তামাক চাষ মাটির পুষ্টি কেড়ে নেয়, এক্ষুণি বন্ধ করা দরকার

অন্য ফসলের তুলনায় তামাক চাষে অধিক নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম প্রয়োজন হয়। একই ভাবে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা অণু খাদ্যেরও প্রয়োজন হয়। কৃষকরা নাইট্রোজেনের চাহিদা পূরণের জন্য ইউরিয়া, ফসফরাসের জন্য টিএসপি বা ডিএপি এবং পটাশিয়ামের ঘাটতি পূরণের জন্য এমওপি ব্যবহার করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কৃষকরা এই তিন ধরণের সার ব্যবহার করেন। তবে ক্রমাগতভাবে তামাক চাষের ফলে ব্যাপক হারে অণুখাদ্যের ঘাটতি হয়। ফলে তামাকের ফলন কমে যায়। এ অবস্থায় কৃষকরা তামাক চাষ বন্ধ করে অন্য ফসল আবাদ করেন। কিন্তু অন্য ফসলের ফলনও ভাল হয় না।
বৃদ্ধি ও প্রজননের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের অনুপস্থিতিতে গাছপালা স্বাভাবিক জীবনচক্র সম্পূর্ণ করতে পারে না। লিবিগের ন্যূনতম আইন অনুসারে গাছপালার বৃদ্ধির জন্য মোট ১৭টি মৌলিক উপাদান প্রয়োজন।
গাছপালার পরিপূর্ণ জীবন চক্রের জন্য দুই ধরণের পুষ্টির প্রয়োজন-ম্যক্রোনিউট্রিয়েন্ট এবং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট। নাম থেকেই বোঝা যায় গাছপালার জন্য প্রচুর পরিমাণে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ম্যক্রোনিউট্রিয়েন্ট। এর মধ্যে আছে-কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, সালফার, ক্যালসিয়াম, এবং পটাশিয়াম। কার্বন, অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেন বাতাস ও পানি থেকে শোষিত হয়। অন্যান্য পুষ্টি মাটি থেকে পাওয়া যায়।
মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট গাছপালার জন্য খুব অল্প পরিমাণে প্রয়োজন। যেমন-সাধারণ লবন। মানুষের খাদ্যের মধ্যে অল্প পরিমাণে প্রয়োজন। মানুষের খাদ্যে যেমন লবন না হলে চলেই না। তেমনই গাঠপালার মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট না হলে চলে না। মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট এর মধ্যে রয়েছে-আয়রন, জিঙ্ক, বোরন, ক্লোরিন, ম্যাঙ্গানিজ, মলিবডেনাম,ও নিকেল।
ওজন অনুসারে পরিবেশ ভেদে মাটিতে ১-৬% জৈব পদার্থ থাকে। জৈব পদার্থ ম্যক্রোনিউট্রিয়েন্ট এর প্রধান উৎস।
একই জমিতে বার বার তামাক চাষ করলে মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়। তখন কৃষক এ জমিতে তামাক বা অন্যান্য শস্য অবাদ করেও উৎপাদনশীলতা পায় না। তামাক চাষে সব ক্ষেত্রেই মাটির উর্বরতা হ্রাস পায়। তামাক মাটি থেকে অতিরিক্ত পুষ্টি গ্রহণ করে। ফলে মাটির উর্বরতার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে (https://www.omicsonline.org )।
এ রকম অসহায় অবস্থায় জৈবসার মাটির উর্বরতা উন্নত করতে ব্যাপকভাবে অবদান রাখে। তদুপরি জৈবসার মাটির গঠন, টেক্সার এবং বায়ু চলাচলের মাধ্যমে মাটির পানি ধরে রাখার দক্ষতা বৃদ্ধি করে এবং সুস্থ শিকড় বিকাশে ভূমিকা রাখে।
জৈব সার যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে মাটির উৎপাদনশীলতা ক্রমাগত উন্নতি সাধন করে। বায়ু চলাচলসহ মাটির গঠন উন্নত করতে সাহায্য করে। উপকারী অণুজীবগুলিকে বাঁচিয়ে রাখে। এরা মাটিতে পুষ্টি যুক্ত করতে সহায়তা করে। মাটিতে অম্লতা কমায়। উপকারী অণুজীব বাঁচিয়ে রাখে। প্রাণবৈচিত্র্য বৃদ্ধি করে। পানি অনুপ্রবেশের মাধ্যমে পুষ্টি বজায় রাখে। ভূগর্ভস্থ পানি দূষণের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা স্থবির বা হ্রাস পাচ্ছে। এ প্রবনতা গুরুতর ইঙ্গিত বহনকরে। কারণ,রাসায়নিক সার ব্যবহার বৃদ্ধি সত্ত্বেও এই প্রবনতাগুলি ঘটছে। এ ক্ষেত্রে মাটির জৈব পদার্থের ঘাটতি কম উৎপাদনের প্রধান কারণ। যা বাংলাদেশের কৃষির জন্য সবচেয়ে গুরুতর হুমকি।
বর্তমানে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মাটিতে ১৭ গ্রাম/কেজির কম এবং কিছু মাটিতে ১০গ্রাম/কেজি জৈব পদার্থ রয়েছে। বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদনে সব চেয়ে বড় সমস্যা মাটিতে জৈব পদার্থের ঘাটতি।
মাটিতে জৈব পদার্থ বাড়ানোর জন্য সবুজসার, কম্পোষ্ট, গোবর, অ্যাজোলা ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে (https://link.springer.com )।
তামাক একটি আগ্রাসী গাছ। দ্রুত মাটির পুষ্টি শেষ করে। গাছ-পালার জগতে অন্যতম উচ্চফলনশীল প্রজাতি ভুট্টা (C4)। ভুট্টার খাদ্য চাহিদাও বেশি। তবে তামাক ভুট্টার তুলনায় আড়াইগুণ বেশি নাইট্রোজেন,সাতগুণ বেশি ফসফরাস এবং আটগুণ বেশি পটাশিয়াম খরচ করে।
সর্বোপরি তামাক চাষ চরম পরিবেশ দূষণও ঘটায় (https://www.ncbi.nih.gov )।
খাদ্য সার্বভৌমত্ব এবং পরিবেশের স্বার্থে অবিলম্বে তামাক চাষ বন্ধ করা প্রয়োজন।