বিটি বেগুনের অনুমোদিত ‘চাষ’ ও এর ফলাফল: অনুমোদনের শর্ত রক্ষা হচ্ছে না
বিটি বেগুন বিরোধী মোর্চা || Friday 23 May 2014 ||
ভুমিকা
বিটিবেগুন একটি জিএমও বা জেনেটিকালী মডিফাইড অর্গানিজম। ব্যাসিলাস থুরিনজেনসিস (bacillus thuringenesis সংক্ষেপে বিটি) ব্যাকটেরিয়া থেকে ক্রিসটাল জিন বেগুনে সংযোজন করা হয়েছে। উদ্দেশ্য হিশেবে বলা হয়েছে বেগুনের ফল ও কাণ্ড ছিদ্রকারী পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। বাংলাদশে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (BARI) এই গবেষণা করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য সংস্থা ইউএসএইডের বিশেষ কর্মসুচী ABSP II এর অধীনে। বিটিবেগুনের বীজ বারি ভারতের মাহিকো কোম্পানি থেকে এনেছেন। তাদের কাজ হচ্ছে বাংলাদেশের কৃষকদের দিয়ে এর পরীক্ষা করা।
বিটি বেগুনের ছাড়পত্রের জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বারি) ২০১৩ সালের জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে (১৪ জুলাই) কৃষক পর্যায়ে চাষ করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিল। যে কোন জেনেটিকালী মডিফাইড ফসল ছাড় দিতে হলে National Committee on Crop Biotechnology NTCCB সভা করেছেন ৭ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে। মাত্র তিন দিনের মধ্যে ২৩ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক গঠিত বায়োসেফটি কোর কমিটি এর কাছে মতামত/প্রতিবেদন চাওয়া হয়। অথচ নিয়ম অনুযায়ী ৯০ দিন সময় দেয়ার কথা। ন্যাশনাল কমিটি অন বায়ো সেফটি (National Committee on Biosafety, NCB) চারটি বিটি বেগুনের ছাড় দিয়েছে। এই চারটি বিটি বেগুন ১ (উত্তরা),বিটি বেগুন ২ (কাজলা),বিটি বেগুন ৩ (নয়নতারা) এবং বিটি বেগুন ৪ (ঈশ্বরদী-০০৬) নামে ছাড়া হয়েছে।
পত্রিকার সুত্রে জানা গেছে বিটি বেগুন কৃষক পর্যায়ে ছাড় দেওয়ার পক্ষে-বিপক্ষে মন্ত্রণালয়ের সভাতেই বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য এসেছে। কিন্তু সেসব মতামত আমলে নেয়া হয় নি। সবশেষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিশাখা-২ প্রজ্ঞাপন নং ২২.০০.০০০০.০৭৩.০৫.০০৩.২০১২-২৭১ বিটি বেগুনের সাতটি“শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন” প্রদান করেছে ৩০ অক্টোবর, ২০১৩ তারিখে।[http://bari.gov.bd/home/latest_news]
চারা বিতরণ
জানুয়ারি, ২০১৪ সালের ২২ তারিখে কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরি গাজীপুর, জামালপুর, পাবনা ও রংপুর এলাকার ২০ জন বাছাই করা কৃষকের মাঝে আনুষ্ঠানিকভাবে বিটি বেগুনের চারা রঙ্গীন ট্রে-তে করে বিতরণ করেন। এই সময় বারি মহাপরিচালক সহ উচ্চ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা এবং ইউএস এইডের মিশন ডাইরেক্টার উপস্থিত ছিলেন। তবে অনুমোদনকারী মন্ত্রণালয় হিশেবে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মকর্তার উপস্থিতি দেখা যায় নাই। অথচ বায়োসেফটি নিয়ম রক্ষা্ হচ্ছে কিনা কার্টেগেনা প্রোটকল অনুযায়ী সে দায়িত্ব পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের। দেখা যাচ্ছে চারা বিতরণ করার পর্যায়ে এসে এটা একান্তভাবেই কৃষি মন্ত্রণালয় এবং কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কাজ হয়ে গেছে। এই দিনে একটি বেগুনি পুস্তিকাও দেয়া হয়।
এলাকায় পর্যবেক্ষণ
রংপুর (১৮ মে, ২০১৪), পাবনা (ঈশ্বরদী), ২৩ এপ্রিল ও জামালপুর (২১ মে, ২০১৪ তারিখে) কৃষকের মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য নেয়া ও ছবি তোলা হয়েছে। [ছক দেখুন]
ডগা ও ফলছিদ্র প্রতিরোধকারী বেগুনে পোকা!!
ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা প্রতিরোধকারী (FSB) বিটি বেগুনে শতভাগ পোকা মুক্ত থাকার কথা কিন্তু সেখানে পাতায় শুধু নয়, ফলেও পোকা দেখা গেছে। বেশ কিছু গাছে ফুল পচে গেছে, ফলে পোকা লেগে বিদ্ঘুটে লাগছে।
কৃষকের বাড়ীতে বিটি বেগুনের সাইন!
কৃষক তার বাড়ীতে বেগুন তুলে রাখার স ময় একটি লেমিনেট করা সাইন বোর্ড ব্যবহার করছেন যেখানে লেখা আছে বারি বিটি বেগুন ১ (উত্তরা), কীটনাশকমুক্ত। এখানে কোথাও লেখা নাই যে এই বেগুন জেনেটিকালী মোডিফাইড। এটা সম্পুর্ণ কীটনাশক্মুক্ত নয়, কারণ পাতাইয় লাগা পোকার জন্যে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে এবং কৃষক নিজের উদ্যোগে ম্যালথিয়ন, ছত্রাকনাশক কুমপ্লেক্স, মাকড়নাশক ওমাইট ব্যাবহার করেছেন।
কৃষক আফজাল এই সময় পোকা লাগা বেগুন আলাদা করে রেখে চকচকেগুলো বাজারের জন্যে দিচ্ছেন। এই সময় তার সামনে প্রায় ৭ কেজি বেগুন পোকা লাগা আলাদা করে রাখা ছিল।
বাজারে লেবেল ছাড়া জেনেটিকালী মডিফাইড বেগুন বিক্রি!
আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী জিএম ফসল বাজারজাত করতে হলে লেবেল দিয়ে ক্রেতাদের জানাতে হয়, যে এটা জেনেটিকালী মডিফাইড। সেটা করতে দেখা যায়নি। বাজারে বিটি বেগুন বিক্রির অভিজ্ঞতাও ভাল নয়। রংপুরের কৃষক লিখন পাঁচ বস্তা (প্রতিটিতে ৪৫ কেজি) বাজারে নিয়ে যান। প্রথম বস্তা খোলার পর বেগুন চকচকে দেখা যাচ্ছিল, সে সময় বস্তা বিক্রি হয় ৫০০ টাকায়। কিন্তু দুই ঘন্টার মধ্যেই বাকী বস্তার বেগুন ‘চিমাইয়া’ (চুপসে) যায়। তখন ক্রেতা আর কিনতে চান না। তাই তিনি বাধ্য হয়ে একজনের কাছে ৩০০ টাকা বস্তা বিক্রি করে দেন। কৃষক আফজাল বিটী বেগুন উত্তরা ৪৮০ টাকা মণ বিক্রি করেছেন। অথচ পাশেই স্থানীয় জাতের খটখটিয়া বিক্রি হয় ৬০০ টাকায় মণ। বিটি বেগুন হাতে নিলেই কেম্ন চুপসে যায়, তাই ক্রেতা পছন্দ করেন না।
অনুমোদনের শর্ত মানা হচ্ছে কি?
