বিটি বেগুনের চারা বিতরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
বিটি বেগুন বিরোধী মোর্চা || Friday 24 January 2014 ||গত ২৩ জানুয়ারি, ২০১৪ তারিখ শাহবাগের মোড়ে বিটি বেগুন বিরোধী মোর্চার আয়জনে মানববন্ধন ও উন্মুক্ত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতি বিবেচনা না করে কৃষকদের মাঝে বিটি বেগুনের চারা হস্তান্তর করায় বিটি বেগুন বিরোধী মোর্চা তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানায়। বিটি বেগুন বিরোধী মোর্চা ২০১৩ সালে বিটি বেগুনের বাণিজ্যিক চাষের উদ্যোগের বিরদ্ধে স্বাস্থ্য, পরিবেশ, নারী ও মানবাধিকার সংগঠন সমুহের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি মোর্চা। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিটি বেগুনের গবেষণায় মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য নিরাপদ প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত যেন বাণিজ্যিক চাষ করা না হয় তার জন্য আন্দোলন করা এবং সচেতনতা সৃষ্টি করা। গতকাল ২২ জানুয়ারি, ২০১৪ তারিখে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বারি) আয়োজনে বাংলাদেশ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদে আনুষ্ঠানিকভাবে ২০ জন কৃষকের মাঝে কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বিটি বেগুনের চারা বিতরণ করেছেন। চারটি জেলার (গাজীপুর, জামালপুর, রংপুর ও পাবনা) ২০ জন কৃষকের মাঝে এই চারা বিতরণ করা হয়েছে। ডগা ও ফল ছিদ্রকারি পোকা দমনের নামে এই বিতর্কিত জেনেটিকালী মডিফাইড খাদ্য ফসল বাংলাদেশের মতো কৃষি নির্ভর দেশে প্রবর্তন করে কৃষক ও ভোক্তাদের জন্যে হুমকি তৈরি করা হচ্ছে। বহুজাতিক কোম্পানীর স্বার্থ রক্ষার জন্যে বাংলাদেশের মানুষের জন্য ক্ষতিকর ফসল প্রবর্তনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। বিটি বেগুনের উদ্দেশ্য হিশেবে বলা হয়েছে বেগুনের ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকা (FSB) প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং বলা হচ্ছে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে না। কিন্তু বিটি বেগুন গাছকেই বিষাক্ত করে দেয়া হচ্ছে এবং বেগুনে আরও যেসব পোকা ও রোগের আক্রমন হয় তার জন্যে বিষ ব্যবহার কমছে না। কাজেই কীটনাশক ব্যবহার কমাবার যুক্তি নিছক অজুহাত হিশেবে ব্যবহার করে বাংলাদেশের স্থানীয় জাতের বেগুন বিদেশী কোম্পানীর হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশে বেগুনের ওপর জেনেটিক ইঞ্জিনীয়ারিং কৃষকের চাহিদার কারণে হয়নি, বরং এটা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএআইডি এর আর্থিক সহায়তায় বহুজাতিক বীজ কোম্পানি মনসান্টো এর ভারতীয় সহযোগী প্রতিষ্ঠান মাহিকো সিড কোম্পানির সহযোগিতায়। তিনটি দেশ ভারত, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশে এই গবেষণা করা হলেও খোদ ভারতেই এর চাষের অনুমতি মেলেনি, ফিলিপাইনেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই কোম্পানি বাংলাদেশে চাষ করার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে। সরকারের কাছে আহবান জানাচ্ছি যেন বিটি বেগুন চাষের কারণে পরিবেশ দূষণ, স্থানীয় জাতের বেগুনের দুষণ হওয়া এবং এই বেগুন খাওয়ার কারণে স্বাস্থ্যের ক্ষতির যে আশংকা বিজ্ঞানী, স্বাস্থ্য ও পরিবেশবাদীরা করছেন সে সম্পর্কে সম্পুর্ণভাবে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত যেন চাষের কাজ স্থগিত করা হয়।
বিটি বেগুন মানুষের খাদ্য হিসেবে উপযুক্ত বলে প্রমাণিত হয়নি। বিভিন্ন প্রাণীর উপর বিটি বেগুন নিয়ে গবেষনায় দেখা গেছে, বিটি বেগুন এমন প্রোটিন তৈরি করে যা এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধক, অর্থাৎ এন্টিবায়োটিক ওষুধ শরীরে কাজ করবে না। তাছাড়া লিভারে সমস্যা এবং রক্ত জমাট বাধার সমস্যা দেখা গেছে। নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য এই বেগুন ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
দেশের কৃষি বিজ্ঞানী, পরিবেশকর্মী, বিভিন্ন নারী মানবধিকার ও পরিবেশ সংগঠনের পক্ষ থেকে বিটি বেগুনের স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ক্ষতির বিষয়ে সরকারে সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহে ইতিমধ্যে বিভিন্নভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করা সত্ত্বেও ও, এই বিষয়ে সুষ্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা না দিয়ে কৃষক পর্যায়ে বিটি বেগুন চাষের উদ্যোগ ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। জনস্বাস্থ্য ও প্রাণবৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।
বিদেশী কোম্পানী তাদের নিজেদের স্বার্থে বিটি বেগুনের পক্ষে মনগড়া তথ্য দিয়ে সরকারকে বিভ্রান্ত করছে। দেশ- বিদেশের স্বাধীন বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে এই বিটি বেগুনের স্বাস্থ্য ক্ষতি, পরিবেশ ঝুঁকি ও কৃষকের অধিকার হরণের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। তাই অন্য দেশে বিটি বেগুন স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ কেন এই ঝুঁকি দিয়ে নিজেদের জনগন গিনিপিগ বানাচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। বিটি বেগুন বিরোধী মোর্চার পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয় যে সরকার জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও প্রাণ বৈচিত্র রক্ষার স্বার্থে অবিলম্বে বিটি বেগুনের কৃষক পর্যায়ে চাষ বন্ধের পদক্ষেপ নিবে।
ফরিদা আখতারের সঞ্চালনায় বিটি বেগুন বিরোধী মোর্চার পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান চৌধুরী, ড. এম এ সোবহান,, আমিনুর রসুল, ইবনুল সাইদ রানা, সানজিদা সুলতানা, কাজী রেনুয়ারা বেগম, সৈয়দ সাইদুল আলম, মহিদুল হক খান, মো: জিল্লুর রহমান-শিসউক, সেলিনা রশিদ এবং কৃষক আক্কাচ মন্ডল।