ফকির লালন সাঁইজীর গৌর পূর্ণিমা (দোল উৎসব) পালিত হল
ফকির লালন সাঁইজীর দোল উৎসব অনুষ্ঠিত হল ১১ থেকে ১৩ মার্চ ২০১৭, কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়াতে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ সাঁইজীর ধামের দর্শন করতে এসেছিলেন।
প্রতিবারের মত এবারও নবপ্রাণ আন্দোলন এই উৎসব পালন করছে। গৌর এসে হৃদে বসে, করল আমার মন চুরি। এই গানের শিরোনামের মধ্যে দিয়ে নবপ্রাণ আখড়াবাড়ি, লালনের কুষ্টিয়া ছেঁউড়িয়াতে দোল উৎসব পালিত হল।
“এমন বয়সে নিমাই ঘর ছেড়ে ফকিরী নিলে ধন্য মায়ের নিমাই ছেলে, ধন্য মায়ের নিমাই ছেলে” - ফকির লালন শাহ এবার ১৪২৩ বাংলা সালে গৌর পূর্ণিমা ২৭ ফাল্গুন (১১ মার্চ ২০১৭)। শ্রী গৌরাঙ্গ এই ফাল্গুনি পূর্ণিমাতেই নদিয়ায় নিজের আবির্ভাব ঘটান; অবতরণ করেন। জননী শচিদেবী সন্তানের নাম রেখেছিলেন ‘নিমাই’, তাঁর রূপের জন্য পাড়ার লোক নাম দিয়েছিল ‘গোরা’ (গৌরাঙ্গ), গুরু নাম দিয়েছিলেন কৃষ্ণচৈতন্য, সেখান থেকে চৈতন্য। তিনি নদিয়ার প্রথম ‘ফকির’। জ্বি, ‘ফকির। নদিয়ার সাধকদের কাছে তিনি ‘ফকির’ বলেই প্রসিদ্ধ। গৌর পূর্ণিমা নদিয়াবাসীদের জন্য জয়ধ্বণির দিন; ধন্যরে নদিয়াবাসী হেরিল গৌরাঙ্গ শশী যে বলে জীব সেই সন্যাসী লালন কয় সে প’ল ফেরে।। ধন্য নদিয়াবাসী, যারা গোরাচাঁদের আবির্ভাব দেখেছে। আর যে নিমাই অল্প বয়সে ফকিরি নিল তাকে যারা কেবল ‘জীব’ মাত্র জ্ঞান করে, লালন বলছেন তারা বিভ্রান্ত, তাদের এখনও জ্ঞানচক্ষু খোলে নি। নদের নিমাইয়ের আবির্ভাব মুহূর্তের হিসাব ধরে ছেঁউড়িয়ায় ফকির লালন সাঁই প্রবর্তিত ‘সাধুসঙ্গ’ ও বসন্তোৎসব হবে ২৭ থেকে ২৯ ফাল্গুন, ১৪২৩ (১১ – ১৩ মার্চ, ২০১৭)। এটাই অনেকের কাছে ‘দোল’ বা দোল উৎসব’ নামে পরিচিত। কিন্তু গৌর পূর্ণিমার তাৎপর্য ভুলে গেলে এই উৎসবের কিছুই আর অবশিষ্ট থাকে না। এ সময় কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় প্রতিবছর লাখ লাখ লালন অনুসারী, ভক্ত, অনুরাগী ও পরমার্থিক প্রেমের কাঙ্গাল নানান মনের আশেকান ছেঁউড়িয়ায় সাঁইজীর ধামে আসেন। প্রতি বছরের মতো এবারও আপনি এবং আপনার বন্ধু-বান্ধব নবপ্রাণ আখড়াবাড়িতে আন্তরিক ভাবে আমন্ত্রিত।
নবপ্রাণ আন্দোলন গৌরপূর্ণিমার দিন থেকে শুরু করে আখড়াবাড়িতে (সাঁইজীর ধামের উল্টোদিকে) তিন দিন একনাগাড়ে সাধুসঙ্গে একাত্ম হয়ে গৌরপূর্ণিমা ও বসন্তোৎসব পালন করে। এই তিনদিন নদিয়ার ভাব নিয়ে আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক কিম্বা নানান ছোট ছোট দলে বাংলার ভাবান্দোলন নিয়ে নানান আলোচনা চলে। আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের মধ্যে ভোরে গোষ্ঠ গান থেকে শুরু করে সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় লালনের গান পরিবেশন করা হয়। শুধু গান নয়, ফাঁকে গানের বাণীর ব্যাখ্যা এবং নদিয়ার ভাবের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা হয়। আগত ভক্ত-শ্রোতাদের জন্য এই আলোচনা পরম আগ্রহের ও আনন্দের।