের কত ক্ষতি হয়েছে, তা নিয়ে আর এক গোল বেধেছে। কৃষি বিভাগের তথ্য ও কৃষক যারা এই ফসল ফলান, যারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের হিসাব এক নয়। কৃষি বিভাগ কোনো এক অজানা কারণে ক্ষতিটা কম করে দেখাচ্ছে, আর কৃষকেরা বলছেন আরও বহুগুণ বেশি ক্ষতি হয়েছে। যেমন সুনামগঞ্জের বোরো ফসলের ক্ষতি সম্পর্কে জেলা কৃষি বিভাগ জানাচ্ছে ছোট-বড় ১৭টি হাওর ও বিলের ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ ৫ হাজার ৫১০ হেক্টর। হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, বামৈ ও বুল্লা ইউনিয়নের প্রায় ৫০০ হেক্টরের ধান তলিয়ে গেছে। সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জের ফসলের ক্ষতির আর্থিক মূল্য ধরা হয়েছে ৯৭ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার টাকা। ব্রাম্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে কৃষি বিভাগ মাত্র ৪০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে বলে দাবি করছে। অথচ কৃষকেরা বলছেন, কৃষি বিভাগের তথ্য মনগড়া।
এখন দেখা যাক আমাদের নীতি নির্ধারণ এবং প্রশাসনে যারা আছেন, তারা কৃষকদের জন্যে কী সমাধান নিয়ে আসছেন। প্রথমত, ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে যে ত্রুটি ছিল এবং মানসম্মত না হওয়ার কারণে বন্যার ক্ষতি যে বেশি হয়েছে, তার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি? না সেটা হয়নি। কোনো সংবাদমাধ্যমে তেমন খবর দেখা যায় নি, অন্তত আমি পাইনি। বরং বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে সরকারদলীয় স্থানীয় নেতাদের সম্পৃক্ততা মিলেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদেরও গাফিলতি ছিল। দুর্নীতি ও কর্মকর্তাদের ব্যর্থতার বিষয় বেমালুম চেপে যাওয়া হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে যা ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে কম দেখানো হচ্ছে। হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য গুরুত্বপুর্ণ। তারা বলছেন, 'ক্ষতি কম দেখানো মানে কৃষকের আরও ক্ষতি করা; বাঁধ নির্মাণে যারা অনিয়ম-দুর্নীতি করেছে, তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করা। কৃষি বিভাগ যেন এটা না করে।'
দ্বিতীয়ত, প্রশাসন পানি আরও বাড়তে পারে, এ আশংকায় কৃষকদের ধান কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। বোরো ধান এখনো পুরোপুরি পাকেনি, বলতে গেলে আধাপাকা অবস্থায় আছে। কৃষিতে ফসল কাটা নির্দিষ্ট সময়ের আগে চাইলেও করা যায় না। এখন হাওরে বোরো ধান আধাপাকা অবস্থায় আছে। তবুও কৃষকরা নিজেরাও ভেবেছেন এত কষ্ট করে লাগানো ধান সবটাই যদি ক্ষতি হয় তাহলে তাদের দুর্দশার সীমা থাকবে না। তাই তারাও ধান কাটতে নেমে গেছেন। যে ধান কাটা হয়েছে সেগুলো কৃষকের মতে গরুকে খাওয়ানো যেতে পারে।
এই সময় কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না বলে জাতীয় সংসদে যে কথা উঠেছে তার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। পত্রিকার খবরে দেখা যাচ্ছে বাইরের জেলার প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক এবং জেলার পৌনে তিন লাখ শ্রমিকসহ কৃষকরা ক্ষেতে নেমে ধান কাটছেন (বিডিনিউজ২৪.কম, ২২ এপ্রিল)। সরকারিভাবে ৪৩৫টি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টর, ১০৮টি রিপার যন্ত্র দিয়ে ধান কাটতে সহায়তা করেছে। দেখা যাচ্ছে সরকারের নীতি হচ্ছে কৃষি শ্রমিক নয়, বরং কৃষিযন্ত্রের ব্যবসায়ীদের মুনাফা হোক। কৃষকের চেয়ে কোম্পানিগুলোর ব্যবসা ভালই হয়েছে।
তৃতীয়ত, কৃষি মন্ত্রণালয় আগাম জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে হাওরে ফসল উৎপাদনের ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করছে যেন এপ্রিল মাসের ১০-১২ তারিখের দিকেই ধান কেটে ফেলা যায়। অথচ হাওরে পানি আসছে মার্চের শেষ থেকেই এবং এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়েও যথেষ্ট ক্ষতি হয়ে গেছে [ বিডিনিউজ২৪.কম, ১৮ এপ্রিল]। জানতে চাই, তাহলে কত আগাম বা আর্লি ভ্যারাইটি তারা করবেন? তার চেয়ে বোরো ধান করা হবে কি না সেটা নিয়ে ভাবা উচিত নয় কি?
