বীজের বৈচিত্র্য ও আমাদের খাদ্য সার্বভৌমত্ব


নয়াকৃষি আন্দোলনে 'নয়াকৃষি বীজ সম্পদ কেন্দ্র' এবং 'বীজ আখড়া' খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাণের সুরক্ষা এবং বীজের ওপর একটি জনগোষ্ঠির সার্বভৌম অধিকার কায়েম রাখা গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক কাজ। নয়াকৃষি বীজ নেটওয়ার্কের অধীনে 'বীজ সম্পদ কেন্দ্র' এবং 'বীজ আখড়া' সেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে টাঙ্গাইলের রিদয়পুর বিদ্যাঘরে নয়াকৃষি আন্দোলন, উবিনীগ ও বীজবিস্তার ফাউন্ডেশানের যৌথ আয়োজনে দিনব্যাপী বৈচিত্র্যময় খাদ্য রান্না প্রদর্শনীর পাশাপাশি নয়াকৃষি আন্দোলনের তাৎপর্য নিয়ে নানান দিক থেকে আড্ডা, আলোচনা এবং নয়াকৃষির কৃষরা গান করেন।

কৃষকের দৈনন্দিন জীবনের খাদ্য গ্রহণ এবং সারা বছরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবেও খাদ্যের ধরণের বৈচিত্র্য থাকে। তার জন্যে নির্দিষ্ট জাতের ধান, ডাল, সব্জি ইত্যাদির দরকার হয়। এসবই কৃষক তার জমিতে উৎপাদন করেন। ফসলের বৈচিত্র্য উৎপাদন বাজারের ওপর কৃষকের নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেয়। নয়াকৃষি পদ্ধতির কৃষি কথাটির সরল ও প্রাথমিক অর্থ হচ্ছে বৈচিত্র্যে ভরপুর কৃষি। এই কৃষি একই সাথে খাদ্য যোগান দেয়,পরিবেশ রক্ষা করে, মাটি ও মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।

'নয়াকৃষি বীজ সম্পদ কেন্দ্র' এবং 'বীজ আখড়া' ফসলের নানা জাতের বীজ সংরক্ষণ এবং ব্যবহারই শুধু নিশ্চিত করে না, একই সঙ্গে অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ভূমিকাও পালন করে। 

১. বীজের প্রাপ্তি নিশ্চিত করার অর্থ জনগোষ্ঠির জীব-জীবন রক্ষার শর্ত নিশ্চিত করা। তাই বীজের ওপর জনগোষ্ঠির 'সার্বভৌমত্ব' কায়েমকে জীব-জীবন সুরক্ষা বা প্রতিরক্ষার দিক থেকে বুঝতে হবে, 'সার্বভৌমত্ব' ধারণাটিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সংকীর্ণ রাজনৈতিক অর্থে ক্ষমতা বা বলপ্রয়োগ হিশাবে বোঝে। সেই সংকীর্ণ ধারণা কাটিয়ে উঠতে হবে।

২. বীজ ও প্রাণবৈচিত্র্য কেন্দ্রিক চাষাবাদ প্রাণের জ্ঞান, বিজ্ঞান, গবেষণা ও চর্চার ঐতিহ্য ধরে রাখে, মজবুত করে এবং চিন্তার বিকাশ নিশ্চিত করে

৩. 'প্রাণ' কথাটির গভীর তাৎপর্য প্রত্যক্ষ চাষাবাদের মধ্য দিয়ে সহজে বোঝা। প্রাণ কেন্দ্রিক কৃষি ব্যবস্থায় আমরা জগতের সঙ্গে আমাদের সম্বন্ধ সরাসরি উপলব্ধি করতে পারি এবং প্রকৃতির সঙ্গে সম্বন্ধ চর্চার গুরুত্ব বুঝতে পারি। জীবাশ্ম ভিত্তিক সভ্যতা কেন প্রগতি নয়, পশ্চাতপদতা ও ধ্বংসাত্মক সেই জ্ঞানও সহজে লাভ করতে পারি। কৃষির বিনাশ ঘটিয়ে জীবাশ্ম ভিত্তিক শহর ও জীবন যাপনের ধারণা কেন পশ্চাতপদ ধারণা সেটা বোঝা দরকার।

৪. 'মানুষ' প্রকৃতি ও বিশ্ব ব্রহ্মান্ড থেকে আলাদা বা বিচ্ছিন্ন কোন সত্তা নয় সেই উপলব্ধি নয়াকৃষি গভীর ও অর্থপূর্ণ করে তোলে। যে প্রকৃতির ঘরে আমাদের 'বাস' , সেই বাসস্থান বিষ ও ক্ষতিকর পদার্থ থেকে কেন মুক্ত রাখা দরকার সেই বোধ নয়াকৃষি গভীর ও মজবুত করে।

৫. নয়াকৃষি 'দেহ' ধারণাকে নতুন তাৎপর্য ও ব্যঞ্জনা দান করে। সম্প্রসারিত অর্থে বাইরের বিশ্ব প্রকৃতি ও ব্রহ্মাণ্ডের সঙ্গেই দেহ যুক্ত কিম্বা উভয়ে একই মর্মার্থের দ্বিবিধ ভাষিক প্রকাশ মাত্র। নয়াকৃষি বাংলার ভাবুক ও ভাবান্দোলনের ইতিহাসকে অতিশয় সংকীর্ণ দেহাত্মবাদী ধারণা হিশাবে গণ্য না করে তার গভীর ব্যাপ্তিকে প্রাণের রাজনীতির দিক থেকে বোঝার চেষ্টা করে। এই ক্ষেত্রে নবপ্রাণ আন্দোলন ও নয়াকৃষি আন্দোলন হাত ধরাধরি করে চলে।

৬. ফকির লালন শাহ ভাবান্দোলনের ইতিহাসকে যেখানে রেখে গিয়েছেন নয়াকৃষি ও নবপ্রাণ সেখান থেকেই শুরু হয়।

প্রথম পর্ব: সকাল ১০টা থেকে রান্না প্রদর্শনী শুরু হবে। এখানে টাঙ্গাইল, পাবনা ও নাটোরের কৃষক শীতকালের সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবারের বিভিন্ন রান্না প্রদর্শন করবেন। পাশাপাশি নয়াকৃষির কৃষকরা গান পরিবেশন করবেন। এরপর দুপুরের খাবার পরিবেশন করা হবে।

দ্বিতীয় পর্ব: বিকেল ৩টা থেকে “ বীজের বৈচিত্র্য রক্ষা ও আমাদের খাদ্য সার্বভৌমত্ব” শীর্ষক আলোচনা সভা

এই আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন Ronnie Vernooy, ইতালী ভিত্তিক সংগঠন Bioversity International এর Genetic Resources Policy Specialist। টাঙ্গাইল, নাটোর ও পাবনার নয়াকৃষি কৃষক, উন্নয়ন কর্মী ও বিশিষ্ট জনেরা উপস্থিত ছিলেন।

 


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।