স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রস্তাবিত খসড়া দ্রুত অনুমোদনের দাবি


জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে উবিনীগ (উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা) “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রস্তাবিত খসড়া দ্রুত অনুমোদনের দাবি” শীর্ষক এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সভাটি ১৯ নভেম্বর ২০২৫ (বুধবার) রাজধানীর ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, নারী নেতৃত্ব, গবেষক, তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

মত বিনিময় সভায় জানান হয় তামাকের কারণে বাংলাদেশে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ মারা যায় এবং তামাকজনিত কারণে বছরে অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩,৫৬০ কোটি টাকারও বেশি। প্রতিরোধযোগ্য এই মৃত্যু কমাতে এবং তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রস্তাবিত খসড়াটি দ্রুত অনুমোদনের মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ অতি জরুরী।

বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ (সংশোধীত ২০১৩) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল এফসিটিসি-এর সাথে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বেশ কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব করে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনাগুলো হলো— পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বা স্মোকিং জোন নিষিদ্ধ করা, সকল ধরনের তামাকজাত পণ্যের প্রদর্শন ও বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরুণ-তরুণীদের রক্ষা করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি বা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের সচিত্র সতর্কবার্তা বৃদ্ধি করে শতকরা ৯০ ভাগ করা । তারই ধারাবাহিকতায় সরকার ইতিমধ্যে ই-সিগারেট আমদানী নিষিদ্ধ ও দেশের অভ্যন্তরে ই-সিগোরেট উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা করেছে।

সভায় তাসলিমা আখতার, সভাপতি বাংলাদেশ গামে‍র্ন্ট শ্রমিক সংহতি,আলোকচিত্র শিল্পী তার বক্তব্যে বলেন, তরুণেরা ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করেছে, সেই তরুণদের তামাকে আসক্ত করে রাখে যারা তাদের পক্ষ কেন গ্রহণ করা হচ্ছে? এর পেছনে দায়ী কারা? তামাক আইন শক্তিশালী করে তরুণদের তামাক থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, অর্থ বিভাগ, ফেরদৌস রওশন আরা তার বক্তব্যে প্রতিদিন ৪৪২ জনের মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, তামাক আইন সংশোধনের প্রতিটি প্রস্তাব যৌক্তিক । তিনি তার মন্ত্রণালয়কে এই প্রস্তাব সম্পর্কে অবগত করবেন এবং প্রয়োজনীয় সহযোগীতা প্রদান করবেন বলে আশ্বাস দেন।

বাংলাদেশ ক্যামিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, BAT নিজেরাই তাদের ওয়েবসাইটে তাদের পণ্য নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে রেখেছে। অর্থাৎ এটি মরণঘাতি পণ্য। প্রতিবছর এক তামাকই কেঁড়ে নিচ্ছে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের প্রাণ। এই ভয়াবহ তথ্যের পরও হালনাগাদ তথ্য ও নানান খোড়া যুক্তি দিয়ে আইন সংশোধনকে পিছিয়ে দেয়ার অর্থ মৃত্যুর মিছিল লম্বা করা। এই প্রতিকারযোগ্য মৃত্যুর মিছিল ঠেকাতে সরকারের স্বদিচ্ছাই যথেষ্ট।

স্বাস্থ্য আন্দোলন নেটওয়ার্কের সদস্য আমিনুর রসুল তার বক্তব্যে বলেন, একটি ছোট দেশ ভুটানের দিকে তাকালে দেখতে পারি তারা কিভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণ করছে। বাংলাদেশ চাইলেও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করে তামাক সেবন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

ইবনুল সাইদ রানা, নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার, বলেন, তামাকের কারণে দেশে প্রতিদিন ৪৪২ জন মারা যায় । এই মৃত্যু রোধ করা অবশ্যই প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী অঙ্গীকার হওয়া উচিৎ। এই মুহুর্তে উপদেষ্টা মন্ডলীর প্রচেষ্টা হওয়া উচিত আইন সংশোধনী পাশ করে জনস্বাস্থ্য ও জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্কার আনয়নের মাধ্যমে তাদের অবদান সুনিশ্চিত করা।

মত বিনিময় সভায় বক্তারা আরো বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো নানাভাবে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে। তাই প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত অনুমোদিত হলে এ প্রভাব প্রতিরোধ সম্ভব হবে। তরুণ প্রজন্ম তামাকের ভয়াবহ ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তামাকজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে হলে এখনই সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। বক্তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান—কালক্ষেপণ না করে প্রস্তাবিত সংশোধনীটি দ্রুত অনুমোদন নিশ্চিত করতে।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।