একটি হিসাবে দেখা যায়, হাওর আছে এমন সাতটি জেলায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ১২ লক্ষ ছয় হাজার হেক্টর, যার শতকরা ৬৬ ভাগই হাওর এলাকার মধ্যে পড়ে। একসময় হাওরের প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্যের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করে কৃষক চাষাবাদ করতেন। যার লক্ষ্য ছিল শুধু মানুষের জন্য ধান উৎপাদন নয়, একই সঙ্গে পশু খাদ্য উৎপাদন করা। সেই ক্ষেত্রে বামন বা বেঁটে ধানের জাত কৃষক পছন্দ করত না। কারণ গবাদি পশুর খড়ের জন্য দরকার দেশি ধান, যেগুলো পানিসহিষ্ণু শুধু নয় তাদের খড়ের পরিমাণও অধিক। হঠাৎ পানি এলেও কিংবা কিছু সময় ডুবে থাকলেও সেই ধানের কোনো ক্ষতি হতো না। কিন্তু ধানের পরিমাণগত বৃদ্ধির ধোয়া তুলে হাওরে আধুনিক উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ শুরু করা হয়েছে। ফলে ধীরে ধীরে হাওরের পরিবেশের উপযোগী দেশি জাতের ধান হারিয়ে গিয়েছে। এলাকার গবাদিপশুর খাদ্যের মারাত্মক অভাবের কারণে গবাদি পশুর সংখ্যাও মারাত্মকভাবে কমে গিয়েছে। একইভাবে হাওয়ে পরিযায়ী পাখির সংখ্যাও কমেছে। ধান চাষের সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে হাজার হাজার হাঁস পালনের যে সুবিধা হাওরে ছিল, সেটাও নষ্ট করা হয়েছে। আধুনিক কৃষি, বলা বাহুল্য, খাদ্য বলতে শুধু ধান বোঝে, গবাদি পশু-পাখি বোঝে না। যে সকল আধুনিক উফশি ধান চাষ করা হয় তা আমাদের পুষ্টির নিশ্চয়তা দিতে পারে না, যে কারণে বাংলাদেশের খাদ্যসংকটের চেয়েও পুষ্টির সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। কিন্তু তারপরও সরকার পরিকল্পিতভাবে স্থানীয় জাত বিলুপ্ত করে এবং হাওরের পরিবেশ ধ্বংস করে সার ও বিষনির্ভর আধুনিক জাতের ধান প্রবর্তন করছে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, কিশোরগঞ্জ ও হবিগঞ্জে যথাক্রমে প্রায় ৯৪ ও ৮৭ ভাগ জমি উফশি তথাকথিত 'আধুনিক' জাতের অধীনে চলে গিয়েছে। তার মানে বিষ ও রাসায়নিক সারের ব্যবহারও বেড়েছে মারাত্মকভাবে। এসব এলাকায় প্রধানত এখন ব্রি২৮ ও ব্রি২৯ জাত ব্যবহার হয়। এই এলাকায় মাটির তলার পানি তুলে এই সকল জাত চাষাবাদ করা হয়। কিশোরগঞ্জের প্রায় ৮৭ ভাগ জমি এখন যান্ত্রিক চাষাবাদের অধীনে।
অন্যদিকে গবেষণায় জানা যায়, আধুনিক জাতের ধান উৎপাদন দেশি জাতের ধানের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ, কিন্তু ফলন দেশি ধানের তুলনায় শুধু ৭৯ শতাংশ বেশি। ফলে খরচের বড় অংশই সার, বিষ, পানি ও চাষের বলদের অভাবে ট্রাক্টরের মালিকদের কাছে চলে যায়। কৃষকের কোনো লাভ হয় না।
