লালন সাঁইজীর ১২৫তম তিরোধান দিবস
“দেখবো রে স্বরূপ সাধনে”
অনুষ্ঠিত হয়ে গেল লালন সাঁইজীর ১২৫ তম তিরোধান দিবস। এবারে অক্টোবরের ১৬ তারিখটি ছিল ১ লা কার্তিক, শুক্রবার। তিনি যে দিনে তিরোধান করেছিলেন সেই দিনটিও ছিল শুক্রবার। প্রতি বারের মতো এবারও কুষ্টিয়ার মৃত কালিগঙ্গা নদীর তীরে বসে ছিল লালন অনুসারীদের মিলন মেলা। অন্যান্য বারের তুলনায় এবারের মিলন মেলায় বহু লোকের সমাগম হয়েছি। তাছাড়া অন্যরকম একটা আমেজও ছিল। মনে হয়েছে লালন শাহ নিজে সবার মধ্যে বিরাজ করছেন। নবপ্রাণ আখড়া বাড়িতে নবপ্রাণ আন্দোলনের পরিবেশনায় ছিল “দেখবো রে স্বরূপ সাধনে” এই থিমের মধ্যে দিয়ে পুরো তিন দিনের অনুষ্ঠান পালিত হয়েছে। সকাল ৬টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত নবপ্রাণ আখড়াবাড়ির মঞ্চে লালন সাাঁইজীর বিভিন্ন ধারার গান পরিবেশন করেছেন শিল্পীরা। যেহেতু এটা ছিল তার তিরোধান দিবস সেই দিক বিবেচনা করে শিল্পীরা লালন সাঁইজীর দৈন্য গান বেশি গাওয়ার চেষ্টা করেছেন। একটি বিষয় লক্ষ্য করেছি তা হচ্ছে এই মেলায় হিন্দু, মুসলমান কারো কোন ভেদাভেদ নেই।
এই মেলায় হাজারো মানুষ থাকলেও আমরা কিছু মানুষের অভাব অনুভব করেছি। নবপ্রাণের যারা প্রাণ ছিলেন তাঁদের কথা খুব মনে হয়েছে। তাদের মধ্যে ছিলেন গুরু লবান শাহ, আয়শা আক্তার, মওলা বক্স।
নবপ্রাণ আন্দোলনের অনুষ্ঠানের কিছু নিয়ম নীতি রয়েছে। যেমন ভোর বেলায় গোষ্ঠ গান এবং সন্ধ্যায় দৈন গান করা। গান শুরুর আগে মোমবাতি ও ধুপ জালানো। মওলা বক্স তার জীবদশায় নবপ্রাণের গানের মঞ্চকে মনে প্রাণে ভাল বাসতেন। সবার সাথে রাগারাগি করতেন কিন্তু তার পরও তার যে বিষয়টি সব চেয়ে ভাল ছিল সেটা হচ্ছে সব সময় নবপ্রানের খোজ খবর রাখতেন। যেখানেই থাকুক না কেন অনুষ্ঠানের সময় এসে মঞ্চে হাজির হতেন। ধুপ নিভে গেলে তিনি নিজে হাতে তা জালিয়ে দিতেন। আমরা এই সব মানুষ গুলোকে কখনো ভুলতে পারবো না। নবপ্রাণ আখড়া বাড়ির মঞ্চে শুধু নবপ্রাণের শিল্পীরা গান গেয়েছেন এমন নয় এখানে দুর দুরান্ত থেকে মানুষ এসে একটি গান গাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। আমরা তাঁদের এই মঞ্চে গান গাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি। নবপ্রাণ আন্দোলনের শিল্পীরা ছাড়াও এই মঞ্চে গান গেয়েছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সাধুগুরু, মহিলা উদ্যোক্তা, কৃষক, ছাত্র, ডাক্তার, এবং বাউল শিল্পীরা। শিল্পীদের মধ্যে ঝিনাইদা থেকে এসেছিলেন মোছা: জহুরা সরকার, সুনিল কর্মকার নেত্রকোনা, দিলীপ বড়ুয়া, বান্দরবান, আনরা খাতুন আলম ডাঙ্গা, দেলোয়ার বিশ্বাস ঈশ্বরদী, রেহানা পারভীন টাংগাইল ও আরো অনেকে। নবপ্রাণের শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন ফরিদা আখতার, আব্দুল কুদ্দস, আমির হোসেন খান, আকরাম হোসেন বাবলা, রুবিনা আকরাম, রোকেয়া বেগম। নবপ্রাণ সঙ্গীত ঘরের ছাত্র /ছাত্রীদের মধ্যে রানা, শাপলা, নির্জনা, রুমা, পরশ, বৃষ্টি, পূর্ণিমা, অন্তরা ও সাকিব।
যন্ত্রে ছিলেন মঞ্জু মিয়া, রাজেশ কুমার ও শঙ্কর দাস, মোকাব্বর হোসেন, কুদ্দুস, আকরাম হোসেন বাবলা।
একটি বিষয় লক্ষ্য করেছি তা হচ্ছে এই মেলায় হিন্দু, মুসলমান কারো কোন ভেদাভেদ নেই। কৃষ্ণকে ভাল বেসে যারা গান শুনতে এসেছেন তারা গোষ্ঠ গানের শেষে অনেকেই বলেছেন গোষ্ঠ গান শোনেছি প্রসাদ না নিয়ে কেমন করে যাই। সকালের সেবা নিয়েই যাই। প্রত্যেকেই গান গেয়ে এই তিনটি দিন শ্রোতাদের মুগ্ধ করে রেখেছিলেন।
ফকির লালন শাহ তিরোধান করে ছিলেন ১ কার্তিক বাংলা বছর ১২৯৭ ইংরেজী ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর। এই দিনটিতে তার অনুরাগী ও অনুসারীরা শোক দিবস হিসেবে পালন করে থাকেন। প্রতিবছর তার অনুসারীরা বছরে দুটি দিনে তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। দিন দুটি হচ্ছে ফাল্গুনের দোল পূর্ণিমা ও ১লা কার্তিক।