আমাদের কুড়িয়ে পাওয়া শাক


‘আমাদের কুড়িয়ে পাওয়া শাক’গবেষণা গ্রন্থটি দ্বিতীয় সংস্করণ বের করতে পেরে আমরা খুশি। প্রথম সংস্করণ ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। তবে দ্বিতীয় সংস্করণে আমরা কিছুটা পরিবর্তন করেছি। আশা করি পাঠকরা এই গ্রন্থ ব্যবহার করে প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষার সাথে আমাদের খাদ্যের যোগানোর সম্পর্কটি উপলব্ধি করতে পারবেন।

দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষের জীবনধারণ প্রাণবৈচিত্র্যের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের মতো দেশেও খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নটি শুধুমাত্র আবাদী ফসলের ওপরই নির্ভরশীল নয়। আমাদের চারিদিকে অনেক কিছু গড়ে ওঠে যা আবাদ করা হয় না কিন্তু খাওয়া হয়। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরণের খাদ্যাভ্যাস আছে। এ খাদ্যকে আমরা কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্য বলে আখ্যায়িত করেছি। কারণ যা আবাদ হয় তার আহরণ এবং অনাবাদি ফসলের আহরণের মধ্যে পার্থক্য আছে। কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্য বলতে আপনাতে এসে খাওয়া খাদ্য নয়, আপনাতে গড়ে ওঠে কিন্তু যাকে আহরণ করতে হয় এবং এই খাদ্য রক্ষার জন্যে পরিকল্পনা করতে হয়। গ্রামের মানুষ স্বাভাবিক জীবনেই এই খাদ্যের ওপর নানা কারণে নির্ভরশীল।

কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্যের এই গবেষণাটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের গবেষণার একই সময় পরিচালিত হয়েছে। এই গবেষণার মধ্য দিয়ে আমরা যারা প্রাণবৈচিত্র্য নির্ভর কৃষির কাজ করছি তারা দেখাতে চেয়েছি যে খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নটি কেবলমাত্র আবাদি ফসল দিয়ে সমাধান করা যাবে না। এর সাথে সরাসরি যুক্ত রয়েছে অনাবাদি ফসল এবং তার ওপর জনগণের অধিকারের প্রশ্ন।

এই গবেষণাটি সকল ধরণের কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্যের ওপর করা হয় নি। কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্যের মধ্যে অর্থাৎ গাছ-গাছালি লতা-গুল্ম ইত্যাদি অনেক বড় খাদ্যের যোগানদার। এর সাথে রয়েছে কুড়িয়ে পাওয়া মাছ। কিন্তু আমরা খুবই সচেতনভাবে শুধু শাক নিয়ে কাজ করেছি। খাদ্যের মধ্যে শাকের যে গুরুত্ব এবং একই সাথে খাদ্য নিরাপত্তার দিক থেকেও ভাতের পরেই শাক কত বড় ভূমিকা রাখে তা দেখাতে চেয়েছি। শাক চেনা, তোলা এবং রান্না করা সব মিলিয়ে খাদ্য হিসেবে শাকের ওপর এই গবেষণাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করেছে। গ্রামের নারীর জীবনে শাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সাধারণত ধরে নেয়া হয় যে কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্য কেবল মাত্র দুর্যোগের সময় এবং বিশেষ করে খাদ্য সংকটের সময়কার খাবার। এ ধারণা ভুল। এই গবেষণায় আমরা দেখেছি কুড়িয়ে পাওয়া শাক সারা বছরই এবং সকল অবস্থাতে খাচ্ছে। এটা স্বাভাবিক খাবারের অংশ।

গবেষণা কাজটি অনেক বিস্তারিতভাবে করা হয়েছে। আমরা আমাদের গ্রাম পর্যায়ের কর্মী এবং কৃষকদের নিয়ে এই গবেষণার যে তথ্য তুলে ধরেছি, তা একেবারে নতুন এবং বাস্তব।

অধ্যায় ১: কি করে এই গবেষণা করা হোল
কুড়িয়ে পাওয়া শাকের গবেষণা
 

কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্যের গবেষণা করা সহজ কোন ব্যাপার নয়। এর সাথে অনেক কিছু জড়িত আছে। অনেক জ্ঞানেরও প্রয়োজন। আমরা যে সকল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের গবেষণার জন্যে তৈরি করেছি তার বিস্তারিত বর্ণনা এখানে দেয়া হয়েছে। প্রথমে বিভিন্ন কেন্দ্রের কর্মীরা তাদের নিজ নিজ এলাকার প্রেক্ষিতে কি ধরণের কাজ করেন তার বর্ণনা দেন। তাদের অভিজ্ঞতার বিশাল ভাণ্ডার একে অপরের কাছে তুলে ধরেন। এই বিনিময়ের মধ্যে আনন্দ ছিল, আবার তর্কও ছিল। কারণ সবার তথ্য সবাই মেনে নিয়েছেন এমন ছিল না।

