১৯ মার্চ, ২০১৬ থেকে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়নের দাবি
আইন মেনে তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়নের দাবিতে তামাক বিরোধী ১২টি সংগঠনের মানববন্ধন
১৯ মার্চ, ২০১৬ থেকে সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সকল তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটে আইন মেনে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্ক বার্তা বাস্তবায়নের দাবিতে তামাক বিরোধী ১২টি সংগঠন- ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহসানিয়া মিশন, এসিডি, ইপসা, সীমান্তিক, উবিনীগ, ইসি বাংলাদেশ, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, নাটাব, প্রত্যাশা, এইড ফাউন্ডেশন ও প্রজ্ঞা ১৬ মার্চ, দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন কমূসূচীর আয়োজন করে। এই কর্মসূচীতে তাবিনাজ (তামাক বিরোধী নারী জোট) সহ অন্যান্য তামাক বিরোধী সংগঠনগুলিও সংহতি জানাবার জন্য অংশগ্রহণ করে।
এই মানববন্ধনের মাধ্যমে ১৯ মার্চের মধ্যে সকল তামাকপণ্যের প্যাকেটে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্ক বার্তা বাস্তবায়নের দাবিতে গত তিন(১৪ থেকে ১৬ মার্চ, ২০১৬) দিনব্যাপী রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রোডশো'র যে আয়োজন ছিল তা রোডশোর শেষ দিন বুধবার বেলা ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে রোডশোর সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। রোডশোর অংশ হিসেবে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার নমুনাসম্বলিত পাঁচটি ট্রাক মিউজিক্যাল কনসার্টসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থান উত্তরা, গুলশান, মিরপুর, আগারগাঁও, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কাকরাইল, আজিমপুর, বঙ্গবাজার মার্কেট ও গুলিস্থান এলাকা প্রদক্ষিণ করে। এ সময় সচিত্র সতর্কবাণী সংক্রান্ত লিফলেট বিতরণ করা হয়।
তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয় বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে একজন ধূমপায়ী সিগারেট কেনা ও ব্যবহার করার সময় দিনে ২০ বার এবং বছরে সাত হাজার তিনশ বার সিগারেটের প্যাকেট দেখে। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে; সিঙ্গাপুরে তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটে ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্ক বার্তা সংযোজনের পর ২৮ শতাংশ ধূমপায়ী বলেছেন যে তারা ধূমপানের পরিমাণ কমিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (সংশোধীত ২০১৩) এবং এ সংক্রান্ত বিধিমালা হয়েছে ২০১৫ সালে। সেখানে বলা হয়েছে, 'তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট, মোড়ক, কার্টন বা কৌটার উভয় পাশে মূল প্রদর্শনী তল বা যে সকল প্যাকেটে দুটি প্রধান পার্শ্ব নেই সেসব প্যাকেটের মূল প্রদর্শনী তলের উপরিভাগে অন্যূন্ শতকরা ৫০ শতাংশ স্থান জুড়ে তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি সম্পর্কে, রঙিন ছবি ও লেখা সম্বলিত, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কবাণী, বিধি দ্বারা নির্ধাতির পদ্ধতিতে, বাংলায় মুদ্রণ করতে হবে।'
বিধিমালা অনুযায়ী ধূমপানে ব্যবহৃত তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে সাতটি এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষেত্রে দুটি ছবিসহ সতর্ক বার্তা থাকতে হবে। আইনের এই ধারা লংঘণ করলে অনুর্ধ্ব ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ড বা সর্বোচ্চ ২লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। এবং দ্বিতীয়বার বা পুন: পুন: অপরাধ সংঘটন করলে পর্যায়ক্রমিকভাবে উক্ত দন্ডের দ্বিগুণহারে দন্ডিত হবেন।
ধূমপানে ব্যবহৃত তামাকজাত পণ্যের ক্ষেত্রে সতর্ক বার্তাগুলি হলো; ধূমপানের কারণে গলায় ও ফুসফুসে ক্যান্সার হয়, ধূমপানের কারণে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয়, ধূমপানের কারণে স্ট্রোক হয়, ধূমপানের কারণে হৃদরোগ হয়, ধূমপান গর্ভের সন্তানের মৃত্যু ঘটায়, পরোক্ষ ধূমপানের কারণে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হয়। আর ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত পণ্যের ক্ষেত্রে থাকছে তামাকজাত দ্রব্য সেবনে মুখে ও গলায় ক্যান্সার হয় এবং তামাকজাত দ্রব্য সেবনে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, প্রজ্ঞার এ বি এম জুবায়ের, উবিনীগের সীমা দাস সীমু, নাটাবের এ কে এম খলিলুল্লাহ, আহছানিয়া মিশনের মো: মোখরেছুর রহমান, ইসি বাংলাদেশের মাহবুব আলম, বিইউকেএস’ এর হাসেনুর রহমান, এএসপিএসের জাহিদুল ইসলাম, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট এর শুভ কর্মকার, প্রত্যাশার হেলাল আহমেদ এবং ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো ফ্রি কিডস্ এর ডা. মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া।