ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানীকে দেওয়া পুরস্কার অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে
‘নারী বান্ধব কোম্পানী হিসাবে তামাক কোম্পানী ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানীকে পুরস্কার দেওয়া ও গ্রহণ করা নারীর অবমাননা ও আইনের লঙ্ঘন, এই পুরস্কার প্রত্যাহার করতে হবে’ তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) এর প্রতিবাদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা (টিএসসি) এর সামনে ৩১ মার্চ, ২০১৫ বিকেল ৩:৩০ টায় তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) এর এক প্রতিবাদ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি ব্র্যান্ড ফেরামের কাছ থেকে ‘নারী বান্ধব কোম্পানী’ হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে। তাবিনাজ এই মানববন্ধনের মাধ্যমে তামাক কোম্পানিকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানায় এবং অবিলম্বে এই পুরস্কার প্রত্যাহারের দাবী তোলে।
আটই মার্চ, ২০১৫ বিশ্ব নারী দিবসের প্রাক্কালে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানি `Most female friendly Organization’ হিসেবে বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরামের কাছ থেকে পুরস্কার পেয়েছে। এ খবর যারা বিশ্ব নারী দিবস- নারীদের অধিকার রক্ষার দিন হিসেবে পালন করে তারা জানতে পারেনি। খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল দৈনিক ডেইলি স্টার পত্রিকায় ১৭ মার্চ, ২০১৫ তারিখে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উযাপনের অনেক পরে। তাই এ পুরস্কারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশের ঢাকা সহ ১৪টি জেলাতে-দিনাজপুর, রংপুর, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, কুষ্টিয়া, খুলনা, সাতক্ষীরা, মাগুরা, ভোলা, কক্সবাজার, বান্দরবান, নরসিংদীতে মানববন্ধন করে।
ঢাকাতে তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) এর মানববন্ধনে তারা পরিস্কারভাবে দাবী তুলেন, তামাক কোম্পানিকে পুরস্কার দেয়া ও গ্রহণকরা নারীর অবমাননা ও আইনের লঙ্ঘন করা। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা বলেন, আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে এভাবে কলুষিত করতে আমরা দেব না। মনে রাখতে হবে এটা কোম্পানীর পরোক্ষ প্রচার।
‘ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানী যুবক ও নারীদের টার্গেট করে যাতে তারা তামাক সেবনে আকৃষ্ট হয়। নানা রকম প্রলোভন দেখায় যুব সমাজকে। তারাই ৮ই মার্চে নারীদের একটি বিশেষ দিনে ‘নারী বান্ধব কোম্পানী’ হিসেবে পুরস্কার নিচ্ছে। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই এই পুরস্কার প্রত্যাহার করতে হবে এবং ভবিষ্যতে যেন তামাক কোম্পানীগুলো কোন ধরণের সুযোগ না পায় তার দাবী তুলছি’ মানববন্ধনে তাবিনাজের পক্ষ থেকে সাইদা আখতার এভাবেই নিন্দা জ্ঞাপন করেন।
স্বাভাবিকভাবে বোঝা যায় দেশে তামাকের বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়েছে কিন্তু পরোক্ষভাবে দেখা যায় তামাকের বিজ্ঞাপন কমে নি। তারই একটা চিহ্ন ব্রিটিশ আমেরিকা টোবাকো কোম্পানীর ৮ই মার্চে এই পুরস্কার গ্রহণ। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। এই পুরস্কার অবশ্যই প্রত্যাহার করতে হবে, বলেন ঢাকা আহসানিয়া মিশনের পক্ষ থেকে শারমীন রহমান।