কর্মীদের দলীয়ভাবে আলোচনা

অংশগ্রহণকারী কর্মীরা ৫টি দলে ভাগ হয়ে কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্য নিয়ে প্রাপ্ত তথ্য লিপিবদ্ধ করতে শুরু করে। দলে দলে সিরিয়াস আলোচনা চলছে। এক ধরণের প্রতিযোগিতাও শুরু হয়ে যায়, কোন্ দল বেশী তথ্য দিতে পারে। কেউ কিছু ভুল তথ্য দিলে বা একটু অন্য ধরণের কথা বললেই হাসির রোল ওঠে। তখন অন্য দলের সদস্যরা আড় চোখে তাকায়। এই কাজের জন্যে কর্মীদের কেন্দ্র এবং কেন্দ্রের আশেপাশে গিয়ে শাকগুলো কুড়িয়ে আনতে হয় এবং সেই হিসাবে তাদের লিখতে হবে। এক পর্যায়ে কর্মীদের সাহায্যে মাইক নিয়ন্ত্রকারী নিজামও জড়িয়ে পড়ে। তার জানামতে শাকটি সে কুড়িয়ে এনে একটি দলকে দিয়ে দেয়। তার এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সকলকে খুবই আনন্দ দিয়েছে।

এই সভায় আমরা কুড়িয়ে পাওয়া শাকের সংজ্ঞা নিয়েও একটা বিপদে পড়ে গেলাম। যে শাক আবাদ হয় না, তাকে কুড়িয়ে পাওয়া শাক বলা তো খুবই সহজ কিন্তু লাউ শাক বা কুমড়ার পাতাকে আমরা কি বলব? অর্থাৎ এমন কিছু শাক আমরা আবাদ করি কিন্তু যে অংশটি শাক হিশেবে খাই তা কুড়িয়ে আনা হয়। তাকে আবাদিও বলা যাচ্ছে না, আবার অনাবাদিও বলা যাচ্ছে না। এই সমস্যাটার সমাধান আমরা সেই সভায় তৎক্ষণাৎ করে ফেলার প্রয়োজন মনে করি নি। বিষয়টিকে খোলা বিতর্ক আকারে আমরা রেখে দিয়েছি এবং গবেষণার মধ্য দিয়ে বিষয়টির একটি মীমাংসা হবে বলে ধরে নিয়েছি। আমরা আবাদি উৎস থেকে কুড়িয়ে পাওয়া শাককে আবাদি আর অনাবাদি উৎস থেকে কুড়িয়ে পাওয়া শাককে অনাবাদি বলে তখনকার মতো চালিয়ে দিয়েছি। আবাদি শাকের সংখ্যা সেই সভায় ছিল ২১টি এবং অনাবাদি ৩৬টি। এই ৫৫টি শাকের তথ্য মোটামুটি বদরখালী, টাঙ্গাইল এবং ঈশ্বরদীতে আমাদের কাজের এলাকার অভিজ্ঞতা থেকে শনাক্ত করা হয়েছে।

যে ৫৫টি শাকের নাম ও তথ্য আমরা পেয়েছি তার তালিকা নীচে দেওয়া হোল। আবাদি ও অনাবাদি শাকের তালিকা আলাদাভাবে দেয়া হয়েছে। আমাদের এই তথ্য সংগ্রহের কাজের মধ্যে দেখা গেল ২ ধরণের থানকুনি আছে অথচ বৈজ্ঞানিকদের তথ্যে থানকুনির একটাই জাত।

৫৫টি শাকের নাম:

