ক্ষতিকর জর্দা উৎপাদনকারী কাউছ মিয়াকে সেরা করদাতার তালিকা থেকে প্রত্যাহার করার দাবিতে মানববন্ধন


তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) লক্ষ্য করেছে যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক এই বছরের বিভিন্ন ক্যাটাগরির সেরা করদাতাদের তালিকা প্রকাশ করেছে। আমরা বিস্মিত যে এই তালিকায় আবারও হাকিমপুরী জর্দা উৎপাদনকারী মোঃ কাউছ মিয়া ব্যবসায়ী শ্রেণীতে সেরা করদাতা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। অথচ গত বছরেই তাকে সেরা করদাতা হিসেবে পুরস্কৃত করার বিরুদ্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। কাজেই রাজস্ব বোর্ড এটা জানেন যে বেশি কর দিলেও পুরস্কৃত করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানতে হবে। কারণ জর্দা সেবনে স্বাস্থ্যের যে ঝুঁকি রয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দ্বারা স্বীকৃত। 

আজ ১৪ নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:০০ টায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অফিস, সেগুনবাগিচা, ঢাকায় ক্ষতিকর জর্দা উৎপাদনকারী কাউছ মিয়াকে সেরা করদাতার তালিকা থেকে প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়ে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। বেলা সারে ১২:০০ টায় এই মানববন্ধন শেষ হয়।

এই মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন আর্ক ফাউন্ডেশন এর হামিদুল ইসলাম, প্রত্যাশা’র হেলাল আহমেদ আহমেদ, ডাব্লিউবিবি ট্রাষ্ট এর শুভ কর্মকার, ঢাকা আহসানিয়া মিশন থেকে ইমন রহমান, ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো ফ্রি কিডস্ থেকে আব্দুস সালাম, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভারসিটি’র মো: মহিউদ্দিন, উবিনীগ থেকে রোকেয়া বেগম, শ্রমিক নেত্রী সুলতানা বেগম ও কাজী রেনু আরা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন থেকে সেতু আহমেদ এবং প্রজ্ঞা’র মেহেদী হাসান। মানববন্ধন পরিচালনা করেন তাবিনাজের সদস্য সীমা দাস সীমু।

বক্তারা বলেন, কাউছ মিয়া হাকিমপুরী জর্দা উৎপাদনকারী কোম্পানির মালিক। জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে করদাতা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার অর্থ হচ্ছে জর্দা উৎপাদনে উৎসাহ দেয়া। এই উৎসাহ দিতে গিয়ে সরকার এক বছর মেয়াদি কর কার্ড দিচ্ছেন, যার কারণে তারা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সুবিধা পাবেন। জর্দা একটি তামাক পণ্য, দেশে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংজ্ঞায় জর্দা নিয়ন্ত্রণযোগ্য তামাক পণ্যের আওতাভুক্ত। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এই পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে যে সব অনিয়ম আছে, তার বিষয়ে প্রশ্ন আছে।

এই পণ্য সেবন করেন বিশেষত নারী এবং গরিব মানুষ। দেশের ২০.৬% (পুরুষ ও নারী) ধোয়াঁবিহীন তামাক সেবন করেন যার অন্যতম প্রধান পণ্য হচ্ছে জর্দা। পুরুষ ও নারীর ব্যবহারের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের ১৬.২% এবং প্রাপ্ত বয়স্ক নারীদের ২৪.৮% ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন করেন। অর্থাৎ জর্দাসহ ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের ব্যবহার নারীদের মধ্যেই বেশি।

একদিকে সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান জর্দা উৎপাদনকারীকে “সেরা করাদাতা” হিসেবে পুরস্কৃত করছেন অন্যদিকে সরকারেরই আর একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে এই পণ্য কত ক্ষতিকর কাজ করছে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ-বিএফএসএ তামাকজাতীয় পণ্য হাকিমপুরী জর্দাসহ ২২টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদিত জর্দা, খয়ের ও গুলের নমুনা পরীক্ষা করে জর্দা ও খয়েরে মানবদেহের ক্ষতিকর এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার মতো মাত্রাতিরিক্ত বিষাক্ত কেমিক্যাল লেড, ক্যাডমিয়াম ও ক্রোমিয়াম পেয়েছে। নিঃসন্দেহে এগুলো মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এগুলো দীর্ঘদিন খাওয়ার কারণে মাড়ি ও লিভার ক্যান্সারের মতো জটিল রোগ হয়। এই সংস্থাটি ২২ প্রতিষ্ঠানের নমুনা পরীক্ষা করে বলেছে- দেশের অনেক মানুষ পান-জর্দায় আসক্ত। এই সব তামাক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠানগুলো সিলগালা করার ঘোষণা দিয়েছে বিএফএসএ। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ- বিএফএসএ আরও ঘোষণা দিয়েছে এগুলো শিগগিরই বাজার থেকে প্রত্যাহার করা হবে। অন্যথায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ওই সব প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হবে।

মানববন্ধন শেষে চার সদস্যের একটি দল (সীমা দাস সীমু, শুভ কর্মকার, মো: মহিউদ্দিন, ও মো: রাশেদুজ্জামান) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব মো: মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া এনডিসি নিকট ক্ষতিকর জর্দা উৎপাদনকারী কাউছ মিয়াকে সেরা করদাতার তালিকা থেকে প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়ে একটি স্বারক লিপি প্রদান করা হয়

আমাদের দাবি:

১. এনবিআর অবিলম্বে সেরা করদাতা তালিকা থেকে কাউছ মিয়ার নাম প্রত্যাহার করবে।

২. হাকিমপুরী জর্দা উৎপাদনকারী মোঃ কাউছ মিয়াকে জর্দা উৎপাদনে এনবিআর কোন উৎসাহ দিবে না। গত বছরেও মোঃ কাউছ মিয়াকে সেরা করদাতা হিসেবে পুরস্কৃত করার বিরুদ্ধে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল।

৩. সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অনতিবিলম্বে ক্ষতিকর তামাক পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।