ক। শর্ত ৩ অনুযায়ী যে সকল স্থানে সীমিত চাষাবাদ করা হবে তার বায়োসেফটি মেজার্স (Biosafety measures) মণিটরিং এ সংশ্লিষ্ট অধিক্ষেত্রের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তা, বিএআরআই গবেষণা কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক পরিবেশ অধিদপ্তরের জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তা সমন্বয়ে ফিল্ড বায়োসেফটি কমিটি গঠনের প্রস্তাবনা বিএআরআই কর্তৃক এনসিবি বরাবরে প্রেরণ করতে হবে;- এই ধরণের কোন কমিটি গঠিত হয়েছে কিনা জানা যায়নি। শুধু কৃষি কর্মকর্তা সেখানে সব কিছু দেখভাল করছেন।
কৃষি কর্মকর্তা বলতে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রায় প্রতিটি পদক্ষেপ নির্দেশ দিয়ে করাচ্ছেন। কৃষককে আশ্বাস দিচ্ছেন যে ক্ষতি হলে পুষিয়ে দেয়া হবে। কৃষক বিটি বেগুন যে একটি বিশেষ প্রযুক্তির বেগুন সে সম্পর্কে জানেন না। তারা শুধু জানেন এটা সরকারী বেগুন, খাজা্র বেগুন, ডিজির বেগুন বা কৃষি মন্ত্রির প্রোগ্রাম। কৃষকের কাজ শুধু দেখা কিসে বেগুন থাকবে।
খ। শর্ত ৪ অনুযায়ী সীমিত চাষাবাদের জন্য নির্ধারিত এলাকার কৃষকগণকে বিটি বেগুনের পরিবেশসম্মত চাষাবাদ এবং বায়োসেফটি সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। বায়োসেফটি এবং বিটি বেগুনের চাষাবাদ বিষয়ক নিয়মকানুন সম্বলিত একটি নির্দেশিকা সংশ্লিষ্ট কৃষকগণকে সরবরাহ করতে হবে; -- কৃষকরা কোন প্রশিক্ষণের কথা উল্লেখ করেন নাই, তবে ঈশ্বরদীর এক কৃষকের কাছে বেগুনি পুস্তিয়াক্তী পাওয়া গেছে।
গ। শর্ত ৫ অনুযায়ী বিটি বেগুন চাষাবাদের কারণে পরিবেশ এবং জনস্থাস্থ্যের উপর কোন ঝুঁকি তৈরী হলে আবেনকারী প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণসহ জরুরী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে করে এ ধরনের হুমকির বিস্তার প্রতিরোধ করাসহ এর বিরূপ প্রভাব উপশম করা যায়। মাঠ পর্যায়ে অবমুক্তির কারণে উদ্ভূত পরিবেশগত যে কোনো বিরূপ প্রভাব বা পরিস্থিতির ক্ষেত্রে আবেদনকারী সংস্থা/প্রতিষ্ঠানকে বায়োসেফটি রুলস এর আওয়াতায় দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে; -- এই ধরণের কোন উদ্যোগ দেখা যায় নাই। অনুমোদন নেয়ার আগে হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি আছে কিনা এমন গবেষণার প্রতিবেদনও দেয়া হ্য়নি। প্রাণী গবেষণার একটি মাত্র প্রতিবেদন যা ভারতে ২০০৫ সালে করা হয়েছিল, সেটার একটি সংকলিত প্রতিবেদন জুন ২০১৩ লিখে স্পাইরাল বাইন্ড করে রাখা হয়েছে।এই গবেষণার পৃষ্টপোষকটা করেছে মাহিকো কোম্পানি, যারা এই বিটি বেগুনের প্রবক্তা। মাত্র ১০টি পুরুষ ও ১০টি নারী ইঁদুর নিয়ে ১৪ দিনের ডোজ দিয়ে গবেষণা করে তাদের মেরে পরীক্ষা করা হয়। এই গবেষণায় তাদের ভাষ্য অনুযায়ী কোন অস্বাভাবিক চিহ্ন পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য ২০০৫ সালে বাংলাদেশে গবেষণা শুরু হয়নি, তখন প্রাথমিক কাজ হচ্ছিল। কাজেই এখানে বিটি বেগুন ছিল না। ভারতেও গবেষণা কেবন শুরু হয়েছে। মাহিকো নিজের পরীক্ষাগারে গবেষণা করে স্বাস্থ্য গবেষণা হয়েছে বলে চালিয়ে দিচ্ছে।