১. মোরগ শাক, ২. ইছা শাক, ৩. তেলাকুচা, ৪. খুইরা কাটা, ৫. হেঞ্চি শাক, ৬. বতুয়া শাক, ৭. দুধলী শাক, ৮. ন্যাটাপেটা শাক, ৯. কানাই শাক, ১০. হেলেঞ্চা, ১১. গিমা শাক, ১২. দুরমা পাতা, ১৩. চিনতন পাতা, ১৪. পুঁইশাক, ১৫. কলমি শাক, ১৬. সেঞ্চি, ১৭. ঢেঁকি শাক, ১৮. পিপুল শাক, ১৯. শান্তি শাক, ২০. নটেশাক, ২১. চিরকুটি, ২২. ক্যাথাপাটা, ২৩. থানকুনি, ২৪. কচু শাক, ২৫. খুড়েকাটা (কাটানটে), ২৬. নুনিয়া শাক, ২৭. গিন নারিস, ২৮. খারকোন, ২৯. কস্তুরি, ৩০. আমরুল, ৩১. নুন খুরিয়া (বুলখুরিয়া), ৩২. গন্ধভাদালী, ৩৩. শুশনী শাক, ৩৪. শিয়ালমুতি, ৩৫. তেলাকুচা শাক, ৩৬. নিলিচি, ৩৭. মুনসি শাক, ৩৮. হরি শাক, ৩৯. থ্যানথ্যানে, ৪০. খ্যাটখ্যাটি, ৪১. বনঝুড়ি ৪২. হাগড়া, ৪৩. চিনিগুড়ি, ৪৪. মরিচপাতা ৪৫. বনপাট, ৪৬. হুটকা, ৪৭. মিষ্টি আলু শাক, ৪৮. ডাটা শাক, ৪৯. চালকুমড়া পাতা, ৫০. মিষ্টিকুমড়ার শাক, ৫১. লাউ শাক, ৫২. পালং শাক, ৫৩. সাজনা পাতা, ৫৪. মোরগশাক, ৫৫. মটর শাক।

পরবর্তী পর্যায়ে দেখা গেল আমাদেরকে কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্যের তালিকা প্রস্তুত করার জন্য বিশদভাবে গাছ-লতা-পাতা চেনার প্রয়োজনীয়তা দেখা গেল। বৈজ্ঞানিকভাবে তারা একই পরিবারভুক্ত কি না বোঝার চেষ্টা করে পৃথক তালিকা করতে হবে। স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে গাছ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য জানতে হবে এবং তা লিপিবদ্ধ করতে হবে। এই কাজই হবে আসল বৈজ্ঞানিক কাজ। গ্রামে গিয়ে নয়াকৃষির গ্রামকর্মীদের নিয়ে এই তথ্য সংগ্রহের কাজ করে যেতে হবে। কর্মশালার মাত্র তিন দিনের কাজে পরস্পরের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময়, কথা আলোচনায় শাক সম্পর্কে কর্মীদের ধারণা অনেক বিকশিত হয়েছে। অভিজ্ঞতায় কয়েকটি উল্লেখ করার মতো দিক তুলে ধরা হচ্ছে:

* যমুনা নদীর এপার ওপারের কারণে শাক (কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্য) সংগ্রহ, রান্নায় অনেক বৈচিত্র্য রয়েছে।
* শাক সম্পর্কে মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও অনেক তথ্য জানেন, রান্না করার পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা রাখেন।
* শাকের সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতির অনেক বিষয় যুক্ত। এলাকা ভেদে সংস্কৃতির মধ্যে অনেক বৈচিত্র্য রয়েছে।
* শাকের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অনেকগুলো ওষুধী গুণ আছে। মানুষ প্রতিদিন তার ব্যবহার করছে।
* আকালের এলাকাগুলোতে কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্য প্রাধান্য পায়।

শাকের ধরণ গ্রামে সরাসরি খোঁজ নেবার আগে নাম ও প্রাথমিক তথ্য জানা শাকের সংখ্যা গ্রামে সরাসরি খোঁজ নিয়েই নাম ও প্রাথমিক তথ্য জানা গেছে, সেই সব শাকের সংখ্যা মোট

আবাদি ২১ ১৫ ৩৬

অনাবাদি ৩৪ ২৯ ৬৩

মোট ৫৫ ৪৪ ৯৯

 

আমরা ৬ থেকে ১২ অক্টোবর ১৯৯৭ সালের সভার পর নিজ নিজ কাজের এলাকায় ফিরে যাই। তখন সরাসরি গ্রামে আমাদের কাজের এলাকায় শাকের তথ্য প্রাথমিক ভাবে নেওয়া শুরু করি। এবার আরও ৪৪টি (আবাদি ১৫ এবং অনাবাদি ২৯) শাক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। নতুন ৪৪টি মিলে আমরা শাকের নাম ও প্রাথমিক তথ্য পেলাম ৯৯ টির।

শাক বা গাছ-গাছালির খাদ্য হিশেবে ব্যবহারের তিন ধরণের বিষয় ধরা পড়ে,

১. শাক হিশাবে খাওয়া, তথ্য পাওয়া যায় ৬৩টি শাক সম্পর্কে। এর মধ্যে আবাদি আছে ৩৯টি আর অনাবাদি আছে ২৪টি।
২. ওষুধী হিশাবে খাওয়া, তথ্য পাওয়া যায় ১৬টি শাক সম্পর্কে। এর মধ্যে আবাদি আছে ৯টি অনাবাদি আছে ৭টি।
৩. গাছে পাতা এবং কান্ড পর্যন্ত শাক হিসেবে গণ্য করা হয় কিন্তু কিছু গাছের ফুলও কুড়িয়ে এনে খায়। এমন তথ্য পাওয়া গেছে ১১টি গাছের ফুল সম্পর্কে।
৪. শাক হিসাবে শনাক্ত করতে অসুবিধা হয়েছে ১০টি।

সহজেই লক্ষ্য করা যাবে যে কুড়িয়ে পাওয়া শাকের সংজ্ঞার ব্যাপারটা আগাগোড়া একটা মুশকিল হয়েই রয়েছে। ফলে আবাদি উৎস থেকে কুড়িয়ে পাওয়া শাকের সংখ্যা এই তালিকাতেও খুব কম নয়। গবেষণার দিক থেকে এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা। এতে শুরুতেই আমরা স্পষ্ট হয়ে গেলাম যে খাদ্যের উৎপাদন ও খাদ্য সংগ্রহের উৎসের দিক থেকে প্রকৃতির মাঝখানে একটা মোটাদাগ কেটে আবাদি ও অনাবাদি নামে যে দুটো ভাগ আমরা আছে বলে ধরেই নিয়েছি, সেটা ঘোরতর প্রশ্নের সম্মুখিন হয়ে পড়েছে। প্রকৃতিকে দুই ফালি করে কাটা ও সেই ভাবে ভাবতে শিখবার ব্যাপারটা কি খুব নতুন? হয়তো গ্রামের মানুষ এই রকম করে ভাবে না। এই ভাবনার জন্য আমাদের শহুরেপনা হয়তো দায়ী। খাদ্য যদি কুড়িয়েই সংগ্রহ করতে হয় তাহলে হয়তো আবাদি উৎস আর অনাবাদি উৎস থেকে খাদ্য সংগ্রহ দুটোই গ্রামীণ সমাজের কাছে একই অর্থ বহন করে, আমরা ভাগ করে বিচার করতে বসলেও। কারণ আবাদি আর অনাবাদি দুটোই সমান ভাবে খাদ্য সংগ্রহের উৎস। যিনি কুড়িয়ে খাদ্য সংগ্রহ করছেন তাঁর সামনে দুটোর ভেদ লুপ্ত হয়ে যায়। তখন যে সত্যটা বরং প্রকট হয়ে ওঠে সেটা হোল খাদ্য সংগ্রহের অধিকারটা তাঁর আছে কি না। নিজের জমি থেকে তো তিনি সংগ্রহ করতেই পারছেন কিন্তু শুধু সেই দিকটা দিয়ে কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্যের ব্যাপারটা পুরোপুরি বোঝা যাবে না। তিনি সরকারি বা খাস জমি থেকে কুড়িয়ে পাওয়ার অধিকার ভোগ করছেন কি না কিম্বা অন্যের জমি থেকে শাক-লতা-পাতা সংগ্রহ করলে তাঁকে বাধা দেওয়া হয় কি না। কিম্বা গ্রামের মানুষের মধ্যে সেই বিবেক বা নীতি কি এখনও কাজ করে যে, তাদের প্রতিবেশী গরিব পরিবারটি যখনই প্রয়োজন তখনই অনাবাদি বা আবাদি যে কোন উৎস থেকে খাদ্য সংগ্রহ করলে তাঁকে বাধা দেওয়া তাঁরা অন্যায় বলে মনে করেন। যতক্ষণ না তিনি যে ফসলের জন্য আবাদ করা হয়েছে সেই ফসল তোলেন বা নষ্ট না করেন। একের প্রতি সমষ্টির সামাজিক নিরাপত্তারই হয়তো এগুলোর অংশ।