আটই মার্চ নারীদের অনেক কিছু অর্জনের মাস। অনেক আন্দোলনের ফলে ৮ই মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসাবে পেয়েছি। এই মাসে আমরা অসম্মানীত হতে চাই না। বাংলাদেশে পরিবেশ ধ্বংস করছে যে তামাক কোম্পানী সে কি করে নারী বান্ধব হয় তা আমাদের প্রশ্ন। তামাক কোম্পানীকে পুরস্কার দেওয়ার জন্য আমরা প্রতিবাদ জানাই এবং অবিলম্বে এই পুরস্কার প্রত্যাহারের দাবী তুলছি, বলেন প্রতিশ্রুতি সংগঠন ও তাবিনাজের সদস্য সেলিনা রশিদ।
সাধারণভাবে আমরা জানি ভাল কাজে পুরস্কার পাওয়া যায় আর খারাপ কাজে তিরস্কার করা হয়। কিন্তু আজব ব্যাপার তামাকের মতো বিষাক্ত দ্রব্য উৎপাদন ও বিতরণ করে ব্রিটিশ আমেরিকা টোবাকো কোম্পানী ৮ই মার্চে ব্র্যাড ফোরামের কাছ থেকে নারী বান্ধব কোম্পানী হিসাবে পুরস্কার পেয়েছে। কি লজ্জার কথা। আমাদের মধ্যে স্বাস্থ্যহানী ঘটিয়ে কি করে এই পুরস্কার পায়? আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই এবং এই পুরস্কার প্রত্যাহারের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি- বলেন, ড. এম. এ. সোবহান।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০৫ প্রণীত হওয়ার পর ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করা হয়েছে। এই আইন যাতে সংশোধীত হয় তার জন্য আমরা কাজ করেছি। এখনও তামাকের কারণে বিশে^ প্রতি বছর ২ লক্ষ ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করছে। আমরা আন্দোলন করছি যাতে তামাক কোম্পানীর কোন খবর পত্রিকায় প্রকাশ না পায়। আর ব্রিটিশ আমেরিকা টোবাকো কোম্পানী নারী বান্ধব কোম্পানী হিসাবে পুরস্কার পায়! বাংলাদেশে আর কোন নারী বান্ধব সংগঠন নাই? ছি! আমাদের দাবী অবিলম্বে তামাক কোম্পানীর এই পুরস্কার প্রত্যাহার করা হোক-বলেন স্বাস্থ্য আন্দোলনের পক্ষ থেকে ইবনুল সাঈদ রানা।
তামাক কোম্পানীগুলো একদিকে তামাক সেবন করিয়ে মানুষ মারছে, অন্যদিকে তথাকথিত ‘ভালো কাজ’ দেখিয়ে পুরস্কার নিচ্ছে। বাংলাদেশে তামাক চাষে পাতা পোড়ানোর জন্য ব্যাপকভাবে গাছ কেটে আবার নতুন করে দ্রুত বাড়ে এমন গাছ যেমন ইপিল ইপিল লাগিয়ে তারা বিশ্ব পরিবেশ দিবসে (জুন ৫) পুরস্কার নিয়েছে পর পর কয়েক বছর। আমাদের দেশের পরিবেশ মন্ত্রী দিয়ে তারা গাছ লাগানোর কর্মসূচি উদ্বোধন করান। এর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদ করার কারণে বর্তমানে এ পুরস্কার দেয়া বন্ধ হয়েছে। ইতোমধ্যে বান্দরবানসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বন উজাড় হয়ে গেছে। পাহাড়গুলো ন্যাড়া হয়ে গেছে, মানববন্ধনে বক্তারা এ কথাও তুলে ধরেন।
মানববন্ধনে তামাক কোম্পানিকে পুরস্কার দেওয়ার প্রতিবাদে আরও বক্তব্য রাখেন মাহমুদা বেগম নার্গিস, মুন্নি খানম, প্রতিশ্রুতি মহিলা সংগঠনের রুবিনা রহমান ও নারীপক্ষের জান্নাতুল ফেরদৌস।
ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্রীসহ আরো অনেকে এই মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে তাবিনাজের প্রতিবাদ এবং দাবি:
১. তামাক কোম্পানীর পুরস্কার প্রত্যাহার করতে হবে।
২. তামাক কোম্পানীর পরোক্ষ বিজ্ঞাপন প্রচারণা করা চলবে না।
৩. নারীদের ক্ষতি করে এমন কোম্পানিকে পুরস্কার দেয়া চলবে না।
৪. আন্তর্জাতিক নারী দিবসকে এভাবে কলুষিত করতে না দেয়ার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ।