জিএমও ফসলের প্রবর্তন: বিটিবেগুন ও গোল্ডেন রাইস স্থগিতের দাবী
২ নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩০ “জিএমও ফসলের প্রবর্তন: বিটিবেগুন ও গোল্ডেন রাইস স্থগিতের দাবী” শীষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে। জিএমও বিরোধী মোর্চা ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যৌথ আয়োজনে পরিবেশবাদী, উন্নয়নকর্মী এবং সাংবাদিকদের সাথে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রফেসর মোয়াজ্জেম হোসেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফরিদা আখতার, সদস্য, জিএমও বিরোধী মোর্চা, বাংলাদেশ।
সভায় আলোচকবৃন্দ ছিলেন দেলোয়ার জাহান, স্টাফ রির্পোটার, দৈনিক সকালের খবর। ড. এম. এ. সোবাহান, কৃষি বিজ্ঞানী ও শাকিউল মিল্লাত মোর্শেদ, নির্বাহী পরিচালক, শিশুক। সভাটি সঞ্চালনা করেন জাহাঙ্গীর আলম জনি, সদস্য, জিএমও বিরোধী মোর্চা, বাংলাদেশ।
মতবিনিময় সভায় আলোচকবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশে জিএমও ফসলের প্রবর্তন করার চেষ্টা শুরু হয়েছে এবং আগামি মৌসুমে বিটিবেগুনের পাশাপাশি ‘ব্রি ধান-২৯’ কে জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে ‘ভিটামিন-এ ধান’ হিসেবে প্রবর্তন করার উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে। কৃষিতে বৈজ্ঞানিক বিশেষতঃ জিন প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশের ফসলের বৈচিত্র্য, পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি বিবেচনায় নেওয়া নীতিনির্ধারক ও বিজ্ঞানীদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক বিধিবিধান, প্রটোকল এবং বিজ্ঞানীদের নিজস্ব গবেষণার মানদন্ড অনুসরণের প্রশ্ন রয়েছে। সেই সকল বিচারে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে জিএমও নিষিদ্ধ, তাদের উপযোগিতা বিতর্কিত ও প্রজন্মান্তরে মানবদেহে তার ক্ষতিকর প্রভাব এখনও অজ্ঞাত। তারপরও সেই প্রযুক্তি বাংলাদেশে চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে দেখে আমরা উদ্বিগ্ন।
আমরা দেখেছি ২০১৩ সালে বিটিবেগুনের মাঠ পর্যায়ে চাষের অনুমতি দেয়ার পর এ পর্যন্ত শতাধিক কৃষক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। এ বছর (২০১৫) ভিটামিন এ সমৃদ্ধ ধান বা গোল্ডেন রাইস মাঠ পর্যায়ে চাষের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, ‘একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের ১৫০ গ্র্রাম গোল্ডেন রাইস খেলে তার জন্যে প্রয়োজনীয় ডোজের ভিটামিন এ পাবে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের ক্যালোরি গ্রহণের ৭০% ভাগই পান ভাত থেকে।’ তাহলে কি যার শরীরে ভিটামিন এ ঘাটতি নেই সেও একই পরিমাণে গোল্ডেন রাইস খাবে? শুধু ভাত খেয়ে কখনোই পুষ্টি ঘাটতি দূর হবে না।
গোল্ডেন রাইসের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে নতুন একটি তথ্য বলা হচ্ছে যে এই চাল গর্ভবতী মাদের বেশী দরকার হবে। অথচ ভারতের বিজ্ঞানী ড. তুষার চক্রবর্তী সম্প্রতি একটি সভায় সাবধান করে দিয়ে বলেছেন, ‘এই ধানের মধ্যে রেটিনিক এসিডের ডিরাইভেটিভ আছে যা গর্ভবতী নারী খেলে তার সন্তানের জন্মগত ত্রুটি (birth defects) ঘটতে পারে।
বাংলাদেশ ধানের আদি নিবাস। ১৯১৫ সালে এদেশে ১৫,০০০ জাতের ধান ছিল। এখনও কম পক্ষে ৭,৫০০ জাতের জাত ধান বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানেই আছে, নয়াকৃষি কৃষকদের হাতে আছে ৩,০০০ জাতের ধান। আমাদের কি আর অন্য ধানের দরকার আছে? এখানে গোল্ডেন রাইস নাম দিয়ে জিএমও ধানের প্রবর্তন অনেক আশংকার সৃষ্টি করেছে। বিটিবেগুন দিয়ে শুরু, এখন গোল্ডেন রাইস, তারপর অন্যান্য জিএমও ফসল প্রবর্তনের দিকে এগুচ্ছে বাংলাদেশ।
একের পর এক জিএমও ফসলের প্রবর্তন, এদেশের মানুষ ও পরিবেশের জন্য যে হুমকির সৃষ্টি করবে তার দায় দায়িত্ব কে নেবে? এটা সুস্পষ্ট যে ২০১৩ সালে দেয়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে মাঠ পর্যায়ের চাষ হলেও জিএমও ফসলের অনুমোদন দেয়া হয় পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে আন্তর্জাতিক বায়োসেফটির নিয়মের আওতায়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কোন প্রকার তত্ত্বাবধান নেই এবং অনুমোদনের যে শর্ত ছিল তা পালিত হচ্ছে না। বিশেষ করে বিটিবেগুন বাজারজাত করার ক্ষেত্রে লেভেল দেয়ার যে শর্ত ছিল তা মানা হয়নি। এ ব্যাপারে পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে কোন উদ্যোগ নিতেও দেখা যাচ্ছে না।
আমাদের দাবী:
১. বিটিবেগুনের দুই বারের মাঠ চাষের অভিজ্ঞতা প্রেক্ষিতে অনুমোদনের শর্ত এবং বায়োসেফটি রুল মেনে চলা হয়েছে কিনা তার একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক।
২. কৃষকের ক্ষতি বিবেচনা করে তৃতীয় বারে চাষের জন্যে যেন দেয়া না হয়।
৩. একের পর এক জিএমও ফসল অনুমোদন দেয়ার আগে জনমত নেয়ার জন্যে উদ্যোগ নেয়া হোক।
৪. গোল্ডেন রাইস বা ভিটামিন এ ধান মাঠ পর্যায়ে চাষের আগে এর প্রয়োজনীয়তা যাচাই করা হোক এবং কোন মতেই যেন গর্ভবতী মায়েদের দেয়া না হয় তার ব্যবস্থা নেয়া হোক।