ধরা যাক, গ্রামে গরিব পরিবারটির কোন সদস্য যখন অন্যের জমি থেকে বথুয়া শাক তোলে তখন তো দেখা যায় তাকে বাধা দেওয়া হয় না। বা বাধা দেওয়াটা সমাজ অনৈতিক বলে মনে করে। কারণ এই খাদ্য কুড়িয়ে পাবার অধিকার গরিব পরিবারটির আছে বলেই তারা ধরে নেয়। ঘরে ছোট মাছ আছে কিন্তু পাক করবার মতো কোন শাক নেই। তখন প্রতিবেশীর কুমড়ার চালা বা লাউয়ের মাচান থেকে শাক কুড়িয়ে নেওয়া অপরাধ নয় বরং অনেক ক্ষেত্রে আনন্দের। কারণ ছোট মাছ সেই শাকের সঙ্গে রাঁধার পর প্রতিবেশীর বাড়িতে পাঠানোটাই এই ক্ষেত্রে অলিখিত রীতি। তারপর কলতলায় দাঁড়িয়ে সেই শাক কেমন লাগল সেই প্রশ্ন তোলার ছুতোয় আরও হাজারো কথাবার্তা। এই ব্যাপারগুলো এমন কিছু গভীর সাংস্কৃতিক ও নৈতিক মূল্যবোধের সঙ্গে জড়িত যে-বিষয়ে বাংলাদেশে গবেষণা হয় নি বললেই চলে। অথচ এর সঙ্গে পরিবারে ও গ্রামীণ পর্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্নটা অঙ্গাঙ্গী ভাবেই জড়িত। এই দিকগুলোকে বিদেশীরা Common Property Regimes আখ্যা দিয়ে থাকেন। আধুনিক সমাজ বিজ্ঞান সবকিছুই সম্পত্তির মানদ- দিয়ে বিচার করে বলে জীবনযাপন ব্যবস্থার এই সকল নৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিকটাকেও তারা সম্পত্তির ধারণা দিয়ে বিচারের চেষ্টা করে। এই দিকটা যদি আমরা মনে রাখি তাহলে খাদ্য উৎপাদন, সংগ্রহ ও নিজের পরিবার বা অপরের সঙ্গে মিলেজুলে খাওয়ার ব্যাপারগুলো নিশ্চয়ই কোন না কোন আচার, বিধান, সংস্কৃতি বা ঐতিহ্য আকারে আমাদের সমাজে রয়েছে। উৎপাদন, ভোগ ও বিনিময়ের সম্পর্ক বিভিন্নভাবে অভিব্যক্তি লাভ করে। আবাদি ও অনাবাদির মুশকিল আমাদের এই সকল অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ভাবতে সহায়তা করেছে।

ফসল কাটা ও ঘরে তোলা ফসল উৎপাদন ও সংগ্রহের একটা বিশেষ দিক। উৎপাদন ও সংগ্রহের এই পর্যায় থেকে হয়তো কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্যকে বিচার করা ঠিক হচ্ছে না।

আর অনাবাদি জমি দুটোই আবাদি ও অনাবাদি - প্রকৃতির এই দুই মানচিত্রের মাঝখানে আরও গভীর রহস্য ও জটিলতা রয়ে যাচ্ছে আসলেই আবাদি আর অনাবাদি এই দুটো কথার মানে কি? একটি কি অন্যটির বিপরীত? নাকি আবাদি মাত্রই একই সঙ্গে অনাবাদি খাদ্যের উৎস। জীবনের শর্ত হিসাবে প্রকৃতিকে চাষাবাদ মানেই কি আবাদ করা? অথবা চাষ বলতে বা কৃষিকাজ বলতে আমরা এখন যা বুঝি তার অর্থ আর আবাদ এই প্রশ্ন আমাদের মাথায় এলো। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তথ্য সংগ্রহ কাজের শুরু

টাঙ্গাইল রিদয়পুর কেন্দ্রের ১৯৯৭ সালের অক্টোবরের ছয় থেকে বারো তারিখের সেই সভাই আমাদের তথ্য সংগ্রহের শুরু বলা যায়। অক্টোবরের সভায় যে ৫৫টি শাকের নাম ও তথ্য আমরা বলতে পেরেছিলাম তাদের সম্পর্কে আরও খোঁজখবর কীভাবে নেওয়া যায় সেই বিষয়ে আলাপ আলোচনা চলে। একটা বিষয় শুরুতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে প্রতিটি শাকের স্থানীয় নাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একই শাকের নাম এক এক এলাকায় একেকরকম, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মিল আছে আবার কোন কোন শাকের নামের একেবারেই মিল নেই, অথচ শাক একই। অতএব সেই সভায় আমরা শাকগুলোর অতি পরিচিত নাম বা একটি সাধারণ নাম নির্ধারণ করে তাদের এলাকাভিত্তিক নামগুলোর তালিকা করলাম। তারপর কুড়িয়ে পাওয়া শাক সম্বন্ধে আরও নিবিড় ভাবে তথ্য সংগ্রহের জন্য একটা প্রাথমিক কাঠামো খাড়া করা হলো। সেই কাঠামোতে প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা কি কি তথ্য সংগ্রহ করব তার একটা নির্দেশনা ছিল।

কুড়িয়ে পাওয়া শাকের তথ্য সংগ্রহের কাঠামোর বর্ণনা

কুড়িয়ে পাওয়া শাক সম্বন্ধে আরও নিবিড় ভাবে তথ্য সংগ্রহের জন্য যে প্রাথমিক কাঠামো খাড়া করা হয়েছে, সেই কাঠামোতে ১৫টি বিষয়ের উল্লেখ ছিল। এই ১৫টি বিষয় হচ্ছে -

১. শাকের সাধারণ নাম/ জাতীয় নাম
২. শাকের স্থানীয় নাম
৩. কোন পরিবেশে জন্মে
৪. সাধারণ বর্ণনা প্রসঙ্গে
৫. মৌসুম প্রসঙ্গে
৬. শাক সংগ্রহের পদ্ধতি
৭. খাওয়া পদ্ধতি
৮. পরিবেশ পদ্ধতি
৯. ক্ষুধা/দুর্ভিক্ষ বা অন্য কোন বিশেষ অবস্থায় ব্যবহার
১০. গবাদী পশু ও অন্যান্য প্রাণীর খাবার হিসেবে ব্যবহার
১১. শাক সংরক্ষণ পদ্ধতি
১২. সংস্কার, সংস্কৃতি ও কাহিনী
১৩. শাকের ওষুধী গুণাগুণ
১৪. শাক নিয়ে সামাজিক সম্পর্ক
১৫. শাকের বাণিজ্যিক দিক

কাঠামোতে কিছুটা বিজ্ঞান, কিছুটা আর্থ-সামাজিক দিক, আবার বেশ খানিকটা খাদ্যের সংস্কৃতির ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। আমাদের কাছে মনে হলো প্রাথমিক ভাবে কাজ শুরু করার জন্য গবেষণা কাঠামোটি মন্দ নয়, তবে কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্য সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানার জন্য কাঠামোটি যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে আমরাও খুব পরিষ্কার ছিলাম না, ঠিক কীভাবে উদ্ভিদের অর্থবিজ্ঞান (Economic Botany) মার্কা প্রচলিত গবেষণার ধারার বাইরে গিয়ে আমরা এই বিষয়ে আরও গভীরে প্রবেশ করতে পারবো। সাধারণত দেখা যায় খাদ্য হিসাবে বুনো গাছপালার ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা যথেষ্টই উৎসাহী। কিন্তু আজ অবধি তাঁরা কখনই সেগুলোর চেনা জানা নাম, পাশে তাঁদের বৈজ্ঞানিক নামকরণের কাঠামোয় ফেলে দূর্বোধ্য ল্যাটিন নাম গোত্র বা পরিবারের হদিশই আমাদের দিয়েছেন, কিম্বা বলা যায় পেশাগত কারণে তাঁরা এতোটাকুই তাঁদের কর্তব্য জ্ঞান করেছেন।

আমরা নাম আর তাদের প-িতি মার্কা বৈজ্ঞানিক নাম ও গোত্রে তেমন উৎসাহী ছিলাম না। যদিও এর দরকার আছে, কারণ বাংলাদেশের একটি শাকের নামে বিজ্ঞানীরা তাকে চিনবেন না, ফলে তাঁদেরই ভাষায় তাকে একটা খটমট নামে আমাদের চেনাতে হবে। উপায় কি? কিন্তু কথা হোল, এটাই আমাদের গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু শুরুর দিকে আমাদের মনে হয়েছে এই কাজটিও বাংলাদেশের কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্যের ক্ষেত্রে করা হয় নি। অতএব শুরুতে যে কাঠামো আমরা তৈরি করেছিলাম তার মধ্যে এইভাবে বোটানিকাল কায়দায় নামের তালিকা বানাবার একটা ঝোঁক আমাদের মধ্যে ছিল।

এই কাঠামোর ভিত্তিতেই আরও তথ্য অনুসন্ধান ও তা লিপিবদ্ধ করার কাজ শুরু হয়। ব্যাপারটি আত্মস্থ করার জন্য আমরা অক্টোবরে ছোট ছোট পাঁচটি দলে ভাগ হয়ে যাই এবং শাক সম্পর্কে যতটুকু আমরা জানি প্রণীত কাঠামোর ভিত্তিতে তথ্য লিখে বোঝার চেষ্টা করি, তৈরি করা কাঠামোটা কেমন ফলপ্রসু। কর্মীদের পাঁচটি গ্রুপ মোট ২৬টি কড়িয়ে পাওয়া শাকের উপর তথ্য লেখে। পরবর্তীতে কাজটি যেন ধারাবাহিকভাবে চলে তার জন্য আমাদের তিনটি কাজের এলাকা ও কেন্দ্র থেকে কর্মীদের ওপর সুনিদষ্টভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়, কুড়িয়ে পাওয়া শাকের ওপর তথ্য সংগ্রহের জন্য।

অক্টোবরের ১৩ তারিখ থেকেই এই কাজ শুরু হয়। যে ২৬টি শাকের তথ্য কর্মীরা লিখেছিলেন রিদয়পুর কেন্দ্রে বসেই তাকে গুছিয়ে নেয়া হয়। একই সাথে সবগুলো শাকের হার্বেরিয়াম তৈরী করা হয়।

পাঁচটি গ্রুপ থেকে পাওয়া ২৬টি শাকের বিভিন্ন তথ্যগুলিকে সাজিয়ে নেয়া হয়। একই সঙ্গে রিদয়পুর কেন্দ্রের (টাঙ্গাইল) আশপাশ থেকেই ৩৭টি শাকের হার্বেরিয়াম শিট তৈরী করে ফেলা হয়। পরে এই শিটগুলো নতুন গবেষকদের প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে একই গাছ চেনার জন্যও হার্বেরিয়াম শিট ব্যবহার করা হয়। সাধারণভাবে এই প্রক্রিয়া উবিনীগ ও নয়াকৃষি কেন্দ্রের সকল কর্মীদের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও পদ্ধতিগত গবেষণার শক্তি বৃদ্ধি করেছে। এখান থেকেই আমরা নিয়মিত এই ধরণের চর্চাকে সংগঠনের নিয়মিত প্রশিক্ষণের অন্তর্ভুক্ত করি। আঠারোই অক্টোবর থেকেই পুরোদমে কাজ শুরু হয়ে যায়।

তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি

কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্যের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে তিন এলাকাতে প্রায় একই ধরণের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। তথ্য সংগ্রহের সময় কখনও বা কাঁধে ঝুলানো ব্যাগ, এর সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও হার্বেরিয়াম শিট তৈরী করার জিনিস পত্রাদি থেকেছে। কখনও আবার ব্যাগ ছাড়াই তথ্য সংগ্রহের কাজ চালিয়েছেন কর্মীরা। তথ্য আনতে প্রয়োজন মত হাঁটা পথ ও যানবাহন ব্যবহার করা হয়েছে।

প্রকল্পের কৃষি বিভাগের কর্মীদের নিয়ে কয়েকটি গ্রুপ করা হয়। তারপর তথ্য সংগ্রহের জন্য এই গ্রুপগুলোকে বিভিন্ন গ্রামে পাঠানো হয়। একনাগাড়ে কয়েকদিন তথ্য আনার পর গ্রুপের সদস্যরা সবাই একত্রে সংগৃহীত শাকের (নামের) চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরী করে। প্রতিবেদন তৈরীর পর গ্রাম কর্মী ও অভিজ্ঞ দাইদের সাথে খসড়া প্রতিবেদনটি নিয়ে আলোচনা করে প্রতিবেদনটিকে আরও সমৃদ্ধ করা হয়। তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে গ্রাম কর্মীরা সার্বক্ষণিক ভাবে সহায়তা করেছে। এদের মধ্যে অভিজ্ঞ গ্রাম কর্মীদের একত্রে ডেকে কুড়িয়ে পাওয়া শাকের তথ্য সংগ্রহের বিষয়গুলো ভাল করে বুঝিয়ে দেয়া হয়। তারা সে অনুযায়ী বিভিন্ন গ্রাম থেকে এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে এনে দেন। গ্রামের প্রবীণ মহিলা ও অভিজ্ঞ কবিরাজ বিশেষ করে মহিলা কবিরাজদের কাছ থেকে অধিকাংশ তথ্য পাওয়া গেছে।

তথ্য সংগ্রহকারী কর্মীরা পথে হাঁটতে হাঁটতে চেনা অচেনা গাছ ও লতা পাতা যা দেখেছেন এরমধ্যে প্রয়োজনীয়গুলো কুড়িয়ে ব্যাগে ঢুকিয়েছেন। চলার পথে প্রয়োজন বোধে একটি বাড়িতে ঢুকে হার্বেরিয়াম করার সময় বাড়ির মেয়েরাই তাঁদেরকে বাড়ির আশপাশ ও আগান-বাগান থেকে গাছ ও লতা পাতা কুড়িয়ে এনে দিয়েছেন। এদের সাথে অধিকাংশ সময়ে গাছ ও লতা পাতা সংগ্রহের স্থানে গিয়েছেন। তাতে করে গাছ চিনতে ও জন্মানোর পরিবেশ স্বচক্ষে দেখা হয়েছে। ফলে শাকটি সমন্ধে পুরা তথ্য লিখতে সুবিধা হয়েছে। খাতায় তথ্য লিপিবদ্ধ করেছেন কখনও হাঁটিতে হাঁটতে, কখনও গাছতলায় বসে, কখনও বা কারও বাড়িতে বসে।

একটি শাকের বিষয়ে যখন দুই রকম তথ্য এসেছে তখন গ্রামের অন্যান্য প্রবীণ বা অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছে যেতে হয়েছে। গাছ জন্মানোর স্থানে যেয়ে তথ্যের সত্যতা যাচাই করা হয়। আবার এমনও দেখা গেছে দুই একটি শাকের নাম পাওয়া যায় নি কিন্তু গ্রামের লোকেরা এটা খেয়ে থাকে ও ওষুধ হিশেবেও ব্যবহার করে। দূর দূরান্তের অভিজ্ঞ কবিরাজদের কাছ থেকে কুড়িয়ে পাওয়া শাকের তথ্য নেয়া হয়েছে। এর ফলে এদের কাছ থেকে নিবিড়ভাবে তথ্য নেয়া সম্ভব হয়েছে। আবার প্রকল্পে সকল কর্মীদের কাছ থেকেও তথ্য নেয়া হয়। কর্মীরা রাতে যখন তাদের কাজের টেবিলে বসে, তখন কর্মীদের কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে তথ্য নেয়া হয়। আবার নতুন শাক পেলে গবেষকরা যখন যে কর্মীকে সামনে পেয়েছে তখনই তার কাছ থেকে তথ্য জেনে নিয়েছে। কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ চলাকালে অভিজ্ঞ কৃষকদের কাছ থেকেও কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্যের উপর তথ্য নেয়া হয়েছে। তবে প্রতিটি তথ্য সঠিক কি না তা বার বার পর্যালোচনা করা হয়েছে।

তথ্য সংগ্রহের সময় সমস্যা

সময়ের স্বল্পতার কারণে আরও নতুন নতুর অঞ্চলে যাওয়া সম্ভব হয় নি। গেলে অনেক নতুন তথ্য পাওয়া যেত। অনেক গাছ এলাকায় খুবই বিরল মনে হয়েছে। এলাকাবাসীরাই বলছে এইসব গাছ আর সচরাচর দেখা যাচ্ছে না। যেমন, পুটি শাক ও চুকা কলা। হয়তোবা এই গাছ অচিরেই হারিয়ে যাবে। এইসব বিলুপ্ত প্রায় গাছের ছবি রাখা দরকার ছিল।

অনেক সময় একটি শাক সম্বন্ধে দুই জায়গাতে বা দুই ব্যক্তির কাছে দুই ধরণের বিপরীতমুখী তথ্য পাওয়া গেছে। যখনই এই তথ্য সম্পর্কে মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে, সন্দেহ ঘুচানোর জন্য গাছ জন্মানোর স্থানে গবেষকরা গিয়েছেন আবার অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছে গিয়ে তথ্য যাছাই করেছেন তারপর খাতায় লিপিবদ্ধ করেছেন।

শাকের সাধারণ নাম দেয়া নিয়ে একটু বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় - একটি শাক দুইটি অঞ্চলে দুই নামে পরিচিত অর্থাৎ দুই অঞ্চলে তারা শাকটিকে দুই নামেই চিনে। এই ক্ষেত্রে শাকটির সাধারণ নাম কি হবে, যে নামটি দিলে মোটামুটি সবাই চিনবে, চিন্তা করা হয়েছে। সাধারণ নাম যখন পাওয়া যায় নাই তখন প্রতিবেদনে শুধুমাত্র আঞ্চলিক নামই ব্যবহার করতে হয়েছে। এলাকার প্রাকৃতিক ভিন্নতার কারণে একই শাক ঋতুভেদে একই সময় জন্মায় না। ফলে কোন শাক কোন সময়, কোন এলাকায় জন্মায় তা সাধারণভাবে বলা অনেক সময় কঠিন ছিল।

আমাদের কুড়িয়ে পাওয়া শাক (বই)

 


৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।