অথচ নিউজীল্যান্ডের epidemiologist Dr Lou Gallagher দেখিয়েছেন বিটি বেগুন খেলে মানুষ অসুস্থ্য হয়ে যেতে পারে। যদি নিয়মিত খাওয়া হয় তাহলে লিভার নষ্ট হবে, প্রজনন ক্ষ্মতার ক্ষতি হবে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমটা কমে যাবে। জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত ইন্ডিয়া টু’ডে প্রতিবেদন দেখানো হয়েছে যে যেসব ইঁদুরকে বিটি বেগুন খাওয়ানো হয়েছে তাদের শরীরের অংগ নষ্ট হয়েছে, নারী ইদুরের ওভারী স্বাভাবিক অজনের চেয়ে অর্ধেক, স্প্লীন বড়, রক্তের স্বেতকণা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০-৪০% বেশী, ফলে ইমিউন সিস্টেমের পরিবর্তন দেখা গেছে।
ঘ। শর্ত ৬ অনুযায়ী বায়োসেফটি রুলস এর আওতায় বিটি বেগুন যাতে লেবেলিং বজায় রেখে বাজারজাত করা হয়, সে লক্ষ্য আবেদকারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;--- রংপুরে বিটি বেগুন বাজারে বিক্রি করতে দেখা গেছে। সেখানে ক্রেতাদের কৃষক মুখে বলেছেন সরকারী বেগুন। লেবেলিং করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বারি মহাপরিচালক রফিকুল ইসলাম মন্ডল বলেছেন, “It is totally impossible to label the brinjals before going to market here in Bangladesh. We wrote this observation to the government that it would be difficult to distinguish the varieties with labels in markets”. Interview BARI DG_New Age _ The Outspoken Daily.htm (মার্চ ১৪, ২০১৪) অর্থাৎ তিনি ঘষণা দিয়েই শর্ত লংঘন করছেন।
দূষণ রোধের ব্যবস্থা
মাঠ পর্যায়ে চাষ যেভাবে করা হচ্ছে তাতে জিএম ফসলের পরিবেশগত দুষণ রোধের কোন ব্যবস্থা নেই, এমন কি এই বিষয়ে কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকদের প্রতি কোন নির্দেষণা দেয়া হয়েছে কিনা জানা যায়নি।
বেগুনের স্বত্ব
২০০৫ সালের ১৪ মার্চ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি),মার্কিন বহুজাতিক বীজ কোম্পানি মনস্যান্টোর পক্ষে ভারতীয় কোম্পানি মহারাষ্ট্র হাইব্রিড সিড কোম্পানি লিমিটেড (মাহিকো) ও ভারতীয় কোম্পানি সাতগুরু ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট প্রাইভেট লিমিটেডের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সাব- লাইসেন্স চুক্তি অনুসারে জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে উৎপাদিত বিটি বেগুনের মেধাস্বত্ব মনস্যান্টো ও মাহিকো কোম্পানির হাতে চলে গেছে।
বারি ও সরকারের পক্ষ থেকে প্রচার করা হচ্ছে, বীজের মালিকানা বাংলাদেশের থাকছে। কিন্তু চুক্তিটির আর্টিকেল ১.১৯ ধারায় বলা হয়েছে, বিটি বেগুন বীজের মেধাস্বত্ব মনস্যান্টো-মাহিকো কোম্পানির। আর্টিকেল ১.৬ ধারায় বলা হয়েছে, বিটি বেগুনের বীজ কোম্পানির কাছ থেকে কিনে নিতে হবে। এই চুক্তির আর্টিকেল ৯.২(গ) অনুসারে বিটি বেগুন বীজের বাণিজ্যিক ও মেধাস্বত্ব অধিকার মনস্যান্টো-মাহিকো কোম্পানির। বিটি বেগুন বীজের এবং প্রযুক্তির বাণিজ্যিক ও মেধাস্বত্ব অধিকারের সংরক্ষণ লঙ্ঘিত হলে কোম্পানি এই চুক্তি বাতিলের অধিকার রাখে।
চুক্তির ১.১৯ ও ১.৬ ধারা অনুসারে, বাংলাদেশের নিজস্ব জাতের ৯টি বেগুন যেগুলোতে বিটি জিন সংযুক্ত করা হয়েছে সেগুলোর মালিকানা বহুজাতিক কোম্পানির হাতে চলে যাবে। আর্টিকেল ৯.২(গ)-এ বলা হয়েছে, বিটি বেগুন বীজের ও প্রযুক্তির বাণিজ্যিক এবং মেধাস্বত্ব অধিকারের সংরক্ষণ লঙ্ঘিত হলে কোম্পানি এই চুক্তি বাতিলের অধিকার রাখে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বিটি জিন প্রয়োগ করা ৯টি জাত হল : উত্তরা, কাজলা, নয়নতারা, সিংনাথ, চেগা, ইসলামপুরী, দোহাজারী ও আইএসডি ০০৬।
সাংবাদিকদের প্রতিবেদন