তারপরও আধুনিক জাতের ধান উৎপাদন সম্পর্কে কৃষকদের অভিযোগ হচ্ছে হঠাৎ বন্যা এবং বেঁটে জাতের ধান তলিয়ে যাওয়া। যার জন্য বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু সেটা ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় কৃষক মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কৃষকেরা তাই বাঁধের ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু দেশি ধানের ক্ষেত্রে সেটা কখনও প্রকট সমস্যা হয়ে দেখা দেয়নি। তারপরও প্রকৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্যের কোনো হদিস না নিয়ে বলা হচ্ছে স্বল্পকালীন জাত উদ্ভব করা দরকার। অথচ দরকার পরিবেশের সাথে খাপ খায় এমন ধান যেখানে কোনো সার, বিষ বা বাড়তি পানি লাগে না। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কাছে দেশি জাত সংরক্ষিত থাকবার কথা। সেই সকল ধান প্রবর্তনের চেষ্টা করা দরকার কিংবা দেশি পানিসহনশীল জাত থেকে নতুন ধান উদ্ভাবনের চেষ্টা দরকার। বেশ কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে যে ধান ব্রি ধান২৮ ধানে ব্লাস্ট ও বিএলবি রোগের ব্যাপক প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তাই বোরো মৌসুমে ধানের শীষে ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়ার আগেই কৃষদের মধ্যে ব্যাপক ছত্রাক নাশকের ব্যবহার বেড়েছে। আধুনিক কৃষিতে রাসায়নিক সার ও বিষ ব্যবহারের কারণে হাওরে মাছের উৎপাদন কমে গিয়েছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বহুদিন ধরেই পরিবেশ ও প্রাণ ব্যবস্থাপনানির্ভর কৃষিব্যবস্থা প্রবর্তনের ওপর জোর দিয়ে আসছে। বিজ্ঞানীদের ভাষায় যা Eco-systemic Approach to Agriculture নামে পরিচিত। অর্থাৎ একটি এলাকার প্রাণ ও পরিবেশের চরিত্রের প্রতি খেয়াল রেখে সেখানে কী ধরনের কৃৎকৌশল ও কৃষি ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করতে হবে সেটা কৃষকের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্ণয় করতে হবে। ল্যাবরেটরিতে একটি ধানের জাত আবিষ্কার করে প্রাণ, পরিবেশ ও প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য আমলে নিয়ে তথাকথিত আধুনিক চাষাবাদের যে ধরন চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে তার পরিণতি শেষাবধি ভাল হতে পারে না। হাওরের সমস্যা সমাধান করতে হলে আধুনিক কৃষির নামে হাওরের প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংস করা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। বরং অগ্রসর এবং অত্যাধুনিক প্রাণ ও প্রকৃতিসম্মত কৃষি ব্যবস্থা প্রণয়ন, প্রবর্তন ও চর্চা করতে হবে।
এই ক্ষেত্রে আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীদের প্রভূত ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে সবার আগে সচেতনতা জরুরি।
বিশেষ দ্রষ্টব্য
এই লেখাটি ১ এপ্রিল, ২০২২ তারিখে 'হাওরে ফসলহানি: প্রাকৃতিক নাকি মানবসৃষ্ট?' এই শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছে।