“তামাক উৎপাদনে নারী শ্রমিকের অবস্থা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি” শীর্ষক ওয়েবিনার


মে, দিবস, ২০২১ উপলক্ষ্যে

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস, ২০২১ উপলক্ষ্যে “তামাক উৎপাদনে নারী শ্রমিকের অবস্থা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি” শীর্ষক একটি ভার্চুয়াল ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয় ২ মে, ২০২১ সকাল ১১:০০টায়। নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা, উবিনীগ এবং তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) এই ভার্চুয়াল ওয়েবিনারের আয়োজন করেন।

নারীগ্রন্থ প্রবর্তনা, উবিনীগ এবং তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) তামাক নিয়ন্ত্রণের কাজের সাথে যুক্ত হয়ে তামাক উৎপাদনে নারী শ্রমিক, বিশেষ করে তামাক চাষ, বিড়ি কারখানা এবং জর্দা-গুল কারখানায় নারী শ্রমিকের কাজ, মুজুরী, কাজের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে গবেষণা করেছে। তামাক উৎপাদনে নারী শ্রমিকদের মুজুরী বৈষম্য এবং তাদের অধিকারহীনতার কথা এই ওয়েবিনারের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।

এই ওয়েবিনারে উপস্থিত ছিলেন সম্মানীত অতিথি সাকিউন নাহার বেগম, অতিরিক্ত সচিব, রপ্তানীমুখী শিল্প ও আই.ও অনুবিভাগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন নারী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ- মাহামুদা খাতুন, শতাব্দি সমাজ কল্যাণ সংস্থা, ঢাকা, মুসলিমা আক্তার মর্জিনা, প্রদীপ মহিলা উন্নয়ন সংস্থা, ময়মনসিংহ, রাবেয়া সুলতানা, নাইস ফাউন্ডেশন, খুলনা। নারী নেত্রী তাহেরা বেগম জলি, সামিয়া আফরিন, নারীপক্ষ। শ্রমিক সংগঠন প্রতিনিদিবৃন্দ- তাসলিমা আখতার, সভাপ্রধান, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি, আবুল হোসেন সভাপতি, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্রকার্স ফেডারেশন, জলি তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক, গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। নাসিম বানু, ইপিসা, চট্টগ্রাম, ডাব্লুউ বিবিট্রাষ্ট এর শোভন। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রম বিভাগের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


সম্মানীত অতিথি সাকিউন নাহার বেগম (অতিরিক্ত সচিব, রপ্তানীমুখী শিল্প ও আই.ও অনুবিভাগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়) বলেন, জর্দা, গুল অনেক কারখানা রেজিষ্ট্রেশন ভুক্ত নয়। যদি সেইসব কারখানাগুলির ঠিকানা পাওয়া যায় তাহলে সেই সব কারখানাগুলোকে রেজিষ্ট্রেশনের আওতায় আনতে হবে। শ্রমিকদের জন্য শোভন কর্ম পরিবেশ দেওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে এবং কারখানাগুলি পরিদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুশ্রম নিরসনের জন্য সরকার বদ্ধ পরিকর। ৩৮টি কাজ শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তার মধ্যে তামাক কাজ অন্যতম।

সাকিউন নাহার বেগম (অতিরিক্ত সচিব, রপ্তানীমুখী শিল্প ও আই.ও অনুবিভাগ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়)


বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার বলেন, শ্রমজীবি মানুষ বেশী জর্দা, গুল ব্যবহার করে। করোনাকালে সবচেয়ে বেশী ভুক্তভোগী হচ্ছে এই শ্রমজীবি মানুষ।

নারী নেত্রী তাহেরা বেগম জলি বলেন,তামাক চাষে মারাত্মক ক্ষতি হয়। তাই তামাক চাষ বন্ধ করতে হবে।

গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, জর্দা, গুল, বিড়ি কারখানাগুলোতে কলকারখানা পরিদর্শক পরিদর্শন করে না। তারা উদাসীন। সবচেয়ে নিপীড়িত শ্রমিক তামাক শ্রমিক। শিশুদের তামাকের কাজে লাগান উচিত নয়। এই করোনা কালে অনেক তামাক শ্রমিক কর্মহীন হয়েছেন।

ইপসা’র নাসিম বানু বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সার্ভেতে দেখা যায় বিড়ি ফ্যাক্টরীতে ৩০,৬৬৩ জন, অর্থাৎ ৬০ ভাগ নারী। সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করছে ১ লাখেরও বেশী। এখানে মজুরী বৈষম্য আছে। স্বাস্থের ঝুঁকি যে কাজে বেশী সেখানেই নারী শ্রমিক কাজ করছে।

শতাব্দি সমাজ কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মাহামুদা খাতুন বলেন, গর্ভবতী মহিলারাও জর্দা কারখারনায় কাজ করে।

ময়মনসিংহ জেলার প্রদীপ মহিলা উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক, বলেন, জর্দা, গুল কারখানায় শিশু শ্রমিকের সংখ্যাই বেশী। শিশুরা বুঝতে পারে না কতটা ঝুঁকির কাজ তারা করছে। তারা বোঝা টানার কাজ, প্যাকেজিং এর কাজ করে। এই কাজ করতে গিয়ে তারা নেশাগ্রস্থ হয়ে যায়।

খুলনা জেলার নাইস ফাউন্ডেশন এর রাবেয়া সুলতানা বলেন, জর্দা, গুল কারখানার ভিতরে দরজা, জানালা বন্ধ করে শ্রমিকদের কাজ করান হচ্ছে। নারী শ্রমিকদের কম মূল্যে পাওয়া যায়। দিন প্রতি ২০০- ২৫০ টাকা মজুরীতে নারী শ্রমিক পাওয়া যায়। পুরুষদের ক্ষেত্রে মজুরী দিতে হয় বেশী। দারিদ্রের কারণে এই নারী শ্রমিকেরা কাজ করে। কাজ করার সময় তাদের মুখে কোন মাস্ক নাই। শাড়ির আঁচল দিয়ে নাক ঢাকে। অথচ যে ঘরে কাজ করে সেখানে নিঃশ্বাস নেওয়া যায় না তামাকের গন্ধে।

উবিনীগ ও তাবিনাজের পক্ষ থেকে মে দিবসে তামাক শ্রমিকের কথা এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ বছর তামাক উৎপাদনে শিশু শ্রমিকের ব্যবহার সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন, ফরিদা আখতার, নির্বাহী পরিচালক, উবিনীগ, আহ্বায়ক, তাবিনাজ (তামাক বিরোধী নারী জোট)।

উবিনীগের পক্ষ থেকে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনা করেন সীমা দাস সীমু, পরিচালক, উবিনীগ।

সভা পরিচালনা করেন সঞ্চালক সাইদা আখতার, পরিচালক, নারীগ্রন্থ প্রবতর্না, সমন্বক, তাবিনাজ।

এছাড়া উপস্থিত বক্তারা জর্দা, গুল ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরেন এবং এই করোনা কালে সবচেয়ে বেশী ভুক্তভোগী হচ্ছেন শ্রমজীবি মানুষ উল্লেখ করেন।

এই ওয়েবিনার পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে তিনটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়-

১. তামাক উৎপাদনে নিয়োজিত শ্রমিক, বিশেষ করে নারী ও শিশু শ্রমিকদের নিয়োগ করতে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

২. তামাক উৎপাদনে শিশু শ্রমিক নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে।

৩. তামাক উৎপাদন কারখানায় শ্রম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।