ইতিমধ্যে কয়েকটি পত্রিকার সাংবাদিক গাজীপুরে কৃষকের মাঠে গিয়ে সরেজমিন প্রতিবেদন করেছেন এবং তাদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে ২৫ – ৩০% বেগুন গাছে পোকার আক্রমণ হয়েছে (ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ৭ এপ্রিল, ২০১৪) এবং কৃষি কর্মকর্তার বরাতে নিউ এজ লিখেছে ২০ জন কৃষকের মধ্যে ১৩ জনের মাঠে কোন সফলতা আসেনি। (নিউ এজ, ৭ মে, ২০১৪) ।
কৃষকের মাঠের ফলাফল বিপর্যয়ে কোম্পানী নিজ উদ্যোগে মার্ক লিনাস নামের একজন জিএম প্রবক্তাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে বাংলাদেশের সাংবাদিক ও জিএম বিরোধীরা মিথ্যা কথা বলছে। এই মার্ক লিনাস এর আগে ভারত, ফিলিপাইন ও আফ্রিকায় গিয়ে জিএম বিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে অপপ্রচার চালিয়েছে। তিনি এতোই ধৃষ্ঠতা দেখাচ্ছেন যে জিএম বিরোধী আন্দোলনকারীদের “useful idiot” বলে আখ্যায়িত করেছেন। অবশ্য তিনি মনে করেন না যে জিএম বিরোধী আন্দোলনকারীরা কীটনাশক কোম্পানীর টাকায় কাজ করছে। মার্ক লিনাসের মুল কাজ হচ্ছে যেমন করে হোক বিটি বেগুনের সফলতা দেখাতে হবে নইলে গোল্ডেন রাইস, ও অন্যান্য জিএম ফসল প্রবর্তন করা যাবে না। তাই মনসান্তোর সহযোগিতায় কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে পাঠানো হয়েছে। মার্ক লিনাস রংপুর ও গাজীপুরে বিজ্ঞানীদের নিয়ে গিয়ে, কৃষকদের খুব কথা বলার সুযোগ না দিয়ে, কৃষি কর্মকর্তার ভাষ্য নিয়ে প্রতিবেদন করে প্রমান করতে চাইছেন বাংলাদেশের সাংবাদিকরা বেগুন চেনেন না।
লীনাস ল্যবরেটরী বিটি বেগুন চিনতে পারেন, খটখটিয়া, কাজলা, উত্তরা, নয়নতারার স্থানীয় জাত চেনেন কি? মার্ক লিনাসের বাংলাদেশের সাংবাদিকরা মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছেন বলে আস্ফালন করছে। তাঁর এই আচরণের বিরুদ্ধ্বে আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিটি বেগুন যদি আসলেই ভাল ফল দেখাতো তাহলে বাংলদেশের সাংবাদিকরা অবশ্যই তুলে ধরতেন।
সামনে রোজার মাস/ ইফতারীতে বেগুনি
সামনে রোজার মাস। ইফতারীতে বেগুনী খাওয়ার নিয়ম আছে। এখন বিটি বেগুন বাজারে বিনা লেবেল দিলে মানুষ তা খেলে তাদের শরীরে কি প্রতিক্রিয়া হবে তার প্রতিরোধের ব্যবস্থা সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয়। তাহলে যে সব এলাকায় বিটি বেগুন চাষ হয়ে বাজারজাত করা হয়েছে সেখানে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখার দায়িত্ব কে নেবে? কাজেই অবিলম্বে বাজার থেকে বিটি বেগুন তুলে ফেলা হোক।
প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। এখানে ফসলের বৈচিত্র রয়েছে। বেগুনের আদি উৎপত্তিস্থল হিসেবে বাংলাদেশ চিহ্নিত। এখানে বিটি বেগুন প্রবর্তন করে শত শত স্থানীয় জাতের ক্ষতি হোক এটা কারো কাম্য হতে পারে না। বেগুনে কীটনাশক ব্যবহার বন্ধের জন্য আইপিএম ব্যবস্থার সফ লটা প্রমান করেছে। আমাদের বিটী বেগুনের দরকার নেই। এর মাধ্যমে দেশের কৃষি, পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়লে এই ক্ষতি থেকে ফিরে আসা কঠেন হয়ে পড়বে। তাই আমরা মনে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ ঝুঁকি, কৃষকের রাখা স্থানীয় জাতের বেগুন রক্ষার জন্যে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি যেন মাঠ পর্যায়ের ব্যাপক চাষ স্থগিত করে আগে এই বেগুন নিরাপদ কিনা প্রমান করার উদ্যোগ নেন। এতে দেশের কৃষি, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
২৩ মে, ২০১৪, ঢাকা